আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতের শঠতা, হুজুররা ব্লগ জানে না, সরকারের গণতন্ত্র কিংবা আমার দর্শন

ভালো আছি আজকের মতো ক্লিয়ার কাট কথা বলার সুযোগ হয়তো আর আসবে না । আমার অনেক আত্মীয় ও বান্ধবের চোখ এ লেখায় পড়লে তারা যারপরনাই রুষ্ট হবেন । ১. আমার দূর সম্পর্কের নানাত ভাই আজ হঠাৎ আমাকে কল করেছেন । প্রধান বিষয়বস্তু হলো, আমাদের এলাকার একমাত্র ডিগ্রি কলেজটায় সে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে ক্লার্ক পদের চাকরিটা বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে । যেহেতু তার চাচা এবং আমার নানা সে কলেজের সভাপতি ।

অপ্রধান বিষয় হলো, জামায়াতের এক উর্ধ্বতন লীডারের কাছ থেকে সে জানতে পেরেছে, হেফাজতে ইসলাম আসলে জামায়াতেরই ভিন্ননামের সংগঠন । মনে রাখতে হবে আমার এই নানাত ভাই গোষ্ঠীগতভাবে লীগের সাপোর্টার । তাবলীগও করে । গতকাল একই কথা বলেছে আমার ছোট কাকা । সে গতকাল তার এক বন্ধুর সাথে নয়াদিগন্তের অফিসে গিয়েছিলো ।

সেখানে তাদেরকে কয়েক পিছ করে অন্যদিগন্তের সাথে এই তথ্যও সরবারাহ করা হয়েছে যে, হেফাজতে ইসলামকে নামিয়েছে জাময়াত । আমি দু’জনকেই ৫ এপ্রিলের কালেরকণ্ঠে প্রকাশিত আল্লামা আহমদ শফির সাক্ষাৎকার পড়তে বলেছি । যেখানে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, জামায়াতের সহযোগী না বলে বরং আমাকে গুলি করুন । জামায়াতের বিরুদ্ধে কওমি আলেমদের অবস্থান কত দৃঢ় সেটা নতুন করে বোঝাতে গেলে সময় লাগবে । তারপরও বলি, কওমি মাদরাসার ছাত্রদের সাপ্তাহিক বক্তৃতা অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, এবং সাধারণ লেখনিতে অন্যতম বিষয়বস্তু থাকে ‘ভ্রান্ত মতবাদ’ ।

আর কওমি সমাজ বিশ্বাস করে, আধুনিক ভ্রান্ত মতবাদের প্রধানতম একটি হলো জামায়াতের মওদুদিবাদ । মাসিক রহমতের সম্পাদক মনযূর ভাই একবার বলেছিলেন, কওমি মাদরাসায় অন্তত একবছর সময় কাটিয়েছে কিংবা কোনো কওমি আলেমের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে এমন একজন ব্যক্তিও যদি কখনো জামায়াত করে, তাহলে বুঝতে হবে দেওবন্দ ব্যর্থ । এবং উপমহাদেশে দেওবন্দি চেতনার মৃত্যু ঘটবে সেদিন । তারপরও জামায়াত কী করে এই অপপ্রচার চালায় ? সন্দেহ নেই এর ফলে আগামি দিনে জামায়াত যে ফান্দে পড়বে সেখান থেকে উদ্ধারের আর উপায় থাকবে না ওদের । স্পষ্ট করে বলি, যুদ্ধাপরধীর বিচার সকল কওমি সমাজ চায় ।

আমিও চাই । সেটা বারবার পরিষ্কার করা হয়েছে । কিন্তু এ মুহূর্তে আমাদের কাছে, প্রত্যেক মুসলিমের কাছে, সকল ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে, এবং সর্বোপরি আমার কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো ইসলাম অবমাননার প্রতিকার করা । জামায়াতকে বলি, যে আদর্শ নিয়েই আপনারা লড়েন না কেন, এই শঠতা না ছাড়লে সময়কালে বগার মতো কেঁদেও পার পাবেন না । ২. ‘আমাদের সময়’ হুজুররা ব্লগ জানে না শীর্ষক বিষয় নিয়ে বেশ মুখরোচক একটি প্রতিবেদন ছেপেছে….কোথাকার কোন আবুল মাল ও গোলাম হোসেন মার্কা দুই কওমি ছাত্রকে ধরে এনে প্রমাণ (!) করেছে হুজুররা ব্লগ জানে না ।

