Prothom Alo
ঢাকা, রোববার, ৭ এপ্রিল ২০১৩, ২৪ চৈত্র ১৪১৯, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৪
চি ঠি প ত্র
চি ঠি প ত্র
| তারিখ: ০৭-০৪-২০১৩
সুচিত্রা সেনের বাড়ি
প্রবাসে কেউ যখন জিজ্ঞাসা করে বাড়ি বাংলাদেশের কোথায়? উত্তরে বলি, পাবনা। তখন অনেকেই বলে সুচিত্রা সেন তোমাদের দেশের মেয়ে, সুচিত্রার বাড়ি তোমাদের বাড়ি থেকে কত দূরে। শুনে কী ভালো লাগে। একই সঙ্গে একটা চাপা কষ্ট অনুভব করি। কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন।
নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন তিনি পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। তাঁর পিতা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন পাবনা পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর।
দেশ বিভাগের পর ১৯৫১ সালে করুণাময় দাশগুপ্তের পরিবার কলকাতা চলে যায়। এরপর পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের সুচিত্রা সেনের শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে ব্যবহূত হয়েছে। ১৯৮৭ সালে জেলা প্রশাসন নিজস্ব ক্ষমতাবলে বাড়িটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
সে বছরই ইমাম গাজ্জালী ইনস্টিটিউটের অনুকূলে এর পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুস সুবাহান বাড়িটি লিজ নেন। জেলার সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের সবাই দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি দখলমুক্ত করে একটি সাংস্কৃতিক আর্কাইভ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে সভা, সেমিনার, বিক্ষোভ, মানববন্ধনের মতো আন্দোলন করে আসছে। সাধারণ মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাবনার জেলা প্রশাসন ২০০৯ সালের ২২ জুন জামায়াতের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লিজ বাতিল করে নোটিশ দেয়। এই আদেশের বিপরীতে গাজ্জালী ইনস্টিটিউট হাইকোর্টে রিট করে এবং তিন মাসের স্থগিতাদেশ পায়।
ইতিমধ্যে সুচিত্রা সেনের স্মৃতি রক্ষার্থে পাবনায় গঠিত হয়েছে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ।
এই পরিষদ তিন বছর ধরে সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করছে। এ উৎসবে এসেছেন পরিচালক সুভাষ দত্ত, অভিনেতা রাজ্জাক, প্রবীর মিত্র, আলমগীর, ফারুক, ইলিয়াস কাঞ্চন, অভিনেত্রী কবরী, সুজাতা, রোজিনাসহ অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রশিল্পী। তাঁরা সবাই সুচিত্রা সেনের বাড়িটি উদ্ধার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত ‘জামায়াতের কবল থেকে মুক্ত হচ্ছে না সুচিত্রার বাড়ি’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৬ জুলাই ২০১১ সুচিত্রা সেনের বাড়িটি সাত দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে ওই বাড়ি দখলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দেন আদালত।
বাংলাদেশ, ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকায় এই সংবাদ প্রকাশিত হয় ‘অবশেষে মৌলবাদী গোষ্ঠীর দখলমুক্ত হলো সুচিত্রার বাড়ি’ শিরোনামে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সুচিত্রা সেনের বাড়িটি আজও মুক্ত হয়নি। হাইকোর্টের ওই নির্দেশনাও কার্যকর হয়নি।
বাড়িটি দখলমুক্ত না হওয়ায় আমরা প্রবাসীরা খুবই ব্যথিত।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িটি দখলমুক্ত করে পাবনাবাসী এবং লাখ লাখ সুচিত্রাভক্তের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করুন।
গোপাল সান্যাল, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।