রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডকে’ ‘ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ’ বা আইসিএক্স লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। নতুন লাইসেন্স ইস্যু করা এ প্রতিষ্ঠানটির মালিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত। নতুন এ লাইসেন্স নেয়ার জন্য তাকে বিটিআরসিতে ফি বাবদ জমা দিতে হয়েছে ৫ কোটি টাকা। রেলওয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারির দু’দিন পর গত বৃহস্পতিবার সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশনের নামে অত্যন্ত লোভনীয় এ লাইসেন্স ইস্যু করা হলো। এর ফি বাবদ পরিশোধিত টাকার উত্স নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ চাকরিজীবী সৌমেন এতো টাকা কোথায় পেলেন? কিভাবে পরিশোধ করলেন আইসিএক্স লাইসেন্স ফি’র ৫ কোটি টাকা? তাছাড়া আইসিএক্স অবকাঠামো তৈরিতে আরো অন্তত ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গতরাতে দৈনিক আমার দেশকে বলেন, ‘আমার ছেলে একজন আইটি ইঞ্জিনিয়ার (প্রকৌশলী)। তিনি লাইসেন্স নিয়েছেন এটা অনরেকর্ড, এতে লুকানোর কিছু নেই। বিটিআরসি অনেককে লাইসেন্স দিয়েছে। সেই সঙ্গে তার ছেলেকেও দিয়েছে।
এতে দোষের কী আছে। ’ লাইসেন্সের জন্য প্রদেয় ৫ কোটি টাকার উত্স নিয়ে নানা প্রশ্ন ও নির্বাচনী হলফনামায় তার বার্ষিক আয় মাত্র ৭ লাখ টাকা, যা আইসিএক্স লাইসেন্সের জন্য ৫ কোটি টাকা ফি পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকার উত্স পরিষ্কার। রাজস্ব বিভাগে আমারসহ পুরো পরিবারের আয়কর রিটার্ন রয়েছে। সেখানেই বলা আছে টাকার উত্স।
’ তিনি আরও বলেন, ‘একটু বেকায়দায় পড়েছি তো, তাই অনেকেই অনেক প্রশ্ন তুলছেন। ’
সুরঞ্জিতের ছেলে সৌমেন সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি প্রায় ৬ মাস আগে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান অগ্নিসিস্টেম লিমিটেডে আইটি এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করতেন। সৌমেন অগ্নিসিস্টেমের কাজ করার আগে আরও দুটি আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। তার সর্বশেষ বেতন ছিল মাসে সাকুল্যে ৫০ হাজার টাকা। গত ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি আইজিডব্লিউ, আইআইজি, আইসিএক্সসহ বিভিন্ন লাইসেন্সের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
ওই সময় সৌমেন চাকরি ছেড়ে দিয়ে ‘সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশন’ গঠন করেন। ওই প্রতিষ্ঠানটি বিটিআরসিতে একটি ‘আইসিএক্স’ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। লাইসেন্সের নির্ধারিত ফি বাবদ ৫ কোটি টাকা পরিশোধের পর গত বৃহস্পতিবার বিটিআরসি তার প্রতিষ্ঠানের নামে নতুন একটি লাইসেন্স ইস্যু করে। গতকাল কয়েক দফা যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অগ্নিসিস্টেমের অফিসে গেলে সেখান থেকে জানানো হয় তিনি প্রায় ৬ মাস ধরে ওই অফিসে যাচ্ছেন না।
বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানান, টেলিযোগাযোগ খাতে অত্যন্ত লাভজনক লাইসেন্স আইসিএক্স বা ‘ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ। এর কাজ হলো এক অপারেটরের সঙ্গে অন্য অপারেটরের সংযোগ করা। এর বিনিময়ে কলচার্জের নির্দিষ্ট একটি অংশ তারা পায়। এতদিন ধরে বিটিসিএল, গ্যাটকো ও এমঅ্যান্ডএইচ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান আইসিএক্স সেবা দিয়ে আসছিল। এরসঙ্গে যুক্ত হবে সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশনসহ নতুন লাইসেন্স পাওয়া অন্য আরও ২১টি প্রতিষ্ঠান।
আইসিএক্স লাইসেন্সের জন্য এককালীন জমা দেয়া ৫ কোটি টাকার উত্স নিয়েও তৈরি হয়েছে নানা কৌতূহল। গত মার্চ মাসের ২ তারিখ থেকে এপ্রিল মাসের ২ তারিখের মধ্যে ওই পরিমাণ টাকা গুপ্ত টেলিকমিউনিকেশনের নামে বিটিআরসিতে জমা হয়েছে। সৌমেনের বাবা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তার আয় উল্লেখ করেছেন বার্ষিক ৭ লাখ টাকা। আয়ের উত্স দেখানো হয়েছে বাড়ি ভাড়া, মত্স্যখামারা ও কৃষি জমি।
বিটিআরসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, আইসিএক্স লাইসেন্স নেয়ার পর ব্যবসায়িক উদ্দেশে ব্যবহার করতে একটি টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামোর জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা।
বিটিআরসির কাজ হলো আবেদনের যথাযথ নিয়ম দেখা ও লাইসেন্স ফি আদায় করা। টাকার উত্স জানা বিটিআরসির কাজ নয়।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।