মানুষের চরিত্র বড়ই জটিল আর জটিল চরিত্রের মানুষকে নিয়ে কিছু লেখা আরো জটিল। সুন্দরী বিবাহিতা মেয়ে মানুষের প্রতি আমার একটা বিশেষ দূর্বলতা আছে। তাই বলে আমি চরিত্রহীন নই। আমারো একটা চরিত্র আছে। তবে হ্যা, আমাকে যদি আপনি দুশ্চরিত্র বলেন তবে আমি কিছু মনে করবনা।
কারন আমি ক্ষানিকটা তাই। কি, নিজের তবলা নিজেই বাজাচ্ছি বলে তব্দা (তব্দা শব্দটা হুমায়ুন স্যারের ভাইয়ের লেখা 'আবজাব' বইতে পেয়েছিলাম) খেলেন? তব্দা খাবার কোন কারন নেই, আমি এরকমই। বিশ্বাস না হলে ঝুমা, সুমা, রুনু,মিতা এদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখবেন। ওরা আমার ক্যারেক্টার সার্টিফিকেটটা সঠিকভাবে আপনাদের হাতে তোলে দিতে পারবে অনায়াসে।
পরকীয়া ব্যাপারটা আমার অর্ধ সেঞ্চুরী প্রেমের মধ্যে একটাকেও পাকতে দেয়নি।
প্রেম যখনই আধাপাকা হতে শুরু করে, তখনই তাতে কোন না কোনভাবে পরকীয়ার অনুপ্রবেশ ঘটে। তখন ঘেন্না ছারা কিছুই আর আমার জন্য থাকেনা।
সেদিন সিনিয়র একজনকে দেখে খুব ভাল লাগল বলে মনের আনন্দে ঝাক্কাস একটা শিষ মারলাম। আমি দেখতে পাইনি পেছনে রিতা ছিল। আমাকে লম্পট নাকি কি একটা বলে গাল দিয়ে সে চলে গেল।
এখন আর আমার সাথে কথাও বলেনা। বলেনতো, মনের সুখে শিষ দেওয়া কি অন্যায়? একজনের সাথে প্রেম করলে কি অন্যজনকে শিষ মারাও মানা? আমার কি শিষ মারার স্বাধীনতাটুকুও নেই?
মিলির সাথে আমার প্রেমের বয়স তখন তিনমাস। একদিন মিলি আমাকে তাদের বাসায় দাওয়াত দিল, আমি গেলাম। মিলির ভাবি আমার নিয়ে যাওয়া মিষ্টির খুব প্রসংশা করলেন, আমি মন দিয়ে ভাবির প্রসংশা করলাম। বললাম, সত্যি ভাবি তুমি খুব সুন্দরী।
তোমাকে দেখলেই ছুঁইয়ে দেখতে ইচ্ছা হয়, যদি মিলিটা তোমার মত হত। শেষের কথাটা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, আমি ইচ্ছা করে বলিনি। যেভাবেই হোক কথাটা বলা শেষ হতেই গেন্জাম শুরু হল। যেনতেন অন্যায় নয়, পরনারীকে ছুঁইয়ে দেখতে চাওয়ার মত মহা অন্যায়। খাবার আর কপালে না জোটলেও গালাগাল জোটেছিল অনেক।
সেই সাথে মাত্র তিন মাসেই কাঁচা প্রেমের সলীল সমাধি।
মিলির সাথে আমার সম্পর্কটা ফোলস্টপ হলেও ভাবিকে কিন্তু সেদিন ঝটিল রকমের খুশি করতে পেরেছিলাম আমি। তবে সামান্য রেগে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাগের পরিমানটা এতই সামান্য ছিল যে, খুশির আড়ালে তা একেবারেই সমূলে বিনাশ হয়েগিয়েছিল। প্রসংশা পেলে মেয়েরা খুশি হয় জানতাম কিন্তু কতটা খুশি হয় তা সেদিন নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতামনা।
প্রেমহীন জীবন আমার কাছে কেমন জানি নিরামিষ নিরামিষ মনে হয়। নাহ, সামান্য আমিষ যোগ না করতে পারলে আর চলছেনা। নিজে জীবনপণ চেষ্টা চালাচ্ছি নিরামিষ ভাবটা কাটিয়ে ওঠার জন্য। প্রাণপ্রিয় বন্ধুরাও সহযোগীতার হাতখানি নিজ ইচ্ছাতেই বাড়িয়ে দিয়েছে। দেখা যাক কি হয়, বেশিদিন হয়ত আর নিরামিষ থাকতে হবেনা আমাকে।
