ঘুমিয়ে থাকা বিবেকের জাগ্রত সত্ত্বা বেকিং নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে রোববার রাতে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দেখা করেছে। এই মাত্র পাওয়া খবরে জানা গেল সোমবার দুপুর ১২ টার মধ্যে সেনগুপ্ত কে পদত্যাগের নিদেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এমন খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় জোরালো ভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এইদিকে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের খবরে মৃষ্টি বিতরন শুরু করবে বিএনপি। বিএনপির কয়েকজন মূখপাত্র এ দাবী করেছে।
তবে রেল মন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে যে নাটক চলছে তা আদৌও সঠিক হবে কিনা তা নিয়ে বিশ্লেষকরা সংশয় প্রকাশ করছে।
পুরাতুন খবর
অর্থ কেলেঙ্কারির ৬ দিন পর হঠাৎ করেই কঠোর হয়ে উঠলেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। রোববার আকস্মিকভাবে বরখাস্ত করলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হককে। চাকরিচ্যুত করলেন এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারকেও। একই সঙ্গে তার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভনর্রকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এপিএস ওমর ফারুক এবং তার স্ত্রী মারজিয়া ফারহানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। অথচ ঘটনার পরদিন তিনি এই এপিএসের পক্ষেই সাফাই গেয়েছিলেন। তাকে অপহরণ করার জন্য চালক গাড়ি নিয়ে পিলখানায় ঢুকে পড়েছিলেন বলেও ওই সময় অভিযোগ তোলেন তিনি। এমনকি বিজিবির হাতে উৎসবিহীন বিপুল অঙ্কের টাকাসহ আটক হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগও দেননি তিনি। বরং আটক ফারুক, ইউসুফ ও এনামুলকে টাকাসহ সসম্মানে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কারো ব্যক্তিগত টাকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা ১ ঠিক নয় এবং কারো অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। হঠাৎ করে কেন ভোল পাল্টালেন রেলমন্ত্রী, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তারা সন্দেহের তীর মন্ত্রীর দিকে ছুড়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তদন্ত শুরুর প্রথম দিনই এমন কী প্রমাণ মিলল যে, আকস্মিকভাবে জিএম এবং কমান্ড্যান্টকে বরখাস্ত করা হলো? হঠাৎ কেন চাকরিচ্যুত করা হলো এপিএসকে? কেন এতদিন পর তার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হলো? সমালোচকরা বলছেন, মন্ত্রী নিজে বাঁচতে বলির পাঁঠা বানাচ্ছেন তার এপিএস ওমর ফারুককে। ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন জিএম ইউসুফ আলী এবং কমান্ড্যান্ট এনামুল হককে। তবে এতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শেষ রক্ষা হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
তারা বলছেন, জিএম ইউসুফ আলী তদন্ত কমিটিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ওই রাতে তারা মন্ত্রীর বাসায়ই যাচ্ছিলেন। অথচ মন্ত্রী এর আগে দাবি করেছেন, রাত ১০টার আগেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। তাই এত রাতে তার বাসায় কারো যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। মন্ত্রী এবং জিএমের এই ভিন্নমুখী বক্তব্য যাচাই করলেই ফেঁসে যাবেন মন্ত্রী_ এমন আশঙ্কায়ই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। তাদের দাবি, মন্ত্রীর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দেয়ার আগে তার এপিএস এবং রেলওয়ের জিএম নিশ্চয়ই তাকে তা জানিয়েছেন।
বিষয়টি তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে ৭০ লাখ টাকার গন্তব্য। তবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে বলেছেন, যারা অভিযুক্ত, তারা যাতে তদন্তে প্রভাব ফেলতে না পারে, সেজন্যই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রোববার বেলা আড়াইটার দিকে রেল ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জিএম এবং কমান্ড্যান্টের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পরপরই বলেন, তাদের দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে রেলওয়ের চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়ার নানা অভিযোগ সম্পর্কে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি আরো জানান, ওমর ফারুকের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভনর্রকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুদককে সব ধরনের সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জিএম ইউসুফ আলী, কমান্ড্যান্ট এনামুল হক এবং এপিএস ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে কী অভিযোগে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে_ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, পত্র-পত্রিকায় আসা প্রতিবেদনের প্রাথমিক সত্যতা আমরা পেয়েছি। সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।
