গত ১৩-০৪-১২ তারিখ আমাদের রেলমন্ত্রী বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের একটা সাক্ষাতকার দেখলাম এটিএন বাংলায়। সেখানে নিয়োগ বানিজ্যের সমাধান প্রসঙ্গে বাবু বললেন 'এখন পূর্বের নিয়োগ বাদ দিয়ে নতুন করে আবার নিয়োগ দিলেই সকল সমস্যা সমাধান হয়'। উপস্থাপক তখন বললেন, 'তাহলে যারা অনেক টাকা পয়সা দিয়েছেন তাদের কি হবে?' তখন মন্ত্রী 'সৎ দুর্নীতিবাজ ও অসৎ দুর্নীতিবাজ' কথাটা টেনে আনলেন। অর্থাৎ যারা টাকা খেয়ে কাজ করে তারা হলেন সৎ দুর্ণীতিবাজ আর কাজ না করলে হয় অসৎ দুর্ণীতিবাজ। সে হিসেবে যেহেতু মন্ত্রীর জন্য বাজেটকৃত টাকা তার বাড়ি পর্যন্ত যাবার আগেই ধরা খেয়ে গেল, কাজেই তাকে সৎ বা অসৎ কোন স্থান দেওয়া প্রসঙ্গত কোন পর্যায় পড়ে না।
তারচেয়ে বরং পুনরায় নিয়োগ দিলে তখন যদি আবার কোন পর্যায় ফালানে যায় তাকে।
বর্তমান সময়ে নিয়োগ বা যে কোন কাজের ক্ষেত্রে আমরা 'ওভারট্রাম' পদ্ধতির প্রচলন দেখতেছি অর্থাৎ যেকোন একটা নিয়োগের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই লবিং করতে হবে, তেল মাখাতে হবে, পরীক্ষা দিতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত কড়ি ঢালতে হবে। (এর কোন প্রমাণ দেয়া সম্ভব নয়, কিন্তু বাস্তবতা হল টাকা বা লবিং ছাড়া শুধু মেধার জোড়ে আপনার চাকরী বর্তমানে ১০০% ভাবে অসম্ভব যা সবাই মানে, যা একজন বেকারই সবচেয়ে বেশি জানে)। কিন্তু দালালের চাহিদানুযায়ী টাকা দিয়েও আপনি বর্তমানে নিশ্চিত হতে পারবেন না যে আপনার চাকরী বা কাজটা হবে। কারন, বর্তমান সরকারের মধ্যে অনেক কোরাম আছে, যেমনঃ উপদেষ্টা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সচিব, হুইপ, স্পিকারমন্ডলী, প্রভাবশালী এমপি, এর বাহিরেও কিছু লোক আছেন যাদের কেউ কেউ কোন পদ ধারণ করেন অথবা করেন না কিন্তু যাদের উপরে কথা বলার কারো কোন সাহস নেই।
কাজেই আপনাকে কড়ি ছাড়ার আগে চিন্তা করতে হবে আপনি কোন কোরামে আগাবেন। নয়ত আপনার উপর ওভারট্রাম দিয়ে আপনার জমি বেচা টাকাটা মাটি হয়ে যেতে পারে যে কোন সময়ে।
এখন প্রশ্ন হল, যে দালালরা তদবির করেছেন কিন্তু ওভারট্রামের খেলায় হেরে গেছেন তারা কি সৎ না অসৎ দুর্ণীতিবাজ?
না তাদেরকে আমরা অসৎ বলব না, কারন তারাতো চেষ্টা করেছিলেন। তারা কোন কোন ক্ষেত্রে চাকুরীপ্রত্যাশীর টাকার কিছু অংশ কেটে রেখে কিস্তিতে বাকি টাকা ফেরতও দিয়ে দিছে এমন রেকর্ডও আছে। সেই সকল দালালদের আমার স্বশ্রদ্ধ সালাম।
তবে আমাদের সরকার কিন্তু সেই সব দালালদের বা ট্রাম ওয়ালাদের মানসম্মান বাঁচাতে আন্তরিক। তাই প্রায় সব নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘোষিত পদের চেয়ে বেশি সংখ্যক নিয়োগ দিয়ে থাকেন যাতে সব কোরামের সুপারিশ রক্ষা করা যায়।
একটা উদাহরনঃ (এটা শুধুই একটা কল্পনা)। ব্যক্তি হিসেবে আমি কখনো হিন্দু মুসলমানকে আলাদা দেখি না কারন ধর্মের প্রতি আমি সবসময়ই উদাসীন। কিন্তু বাস্তবতাকে কখনো উপেক্ষা করার সাহস আমার নাই।
ইদানিং দেখতেছি দেশে হয়তো হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ অথবা মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মের লোকদের চেয়ে অনেকগুন বেশি মেধাবী হয়ে উঠেছে। নয়তো কিছুদিন আগের পুলিশের এস আই নিয়োগের ফলাফলে দেখবেন ৮৫% এর বেশী নিয়োগ পাওয়া লোক হল হিন্দু। যা স্পষ্টতঃ নির্দেশ করে সরকার ধর্ম নিরপেক্ষতার নাম করে কোন একটা ধর্মকে বেশি ব্যবহার করেছে এবং লবিং ছাড়া নিয়োগ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। কাজেই ব্যক্তি সুরঞ্জিত বাবু (যদিও তিনিই সবচেয়ে বেশি ধর্মনিরপেক্ষতা এমনকি সংবিধানে ধর্মনিরেপেক্ষতা নিশ্চিত করতে দেশের মধ্যে আন্দোলন করার কথাও বলেছেন) একজন সৎ দুর্ণীতিবাজ হিসেবে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুদের অনেক সুবিধা দিতে সক্ষম হয়েছেন বলে বিশ্বাস করি। আপনি আমাদের আইডল হিসেবে থাকবেন আশা করি।
সুরঞ্জিত বাবু তার দিকের ছোড়া অভিযোগ সম্পর্কে বলেছেন দুদকের তদন্ত তিনি আশা করবেন। আমাদের বিগত দিনের অভিজ্ঞতা জানান দেয় দুদক আবুল হোসেনকে দুর্ণীতিবাজ হিসেবে নয় বরং একজন নিষ্পাপ ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণিত করতে তদন্ত করেছিল। শেষ পর্যন্ত সরকারের কোন একটা মহলের দ্বারা লিখিত স্ক্রিপ্ট গণ-মাধ্যমকে শুনিয়েছিল। আপনার ক্ষেত্রে যে তেমনটি হবে না কেমন করে তা বলব। তারচেয়ে বরং যদি সৎ সাহস থাকে আপনার তদন্ত আপনি নিজেই করে গণ-মাধ্যমকে উপযুক্ত প্রমাণ ও যুক্তিসহ বুঝিয়ে দিন আপনি নির্দোষ।
দেখবেন মানুষ খুব সহযেই মেনে নিবে। কারন মানুষ আপনার মত একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে দুর্ণীতিবাজ হিসেবে একদমই দেখতে চায় না। যদি আপনি নিজেই প্রমাণ করতে পারেন যে আপনি সৎ তাহলে আপনার চেয়ে দেশের প্রতিটি সত্যিকার দেশপ্রেমিক লোকজন বেশি খুশি হবে এবং ধরে নিবে এইবার বুঝি রেলওয়ে খাত লোকসানের হাত থেকে বেঁচে গিয়ে লাভের মুখ দেখবে এবং আপনিই সেই লোকটি যার অপেক্ষায় বাংলাদেশ রেলওয়ে এতদিন যাবৎ চোখের জল ফেলেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।