আমি শুধুই আমার মতো মাসুদ হাসান এইচ এস সি পাস করে ঢাকার একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। ছোটবেলা বাবা-মা দুজনেই মারা যায়। দুই বোন আর এক ভাইয়ের ছোট সংসার। বাবার জমিজমা বলতে তেমন কিছুই নেই। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে।
ছোট বোনটিরও বিয়ের বয়স হয়েছে। সবচেয়ে ছোট মাসুদ।
ঢাকায় আসার পরে পড়াশুনা, নিজের চলার খরচ সব মিলিয়ে অনেক টাকা দরকার। কোনভাবেই পড়াশুনা চালানোর উপায় ছিলনা। নানা পরিচিত কিংবা স্বল্প পরিচিত জনের কাছে টিউশনি চেয়েছে।
অবশেষে একদিন এমন এক পর্যায়ে তার পরিচিত একজন তাকে অফার করে বসলো লজিং মাষ্টার থাকার জন্য।
হাতে টাকা পয়সা নেই। তার উপর থাকা খাওয়ার পাশাপাশি মাসিক কিছু খরচের টাকাও দেয়া হবে। শর্ত পড়াতে হবে ম্যাডামের মেয়েকে। মেয়ে এস এস সি পরীক্ষা দিবে।
অনেক ভেবে সে বাসায় উঠলো। ম্যাডাম অনেক ধনী। তার স্বামী মারা গেছেন কয়েক বছর পুর্বে। মাসুদ বাসায় ভালোই সময় কাটায়। রাদিয়া, ম্যাডামের মেয়ে, কে পড়ায়।
ম্যাডাম ও মাসুদ কে অনেক আপন মনে করে।
ম্যাডাম বাহিরে যাওয়ার সময় প্রায়ই মাসুদ কে সাথে নিয়ে যায়। এমন রেস্টুরেন্টে যায় যেখানকার কথা মাসুদ স্বপ্নেও ভাবেনি। পোশাকে অনেক পরিবর্তন। মাসুদ এখন ঐ পরিবারেরই একজন।
মাসুদের বোনের বিয়ে। যৌতুক হিসেবে অনেক টাকা দরকার। কোথাও টাকা পায়না মাসুদ। অবশেষে মাসুদ ম্যাডামকে বলে।
ম্যাডামঃ টেনশন করোনা
মাসুদঃ ম্যাডাম, অনেক টাকা তো!!
ম্যাডামঃ ভেবনা।
আমি আছিনা? টাকা আমি দেবো। মাঝে মধ্যে আমার কথা রেখো?
মাসুদঃ ঠিক আছে ম্যাডাম। আমি চেষ্টা করব।
মাসুদের বোনের বিয়ে শেষ। মাসুদ ঢাকায় ফিরে এসেছে।
কয়েকদিন চলে গেল। হঠাত একদিন সন্ধায় ম্যাডাম মাসুদকে ডেকে বলে, মনে আছে?
মাসুদঃ কি ম্যাডাম?
ম্যাডামঃ এত দ্রুত ভুলে গেলে? ঐ যে বিয়ের সময় বলেছিলাম...
মাসুদঃ জি ম্যাডাম, মনে পড়ছে। ভুলি নাই।
ম্যাডামঃ আচ্ছা। এখন যাও।
রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে।
মাসুদঃ ঠিক আছে ম্যাডাম।
মাসুদ ভাবতে থাকে কি কথা তাকে রাখতে হবে? একসময় মাসুদ ঘুমিয়ে যায়। ম্যাডাম আর মাসুদের রুমের মাঝে রাদিয়ার রুম। অনেক রাতে ঘুমের মাঝে মাসুদের শরীরে কারো হাতের স্পর্শ তার ঘুম ভেঙ্গে দেয়।
মাসুদ লাফিয়ে উঠে ।
মাসুদঃ কে , কে!!
