আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটু দেখুন... এড়িয়ে যাবেন না...!

রূপসাবক্ষে হারাবে বীরশ্রেষ্ঠর সমাধি! খুলনা নগর থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে বাগমারা গ্রাম! গ্রামে ঢোকার পথে টাইলসে মোড়া একটি সমাধি নজর কাড়ে। রূপসা নদী ভাঙতে ভাঙতে সমাধি ছুঁইছুঁই করছে। ফলক দেখে জানা গেল, এটি মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরসেনানির একজন—বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিনের সমাধি। ভাঙন অব্যাহত থাকলে আসছে বর্ষাতেই সমাধিটি নদীবক্ষে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। খুলনা নগরঘেঁষে তিন নদীর সংযোগস্থল থেকে বেরিয়ে সোজা সাগরমুখী হয়েছে রূপসা।

কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে নদীটি আচমকা বাঁক নিয়েছে। সে স্থানটির নাম বাগমারা। এখানেই বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিন চিরনিদ্রায় শায়িত। সমাধি থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র পাঁচ হাত। আবদুল ওহাব নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি সমাধিটি রক্ষণাবেক্ষণ করেন।

তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালে নৌবাহিনী এটা দেহাশোনা করতি কইয়েছে। এর জন্যি প্রতিবছর দুই ঈদে আমারে আড়াই হাজার টাহা করে দেয়। আর উপজেলা পরিষদেরতে ৩০০ টাহা করে দেয়। ২০০৬ সালেতে নদীর এই পাড়ে ভাঙন শুরু হয়। এই কয় বছরে প্রায় ১২-১৪ হাত ভাঙে গেছে।

এহন যদি এডে ঠিক করা না হয় তালি কয় দিনির মধ্যে কবর নদীতি চইলে যাবেনে। ’ তিনি অভিযোগ করেন, কোনো ফটক না থাকায় লোকজন সমাধির ওপরে উঠে ঘুরে বেড়ায়। রাতে এখানে বসে গাঁজা সেবন করে অনেকে, ফেনসিডিল খায়। ৬ এপ্রিল সরেজমিনে বাগমারা গ্রামে দেখা যায়, সমাধির পশ্চিম পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে রূপসা। দুই পাশে রয়েছে দুটি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা।

সমাধির পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চিংড়ির বর্জ্য। মালিকেরা চিংড়ি কারখানা রক্ষায় নানাভাবে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। মাঝখানে বীরশ্রেষ্ঠর সমাধিটি পড়ে আছে অবহেলায়। স্থানীয় বাসিন্দা তাপস হালদার বলেন, ‘যাঁদের জন্য আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাঁদের প্রতি এমন অবহেলা ভাবাই যায় না!’ চানমারী এলাকার প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘যেভাবে নদী ভাঙছে, তাতে এ কবর আগামী বর্ষায় বিলীন হয়ে যাবে।

’ কবরের পাশের চৈতি ফিশের মালিক ওহিদুজ্জামান শিকদার বলেন, ‘কবরের পেছনে আমার বরফকল ছিল। ভাঙে সেটা নদীতে চলে গেছে। আমার কোম্পানির পাশের দেয়ালও ভাঙে পড়ছে। কবরটা দ্রুত সংরক্ষণ না করলে এটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ’ খুলনা জেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি যত দূর জানি কবরটি ২০০৩ সালে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়।

তারপর আর কোনো কাজ হয়েছে কি না, জানি না। তবে মুক্তিযুদ্ধের সঞ্চৃতিগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ’ তিনি কবরটি দ্রুত সংরক্ষণের দাবি জানান। মাধ্যমিক স্তরের নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ও অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা যায়, রুহুল আমিন ১৯৩৪ সালে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার বাঘচাপটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আজাহার পাটওয়ারী ও মা জুলেখা খাতুন।

১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধের সময় বদলি হয়ে চট্টগ্রামে আসেন। এ সময় তিনি দুই নম্বর সেক্টরে স্থলযুদ্ধে অংশ নেন। পরে ১০ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। যুদ্ধের সময় ভারতের দেওয়া দুটি গানবোটের মধ্যে একটির নাম ছিল ‘পলাশ’ অন্যটি ‘পদ্মা’।

পলাশের ইঞ্জিনরুম আর্টিফিশার হিসেবে যোগ দেন রুহুল আমিন। এরপর তিনি রণতরী পদ্মা ও পলাশকে নিয়ে রওনা হন তিতুমীর নৌঘাঁটি দখল করার জন্য। পদ্মা ও পলাশ যখন খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের রূপসা নদীতে পৌঁছায়, তখন পাকিস্তানি জঙ্গি বিমান গোলাবর্ষণ শুরু করে। ধ্বংস হয় পদ্মা ও পলাশ। ‘পলাশ’কে রক্ষা করতে না পেরে আহতাবস্থায় নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি।

তীরে বসে থাকা রাজাকাররা আহত রুহুল আমিনকে তুলে এনে নির্মমভাবে আঘাতের পর হত্যা করে। স্থানীয় জনগণ বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীর পাশে তাঁকে কবর দেয়। দিনটি ছিল ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১। স্বাধীন বাংলায় সরকারি বা বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী দের সমাধি হয় মার্বেল পাথর বেষ্টিত... কিন্তু যারা এই স্বাধীন বাংলার রুপকার... যারা শক্ত হাতে নিয়ে এসেছিলেন সূর্য সকাল তাদের সমাধি আজ নদি বক্ষে হারায়... হায়রে বাঙ্গালি... যারা এনে দিল ভোঁর... তারাই আজ কাঙ্গালি... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.