আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিউমারের মত আস্তে আস্তে বাড়ছে ভর্তি ফি! ক্যান্সারে রুপধারণ করার আগেই থামানো আবশ্যক। নইলে দেরি হয়ে যাবে.....

আমি শিক্ষানবীশ এবং কর্মী । সবার কাছ থেকেই শিখছি । সারা জীবনই হয়ত শিখে যাব। কুয়েটের ২কে১০ এবং ২কে১১ ব্যাচের এবারের কোর্স রেজিস্ট্রেশন ফি মোট ১৬৫ টাকা বেড়েছে। এই সামান্য বৃদ্ধি নিয়ে কিছু ছেলেমেয়ে আন্দোলন করছে।

অনেকেই বলছে সামান্য ১৬৫টাকা তো ছয় মাসে বাড়তেই পারে! এতে আন্দোলন করার কি আছে!! আসলেই কি তাই?? এই ১৬৫ টাকা শুধুই ১৬৫টাকার একটা ছোট অঙ্ক?? আসুন দেখিঃ ** ২০০৬ সালে UGC(বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) একটি কৌশলপত্র গ্রহণ করে যার বাস্তবায়নকাল দীর্ঘ ২১ বছর(২০০৬-২০২৬) ব্যাপী। এই ...কোউশলপত্রের মূলধারার যে বিষয়টি সেটি হলো, ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনসহ অন্যান্য ফি ধাপে ধাপে বাড়িয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বনির্ভর করা অর্থাৎ সরকারের কোন ভর্তুকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পাবে না। এককথায় উচ্চশিক্ষার সকল প্র্তিষ্ঠানকে ধাপে ধাপে প্রাইভেটিকীকরণ করাই কৌশলপত্রের মূল লক্ষ্য। এখন আসুন শুধু কুয়েটে এই কৌশলপত্রের প্রয়োগ দেখি। মোটামুটি ২০০৮ সাল থেকে কুয়েটে এর প্র্যোগ শুরু হয়ে যায়।

২০০৮ সালে কুয়েটের একাডেমিক এবং হল ভর্তি ফি মিলে দিতে হয়ে হয়েছে ৯,৬০০ টাকা। ২০০৯ এ দিতে হয়েছে ১১,৯০০ টাকা, ২০১০ তে ১৩,০০০ টাকা প্রায়, ২০১১ তে ছাত্রদের দিতে হয়েছে ১৫,০০০+ টাকা এবং ২০১২ সালে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৭,০০০+ টাকা। এখন নিশ্চয় বুঝতে হচ্ছে না যে, এখানকার কিছু ছাত্ররা শুধু ১৬৫টাকা নিয়ে নয় বরং UGC কৌশলপত্রের বাস্তবায়নস্বরুপ বছর বছর এই বৃদ্ধি নিয়েই লড়ছে তারা। এদিকে দলের ব্যাপারটা যদি দেখা যায় তবে মাথা গরম হওয়াই স্বাভাবিক। ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ছয় ব্যাচের ছয় বছরে হল ভর্তি ফি ১৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০০ টাকায় গিয়ে থেমেছে।

** অনেকে আরেকটা প্রশ্ন করছে, এত বেড়েছে তবুও ছাত্ররা কিছু করছে না কেন?? সরকার কি প্রজেক্ট নিয়েছে এটার জন্য?? একটা বিষয় কি, তিলে তিলে বিষ আমরা নানারকম ভাবে খেয়েই যাচ্ছি। বুঝতে পারছি না কারণ তাতে সরাসরি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি না বলে। এই ব্যাপারটাও একই পর্যায়ে পড়ে গেছে এখন। খুব সামান্য করে বাড়ানো হচ্ছে সব ফি। এই কমবৃদ্ধি নিয়ে যখন আন্দোলন করতে যাওয়া হচ্ছে তখন অনেকের অজ্ঞানতার ফলে বিষয়টি mass ভাবে হচ্ছে না এবং প্রশাসনও দমিয়ে দিতে পারছে অল্প কিছু ছাত্রদের।

এদিকে সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রাইভেটিকীকরণের জন্য হাতে নিয়েছে HEQEP(Higher education quality enhancement project) এর মত প্রজেক্ট। এটি একটি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর ঋণ প্রকল্প। হেকেপের মূল কাজ অতি সস্তায় কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করে ফেলা যাতে সাধারণ ছাত্ররা খুশি হয়ে যায়। যেমন ইতোমধ্যেই কুয়েটসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী অটোমেশন, ক্লাসরুমে এসি লাগানো সহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এবং সাধারণ ছাত্ররা মনে করছে এসব সুবিধার জন্য ফি বাড়ছে।

