আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী, সাথী মোদের মারামারি নয় তো মরা মরি।.

পাঠেই পরিচয় ! void(1); কি অদ্ভুত এক রকম জীবন আমরা বহন করে চলেছি আমরা। আমরা নিজেরাও জানি কাল কি হবে, আজ কি হবে , এমনকি এখন এই মাত্র কি হবে ? জানি সবই জানেন বিধাতা। কিন্তু আমাদেরও তো কিছু না কিছু গিলু-মশলা বিধাতা দিয়েছেন !! আমরা কোথায় থাকি আর আমাদের গিলু-মশলা কোথায় থাকে ?? আজকে সকালবেলা সূর্য ঠিক মত উঠছে কিনা দেখি নাই। কিন্তু মূহুমূহু দূর্ঘটনা আর মৃত্যুর সংবাদ কেমন করে যেনো শুনতে না চাইলেও শোনা হয়ে যাচ্ছে, জানাতে না চাইলেও জানা হয়ে যাচ্ছে। সকালে জানলাম মেঘনায় লঞ্চ ডুবেছে।

৩০০ যাত্রী নিয়ে ৭০ ফুট পানির নিচে ডুব দিয়েছে এম-ভি শরীয়তপুর-১ নামের একটা লঞ্চ। এখনো ৫০ জনের মৃত দেহ খুজে পাওয়া গেলেও আরো ২৫০ জন যাত্রী নিখোঁজ। আগামী ২-৩ দিন পর তো লাশ পাওয়া গেলেও পাওয়া যাবে মানুষের মাংস, মানুষের দেহ তো নয় ! এর উপর আরো অবাক হয় যখন শুনি ২০০ টনের লঞ্চকে টেনে তুলতে পাঠানো হলো রুস্তমকে। অবাক হবেন না রুস্তম আবার কোন মানুষের নাম নয়। ইহা একটি উদ্ধারকারী লঞ্চের নাম যার নিজেরই টেনে তোলার ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন!! অবশ্য রুস্তমের সাহস দেখে অবাক হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

তবে বেচারার কোন দোষ নেয়, ইতোপূর্বে রুস্তমকে আরো বেশ কয়েকবার এই রকম দুঃসাহসিক অভিযানে যেতে হয়েছে এবং সে প্রমাণও দিয়েছে সাধ থাকলেও পানির অতলে তলিয়ে যাওয়া তার চেয়ে কয়েক গুণ ভারী লঞ্চ সে তুলতে সক্ষম নয়। তবে এক্ষেত্রে প্রায় প্রতিবারের মত এবারও হামজাকে আসতে হলো। উল্লেখ্য, হামজা রুস্তমের বড় ভাই স্বরূপ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেন আগে হামজাকে না পাঠিয়ে রুস্তমকে পাঠায় তা সবার জন্য একটি সাধারণ কুইজ। সরকার এরই মধ্যে মৃতদেহের মূল্য নির্ধারণ করে ফেলেছে,শুনেছি প্রতি মৃতদেহের জন্য ৩০ হাজার টাকা এবং একই পরিবারে একের অধিক মৃতদেহের জন্য ৪৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

রাতের সংবাদে দেখলাম মৃতদেহের শেয়ার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজারে ! তাহলে বাংলাদেশের একটি মানুষের বর্তমান মূল্য যদি হয় ৫০ হাজার টাকা তাহলে বর্তমান আদমশুমারীর হিসাব ও ঐকিক নিয়ম অনুসারে মোট ১৫ কোটি মানুষের মোট মূল্য দাঁড়ায় (১৫ কোটি X ৫০০০০)টাকা। হিসাব করে বলেনতো এই দেশে আপনার মৃত পরিবারের মূল্য কত ?? আমরা লঞ্চডুবি যাত্রীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। বিকেল পার হতেই শুনলাম চলচিত্র জগতের অন্যতম ক্ষুরধার শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে কুশল তার বড় ভাই কবীরকে কোন প্রকার কৌশলের আশ্রয় না নিয়ে ছুরিকাঘাতে খুন করেছে। অতি দুঃখের এবং মর্মান্তিক ঘটনা। জানা গেলো কুশলের মাদকের প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা থাকায় তার পাওনাদারেরও অভাব ছিল না।

