আমি মরে যাচ্ছি, জ্বরাগ্রস্ত --- দীর্ঘশ্বাস নিয়ে, মুমূর্ষ-গোঙানি নিয়ে বেঁচে আছি মৃতপ্রায় বুকে জাগা বালুভরা কষ্ট আর অশ্রুপাত, কাফন পরানো আয়োজন দিনরাত! ব্রষ্মপুত্র আমারও মূল -- হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের হিমবাহ থেকে উৎপন্ন জল ধারণ করেছি, সেই জল এত ঘোলা কেন? সেই জল এত নষ্ট কেন? আমারও ধারণকৃত জল গিয়ে মেশে আরও নদীতে অবশেষে সমুদ্র-গ্রহণ : ত্বরণ হয়েছে সৃষ্টি আমি আজ কোন্ জল দেই সমুদ্রকে? হিমালয় থেকে আসা জল -- স্বচ্ছ জল কই? জলের বদলে কী বহন করছি আজ? সাজ নেই ! শোভনতা নেই! চিত্তগ্রাহী রূপ নেই, খেই হারিয়ে অপারিপাট্য বুকে নেই সেই স্রোত ও তরঙ্গ অঙ্গ জ্বরাজীর্ণ,অলংকার পড়েছে খসে দোমড়ানো মোচড়ানো অবস্থায় আলুথালু বেশ, কেশহীন-অসৌন্দর্য। উচ্ছল-প্রবাহ নেই কেন? কাকক্ষুর মতন জল নেই কেন? জল কম,দম নিতে শ্বাস বের হয়ে যায় যেন দিগন্তরেখায় পেঁজামেঘ --শুকতারা দেখা যায় না; বৃষ্টিও আমাকে ভেঙচায় --তার জল আমি গ্রহণ যেন গ্রহণ না করি; রজনীসখাও সখ্য-আলো দিতে চায় না দোষ ও দুষণে আমি পুষ্ট! প্রকৃতিতে হবো পরিত্যক্ত? মজানদী হয়ে যাবো কেন? মর্মপীড়ায় আমার বুক ভেঙে যায়! আমি সেই নদী -- জল দিয়ে ও যাতায়াতের পথ দিয়ে উর্বর মাটির সখ্য দিয়ে তিল তিল করে তৈরি করি আজকের ঢাকা তার আগে জাহাঙ্গীরনগর ও দুর্গ আমাকে নিয়েই এই ঢাকার উন্থান অথচ আমাকে অবহেলা করা হচ্ছে! এই জ্বরা : সৌন্দর্য হারিয়ে বলিরেখা এই খরা : প্রবাহ হারিয়ে দুঃখরেখা ক্রমে ক্রমে রুদ্ধস্রোতে হবো পরিণত? আমার করুণ অবস্থার জন্য শুধু আমি দায়ী? আমি আর কতকাল ধারণ করবো ? আর্বজনা-মলমূত্র-বর্জ্য ইন্জিনের তেল পরিত্যক্ত গ্রীজ জমির কীটনাশক জল বিষাক্ত রাসায়নিক ক্রোমিয়ামসহ কারখানার বর্জ্য ! আমার জলজ প্রাণী ও মাছ বাঁচে না আমার তলদেশ ও জল জীবাণু-আক্রান্ত পাকস্থলী নষ্ট কষ্ট করে বাঁচা খাঁচাবন্দী আমি চলৎশক্তি হারিয়ে খসাতারা হয়ে অস্তগামী ! তবুও চূড়ান্ত শ্বাসরুদ্ধ দূষণের এ সময়ে দৃষ্টিশক্তি চাই বেদনামিশ্রিত জীবনের স্বাদ নিয়ে আবারো কল্লোলিনী হয়ে বাঁচতে চাই নদীবুকে নাব্যতা আসুক নৌকাগুলো রাজহাঁসের মতন সাঁতরে সাঁতরে লক্ষ্যমুখী হোক ঢাকাকে বাঁচাতে হলে আমাকেও বাঁচাও ! ঢাকাকে বাঁচাতে হলে আমাকেও বাঁচাও ! আমি তোমাদের বুড়িগঙ্গা ! আমি তোমাদের বুড়িগঙ্গা !
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।