আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনিকেত ভালোবাসা : ছোট্টগল্প

মইধ্যে রাইতে লুকাইয়া লুকাইয়া হাসতাম কিন্তু অহন আর হাসবারও পারি না, কিচ্চু হইলেই ঝারি মারে :( ওই কুটকুট কইরা হাসবি না! ক্লাস শেষ। দোতলা থেকে সিড়ি বেয়ে নামার পথে হঠাৎ করেই মুখোমুখি মেঘলা সঙ্গে। সামান্য পার্থক্যের কারনে অনাকাঙ্খিত সন্ধি ঘটেনি। মুখের মানচিত্র দেখেই মনে হচ্ছে বেশ দ্বিধায় ভুগছে মেঘলা। ও দেখতে কালো, তবুও ওকে আমার অন্য রকম লাগতো।

ছোট ছোট শব্দ দিয়ে ধীরভাষায় কথা বলে মেঘলা। অনাকাঙ্খিত সন্ধি! এ সন্ধি কি বিধাতাপ্রদত্ত? নাকি নিজের ভুল। হিসেব কষার এক পযায়ে ফলাফলহীন স্যরি বলে পাশ কাটিয়ে এলাম। আজও দেরি। মা জিজ্ঞেস করলে কি বলব তাই ভেবে ভেবে কলিং বেল চাপলাম।

মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝা গেল প্রকৃতি এখন স্বাভাবিকই আছে। সন্ধ্যায় বাবা বাসায় ফিরে মাকে জানায় আমরা গাজিপুর বদলি হয়ে যাবার খবরটা। হয়তো এ খবরটি জানাবে বলে আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলেছে মা। অফিসিয়াল নিয়মের মতো বাবা মাকে জানানোর পর মায়ের কাছ থেকে সংবাদটা পেলাম। মাস খানেকের মধ্যে কলেজ ট্রান্সফারলেটার নিয়ে পুরো ফ্যামিলিসহ চলে যাই গাজিপুরে।

পুরোনো বন্ধুদের অনেক মনে পড়ছে। এর মধ্যে খুব বেশি মেঘলাকে। পুরোনো রঙিন অনেকগুলো মুখের ভিড়ে সাদা-কালো একটি মুখ। নিজেকে খুব বেশি জোর করলে বুঝতে পারি ধোঁয়া ধোঁয়া অমসৃণ ভালোলাগা কাজ করছিল ভালবাসা হয়ে। ওর নাম নাফি।

অপ্রকাশিত অনুভূতিগুলো এলোমেলো হওয়াতে ওকে আমি মেঘলা ডাকতাম। বছরখানেক একই ক্লাসে ছিলাম, কিন্তু কখনো কথা হয়নি। চোখে চোখ পড়ত। এতোটুকুই। কেমন আছে মেঘলা? জানতাম না।

নিজের কল্পনার রঙে আঁকতাম শুধু। পেন্সিল হাতে ভুল করে দেখা হতো প্রায়ই। পেন্সিলের সুরে মাফযোগ্য ভুলগুলো নামহীন খাতার কোন পৃষ্ঠায় মেঘলা হয়ে যেত। ছন্নছাড়া সাদা পাতাগুলোয় অনেকগুলো মেঘলা জমেছে। কখনো কখনো অজ্ঞাত কারনেই জন্ম হতো মেঘলাগুলোর।

সম্বলস্বরূপ অধিকারহীন এক তরফা ভেবে যাওয়া আর ভালোলাগাই ছিল আমার ভালোবাসা। ব্যস্ততার কান্ডজ্ঞানহীনতার কারনে না জানিয়ে চলে যায় অনেকগুলো প্রহর। বার বার জিজ্ঞেস করেও কোন কৈফিয়ত পাওয়া গেল না। তাই শ্বাসহীন ও যান্ত্রিক আহ্বানগুলোর আর দ্বারস্থ হলাম না। থার্ড ইয়ারের রুটিনের অপেক্ষায়।

এরই মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর তুষারের একটি এসএমএস রাতটিকে নির্ঘুম করে দেয়। ওই দিন বেশ মেঘলা ছিল আকাশ। বৃষ্টি ঝড়বে বলে অপেক্ষা। গত ২৬ সেপ্টেম্বর মেঘলা ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেছে মেঘলা। ফেইসবুকে তিন দিন আগে দেয়া স্ট্যাটাসে মেঘলার বিদায় আর শেষ কথাগুলো দেখছিলাম।

অজানাই রেখে দিল এ নিমর্ম পুরোনো হয়ে যাওয়া সত্যটাকে। আধার রাত, ছোট ছোট তারাগুলো জ্বলছে আর নিভছে। এ সময় তারাপ্রধান নয়নার হাতে রশি বেঁধে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে আকাশের দিকে। এমন একটি ছবি নয়নার টাইমলাইনে। সারাংশের কিছু শব্দাশেষ স্মৃতি হয়ে তিমির রাতির নির্জন পুরোনো বাড়িতে আধো আলোয় ছায়ারূপে কেউ কান্নার শব্দ হয়ে আছে হৃদয়ে।

অনিকেত ভালোবাসা হয়ে রয়ে গেল মেঘলা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।