সেই দিন টিভি তে একটা টক শো দেখলাম। চ্যানেল টার নাম ঊহ্য রাখলাম। একজন পুরুষ উপস্থাপক সাথে তিন জন নারী বাক্তিত্ত। প্রসঙ্গ বিশ্ব নারী দিবস। অনুষ্ঠানটা অনেক্ষন দেখলাম।
কিন্তু দেখে কোনও কিছুই বুঝলাম না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে নারী বিদ্বেষী বা নারীবাদী নই। নিরপেক্ষ ভাবে কখনও কখনও নিজের সহকর্মীদের সাথে কিছু মতামত আদান প্রদান করি।
আমাদের মাঝে কিছু মানুষ আছেন যারা মুখে সাংঘাতিক ভাবে নারীর পক্ষে কথা বোলবে কিন্তু ঘরে অথবা নিজের বাসায় এরা ঠিক বিপরীত চরিত্র প্রকাশ করে। নারী অধিকার চাই, ঘরে-বাইরে নারীর মান দিতে হবে, সব কিছুতে পুরুষের সমান সমান হতে দিতে হবে, রাস্তায় নিরাপত্তা দিতে হবে, কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এইরূপ শতশত, হাজার হাজার মন্তব্য শুনলে মনে হয় এই পুরুষ গুলো পৌরুষের অন্তরালে নারীর উদ্ধত মূর্তি ছারা আর কিছুই নয়।
আজ এই ডিজিটাল? যুগের মাতাল হাউয়ায় দাঁড়ায়ে বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত এর কথা বেশ মনে পরে। আজ তাঁর মতে নারীরা আসলেই নিজেদের এক একটা সুটকেইস ছারা আর কিছু ভাবে না। সুটকেস ভারী মনে হলেই প্রয়োজন পুরুষকে। আর হালকা মনে হলে “একলা চলরে”। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সেই পুরুষকেই।
নারীবাদী ন্যুব্জ হয়ে যাওয়া পুরুষগুলো এবং ভণ্ড পুরুষবিদ্বেষী নারীগণ? এটা ভুলে যান যে “অন্ধকারে শুধু ভগিনীরাই সন্ত্রাসী অথবা চাঁদাবাজদের শিকার হয়না ভ্রাতাগনও হন। “ কতজন নারী আছে তাদের নিরাপত্তার কথা বলতে গিয়ে এই কথা টা বলেন? কর্পোরেট ন্যাশনাল- মালটিন্যাশনাল কম্পানি গুলতে যেয়ে দেখেন অনেক মেধাবি ছেলে নিজের যোগ্যতা ফলাও করতে পারছেনা শুধু মাত্র আলট্রা ফ্যাশানড মেয়েদের জন্যে। কারন বস সেই নারীদেরই পদন্নতি নিয়ে ভাবেন যারা নিজেদের আলট্রা ফ্যাশানড হয়ে বস এর সামনে উপস্থিত করতে পারে। অবশ্য সেইখানে কিছু নেতিয়ে? যাওয়া শালীন মেয়েও আছে। তাদের কিন্তু অবস্তা ভিন্ন।
এই নেতিয়ে যাওয়া গোষ্ঠী আবার আলট্রা ফ্যাশানডদের একে-ওপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে। পারলে কাজের আড়ালে চিরপরিচিত স্বভাব টাও একটু ঝালিয়ে নেয়। বুঝলেন না? কুটনামি। এই কাজটা এক নারী অন্য এক নারীর জন্য উপহার? সামিল।
আপনারা কি বুঝতে পারছেন অফিস এর ওই বস টি কে? উনি হলেন পৌরুষের অন্তরালে নারীর তরে নিবেদিত এক প্রাণ।
যে সময়-অসময় এ মেয়ে কলিগকে লাঞ্চ অফার করেন, গাড়িতে লিফট দেন আর অফিস এ তার কোন সমস্যা হয় কিনা বেশ ভালভাবে জেনে নেন। বাসায় কিন্তু এই পুরুষটির ভূমিকা সম্পূর্ণ অন্যরকম। সে লেট নাইট বাসায় যাবেন এবং বউ সময়মত বাসায় আছে কিনা খবর নিবেন। ছেলে মেয়েদের সাথে করে গুরুগম্ভির একটা ডিনার সারবেন এবং তথাকথিত ভাবে রাত্রিযাপন করবেন। ছেলে ওপেন এয়ার কনচার্ট দেখার পারমিশন পাবে কিন্তু মেয়ে পাবেনা কারন তার মতে মেয়েদের এই সব অনুষ্ঠানে যাওয়া ঠিক না।
