আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিসর্জনের গঙ্গা ও বুড়িগঙ্গা



হাসি-কান্নায় পাঁচ দিন কাটিয়ে বাঙালির দেবী দুর্গা এ বছরের মতো চলে গেছেন পিতৃলোকে। বিজয়া দশমীতে লাখ লাখ সন্তান দুর্গতিনাশিনী মাকে বিদায় জানিয়েছেন। সারাদেশে এবার মণ্ডপের সংখ্যা গত বছরের থেকে প্রায় ৫ হাজার বেড়ে ২৭ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ঢাকেশ্বরীর ঢাকাতে এবার ১৯১টি পূজামণ্ডপ হয়েছিল, যা গত বছরের চেয়ে ২০টি বেশি। বিজয়া দশমীতে, রোববার, ঢাকার সব প্রতিমা বুড়িগঙ্গায় বিসর্জিত হয়েছে।

ওয়াইজঘাট ঘিরে ওই বিদায় অনুষ্ঠানের ঢঙ্ক নিনাদ বুকে নিয়ে সন্ধ্যার আলোতে সেদিন ঘরে ফিরেছিলেন ভক্তরা। বাঙালির স্বাধীন রাজধানী ঢাকাজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। অবশ্য বাঙালির আরেক নগরী কলকাতার উৎসবের কাছে ঢাকার আয়োজন ম্লানই মনে হতে পারে। কারণ, গঙ্গাপাড়ের ৩০০ বছর পুরনো শহরটিই হচ্ছে দুর্গাপূজার বৈশ্বিক কেন্দ্র। ঠিক কতটি পূজামণ্ডপ হয়েছিল কলকাতায়? এ হিসাব পাওয়া কঠিন।

ইন্টারনেটে খোঁজ লাগালে পাওয়া যায় 'হাজার হাজার'। তবে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য এবার কর্তৃপক্ষ গঙ্গায় ১৭টি ঘাট নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। আগের মতো নদীবক্ষজুড়ে নয়, তীরের কাছে বাঁশঘেরা নির্দিষ্ট ঘাটগুলোতেই দেবী বিসর্জন দিতে হয়েছে সবাইকে। আমাদের এখানকার মতো সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু দেবী বিদায় সম্পন্ন হয়নি। আনন্দবাজারের প্রতিবেদন_ প্রশাসন যদিও আশা করেছিল দশমীর দিন রাত ২টার মধ্যেই ভাসান শেষ হয়ে যাবে।

কিন্তু তা গড়ায় ভোর ৪টা পর্যন্ত। এ থেকেও প্রতিমার সংখ্যা অনুমান করা যায়। অনুমান করা যায় পূজার বর্জ্য সরাতে নিয়োজিত কর্মীর সংখ্যা দিয়েও। ১৭টি ঘাটে কলকাতা পুরসভা সাড়ে তিনশ' লোক লাগিয়েছিল। কর্মী ছিল রাজ্য পরিবেশ দফতর, কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের পক্ষ থেকেও।

এছাড়া বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও হাত লাগিয়েছিল দেবী বিসর্জনের পর গঙ্গা পরিষ্কারে। সচেতন ছিল বিসর্জনে আসা সাধারণ মানুষও। তারা বিভিন্ন উপচার নদীতে না ফেলে ঘাটের কাছে জড়ো করে রাখে। আবার পূজাতে ব্যবহৃত ফুল ও পচনশীল দ্রব্যও কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এ থেকে তারা সিঁদুর ও মোমবাতি তৈরি করছে।

বস্তুত উদ্যোগী না হয়ে উপায়ও ছিল না। 'হাজার হাজার' দুর্গামণ্ডপের শহর ঘেঁষে বয়ে চলা গঙ্গায় পূজার বর্জ্য কতটা দূষণ ঘটায়, সে নিয়ে কথাবার্তা চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। হিন্দু ধর্মের দিক থেকে পবিত্র নদী গঙ্গা এমনিতেই হরিদ্বার থেকে শুরু করে হিমাচল, উত্তর প্রদেশ ও বিহারের দূষণ বয়ে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে হাজির হয়। কতটা দূষণ? বুড়িগঙ্গার দূষণ নিয়ে হতাশাবাদীদের জন্য একটি হিসাব দেওয়া যাক_ গঙ্গা তার গোটা গতিপথে পাড়ে অবস্থিত ২৯টি নগরী, ৭০টি শহর ও হাজার হাজার গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৩০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য গ্রহণ করে। এর সঙ্গে প্রতিদিন যুক্ত হয় আরও ২৬০ মিলিয়ন লিটার শিল্প বর্জ্য।

তার ওপর কলকাতার বিপুলসংখ্যক পূজার বর্জ্য। নদীটির শারদীয় সি্নগ্ধতা বিসর্জনের পরদিন ম্লান হয়ে যেত। এ নিয়ে কথাবার্তা অনেক হয়েছে; কিন্তু কাজ খুব একটা হয়নি। যে কোনো নদীর মোহনাই জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু গঙ্গার মোহনা যে দিনে দিনে উল্টো পথে হাঁটছিল, তার দায় কেউ কেউ দুর্গাপূজার বিসর্জন উৎসবের কাঁধেও দিতে চান।

শেষ পর্যন্ত এ বছর অক্টোবরের গোড়ায় কলকাতা হাইকোর্ট আদেশ জারি করেন, বিসর্জনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গঙ্গা পরিষ্কার করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট, পুরসভাকে এ ব্যাপারে তদারকির দায়িত্ব দেন আদালত। এবার বিসর্জনের পরও পরিষ্কার গঙ্গা মূলত আদালতের আদেশেরই ফল। বুড়িগঙ্গায় বিসর্জিত পূজার বর্জ্য কী হয়েছে? বিসর্জনের গঙ্গায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণগুলো পড়তে পড়তেই মনে প্রশ্ন জেগেছিল। ঢাকার প্রায় তিনশ' প্রতিমার বর্জ্যও তো কম হবে না।

উদ্যোগী হওয়া দূরে থাক, বিসর্জনের পর দূষিত বুড়িগঙ্গার দূষণ কতটা বাড়ে, আমাদের কর্তা ও ভক্তরা কি তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.