আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার পিচ্চি কালের কিঞ্চিত ১৮+ কাহিনী। মান-সম্মানের ফালুদা পোস্ট।

যেথায় পড়শী বসত করে, আমি একদিন ও না দেখিলাম তারে। আমি ছোট বেলা থেকেই ছিলাম মায়ের আঁচল ধরা ছেলে, ঘরকুনো, আর বিরাট ভ্যাবলা টাইপের। একটু লাজুক আর উদাস প্রকৃতির। বাবা-মা কে আদর করে আব্বু-আম্মু ডাকতাম। ক্লাস টু তে স্কুলে ভর্তি হব।

জিলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা হবে। পরীক্ষা দিবে ৩০০ জন, নিবে মনে হয় ৪০-৫০ জন , এই রকম। আম্মু বাসায় প্রতিদিন পড়ান। আব্বুকে পড়াশুনার ব্যাপার ছোট বেলায় একটু ভয় পেতাম। আব্বু পড়া ধরলে কিচ্ছু বলতে পারতাম না।

আব্বু পরীক্ষার আগের দিন পড়া ধরলেন। জাতীয় ফুল কি----গোলাপ, জাতীয় কবির নাম কি---সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। আব্বুর সামনে সব কিছু গুলিয়ে ফেলতাম। আব্বু আম্মু কে বলত, তোমার ছেলে এবার স্কুলে চান্স পাবে না। চান্স পেলে আমি সবাইকে দশ কেজি মিষ্টি খাওয়াব।

যাই হোক, পরীক্ষার দিন বড় ভাইয়া (আমার থেকে ১২-১৩ বছর বড়) নিয়ে গেল স্কুলে। কিভাবে খাতায় নাম লিখতে হবে, ধীরে-সুস্থে কিভাবে উত্তর লিখতে হবে, কোন প্রশ্ন বুঝতে না পারলে, স্যার কে দেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, ইত্যাদি শিখিয়ে দিয়ে আম্মু পাঠিয়েছে। পরীক্ষার হলে ঢুকলাম। প্রশ্ন পেয়ে উত্তর করতে লাগলাম। সম্ভবতঃ দেড় ঘন্টার পরীক্ষা ছিল।

উত্তর লিখতে শুরু করার কিছুক্ষণ পর ব্লাডার এ প্রবল চাপ অনুভব করলাম। এ অবস্থায় কি করতে হবে, তা তো আর আম্মু শিখিয়ে দেয় নি। আমিও তাই ভেবে পেলাম না কি করা উচিৎ। ভাবতে ভাবতে পরীক্ষার হলের মেঝে ভিজতে লাগল। আর আমি প্রশ্নের উত্তর করতে লাগলাম।

টীচার খাতা সাইন করতে আসার সময়, আমি একটু লজ্জা পাচ্ছিলাম, যদি বুঝে ফেলে। টীচার এসে একবার মেঝের দিকে তাকালেন। মানীর মান আল্লাহ রাখে, তিনি সম্ভবতঃ কিছু বুঝতে পারেন নি। পরীক্ষা শেষ করে বেরুলাম। ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়ে রিক্সায় উঠালেন।

আরে তোর প্যান্ট ভেজা ক্যান? বাড়ী এসে ভাইয়া এ ঘটনা পারলে মাইক নিয়ে সবাইকে বলে বেড়াতে লাগল। ভাইয়া টা যে এত দুষ্ট। আব্বু ঘটনা শুনে আরো নিশ্চিত হলেন, আমার এ বছর স্কুলে ভর্তি হওয়া হবে না। যাই হোক, রেজাল্ট দিলে দেখা গেল, ৩০০ জনের ভেতরে থার্ড হয়েছি। আব্বু উচ্ছসিত হয়ে আশে-পাশের বাড়ির সবাইকে মিষ্টি খাওয়ালেন।

আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলাম। বাড়ীতে কোন মেহমান এলে, বিশেষ করে যদি মেয়ে (ছোট, সমবয়সী বা আন্টি) গোত্রের কেউ থাকত সাথে, আমি পারলে কোন এক ঘরে গিয়ে লুকিয়ে থাকতাম। লুকিয়ে লুকিয়ে গল্পের বই পড়তাম। বই পড়া ছিল নেশা। যদি মেহমানদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য কখনো আব্বু ডাকত, আমার গলা শুকিয়ে আসত।