মিলির জায়গাটা পূরণ করার জন্য একজনকে পাওয়া গেল। গত দুইতিন দিন থেকে লাইন মারছি কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। বিল্লুকে পাঠিয়ে ছিলাম প্রস্তাবটা সযতনে পেশ করার জন্য। ভয়ে ভয়ে প্রস্তাবটা পেশ করেছিল বিল্লু, কিন্তু কোন রেজাল্ট দিতে পারেনি আমায়। বুঝলাম আমাকেই মাঠে নামতে হবে।
আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমে গেলাম নিজেই। অনেক চেষ্টা করে পরিচয় পর্বটাও শেষ করে নিলাম কৌশলে। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করে ওঠতে পারিনি। বলতে পারেন তেমন একটা পাত্তা দেয়নি আমায়। এতদিন আমার মনের মধ্যে একটা মিথ্যা ধারনা কাজ করত।
আমি মনে করতাম, যেকোন মেয়ে আমাকে দেখলেই বুঝি প্রেমে পড়ে যাবে। আমার চাঁদমুখ চেহারা দেখলেই বুঝি মেয়েরা আমার প্রেমের সাগরে পড়ে হাবুডুবু খাবে। এতদিন পর এই মেয়েটি আমার তরল ধারনাটাকে মিথ্যা করে দিয়েছে।
একদিনের পরিচিতার সাথে ইচ্ছা করলেই যেখানে সেখানে কথা বলা যায়না, আমিও পারছিনা। কিন্তু কথা বলাটা জরুরী, মারাত্মক রকমের জরুরী।
প্রেম ছাড়া আর কতদিন থাকা যায়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আজ কিছু একটা করবই। কিন্তু কিভাবে, কি করব বুঝতে পারছিনা। কারন আমি মেয়েটিকে ভাল করে চিনিনা। শুধু জানি যে, আমাদের পাশের গ্রামে মেয়েটার বাড়ি কিন্তু ঠিক কোন বাড়িটা যে ওদের তাও জানিনা।
বিকেলবেলা মেয়েটাকে গন্তব্য মনে করে বাড়ি থেকে বের হলাম। বাড়ি থেকে বের হতেই পিছন থেকে ডাকল মা।
- লাবীব শোন।
-জী, মা কিছু বলবে?
-কোথায় যাচ্ছিস, ওই পাড়ার দিকে গেলে ফরীদার বইটা নিয়ে যা, দিয়ে আসিস।
এমন একটা মূহুর্তে পিছন থেকে ডাকার কারনে মায়ের উপর সামান্য অভিমান হলেও ফরিদা ভাবির কথা শুনে মনটা ভাল হয়ে গেল।
কারন ফরিদা ভাবি রূপে গুনে অসামান্যা এক নারী। আমি আমার মাসহ হাতে গুনা যে কয়টা মেয়ে মানুষকে শ্রদ্ধা করি ফরিদা ভাবি তাদের মধ্যে একজন। ধর্মীয় সকল বিধি নিষেধ গুলো তিনি প্রায় পুরোটাই মেনে চলেন। আমার মা এই জন্যই ওনাকে আমার থেকেও বেশি ভালবাসেন। মা প্রায়ই ভাবির কাছ থেকে ধর্মীয় বইপত্র নিয়ে আসেন পড়ার জন্য।
মায়ের কাছ থেকে বইটা নিয়ে চলে এলাম ভাবিদের বাসায়। বইটা ভাবির হাতে দিয়ে বললাম -আসছি ভাবি, আমার একটু তাড়া আছে।
-এক মিনিট বস ভাই, আমাদের বাড়ি থেকে বিখ্যাত মিষ্টি আর দই পাঠিয়েছেন, সামান্য খেয়ে যাও। ভাবি পাশের রুমে চলে যাবার পরপরই বুরখা পড়া একটি মেয়ে রুমে ঢুকল।
-নাও ভাই, মিষ্টি খাও।
একি তুমি কখন এলে? আমার সামনে মিষ্টির পেলটটি দিয়ে বোরখা পড়া মেয়েটির দিকে দৃষ্টি দিলেন ভাবি।
-এইতো,
-ও আমার দেবর, তুমিও বস আমি ---। ভাবি সম্ভবত আরো কিছু মিষ্টি আনতে যাচ্ছিলেন। মেয়েটি তাকে বাঁধা দিয়ে বলল।
-ভাবি ব্যস্ত হয়োনা, আমি ভাইয়ার কাছে এসেছি থাকব অনেকখন।
-ঠিক আছে তাহলে নেকাবটা খুলে রাখনা।
মেয়েটি নেকাব খুলল আমি খানিকটা চমকাইলাম। জল না চাইতেই শরবত!