তবে কিসের ভিত্তিতে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলল, তা মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ জানাতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রেলের জিএম ইউসুফ আলী এবং কমান্ড্যান্ট এনামুল হকের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই নিয়োগ-পদোন্নতিবাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। বিশেষ করে চলতি বছরের শুরু থেকেই নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। রেল শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও মন্ত্রীকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তা গায়ে মাখেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদভিত্তিক চাকরির বিবরণ চেয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে ১৫ জানুয়ারি, পরে ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৪ মার্চ এবং সর্বশেষ ৯ এপ্রিল চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু এর একটিরও জবাব পাওয়া যায়নি। রেলের চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হলেও রোববারও 'ট্রেড শিক্ষানবিস' হিসেবে চট্টগ্রামে ২২৮ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে রেল ভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'আগেও বলেছি, এখনো বলছি, পদ গ্রহণ করা রাজনীতিবিদদের জন্য বড় কথা নয়।
বর্জন করাও সহজ। বিরোধী দলের কথায় পদ পাইনি, তাদের কথায় তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না। সিদ্ধান্ত যারা নিতে পারে, সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে। ' সাংবাদিকরা রেলমন্ত্রীকে আরো প্রশ্ন করতে চাইলে সুযোগ না দিয়েই তিনি চলে যান। এর আগে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন।
রোববার কর্মঘণ্টা শুরু হওয়ার আগে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেই তিনি রেলের মহাপরিচালক এবং তদন্ত কমিটির প্রধান আবু তাহেরের কক্ষে অবস্থান করেন। মহাপরিচালক ১১টার দিকে এসে তার জবানবন্দি নেন। এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্য রেল ভবনের যুগ্ম সচিব শশী কুমার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকরা ইউসুফ আলীকে প্রশ্ন করেন_ মন্ত্রী বললেন, রাত ১১টায় তার বাসায় যাওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে আপনি কেন রেলমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদারের সঙ্গে গিয়েছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইউসুফ আলী মৃধা বলেন, 'মন্ত্রীর বাসায় কারো মাধ্যমে যেতে হয়।
তাই আমি মন্ত্রীর এপিএস ফারুকের সঙ্গে গিয়েছিলাম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইউসুফ আলী বলেন, 'ফারুক আমাকে কোনো বাসা থেকে উঠিয়ে নেয়নি, রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়েছে। তবে কোন রাস্তা থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়েছে, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি। ' রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হক কেন তার সঙ্গে গিয়েছিলেন, 'এমন প্রশ্নের জবাবে ইউসুফ আলী মৃধা বলেন, জিএম হিসেবে আমার নিরাপত্তা দিতে তিনি আমার সঙ্গে গিয়েছিলেন। ' জিএমকে নিরাপত্তা দেয়াটা এনামুলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কিনা_ এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।
সাংবাদিকরা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি তা এড়িয়ে বলেন, 'আমি লিখিত দিয়েছি। সেখানেই সবকিছু আছে; মুখে বলার আর কিছু নেই। ' বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ইউসুফ আলী বলেন, 'আমার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ নেই। থাকলে আপনারা প্রমাণ করুন। ' গাড়িতে কার টাকা ছিল_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
ফারুক তো নিজেই স্বীকার করেছে, এটা তার টাকা। রেলের ডিজি এবং তদন্ত কমিটির প্রধান আবু তাহের সাংবাদিকদের জানান, আমরা লিখিত জবানবন্দি পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এখন তা বলা যাবে না। ১৫ দিনের সময়সীমা আছে। এর মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।
ইউসুফ আলীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে আবু তাহের জানান, এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তদন্তের পর প্রয়োজন হলে এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইউসুফ আলী মৃধাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শশী কুমার মহাপরিচালকের কক্ষ থেকে বেরিয়ে মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কক্ষে যান। মন্ত্রীর কক্ষে কিছুক্ষণ থেকে পরে আবার মহাপরিচালকের রুমে ফিরে আসেন তিনি। আকস্মিকভাবে মন্ত্রীর রুমে যাওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি শশী কুমার।