একজন নাকি বলেছে, ব্লগ দিয়া ইন্টারনেট চালায় । শাহবাগ প্রজন্মের হুজুর বিদ্বেষীদের আড্ডায় আজকাল এর চেয়ে জমজমাট টপিক আর আছে কিনা জানা নেই । কওমি ছাত্ররা ব্লগ জানে কি না- সে আলোচনা করবো না । কারণ, কওমি হুজুরদের ইন্টারনেট কোনো অবস্থানই নেই- এমন ধারণা যদি ওদের থাকতো, তাহলে ওরা এটা নিয়ে এতো প্রচারণায় নামতো না- সেটা সবাই ভালো করেই জানে । খালি মাঠে গোল দিতে যায় বোকারা ।

আমি শুধু আমার কথা ও আমার আশপাশের ভার্সিটির ছাত্রদের ইন্টারনেট বিদ্যায় দৌড় কতখানি তা নিয়ে সামান্য আলোকপাত করবো । জ্ঞানী যারা বোঝে তারা শুধু ইশারায় । আমার ফুপাতো ভাই জগন্নাথে পড়ে । সাবজেক্ট সমাজ বিজ্ঞান । ও আমার ল্যাপটপ চালায় ।

ইন্টারনেট কাকে বলে ভালো কইরা জানে না...আমার কাছে শেখে প্রতিদিন.... আমার ছোট চাচা যখন অনার্স থার্ড ইয়ারে সেই একই ভার্সিটিতে পড়ে, তখন আমার কাছে লাগাতার দুইদিন ইংলিশ টেন্স এর দরস নিয়েছেন.... তিতুমীরেরর ছাত্রলীগের নেতা আমাদের বাড়ির আঙ্কেল আমাকে ব্লগে লিখতে নিষেধ করে, কারণ ওটা নাস্তিকতা । অথচ সে ইকোনোমিক্সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক নম্বর পেয়েছে । ...... স্টামফোর্ড ভার্সিটির ইংলিশের ছাত্র আমার বন্ধু আফজল গতকাল পলাশির মোড়ে আমার সাথে দেখা হলে পরে বললো, দোস্ত, তুই তো দেখি ভালই ইন্টারনেট নিয়া ঘাটাঘাটি করস, আমাকে একটু ব্লগ কি বুঝায়া দিবি ?..... আমার বন্ধু মিঠু গত বছর ম্যানেজমেন্ট নিয়া ঢাকা ভার্সিটি থেকে মাস্টার্স শেষ করেছে। রেজাল্ট ফার্স্ট ক্লাস । এখন ওয়ান ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ।

ও প্রায়ই আমাকে ওর বাসায় যেতে বলে ই-মেইলে ফাইল এটাচ্ড করার পদ্ধতিটা ওরে ক্লিয়ার বুঝায়া দিতে..... দক্ষিণ কমলাপুরে আমার বাসার নিচতলায় শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের ঘোরতর একজন বাস করেন । নিজেকে মস্টার্স পাশ শিক্ষিত দাবি করাতে তার জুড়ি নেই । পরশু রাতে অগ্রণী ব্যাংকে তার চাকরির আবেদন ফরম ইন্টারনেটে পূরণের দায়িত্বটা আমাকেই নিতে হয়েছে......... এই যাদের কথা বললাম, এরা কেউ হুজুর না । এদের একজনও দাড়ি-মোচ-পাঞ্জাবির লেশমাত্র গায়ে বুকে কোথাও ধারণ করেন না... বরং প্রতিদিন আমাকে বকেন...কারন, আমি লালবাগ কওমি মাদরাসা থেকে দাওরা শেষ করেছি...কাকরাইল মাদরাসা থেকে হেফজ পড়েছি..আর এখন ছোট্টমাপের সংবাদ কর্মী.... অথচ আমার পরিবার কতটুকু স্বচ্ছল সেটা দেখলে হয়তো আপনারও ঈর্ষা হবে..... আরো যদি কিছু লাগে তাইলে আমার প্রোফাইল ঠিকানায় ও মোবাইল নম্বরে একটু খোঁজখবর নিয়েন....“আমাদের সময়” মার্কা সূত্র লাগবে না.... তারপর ....হুজুররা ব্লগ জানে না..ব্লগ দিয়া ডাইল খায়....ফেসবুক দিয়া চা বানায়...এমন যা মন চায় কইয়া ষাড়ের মতো চিল্লাইয়েন.... ৩. আচ্ছা, আ.লীগ কি গণতান্ত্রিক দল না সমাজতান্ত্রিক ? বাংলাদেশের সংবিধান কি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে ? আজ এ মাসের ‘সাপ্তাহিক কাগজ’-এর প্রচ্ছদ নিবন্ধে লেখকের যে দাবি দেখলাম, তার মানে হলো, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বিশ্বাস হলো বাংলাদেশ দর্শন । আর ধর্মীয় চেতনা হলো পাকিস্তান দর্শন ।