এই মেয়েটি সেই মেয়ে! যার সাথে দেখা করার জন্যই আমি বাসা থেকে বের হয়েছি। যাকে আমার ভাল লাগে আর ভালবাসি। আমি ভাবতেই পারিনি ওর সাথে এখানে আমার দেখা হবে।
ভাবির সাথে কথা বলে জানলাম মেয়েটি সম্প্রতি ওনাদের বাসায় (ভাইয়ার কাছে) কি যেন একটা বিশেষ কাজের জন্য প্রায়ই আসে। নিশ্চয় কোন মামলা মোকদ্দমার ব্যাপার হবে। ভাইয়া একজন আইনজিবী, সুতরাং মামলার ব্যাপার হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু ঠিক কি, তা আমাকে জানতেই হবে। ভাবির সাথে কথা বলে বুঝলাম তিনি এব্যাপারে কিছুই জানেন না।
মেয়েটার পেছনে প্রায় ছয় মাস সময় ব্যায় করার পর, ওর সাথে কথা বলতে পারার মত একটা সম্পর্ক্ সৃষ্টি হল আমার। এখন কোথাও দেখা হলে দুই একটা কথা বলা যায়। বলতে পারেন এখনো আমি প্রথম ধাপেই পড়ে আছি আমি। কিন্তু এভাবে কি জবিন চলে? কিছু একটা করা উচিত।
কিভাবে কি করব তা ভাবতে ভাবতে আরো কিছুদিন কেটে গেল।
সানজিদা আজকে ভাবিদের বাসায় আসতে পারে, এই রকম একটা সংবাদ আমি আগে থেকেই জানতাম। তাই তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার সেড়ে চলে এলাম ভাবির বাসায়। বাসায় এসে দেখলাম সানজিদা ভাইয়ার সাথে কথা বলছে। আমি রুমে ঢুকব কিনা বুঝতে পারছিলামনা তাই দরজায় দাড়িয়ে ছিলাম। ভাবি আমাকে দেখে বলল- লাবীব বাইরে দাড়িয়ে আছিস কেন, ভেতরে আয়।
আমাকে দেখে ভাইয়া মেয়েটির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। সানজিদা আমার দিকে একবার তাকাল। তারপর বলল, ভাইয়া ওনি আমাদের কথা শোনলে, কোন সমস্যা হবেনা বরং একটি সমস্যার সমাধান হতে পারে।
ওর কথা শুনে আমরা সবাই চমকাইলাম। আমি সমস্যাটা বুঝলেও কি সমাধান হবে তা বুঝতে পারছিনা।
সব জট খোলে দিল সানজিদা। আমি কিছুদিন থেকে ওর পেছনে লাইন মারছি, ওকে কিছু বলতে চাইছি এইসব কিছুই নির্দিধায় ভাইয়া ভাবিকে বলে দিল সে। এইবার সমস্যাটা সবাই বুঝলেও সমাধানটা কি তা কিন্তু এখনো আমার কাছে পরিষ্কার হলোনা। তাই মুখ ফোটে ভাইয়া ভাবির কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সমাধান কি তা জানতে চাইলাম। সবার দৃষ্টি সানজিদার মুখের দিকে।
এরপর সানজিদা যা বলল তা সংক্ষেপে এইরকম-
প্রায় দেড় বছর পুর্বে পারিবারিকভাবে এক ভদ্রলোকের সাথে সানজিদার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু কিছু সমস্যার কারনে ভদ্রলোকটির সাথে সংসার করা হয়নি তার। মাত্র দশদিনের মাথায় সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল সে। এখনো সে আইনত ঐ ভদ্র লোকের স্ত্রী। সেই ভদ্রলোকের স্ত্রীর সাইনবোর্ডটি খোলে ফেলে দিবার জন্যই সম্প্রতি সে ভাইয়া কাছে আসে।
ভাইয়া সব শোনে তাকে বিনা খরচে আইনি সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছেন। মামলাটি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সানজিদা নিজের সম্পর্কে সবকথা বিনা দিধায় বলে ফেলল আমাদের কাছে। ব্যাপারটা ভাবিও জানতেননা। শোনে অবাক হলেন।
সানজিদা ভাইয়ায় সাথে মামলার ব্যাপার নিয়ে আমাদের সামনেই আরো প্রায় একঘন্টা কথা বলার পর চলে গেল। যাবার সময় আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে গেল। আমি আজ চলে যাচ্ছি। আপনি আপনার এই ভাইয়ার কাছ থেকে আমার সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন। আমি ভাইয়াকে বলে দিয়েছি, আমার সম্পর্কে ওনি যতটা জানেন তার সবটা যেন আপনাকে বলেন।
আমার সবকথা জেনে শোনে, আপনার যদি মনে হয় আমাকে ভালবাসেন, তবে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব, চলি খোদা হাফেজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।