আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানী পণ্যের জিএসপি সুবিধা বাতিল এবং প্রাসঙ্গিক ভাবনা

© এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের। তাই লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোন প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে ব্যবহার না করার অনুরোধ রইল... বাংলাদেশ সময় গতকাল রাত দেড়টার দিকে ওবামা প্রশাস ইউএসএ'র বাজারে বাংলাদেশের বেশ কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা (Generalised System of Preferences-GSP/জিএসপি) স্থগিত করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি স্থগিত হওয়ায় বাংলাদেশে উৎপাদিত ঐসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা হারাবে। আশংকা করা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও খুব দ্রুতই তাদের বাজারেও এই সুবিধা প্রত্যহার করে নিবে। যদিও প্রথম আলোতে পড়লাম বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর জিএসপি সুবিধা পেত না, কিন্তু "ইউএসএ-বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাক্টস" বলছে, "Bangladesh’s exportable include textile and clothing products, shrimps, tea, cap, golf shafts, etc; while importables include raw cotton, chemicals, machinery and equipments, pharmaceuticals, etc." জিএসপি'র আওতায় পড়ে।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, "Despite high import tariffs in USA, the apparel based products from Bangladesh have made successful inroads there in recent times. While Bangladesh’s total apparel products exports in USA was worth $2.37 billion in 2005, it reached to $3.91 billion in 2010. Now Bangladesh is the 4th largest apparel exporter in USA – just behind China, Vietnam and Indonesia." প্রথম আলোতে দেখলাম, "বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক এ বাজারসুবিধা পায় না। " অপরদিকে, ইউএসএ-বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাক্টস বলছে, "Bangladesh’s exportable include textile and clothing products....", অর্থাৎ টেক্সটাইল প্রোডক্টস জিএসপি'র আওতায় ছিল। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় ইপিজেডগুলো কিন্তু শুধু পোশাকই তৈরি করা হয়না। বরং, জুতা, খেলনা, ক্যাপ, প্রভৃতিও তৈরী করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানী পণ্যের মধ্যে রয়েছে চিংড়ী, চা, খেলার সামগ্রী প্রভৃতি।

এগুলো গার্মেন্টস পণ্য না হলেও, এইসব পণ্য সামগ্রী প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানেও কাজ করছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর যতই বলা হোক যে, গার্মেন্টস পণ্য জিএসপি'র আওতায় ছিল না, কিন্তু যেসব পণ্য জিএসপি'র আওতায় ছিল সেগুলোর জিএসপি সুবিধা কিন্তু বাতিল করা হয়েছে গার্মেন্টসকে কেন্দ্র করেই। সুতরাং, শুধুমাত্র গার্মেন্টস গার্মেন্টস বলে চিল্লাইলে হবেনা, বরং গার্মেন্টস সহ সকল রপ্তানী পণ্যের জন্যই এটা একটা অশনি সংকেত। যারা বলছেন, জিএসপি বাতিল করার জারণে গার্মেন্ট সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা, তাদেরকে বলছি, গার্মেন্টস সেক্টরের ক্ষতি যা হবার তা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। আর কিছু বাকি নেই।

ঠিক এই মুহুর্তেও হয়তো আমরা টের পাচ্ছিনা, কারণ এখন গার্মন্টসসমুহে যেসকল কাজ চলছে সেগুলোর অর্ডার অনেক আগেই দেয়া হয়েছে। যখন এই প্রি-অর্ডারড পণ্যসামগ্রির শিপমেন্ট হয়ে যাবে, আসল খেলা শুরু হবে তখন। দেখা যাবে নতুন করে আর কোন অর্ডার আসছেনা বাংলাদেশে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় অবশ্যই ইয়ং ওয়ান/কেন্ট পার্ক প্রভৃতি বড় বড় গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাচারাররাও বাংলাদেশ থেকে তাদের কারখানা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে। উল্লেখ করা যেতে ইয়ংওয়ান তাদের বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস করেছে ভিয়েতনামে, যেগুলো বাংলাদেশে হবার কথা ছিল।

