প্রিয় পাঠক,
শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের পোষ্ট। মনের অজান্তেই হাঁটতে হাঁটতে চলেগিয়েছিলাম আমার ফেলে আসা অতীতের কাছে। হাজারো সুখ-দুঃখের স্মৃতির মাঝে একটি স্মৃতিকে হাসতে দেখলাম। সে আমাকে ইশারা দিয়ে ডাকছিল। হল স্মৃতিচারণ।
তারই কথা বলবো আজ আপনাদেরকে ।
তখন আমি সবে মাত্র ক্লাস টেন-এ উঠেছি। খবরের কাগজে “জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড” এ রেজিষ্ট্রেশন এর বিজ্ঞপ্তি দেখলাম। বাসায় বিষয়টা জানিয়ে সম্মতি নিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করলাম। অতঃপর আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য চিঠি আসে।
ভেন্যু যশোর জিলা স্কুল, যশোর। আমরা থাকি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানাতে। তাই, আগের দিন যশোরে পৌঁছাতে হয়েছিল। তারপর সেখান থেকে ২য় রানার আপ হয়ে নির্বাচিত হলাম ঢাকাতে অনুষ্ঠিতব্য “জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড” এর জন্য। ভেন্যু-সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারী স্কুল, ঢাকা।
বিজ্ঞান বিভাগের এক মোটামুটি ছাত্র হিসেবে এটা ছিল আমার জন্য অনেক বড়। জাতীয় অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারী। সেজন্য দারুন উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে ছিলাম। তখন আমার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ঢাকায় যাওয়া মানে বিশাল ব্যাপার। আবার, তারপর থাকি মফস্বল এলাকায়।
ঢাকা শহরে যাব ভেবে বেশ অন্যরকম এক অনুভূতি হচ্ছিল। ঢাকাতে গিয়ে উঠলাম ফুফুর বাড়িতে। ওখানে ওনাদের নিজস্ব ৬ তলা বাড়ি। আমার ফুফা বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক বড় পোস্টে চাকরি করেন। তারপর পরীক্ষা দিলাম।
খুব একটা ভাল হয়েছিল না। এজন্য যাত্রা এখানেই শেষ। চান্স পাইনি। যাইহোক, আসল কাহিনী এর পর। ওখানে আয়োজনটা এতই জাঁকজমকপূর্ণ ছিল যে আমি সম্পূর্ণভাবে বিস্মিত হয়েছিলাম।
এত সুন্দর একটা অনুষ্ঠানে কোন দিন অংশগ্রহণ করবো তা স্বপ্নেও ভাবিনি। ভোজনরসিক হিসেবে আমার নাম ছিল। আর ঐ অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন ছিল খুবই ভালো। যাইহোক,১১ তারিখে পরীক্ষা হল এবং ফলাফল ১২ তারিখে। ১২ তারিখ ১টার সময় ফলাফল ঘোষনা হল।
আমার নাম আসলো না। অনুষ্ঠানে ছিলাম আমি আর আমার ফুফু। ফুফুর সাথে আমি বাসায় আসার জন্য রওয়ানা হব। সেই সময় ওরা একটা খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দিল। গত দিন এই সময়েই ওরা আমাদের হাতে লাঞ্চ প্যাকেট দিয়েছিল।
তাতে বিরিয়ানী ছিল। খুবই সুস্বাদু। ভেবেছিলাম আজকেও মনে হয় তাই। এজন্য খুব আনন্দ হচ্ছিল। এত সুস্বাদু খাবার জীবনে খাইনি, তাই।
প্যাকেটটা দেখে ভাবলাম বাসাতে গিয়ে খাব কারণ ওখানে তখন খাবার তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না। বাসায় ফেরার কথা ছিল ফুফুর গাড়িতে করে। কিন্তু সংগত অসুবিধার কারণেই গাড়ি ঐ সময় প্রস্তুত ছিল না। আমাদেরকে বাসে করে ফিরতে হল। অনেকদিন বাসে না ওঠার কারণে আমার ফুফকেও অনেক কষ্ট হল।
বাসে খুব ভিড় ছিল আর আমার কাছে সেরকম কোন ব্যাগ ছিল না। তাই প্যাকেটটা হাতেই ধরে ছিলাম। এতটাই, যত্ন ও শক্ত করে প্যাকেটটা ধরেছিলাম যে মাঝে মধ্যে বাসে শক্ত ব্রেক চাপলেও বাসের সাপোর্টিং রড থেকে একহাত সরলেও অপর হাত থেকে প্যাকেটা একটুও এদিকওদিক হচ্ছিল না! এভাবে অতি যত্ন সহকারে বাসায় আনলাম। বাসায় ঢুকে প্যাকেটটা খাবার টেবিলের উপর রাখলাম। ফুফু জানতে চাইলেন যে ওতে কি ছিল।
আমি বললাম - বিরিয়ানী।
- আচ্ছা, তাহলে গোসল সেরে আস, আমি এটা টেবিলে গরম করে দিচ্ছি।
শুনে তো আমি খুবই খুশি। তারপর গোসল সেরে আসতেই ফুফু বললেন,
- আব্বু, বিরিয়ানী তো দেয়নি; দিয়েছে একটা আপেল, নাশপাতি আর স্যান্ডউইচ!
শুনে মনে মনে আরো বেশী খুশি হলাম। বিরিয়ানী মাঝে মধ্যে খেয়েছি।
নাশপাতি কি জিনিস এটা তখন বুঝতে পারিনি। তবে টিভির মধ্যে মাঝেমধ্যে দেখেছি স্যান্ডউইচ খেতে। শুনেছি খুবই সুস্বাদু। মফস্বল এলাকায় থাকি বলে এই জিনিসটা কখনো খাইনি। তাই, এটা আমার কছে অনেকটা স্বপ্নের চেয়েও দুর্লভ।
ভাবলাম এবারই মনে হয় প্রথম জীবনে স্যান্ডউইচ খাব! আমার ফুফু একটু বিরক্ত হয়ে বললেন,
- এখন এগুলো থাক। বিকেলে গরম করে দেব। এখন ভাত খাও, কেমন?
- আচ্ছা।
একটু খারাপ লাগছিল। কারণ আমি তো আর আমার ফুফর মুখের উপর বলতে পারিনা যে আমি এখনই খাব! এসময় আমার ফুফু ওখান থেকে সরে যাওয়ায় ঐ স্যান্ডউইচ এক পাশ থেকে একটু ভেঙ্গেও খেয়েছিলাম।
সত্যিই খুবই সুস্বাদু!!!
মন খারাপ করে ভাত খেয়ে নিলাম। তারপর একটু রেস্ট নিয়ে ছাদে গেলাম। ছাদ থেকে ফিরে এসে ঘরে ঢুকবো, এসময় দেখি ক্লাস ওয়ানে পড়ুয়া আমার ফুফাত ভাই ঐ স্যান্ডউইচ খেতে ছাদে যাচ্ছে। মনে মনে হাসলাম আর বললাম, আমার স্যান্ডউইচ খাওয়ার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেল!!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।