পরিচয় হওয়ার সময় কার সাথে কি বলতে হবে, বুঝে উঠতে পারতাম না। আব্বু যদি পরিচয় করিয়ে দিত, ইনি হচ্ছে তোমার আঙ্কেল, আন্টি, এদের কে সালাম কর। আমি সালাম করে ভ্যাবলার মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতাম। উনারা জিজ্ঞেস করত,তুমি কিসে পড়, সাইন্স নিবা না আর্টস নিবা, ইত্যাদি, আমি যতটা সংক্ষেপে সম্ভব, টু দ্য পয়েন্টে উত্তর দিতাম। আর ওইখান থেকে কত তাড়াতাড়ি পালানো যায়, সেই অপেক্ষায় থাকতাম।

আম্মু অবস্থা বুঝে বলত, যা, তোর কাজে। আমি হাঁফ ছেড়ে বাচতাম। এ রকম ছিলাম বলে, ছোট বেলা থেকেই আমাদের পাড়া-পড়শীর ছেলে-মেয়েরা আর কাজিন রা আমার বোকামীর গল্প করে হাসাহাসি করত। একবার আম্মু বাজারে পাঠাল, ৫০ টাকা দিয়ে, কিছু সদাই পত্র কিনে আনতে। আমাদের এলাকায় বাজারের পথে এক ভিক্ষুক মাঝে মাঝে গান গেয়ে গেয়ে ভিক্ষা করত।

লোকজন যাবার পথে তার সামনে রাখা প্লেটে আট আনা, চার আনা ভিক্ষা দিত। অনেকে দেখতাম, ভাংতি না থাকলে, ৫ টাকার নোট দিয়ে, ৪ টাকা আট আনা প্লেট থেকে তুলে নিত। আমি পাশ দিয়ে যাবার সময়, ভিক্ষুক বলে উঠল, বাবা, দুটা ভিক্ষা দিয়া যান। আমার মনে হল, আমার তাকে ভিক্ষা দেয়া উচিৎ। কিন্তু আমার কাছে তো ভাংতি নাই।

ভিক্ষুকের প্লেট থেকে কি টাকা উঠিয়ে নেয়া যায়। আমি পুরো টাকাটাই তাকে দিয়ে বাড়ী চলে এলাম। এ গল্প আম্মু যার সাথে দেখা হয় তার সাথেই করতে লাগল। কিছু দিন আমাকে ছেলেপিলে হাতেম তাঈ ডাকা শুরু করল। কি যন্ত্রণা।

একবার এ রকম কি আনতে আম্মু দোকানে পাঠিয়েছে বেশ সকালে। যাওয়া আসা সব মিলিয়ে ১৫ মিনিটেগর বেশী লাগার কথা না। আমি ফিরলাম প্রায় এক ঘন্টা পরে। ওই পথে একটা স্কুল ছিল। সকালে সেখানে রাস্তার উপর পি-টি হত।

সোজা হও, আরামে দাঁড়াও, আমি শপথ করিতেছি যে..........পি-টি এর সময় ওই রাস্তার মোড়ে একটা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিত, 'থামুন'। রিক্সা, গাড়ী, মটর সাইকেল অন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করত। আমি পাশ দিয়ে চলে গেলেই হয়। তা না করে, 'থামুন' সাইনবোর্ড দেখে থেমে গেলাম। অপেক্ষা করছি কখন পি-টি শেষ করে ওরা সাইনবোর্ড উঠিয়ে নিয়ে যাবে।

ইতিমধ্যে আমার এত দেরী দেখে আম্মু বড় ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিয়েছে আমার কি হলো খোঁজ নেবার জন্য। ভাইয়া এসে দেখে আমি 'থামুন' সাইনবোর্ডের সামনে থেমে আছি। পাড়া-পড়শী, আত্মীয়-স্বজন যেই বেড়াতে আসে, তাকেই এই গল্প শুনায়। আর সবাই হেসে খুন। ভাইয়া টা আমাকে ক্ষেপাতে খুব মজা পেত, কেন তা এক রহস্য।

এই ভাইয়া অবশ্য আব্বু রিটায়ার্ড করার পরে আমাদের সংসারের সবার পড়াশুনা সহ সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।