আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আফগানিস্তান

আফগানিস্তান, যার সরকারী নাম আফগানিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র । দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। রাষ্ট্রটি ইরান, পাকিস্তান, চীন, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যস্থলে একটি ভূ-বেষ্টিত মালভূমির উপর অবস্থিত। আফগানিস্তান একটি রুক্ষ এলাকা - দেশটির অধিকাংশ এলাকা পর্বত ও মরুভূমি আবৃত। পর্বত উপত্যকাগুলি আর উত্তরের সমভূমিতেই কেবল গাছপালার দেখা মেলে।

এখানকার গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া গরম ও শুষ্ক এবং শীতকালে এখানে প্রচণ্ড শীত পড়ে। কাবুল দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। ১৯৭০-এর দশকে দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের উল্লেখযোগ্য মজুদ আবিষ্কৃত হয়। এছাড়া পেট্রোলিয়াম ও কয়লাও এখানে পাওয়া যায়। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তামা, লোহা, বেরাইট, ক্রোমাইট, সীসা, দস্তা, গন্ধক, লবন, ইউরেনিয়াম ও অভ্রের মজুদ আছে।

আফগানিস্তান প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিস্থল হিসেবে পরিচিত। বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন, এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হল পশতু জাতি।

এরা আগে আফগান নামেও পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রটির সব নাগরিককেই বোঝায়। ২০০৩ সালে আফগানিস্তানের মোট শ্রমিক সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ। এদের প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষিকাজ বা পশুপালনের সাথে জড়িত। যুদ্ধের কারণে আরও অনেক ধরনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

বেকারত্ব এবং দক্ষ শ্রমিক ও প্রশাসকের অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা। ১৯শ শতকে দেশটি ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ও রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যে এক বিরাট খেলার মধ্যবর্তী ক্রীড়ানক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৯৭৩ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে সামরিক অফিসারেরা রাজার পতন ঘটান এবং একটি প্রজাতন্ত্র গঠন করেন। ১৯১৯ সালে তৃতীয় ব্রিটিশ-আফগান যুদ্ধশেষে আফগানিস্তান দেশটি ব্রিটেন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন করে দেখা গেছে উত্তর আফগানিস্তানে প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে মনুষ্য বসতি ছিল।

ধারণা করা হয় আফগানিস্তানের কৃষি খামার সম্প্রদায় বিশ্বের প্রাচীনতমগুলির একটি। আফগানিস্তানের আরেকটি পরিচয় অবৈধ আফিম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এটি মায়ানমারকে হটিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণ আফিম উৎপাদক দেশে পরিণত হয়। আরও তৈরি হত হাশিশ। ২০০০ সালের জুলাই মাসে তালেবান সরকার ইসলামে আফিমের ব্যবহার নিষিদ্ধ বলে পপি গাছের চাষ বন্ধ করে দেয়।

১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে আফগানিস্তানে এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিপ্রায়ে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং এর সাথে সাথে দেশটিতে আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে তালেবান নামের একটি মুসলিম মৌলবাদী গোষ্ঠী কাবুলের দখল নেয়। তালেবান সন্ত্রাসবাদী দল আল-কায়েদাকে আফগানিস্তানে আশ্রয় দেয়।

১১ই সেপ্টেম্বর, ২০০১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং ২০০১-এর শেষে তালেবানদের উৎখাত করে। ২০০৪ সালে আফগানিস্তানের সংবিধান নতুন করে লেখা হয় এবং একটি রাষ্ট্রপতি-ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা চালু হয়। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর মধ্য এশিয়া থেকে এই এলাকায় লোক আসতে শুরু করে। এদের অধিকাংশই ছিল আর্য, যারা ইরান ও ভারতেও বসতি স্থাপন করেছিল। তখন এই এলাকার নাম ছিল আরিয়ানা।

খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পারস্য সাম্রাজ্য আরিয়ানা দখল করে। ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহামতি আলেকজান্ডার পারস্যের সম্রাটকে পরাজিত করে আরিয়ানার পূর্ব সীমান্ত ও তারও পূর্বে চলে যেতে সক্ষম হন। ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর অনেকগুলি রাজ্য তাঁর এশীয় সাম্রাজ্যের দখল নেয়ার চেষ্টা করে। জহিরুদ্দীন মুহম্মদ বাবর ছিলেন মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর আর বাবার দিক থেকে তৈমুর লঙের বংশধর। তিনি ১৫০৪ সালে কাবুল দখল করেন এবং তারপর ভারতে গিয়ে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।

২০০১-এর ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তার ৬ মাস পরে একটি মধ্যবর্তী সরকার গঠিত হয় যা ২০০৪ সালে একটি নতুন সংবিধান পাশ করে। আফগানিস্তান প্রশাসনিকভাবে ৩৪টি প্রদেশ বা ওয়েলায়েত-এ বিভক্ত। প্রতি প্রদেশের নিজস্ব রাজধানী আছে। প্রদেশগুলি আবার জেলায় বিভক্ত।

একেকটি জেলা সাধারণত একটি করে শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে গঠিত। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দেশটির পূর্ব-কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত। অন্যান্য প্রধান শহরের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণের কান্দাহার, পশ্চিমের হেরত এবং উত্তরের মাজরে শরীফ। ছোট শহরগুলির মধ্যে আছে পূর্বের জালালাবাদ, কাবুলের উত্তরে অবস্থিত চারিকার, এবং উত্তরের কন্দোজ ও ফয়েজাবাদ। আফগানিস্তানের বেশির ভাগ প্রধান নদীর উৎপত্তি পার্বত্য জলধারা থেকে।

দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক মৌসুমে বেশির ভাগ নদী শীর্ণ ধারায় প্রবাহিত হয়। বসন্তে পর্বতের বরফ গলা শুরু হলে এগুলিতে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। বেশির ভাগ নদীই হ্রদ, জলাভূমি কিংবা নোনাভূমিতে পতিত হয়। এদের মধ্যে কাবুল নদী ব্যতিক্রম; এটি পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানের সিন্ধু নদের সাথে মেশে, যা পরে ভারত মহাসাগরে গিয়ে পতিত হয়। আফগানিস্তানের উদ্ভিদরাজি সংখ্যায় অল্প কিন্তু বিচিত্র।

পর্বতে চিরসবুজ বন, ওক, পপলার, হেজেলনাট ঝাড়, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি দেখা যায়। বরফজমা ভোর থেকে দুপুরে ৩৫° তাপমাত্রা ওঠা বিচিত্র নয়। অক্টোবর ও এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। মরুভূমি এলাকায় বছরে ৪ ইঞ্চিরও কম বৃষ্টি পড়ে। অন্যদিকে পর্বত এলাকায় বছরে জলপাতের পরিমাণ ৪০ ইঞ্চিরও বেশি, তবে এর বেশির ভাগই তুষারপাত।

পশ্চিমের হাওয়া মাঝে মাঝে বিরাট ধূলিঝড়ের সৃষ্টি করে, আর সূর্যের উত্তাপে স্থানীয় ঘূর্ণিবায়ু ওঠাও সাধারণ ঘটনা। আফগানিস্তানে বহু বিচিত্র জাতির বসবাস। এদের প্রায় সবাই মুসলিম। আফগানিস্তানের সঙ্গীত মূলত ঐতিহ্যবাহী লোক সংগীত, গাথা ও নৃত্য। তার দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র রোহাবকে পশ্চিমের ভায়োলিন বা চেল্লোর পুরানো রূপ হিসেবে মনে করা হয়।

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ১৯৩১ সালে স্থাপিত হয় এবং সোভিয়েতদের সাথে যুদ্ধে ও পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের সময় এর বহু বই চুরি হয়ে যায়। জাতীয় আর্কাইভও লুট হয়। তালেবান সেনারা ইসলামী মৌলবাদ প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে গ্রান্থাগার ও যাদুঘরের বহু বই পুড়িয়ে ফেলে। ইউকিপিডিয়া থেকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.