তবে সবার ধারণা, তদন্ত সংক্রান্ত কোনো বিশেষ ব্যাপারে আলোচনার জন্যই শশী কুমার মন্ত্রীর কক্ষে গিয়েছিলেন। সামনাসামনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ফিরে আসেন। এদিকে এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের রোববার সকাল ১১টায় তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। তবে দুপুরের পর তিনি তদন্তের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) আখতারুজ্জামান বরাবর লিখিত জবানবন্দি পাঠান। এতে বিজিবির হাতে আটক টাকার উৎস সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
তবে অর্থ প্রাপ্তি সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট এর সঙ্গে নেই বলে জানা গেছে। এদিকে অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে মন্ত্রীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগের দাবি উঠলেও বিষয়টিকে পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, অভিযোগ উঠেছে এপিএস এবং রেলওয়ের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এর সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা কোথায়, আর আমার পদত্যাগের প্রশ্ন আসে কেন? পদে থাকলে সুষ্ঠু তদন্তে বাধা সৃষ্টি হতে পারে কিনা_ এমন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী দাবি করেন, ঘটনার ব্যাপারে, এমনকি বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলেও তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।
বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রেলমন্ত্রী পুরো বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর সঙ্গে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রয়েছে। আমি এই কয়েক মাসের মধ্যেই রেলকে মানুষের কাছাকাছি নেয়ার জন্য বহু উন্নতি করেছি। এর মধ্যে যেমন অসৎ আমলা আছেন, তেমনি অসৎ-দুর্নীতিবাজ কন্ট্রাক্টর থেকে শুরু করে সবাই আছেন। বিজিবির সদর দপ্তরে গাড়ি ঢুকিয়ে দেয়া সম্পর্কে সুরঞ্জিত বলেন, বিজিবির সদর দপ্তর একটি সুরক্ষিত এলাকা। রাত ১০টায় সেই এলাকায় গাড়ি ঢোকে কিভাবে? ঢোকালো কারা? সারারাত থাকল কেন?_ এসব প্রশ্নের উত্তর তো আমাদের জানতে হবে।
এদিকে এই সাক্ষাৎকার দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এপিএসকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। তাদের ভাষ্য, মন্ত্রীর বহু দুর্নীতির সাক্ষী এপিএস ওমর ফারুক। তিনি মুখ খুললে মন্ত্রীর চেয়ার রাখাই দায় হয়ে পড়বে। তাই তাকে আগেভাগেই রাস্তায় ছুড়ে ফেলেছেন তিনি। তবে ওমর ফারুকের পরিচিতজনরা অনেকেই বলেছেন, রাস্তা থেকেই ওমর ফারুককে তুলে এনেছিলেন সুরঞ্জিত।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আবার তাকে রাস্তায়ই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। ফারুকের পরিচিতজন এবং মোহাম্মদপুর এলাকার আওয়ামী লীগের কয়েকজন সমর্থক জানান, এপিএস হওয়ার আগে ঢাকা শহরে ফারুক টিউশনি করে চলতেন। অথচ এপিএস হওয়ার পরপরই মোহাম্মদপুর পিসিকালচার হাউজিংয়ে একটি দামি ফ্ল্যাট এবং একটি প্রাইভেটকার কেনেন। তার শ্যালককে দেশের বাইরে পাঠান। পরে শ্যালকের নামে টাকা জমিয়েছেন তিনি।
রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার পিলখানায় টাকাসহ আটক হওয়ার ঘটনার তিন দিন আগে ৬ এপ্রিল ৩৫ লাখ টাকার গাড়ি কিনেছেন বলে জানা গেছে। ৬ এপ্রিল এপিএস ফারুক তার পরিচিতজনদের এ খবরটি মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে ফারুকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জমা সেই ৭০ লাখ টাকার উৎস খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে রোববার দেশের সব তফসিলি ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে ফারুকের নামে ব্যাংকে আর কোনো অ্যাকাউন্ট রয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
কোথাও কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওই হিসাব বিবরণী পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছে দুদক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, অ্যাকাউন্ট খোলার ফরমে (কেওয়াইসি) সম্ভাব্য লেনদেনের সঙ্গে ফারুকের জমা করা অর্থের পরিমাণের মিল না থাকায় সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে এ বিষয়ে রিপোর্ট করেছে। লেনদেনে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য খুঁজে পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তদন্তের জন্য চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের জন্য অনুরোধ করবে। জানা গেছে, ওমর ফারুক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ব্যাংককে জানিয়েছিল, দৈনিক ৫ লাখ টাকার বেশি লেনদেন করবেন না। এখন ৫ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হওয়ায় টাকার উৎস খুঁজে বের করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, ব্যাংকিং খাতে সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত করতে ২০০৫ সালে ৫ লাখের বেশি অঙ্কের টাকা ব্যাংকে জমা তোলার তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়। ২০০৭ সালে এই সীমা ৭ লাখ টাকা করা হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।