চোখের দেখা , মনের কল্পনাঃ আমার লেখা ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই আঁকাআকিতে আগ্রহী । স্কুলের আর সব ছেলেদের মত মুখ বেজার করে ড্রইং ক্লাস করতো না । ঐ ক্লাস ছিল তার একটুকরো স্বাধীনতা । বিকেলের পর বিকেল , রাতের পর রাত পড়াশোনার ফাঁকে , খাতার নিচে একটা কাগজ নিয়ে ঘুরত।
দুপুরে মা ঘুমালে চুপি চুপি উঠে ছবি আঁকত ।
মা বিরক্ত হয়ে মেরে ছেলেকে আবার বিছানায় শুইয়ে দিত ।
- কত ছবি আঁকতে পারিস তুই !!! ছবি আঁকা দিয়ে কিছু হবে না । পড়াশোনা কর ! ছবি এঁকে পয়সা হয়না । ফকির থেকে যাবি । (মা, বাবার উক্তি )
এধরনের কথা শুনতে শুনতে ছেলেটার সব আগ্রহ চাপা পড়ে যায় সময়ের ভারি পাথরের তলে ।
সেই ছেলে এখন বড় হয়েছে । তবে স্বাধীন নয় । সে চেয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় পরীক্ষা দিতে । পারেনি । নিজের সব ইচ্ছা , সাধ বিসর্জন দিয়ে এমন এক বিষয়ে পড়াশোনা করছে যেটাতে সে কোন আগ্রহ পায় না ! মা হয়তো বুঝে গেছে ছেলের অনাগ্রহের কথা ।
তাই এখন তাকে বলতে শোনা যায় তার স্বামীকে –
তুমি তো পড়া পড়া করেই ছেলের আর সব প্রতিভা নষ্ট করলে ! আঁকাআঁকি তে দিলেও এখন পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করতে পারতো !
বাবা এখনও বুঝেন নি ! বলেন – আঁকাআঁকি করে কি করবে ? যেটা পড়ছে সেটা পড়ুক । টাকা ছাড়া জীবন চলবে না! এই সাবজেক্টে চাকুরির সম্ভাবনা বেশি ।
সেই মা আর বাবাকে বলছি – ছেলে আপনার এখন হয়তো কিছু করবে । হয়তো কিছুই করতে পারবে না । সে তার নিজের জগত হারিয়েছে ।
আপনারা অজান্তে কিংবা জেনে তার এত বড় ক্ষতি কিভাবে করতে পারলেন ? ছেলেটার জীবন ( আঁকাআঁকি ) কেড়ে নিলেন ! চারুকলায় পড়তে পারলে হয়তো ছেলেটা হতাশা থেকে মুক্তি পেত । সেই ছেলেই জানে কি ভীষণ অনাগ্রহ আর অনীহা নিয়ে জোর করে অন্য একটা বিষয়ে পড়াশোনা করছে ! রেসাল্ট ক্রমেই খারাপ হচ্ছে । সে জন্য কি তাকে দোষ দেয়া যায় ?
পহেলা বৈশাখের আগে চারুকলার প্রস্তুতি দেখে সে এখন চোখের জল আটকাতে পারেনা । সেও থাকতে পারতো ওদের সাথে । সেও হতে পারতো একজন নবীন শিল্পী ।
কিন্তু ......!!! অনেক দেরি হয়ে গেছে ।
এই যে একজন বাবা , একজন মা - আপনাকে বলছি – সন্তানের স্বপ্ন , আশার কোন মূল্যই কি আপনার কাছে নেই ? শুধু চেনা লোকের কাছে গর্ব করে বলতে পারবেন যে আমার ছেলে অমুক ব্যাঙ্কের ম্যানেজার – এই আশায়ই কি ছেলেটাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছেন !
ছেলে যে আপনার কবেই মরে গেছে ! যাকে দেখছেন সে আপনার আজ্ঞাবাহি পুতুলমাত্র । হয়তো এমন সময় আসবে চাবি দিলেও পুতুল আর নাচবে না , বিকল হয়ে যাবে । এই দেখার জন্যই কি আপনি ওর স্বাধীনতা কেড়ে নিলেন ?
একটু ভাবুন । দয়া করে একটু সুযোগ দিন সন্তানকে ।
একটু ভরসা করে দেখুন না ! আপনার আশার চেয়ে অনেক বেশি উপহার দেবে সে আপনাকে । একটু সহযোগিতা করুন । নিরাশ হবেন না ।
শেষ করব একটা জলজ্যান্ত আশার আলো দিয়ে – আমার পরিচিত একজন । যে সবসময় ক্যামেরা নিয়ে চলাফেরা করে।
যেখানেই ভিন্ন কিছু নজরে পড়ে , দাঁড়িয়ে যায় ছবি নিতে ।
পড়াশোনা করছে সাথে তার শখটাকে ও জিইয়ে রাখছে । আমি তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ও জীবনে কতটা স্বাধীন আছে , কতটা সুখি তাদের চেয়ে যারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধুঁকে ধুঁকে পড়াশোনা করছে সম্পূর্ণ অচেনা একটা বিষয়ে ।
ওর কিছু আলোকচিত্র দিয়ে দিলাম । দেখে নিতে পারেন ।
বাবা মা রা , আপনাদেরও বলছি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।