তাহলে তো দেশের একশতাংশ ধর্মবিদ্বেষী ছাড়া বাকি সকল ধার্মিককে পাকিস্তান দর্শনের অনুসারী বলতে হয় । অদ্ভূৎ দার্শনিক তত্ত্ব ! এখন আ.লীগের বিষয়টা খোলাসা করা উচিত, তারা কি দেশের ৯৯ ভাগ মানুষের দর্শনে বিশ্বাসী নাকি এক ভাগ ধর্মবিদ্বেষীর দর্শনে ? মনে রাখা উচিত, এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু আদৌ ধর্মবিদ্বেষী নন, ছিলেনও না । তাহলে তাদের দেশপ্রেমের বাজি নিয়ে আজ যে সকল তরুণ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পেছনে ধর্মবিদ্বেষ ছড়িয়ে দেবার মহাযজ্ঞে নেমেছে, যারা কেউই মুক্তিযুদ্ধ দেখে নি, কারণ আমার মতো তখন তাদের জন্মই হয় নি, তারা কি আসলেই দেশপ্রেমি ? নাকি সেই নির্দিষ্ট একটি দর্শনপ্রেমি ? প্রশ্নটা না তুলে পারা যায় ? বাংলাদেশের আপামর মানুষের দর্শনকে যারা বাংলাদেশ দর্শন না বলে পাকিস্তান দর্শন বলে, তাদের কার্মকাণ্ড নিয়ে সন্দেহ হওয়া অমূলক নয় । আজকাল হাটে-মাঠে-ঘাটে সেই সন্দেহের কথাই উচ্চারিত হচ্ছে । আ.লীগের নেতৃবৃন্দ ও স্বয়ং নেত্রীর মুখেও সেই সন্দেহের বুলি উপচে পড়ছে এখন ।

আ.লীগ কি ধর্মনিরপেক্ষ দল ? তাহলে ওলামালীগ তাদের সহযোগী সংগঠন হয় কী করে ? ধর্মমুক্ত বামপাড়ার নেতারা তাদের সঙ্গে একাকার হয়ে নির্বাচন করে কী করে ? আ.লীগের নেতৃবৃন্দ কি আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস লালন করে না ? তাহলে তাদের ভোটে কী করে সংবিধান থেকে এই অংশটুকু বাদ যায় ? ডাল মে কুছ কালা হ্যায়, না ! হাসানুল হক ইনু মন্ত্রীত্ব নেয়ার সময় তার ছেলের সাথে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর যেই আলাপচারিতা প্রকাশিত হয়ে খোদ মঞ্জুর জবনিতে, সেটা হলো একটা আদর্শের আন্দোলনে তারা এক ধাপ এগিয়ে গেছে । সমাজতন্ত্রীরা চোরের মার বড় গলার মতো বলে, হুজুরদের মধ্যে অনেক দল । আর ওদের মধ্যে বাসদ, জাসদ, ওয়াকার্স, জনযুদ্ধ, লালপতাকা- এসব কি ? শেষ দুটি তো সরাসরি জঙ্গি তৎপরতা চালায় । পত্রিকায় আসে, ওদের কাছে নাকি মেশিনগ্যান থেকে রকেট ল্যাঞ্চার পর্যন্ত আছে । ওরা কোনমুখে এদেশ থেকে জঙ্গী তাড়ানোর কথা বলে ? বরং খোঁজ নিলে দেখা যাবে ওরাই এদেশে সর্বপ্রথম জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটিয়েছে ।

সমাজতন্ত্রীদের সমর্থন এ দেশে কতটুকু ? আমাদের এলাকায় বাড়ি রাশেদ খান মেননের । যেখানে সে নির্বাচনে পেতো ১ ভোট । নির্বাচনী এজেন্টকে যখন আমরা ধরে বসলাম, ওই ১টা ব্যালট কি তুমি মেরেছিলে ? সে অবাক হয়ে জবাব দিয়েছিলো, না তো ! কেন ১ ভোট পেয়েছে নাকি সে ? নির্বাচনের পরে জুতোর মালায় সংবর্ধিতও হয়েছে মেনন । এসব আমার নিজ চোখে দেখা । আর এখন ঢাকার এমপি ।

সেটাতো সেই আ.লীগের বদৌলতেই, নাকি ! তাহলে তো আবার প্রশ্ন করতে হয়, আ.লীগ কি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে নাকি সমাজতন্ত্রে ? কওমি আলেম ও যুগান্তরের সাড়াজাগানো সাংবাদিক শাকের হোসাইন শিবলি ভাইয়ের একহাজার পৃষ্ঠার প্রামাণ্যগ্রন্থ ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে’ (আল-ইছহাক প্রকাশনী) বইটি সময় হলে পড়ে নেবেন । তাতে কওমি সমাজের একাত্তরের অবদান, জামায়াতের ভণ্ডামি, বামদের চেহারা একত্রে তিনটাই দেখে নিতে পারবেন । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.