ভালবাসি
বুডিগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও এতে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতিও নেই। নদীও দখলমুক্ত হয়নি। তারপরও এ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত আরো ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। অথচ অর্থবছরের আর বাকি আছে মাত্র তিন মাস। এ সময়ের মধ্যে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কীভাবে ব্যয় হবে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুলিং-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। ওই সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৯৪৪ কোটি ৯ লাখ টাকা। মেয়াদকাল ধরা হয় ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। চলতি বছর এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয় ১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় মনে করে প্রকল্পের কাজ সন্তোষজনক বাস্তবায়নের জন্য চলতি অর্থবছর মূূলধনখাতে ৯৯ কোটি টাকা আর রাজস্ব খাতে ১ কোটি টাকা মোট ১০০ কোটি টাকা ন্যূনতম বরাদ্দ প্রয়োজন। তাই চলতি অর্থবছরের এডিপির বরাদ্দসহ বিশেষ প্রয়োজনে অতিরিক্ত আরো ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য অর্থ বিভাগের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুলিং-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পটির মাধ্যমে ৬ দশমিক ৩০০ কিলোমিটার নদী 'এক্সকেভেটর' এর মাধ্যমে খনন করা হবে। এর আগেও বুড়িগঙ্গা উদ্ধারের নামে কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও নদীটি দূষণ বা দখলমুক্ত করা যায়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এদিকে ঢাকার চার নদীর পাড় সাত হাজার দখলদারের কব্জায় থাকলেও এখনো মুক্ত করা যায়নি।
নদীগুলো হচ্ছে- বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জানান, দখলদারের নাম প্রকাশ করা হবে। তবে সে উদ্যোগও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বেশির ভাগ দখলদার কোনো না কোনোভাবে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতা পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাদের উচ্ছেদ করা নৌমন্ত্রণালয়ের পক্ষে অতটা সহজ হচ্ছে না।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দশকে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা এবং বালু নদীপ্রবাহ উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে শিল্পকারখানা থেকে নির্গত তরলবর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক এবং মানববর্জ্যে এসব নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। দূষণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বুড়িগঙ্গা এবং ঢাকার চারপাশের অন্য নদীগুলো জনস্বাস্থ্য, ইকোসিস্টেম এবং আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করছে। বলা হচ্ছে- হাইড্রোলজিক্যাল ও মারফোলজিক্যাল পরিবর্তন এবং অব্যাহতভাবে পলি পড়ার কারণে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং শীতলক্ষ্যা নদীর ধারণক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে শুষ্ক মওসুমে নদীর প্রবাহ থাকে না এবং নাব্যও কমে যায়।
নদীর উৎসমুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে যমুনা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করা নতুন ধলেশ্বরী পুংলি নদীগুলোর প্রবাহ প্রায়ই থাকে না। সূত্রে আরো জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০০৪ সালে এ ব্যাপারে একটি সমীক্ষা চালায়। ওই সমীক্ষার সুপারিশ অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর প্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে পানির গুণগতমান উন্নয়ন, বুড়িগঙ্গা এবং তুরাগ নদীর নাব্য নিশ্চিত করে সারাবছর নৌচলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করা, সেচ ও মৎস্য উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং বুড়িগঙ্গা নদীর অবৈধ দখল নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে ৯৪৪ কোটি ৯ লাখ ৭ হাজার টাকায় এটি অনুমোদন করা হয়। এদিকে নদীর তীরে সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ কয়েক দফা পিছিয়ে দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
এর আগে ঢাকার চার নদীর পার্শ্ববর্তী বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল। এ ছাড়া উদ্ধার করা জমিতে সীমানা পিলার স্থাপনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। কর্মকর্তারা জানান, এ যাবৎ ঢাকায় ৪ হাজার ৩১টি এবং নারায়ণগঞ্জে ৩ হাজার ১০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আবার কী পরিমাণ স্থান দখল করা হয়েছে সে পরিসংখ্যান নেই তাদের কাছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, একবার একটি স্থানে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর ওই স্থানটি আবার দখল বা অবৈধ স্থাপনা তৈরি হলো কী না এ ব্যাপারে কোনো ধরনের মনিটরিংও নেই।
ফলে একইস্থানে একাধিক উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে গিয়ে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। চার জেলার ৫টি নদীর তীরে সীমানা পিলার স্থাপনের কাজে সরকারের ৩০ কোটি ৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে ঢাকা জেলার ১১৬ কিলোমিটার এলাকার জন্য ১৮ কোটি ৬৬ লাখ, নারায়ণগঞ্জের ৬০ কিলোমিটার এলাকার ৮ কোটি ৮৪ লাখ ৮৫ হাজার, গাজীপুরের ১৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এলাকার ১ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার ২৫ কিলোমিটার এলাকার জন্য ১ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দখলদারদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে যথেষ্ট শাস্তির বিধান নেই। ফলে দখলদাররা উৎসাহিত হন।
এ পরিস্থিতিতে বুড়িগঙ্গার পাড়ে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে জলধারা সংরক্ষণ আইনে মামলা ও জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উত্তোলন করা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৫ সদস্যের কমিটি কাজ করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।