এটা পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণা। এই হেকেপের আওতাধীনে এবার কুয়েটে ৫০ কোটী টাকার বাজেট এসেছে। এই টাকা দিয়েই এসব কাজ করা হচ্ছে। ** এই প্রজেক্টের অবশ্যই কিছু উদ্দেশ্য থাকবে, নাকি? শুধু শুধু উন্ন্য়ন ঘটানোর দিন এখনও বাংলাদেশে আসেনি। হেকেপ প্রজেক্টের মূল যা লক্ষ্য এবং কাজের ধারা তা বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়ঃ ১।

কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করে শিক্ষক এবং ছাত্রদের মন কিনে নেওয়া। ২। যে টাকা গবেষণা খাতে হেকেপ দিবে সেগুলো শুধুমাত্র ওইসব গবেষণাই যেগুলো সরাসরি লাভজনক। মানে যেগুলো দ্বারা উৎপাদন সরাসরি লাভজনক হবে। কোনরুপ মৌলিক খাতে হেকেপ টাকা দিবে না।

এমনকি গবেষণার বিষয়বস্তুও হেকেপ ঠিক করে দিবে তাই ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে গবেষণালব্ধ ফলাফলের সরাসরি লাভজনক ফল ভোগ করবে। ৩। যেহেতু শিক্ষাখাতে হেকেপ টাকা দিচ্ছে তাই অতি স্বাভাবিকভাবেই তারা সিনিয়র সিনেট সিন্ডিকেটে ঢুকে পড়বে। এবং উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবসায়িক দিকটাই সবার আগে দেখা হবে। পাবলিক-প্রাইভেট স্বর্বস্তরে উচ্চশিক্ষা হয়ে পড়বে একটা confirm profitable business।

৪। এছাড়া হেকেপের অন্য কিছু কাজেও ওদের টাকা ঢালতে হচ্ছে না। যেমনঃ ল্যাব নির্মাণ, ল্যাব রক্ষণাবেক্ষণ, বিভিন্ন ট্রেইনিং কোর্স ইত্যাদি। ল্যাব যেহেতু সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেই এবং যন্ত্রপাতিও মোটামুটি আছে, তাই এসব ব্যাপারে তাদের খরচ কমে যাবে অর্থাৎ নাই বললেই চলে। ## সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটি তা হলো, ব্যবসা যেখানে ঢুকবে সেখানে উচ্চপর্যায়ের রাজনীতিও অতি সহজেই ঢুকে পড়বে।

গবেষণার জন্য কোন শিক্ষকদের টাকা দেয়া হবে সেটাও তখন ওই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলই নির্ধারণ করবে। অর্থাৎ প্রতিভাবান কিন্তু নির্দলীয়-নিরীহ শিক্ষকরাও এতে হবেন বঞ্চিত। তাই এটা অন্তত বোঝা যাচ্ছে যে, ছাত্র-শিক্ষক উভয়ের জন্যই হেকেপ দুর্দশা নিয়ে আসছে সামনে। ** যতদূর শুনেছি বুয়েট, চুয়েট রুয়েটে বেতন এত বেশি না। হেকেপের তৎপরতা ওদিকে কম।

কুয়েটের বেতন এই তিনটা প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি। নিজস্ব মতামত থেকে মনে হয়, কুয়েট গ্রামের দিকে অবস্থিত, এখানকার ছাত্ররা শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একটা উদ্দামতা সেটা খুব তাড়াতাড়িই হারিয়ে ফেলে, তাদের খুব সহজেই উল্টা-পাল্টা বুঝানো যাবে যেহেতু তারা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর জানে না আর তাছাড়া এখানে ম্যাক্সিমামই আসে বুয়েটে চান্স না পেয়ে এবং চার বছরে বের হওয়াই তাদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে বুয়েট ছাত্রদের সাথে প্রতিযোগিতার জন্য। তাই তারা অন্যকিছুর দিকে অর্থাৎ কোন আন্দোলন করে ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করবে না এমন একটা ধারণা করেই প্রথমে কুয়েট কে দিয়েই এই কৌশলপত্রের বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে। আশা করি আর কেউ বলবেন না যে, শুধু ১৬৫টাকার জন্য আন্দোলন করে কি হবে! একদম শুধু আবেগ দিয়ে আন্দোলন হয়না কিন্তু এইটুকু অন্তত সবার ধারণ করা উচিত যে শুধু আমরা নই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে উচ্চশিক্ষায় বাধাগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যেও আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। বিগত অনেক আন্দোলনে আমরা দেখেছি এবং পড়েছি যে, শুধু নিজের জন্য নয় সকল স্তরের মানুষের জন্য লড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।

আশাকরি উচ্চশিক্ষাকে এমন করে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেয়ার আগেই আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হব। (বিষয়গুলি সবার জানা দরকার। নিজে জানুন, আপনার বন্ধুটিকেও জানান) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।