মাদক আমাদের সমাজের মানুষকে কতটা সহজে গ্রাস করে এবং হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে দেয় তার নিশ্চিত উদাহরণ নিশ্চয় এরকমই হয়। বাবা যেখানে ছেলের হাতে, ভাই যেখানে ভাইয়ের হাতে নিরাপদ নয়, মায়ের হাতে শিশু যেখানে নিরাপদ নয়, পরিবার যেখানে পরিবারের হাতে নিরাপদ নয় সেখানে দেশের হাতে ভূখণ্ড, শাসকের হাতে দেশ আর মানুষের হাতে মানুষ কি করে নিরাপদে আশ্রয় নিবে !?? সব প্রতিনিয়ত খুন হবে, আত্মসাত হবে এভাবে হবে বিলুপ্ত, এই তো আমাদের কর্মের প্রাপ্য। সন্ধ্যা ৮ টার দিকে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী এলাকা ধানমণ্ডির রায়ের বাজারে শিকদার মেডিক্যালের পাশের বউবাজার বস্তিতে আগুনে ৩০০ বস্তিঘর পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন লাগার কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গড়ে প্রতি ঘরে যদি ৫ জন মানুষ হয়ে থাকে তবে আজ রাতে খোলা আকাশের নিচে মানুষের সংখ্যা আরো ১৫০০ বাড়লো। তাদের হয়তো সামান্য কিছু ছিলো, সকাল থেকে শুরু হবে তাদের নিঃস্ব জীবন। কেউ(সরকার) দিলে হয়তো ঘর প্রতি ৪-৫ হাজার টাকার মত সাহায্য তারা পেতে পারে, তারপর সব শেষ কড়ি থেকে কুঁড়ি করতে না জানি তারা কে কোন পথ বেছে নিবে। ৫২'তে ভাষা শহীদরা ভাষা দিয়ে গেলেও আমরা জানি না আজ কে তাদের আশা দিবে। রাত আর একটু বাড়তেই শুনলাম খাবারের দোকানে কথা কাটাকাটির কারনে একপর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেছে।

এতে ৪০ জন ছাত্র আহত হয়েছে, এমনকি হলের প্রক্টরও আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে জানা গেছে। যাই হোক দিন শুরু হলে রাত হবে তা অবধারিত কিন্তু রাত হতে হতে এভাবে সবাই কাত হয়ে যাবে তা কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দিন দিন আগ্রাসী হয়ে পড়ছি।

ক খ-য়ের উপর , গ ঘ-য়ের উপর প্রতিনিয়ত ক্ষেপে যাচ্ছি। আমরা স্কুলে যাচ্ছি, কলেজে যাচ্ছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমরা ভালো কিছুই শিখছি না। তাহলে আমরা কি শিখছি, যা শিখছি তা কোথায় কাজে লাগাচ্ছি ? আর যা করছি তা আমাদের শিখাচ্ছে কে ? আমরা কি হতে গিয়ে কি হয়ে আসছি !! তবে কি মানুষ হিসেবে আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছি ? আমরা কি এমন কিছুর নিয়ন্ত্রণের পুতুল হয়ে পড়েছি যেটা আমাদেরকে আরো নিচের দিকে তলিয়ে নিয়ে যাবে। আর উদ্ধার করার কেউ থাকবে না ?? আমরা কি তবে আলোক পোকার মত পাখা পুড়িয়ে জীবন দিতে আগুনের দিকে ছুটে চলেছি ? কে আমাদের ফেরাবে এই উচ্ছৃঙ্খল জীবন গতির অভিমুখ থেকে ? আর যদিওবা কেউ আসে, তারা কি পারবে এমন নিচের দিকে তলিয়ে যাওয়া অধঃপতনের গুহা থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করতে নাকি উদ্ধারকারী লঞ্চ রুস্তমের মত সেও হবে নিতান্তই অসমর্থ্য !!! ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।