ফিরে আসি যা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেই টিভি অনুষ্ঠানে। এযুগের জনপ্রিয় একজন টিভি চরিত্র টক শো তে বলছিলেন গভীর রাতে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টা নিশ্চিত করতে। তার মতে রাত ১ টা বা ২ টায় সে ও পারবে ঢাকার রাস্তায় চলতে। সেও আর ১০ জন পুরুষের মতো গভীর রাতে কর্মস্থল থেকে ফিরতে পারবে যদি তার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। আমার প্রশ্ন টা হল এই বিষয় টা নিয়ে সে এতটা উদ্বিগ্ন কেন? সে কিন্তু বলে না যে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
কারন সেই কথা টা বললে সে যে নারী তা আলাদা করে বলা যাবেনা। তাহলে কি হল? আমি নিজেই কিন্তু বললাম আমার নিরাপত্তা নেই। আমি যদি সবার কথা বলতাম তাহলে আরও ১০ জন নাগরিক আমার সাথে এক মত হত। না, তা বলা যাবে না। আজ নারী দিবস।
তাই শুধু নারীকে নিয়েই সব হতে হবে?
জনপ্রিয় এক নৃত্য শিল্পী বললেন তারা নাকি এক বার ইটালি সফরে গিয়েছিলেন সেখানে পুরুষরা মেয়েদের সুটকেস বহন করে। তাহলে যদি এটাই হবে তবে সমান সমান অধিকারের কথা আসে কেন? আমি যদি এখন বলি সৌদিআরবে নারীদের হিজাবের আড়ালে থাকা বাধ্যতামূলক এবং সেখানে সৌদি পুরুষরা সব কাজ নিজেরা করে তাহলে কি ওই নৃত্যশিল্পী এই সহযোগিতা গ্রহন করবেন? অবশ্যই না কারন সেখানে তাদের আর একটা স্বাধীনতার ক্ষুণ্ণ হউয়ার আশঙ্কা চলে আসে। ঢাকার রাস্তায় যদি কোন যুবক কোন যুবতীর ভারী ব্যাগ এগিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয় তাহলে তার ব্যাপারে ওই যুবতীর প্রথম ধারনা কি হবে তা এই ব্লগ এর পাঠকরাই ঠিক করুন। “সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ছাঞ্চে থাকে” অথবা “কি মতলব আছে কে জানে?” এই দুইটার একটা না হলেই আমি খুশি হব।
আমি এতক্ষণ অনেক প্যাঁচাল মারলাম কিনা কে জানে।
তবে নারীদের হীন করার কোন দুষ্টু প্রয়াস যে ছিলনা সেটা দিব্যি কেটে “কইলুম”। আর যদি কারও এটা মনেও হয় তাহলে তাদের জন্য বললাম “আমার ভাঙ্গা লা’য়ের ফুটোটাই দিকিশনে বা’জান, হাল ধর চি তর’ই লাইগা”।
যেতে যেতে পথে হল দেরি......। না আজ আর কারও সময় নিব না। বড় কথা হল নারী অধিকার অধিকার করে যে পরিমান ফেনা আমরা মুখ দিয়ে তুলি তার থেকে এক বিন্দু অক্ষিজল যদি প্রাইভেট কারে চড়ে বস্তির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা এতিম মেয়ে- শিশুর জন্য ফেলতাম, ওই শিশুটিকে তুলে এনে যদি “মহিলা বিষয়ক কল্যাণ সমিতি”র সামান্য বাজেট বরাদ্দ করতাম অথবা নিজ বাসার গৃহপরিচিকাকে যদি বাসার একটি মেয়ের মতো সম্মান বা অধিকার দিতাম তাহলে নারী অধিকার নামক সাম্প্রদায়িক আর বর্ণবাদমুলক শব্দটির দাফনকাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হত।
অদ্য কালের হাওয়ায় উড়ে বেড়ানো মিথ্যা চিতার তুষ নিয়ে বুক চাপড়ে তরপাতে হতোনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।