ইতোমধ্যেই ওয়ালমার্ট সহ বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের শিপমেন্ট ক্যান্সেল করে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে ওরা আর কোন পণ্য নেবেনা বাংলাদেশ থেকে-এই মর্মে ঘোষণাও দিয়ে দিয়েছে। সুতরাং, সুস্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানী আয়ের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রায় আয়ের এই খাতটি চিরতরে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। আনুমানিক চল্লিশ লাখ নারী-পুরুষ গার্মেন্টসে কাজ করেন। এছাড়া গার্মেন্টস ছাড়াও অন্যান্য রপ্তানী পণ্য (যেমন: চা, চিংড়ি, খেলনা প্রভৃতি) প্রকিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান/কারখানায় আছেন আরও লক্ষ লক্ষ কর্মী। এর বাইরেও গার্মেন্টস/অন্যান্য রপ্তানী পণ্য উৎপাদনকারী/প্রক্রিয়াজাতকরণ সংশ্লিষ্ট বায়িং হাউজ/সিএন্ডএফ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই সেক্টরের সংগে জড়িত।

সামগ্রিকভাবে এই সেক্টরের সংগে সরাসরি জড়িতদের পাশাপাশি তাদের উপর নির্ভরশীল পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সংখ্যা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, অন্তত কয়েক কোটি মানুষ এই শিল্পের সংগে জড়িত। আরেকটু খোলাসা করে বললে দেখা যায়: যে পোশাকশিল্প শ্রমিক/অন্যান্য পণ্যের সংগে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক গার্মেন্ট/অন্যান্য রপ্তানি পণ্য উৎপাদন/প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করে মাসে ৬০০০ টাকা উপার্জন করে, i). সে ১৫০০ টাকা খরচ করে তার খাবার খরচ হিসেবে ii). ১২০০ টাকা খরচ করে তার বাসা ভাড়ার জন্য iii). ৩০০ টাকা খরচ করে চিকিৎসা খাতে iv). ৫০০ টাকা খরচ করে তার যাতায়াত, পোশাক-আশাক এবং অন্য প্রয়োজনীয় প্রসাধন কিনতে v). ২০০০ টাকা সে তার পরিবারে প্রদান করে এবং এই দুই হাজার টাকাও খরচ হয় নিত্যপ্রয়োজনী খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসা কিংবা অন্যান্য খাতে vi). বাকি ৫০০ টাকা সে সঞ্চয় করে এবং সঞ্চয়ের এই ৫০০ টাকা কোন সমিতি কিংবা অন্য কোনভাবে তা কোন না কোন প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হয়। এই খরচের ছয়টি খাত দেখানো হয়েছে, এখানেও রয়েছে অসংখ্যা ইকোনমিক সাইকেল। একটু ব্যাখা করি: খাবার খরচ হিসে একজন গার্মেন্টসকর্মী যেই ১৫০০ টাকা খরচ করে, সেই টাকাটা যায় তেল-নুন, সবজি কিংবা মাছ বিক্রেতার পকেটে। এই টাকা দিয়ে সেই ব্যবসায়ী একইভাবে তার ব্যবসা এবং পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করে।

অনুরূপভাবে, গার্মেন্টসকর্মীর খরচের বাকি টাকাগুলোও কোন না কোনভাবে সমাজের অন্যান্য পেশাজীবি মানুষের পকেটে যায়। এবং এভাবেই অর্থনীতি সচল থাকে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, গার্মেন্টস সেক্টর/অন্যান্য রপ্তানীমুখী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে কেবল সেসকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লক্ষ লক্ষ কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, বরং আমাদের গোটা অর্থনীতিই মারাত্নক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। আর এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কে? অবশ্যই বাংলাদেশ আওয়ামিলীগের নেতৃত্বাধীন হাসিনা সরকার। গার্মেন্টস সেক্টরে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও তারা তা প্রতিকারের কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি।

সর্বশেষ তাজরিন ফ্যাশন্স এবং রানা প্লাজা ধ্বসের পরও তাদের টনক নঁড়েনি। নামমাত্র তদন্ত কমিটি এবং দায়সর্বস্ব ক্ষতিপূরণ দিয়েই তারা তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। তাহলে এখন কি করতে হবে? - আগামী নির্বাচনে তাদেরকে আবার নির্বাচিত করে ক্ষমতায় এনে গার্মেন্টস সেক্টরসহ অন্যান্য রপ্তানী পণ্যের সেক্টরকে চিরতরে সীলগালা করে ব্যানড ঘোষণা করে মুমূর্ষু অর্থনীতিকে দাফন করতে হবে । সবাই বলেন আমীন লিংক: প্রথম আলো: জিএসপি স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএ বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাক্টস ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.