ম্যাডামঃ চুপ। আমি, তোমার ম্যাডাম।
মাসুদঃ ম্যাডাম, এত রাতে আপনি এখানে? আমার রুমে?
ম্যাডামঃ বলেছিলাম না, কিছু কথা রাখতে হবে? চুপ থাকো। কথা বলবে না।
বললে সব হারাবে। জেলের ভাত খেতে হবে, কিংবা আমি চিৎকার করলে গণপিটুনি খেয়ে মারা যাবে। তাই, চুপ।
মাসুদ ভয় পেয়ে যায়। তারপর... একসময় ম্যাডাম ক্লান্ত শরীরে রুমে ফিরে যায়।
মাসুদ এখন প্রায়ই বিষণ্ণ থাকে।
এদিকে রাদিয়াও মাসুদের প্রতি ইদানিং দুর্বল হয়ে পড়ছে। মাসুদ বুঝতে পারে। রাদিয়াকে তারও ভালো লাগে । কি সুন্দর হাসি, মায়াবী চোখ।
পড়ানোর সময় চোখ নামাতে মনই চায়না।
এদিকে মাসুদের বিষণ্ণতা খেয়াল করে রাদিয়া। একদিন মাসুদকে কাঁদতে দেখে রাদিয়া। ঠিক বুঝতে পারেনা কি হয়েছে। তাই মাসুদকে তার রুমে নিয়ে জিজ্ঞাসা করে, কি হয়েছে?
মাসুদঃ কিছুনা।
রাদিয়াঃ কিছু একটা তো বটেই। আচ্ছা আপনি আমাকে ভালোবাসেন?
মাসুদঃ না..., কেন?
রাদিয়াঃ আমি বুঝতে পারি। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমিও আপনাকেই...
মাসুদঃ থাক। তুমি পড়তে যাও।
রাদিয়াঃ আচ্ছা।
মাসুদ ডিসিশন নিতে পারছেনা। একদিন ভোরবেলা রাদিয়ার আম্মু মাসুদের ঘর থেকে যাওয়ার পরেই রাদিয়া মাসুদের ঘরে আসে। মাসুদ ঘুমের ভান করে পরে থাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে...চলে যায়।
মাসুদের দুচোখে শুধু অশ্রু...
আজ রাতে মাসুদ নিজেই ম্যাডামের ঘরে যায়। একপর্যায়ে ম্যাডামকে হত্যা করে। এরপর নিজেই আত্নহত্যা করে।
ঘুম থেকে উঠে রাদিয়া ফ্রেশ হয়ে মাকে ডাক দেয়। মায়ের উত্তর না পেয়ে মায়ের সাথে মাসুদের লাশ হাত ধরে আছে।
মাসুদের হাতে দেখে একটি চিরকুট। তাতে লেখা...
রাদিয়া,
আমি এমন কিছু কখনো চাইনি। কখনো ভাবিও নি আমার জীবনটা এমন হবে। লজিং থাকতে এসে আমাকে আমার সত্ত্বার যে এমন বিসর্জন দিতে হবে তা ভাবিনি। শুধু বিবেকের দহনে বিদ্ধ হয়েছি।
আমার আর কতইবা বয়স ছিল? আমি দরিদ্র ছিলাম। এটাই কি আমার অপরাধ? জানিনা। তোমার মায়ের সাথে আমার কথা রাখার কথা দিয়েছিলাম , রেখেছিও। কিন্তু যখন তুমি আমায় ভালবাসার কথা বলে মাথায় হাত রাখলে আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম। একদিকে তুমি অন্যদিকে তোমার মা।
আমি বিবেকের দংশন থেকে মুক্তি পাইনি। আমি চাইনা আমার মত আর কেউ এমন পরিস্থিতির শিকার হোক। তাই এটা করতে বাধ্য হলাম। আমায় ক্ষমা করো... ।
ইতি...
এক হতভাগা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।