বিএনপির ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে যেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনে, তেমনি আবার জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং তাপ-উত্তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেশ কিছুকাল আগে বিএনপি তাদের এই ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচী ঘোষণা করে। ঢাকায় বিপুল জনসমাবেশ ঘটানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বেগম জিয়াসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিভিন্ন বিভাগে জনসভা করেছেন। বিএনপির এই সরকার পতন আন্দোলন প্রকৃত প্রস্তাবে যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রণীত হয়েছে তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বিএনপির নেতা ও বেগম জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া ও কোকোর দুর্নীতির মামলা বা বিচার নস্যাৎ করা। ক্ষমতাসীন মহাজোটের বিরুদ্ধে বিএনপি সভানেত্রী ও সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রতিদিন যেভাবে মিথ্যার বেসাতি করে ফিরছেন তাতে তাদের রাজনৈতিক সততা নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন উত্থিত হচ্ছে ! আওয়ামী লীগকে ঘায়েলের জন্য বিএনপি নেতৃত্ব এমন সব আজগুবী কথাও বলছেন যা শুনে সচেতন মানুষ মাত্রেরই ভিরমি খাবার দশা হয়।
মির্জা ফখরুল প্রতিদিন টিভি ক্যামেরার সামনে হাত উঁচিয়ে, অঙ্গুলি হেলন করে এবং মাথা ঝাঁকিয়ে যেভাবে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন বা মিথ্যার জাল বোনেন তাতে যে তার নিজস্ব ভাবমূর্তিই দারুণভাবে ক্ষুণ হয় বোধকরি এ বোধটুকুও তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। তাই ‘বিএনপিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়’ এই কথা জোর গলায় উচ্চারণের পরক্ষণেই তিনি বলেন, ‘তবে বিএনপিতে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই, যুদ্ধাপরাধী আছে আওয়ামী লীগে’ এবং ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ওই আওয়ামী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে’। এ ধরনের কথাকে কেউ যদি প্রলাপোক্তি মনে করে, তবে তাকে দোষ দেয়া যাবে না নিশ্চয়ই। কেননা, বিএনপিতে যুদ্ধাপরাধী নেই এ ধরনের উক্তি সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কি হতে পারে! সাকা চৌধুরীর একাত্তরের ভূমিকা কিংবা বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম, শাহ আজিজুর রহমানসহ এমনি বহু লোকের নাম করা যাবে একাত্তরে যাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা এবং বাঙালী নিধনে, বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনে ও মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করার ব্যাপারে প্রকাশ্য ভূমিকার কথা সর্বজনবিদিত। মির্জা ফখরুল সাহেবের কাছে জিজ্ঞাস্য :
বিএনপিকে সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল কারা? তারেক জিয়া এবং তার সঙ্গে বেশ কিছু দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতালোভী, তোষামদ-প্রিয় হারিস চৌধুরী মার্কা নেতাকর্মী ও আমলারাÑ তাই না? সেই সঙ্গে তাদের ধান্ধাবাজ ও সুবিধাভোগী কিছু বন্ধুবান্ধব।
এ হেন দুর্নীতিবাজ তারেক জিয়ার ছবি ব্যানারে এবং পোস্টারে লাগিয়ে বিএনপি নেতারা মাইকে গলা ফাটিয়ে তার পক্ষে সাফাই গান এবং বলেন যে, রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। মানি লন্ডারিং মামলা তো ডকুমেন্টেড ব্যাপার, অন্যগুলো না হয় বাদই দিলাম। এটিকে আপনারা মিথ্যা বলেন কোন মুখে? জেনারেল জিয়া ছেঁড়া গেঞ্জি ও ভাঙ্গা স্যুটকেস রেখে গেলেন অথচ তার দুই পুত্র তারেক এবং কোকো কোন জাদুবলে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন দয়া করে সে জবাবটা দেবেন কি মহাসচিব সাহেব? এর সন্তোষজনক জবাব যদি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে প্রকাশ করেন তাহলে আমরা ধন্য হব, কৃতার্থ হব। একই সঙ্গে আপনিও গৌরবান্বিত হবেন সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস প্রদর্শনের জন্য।
পাঁচ বছরের জন্য ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত একটি সরকারকে অনিয়মতান্ত্রিক পথে উৎখাতের জন্য বিএনপি-জামায়াত যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাতে করে এই দল দুটির প্রকৃত চেহারা-চরিত্র স্পষ্ট করে ফুটে উঠেছে।
প্রতিদিন আমরা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে এমন সব কথা বলতে শুনছি যা তাদের বিদ্বিষ্ট ও হিংস্র মনোবৃত্তির প্রকাশ মাত্র। সৌদি দূতাবাসের একজন কূটনীতিকের হত্যার ঘটনা সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়া যে ধরনের উক্তি করছেন তা এক প্রকার দায়িত্বজ্ঞানহীনতারই নামান্তর। তিনি বলছেন, সরকার দেশের মানুষদের তো বটেই এমনকি বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতেও সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। ‘দেশনেত্রী ও আপোসহীন নেত্রী’ বেগম জিয়ার নিকট জিজ্ঞাস্য : গত বুধবার সিঙ্গাপুরের একটি হোটেলে একজন বাংলাদেশীসহ দু’জন খুন হয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশী ব্যক্তি তো একজন বিদেশীÑসুতরাং এই বিদেশীর জীবনের নিরাপত্তা দিতে সিঙ্গাপুর সরকারের এই ব্যর্থতাকে বিরোধীদলীয় নেত্রী কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? তিনি কি জানেন যে, গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বছরে গড়ে কত লোক নানা কারণে খুন হয়? এ সব খুনের কারণে কি এটি প্রমাণ হয় যে মনমোহন, ক্যামেরন বা ওবামা সরকার ব্যর্থ? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন বললেন যে, সবার বেডরুম পাহারা দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়Ñব্যাস, আর যায় কোথায়? অমনি বিএনপির সব মাউথপিচ সমস্বরে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ শুরু করল।
রাষ্ট্রে যে কোন খুনের জন্য সরকারকেই নাকি তার দায়দায়িত্ব বহন করতে হয় এবং এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং প্রতিরাতে টিভি চ্যানেল গরম করা তাদের চিহ্নিত ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলো’ তারস্বরে এই কথা বলে চলেছেন এবং এর মাধ্যমে জনগণকে বোঝাতে চাইছেন যে, এ সরকার খুন-খারাবি মোকাবেলায় ব্যর্থ। বিএনপি নেত্রী ও তার স্যাঙ্গাতরা দয়া করে উত্তর দেবেন কি, আপনাদের চারদলীয় জোট আমলে দেশে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ মোট কত লোক খুন হয়েছিল? শাহ এএমএস কিবরিয়া, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, আহসান উল্লাহ মাস্টার, আইভি রহমান, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু, খুলনার আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট ইমাম, চট্টগ্রামের শিক্ষক গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীসহ কত মানুষকে হত্যাকা-ের শিকার হতে হয়েছিল সে হিসাব কি তাদের কাছে আছে? কত শত সাংবাদিক আপনাদের শাসনামলে নিগৃহীত হয়েছে দয়া করে তা বলবেন কী?
এ তো গেল রাজনৈতিক হত্যাকা-গুলোর খ-িত চিত্র; ২০০১ সালে ক্ষমতাসীন হবার পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর পাশবিক নির্যাতন, আওয়ামী লীগ ও প্রগতিবাদী শিবিরের নেতাকর্মী হত্যার প্রয়াসে একাধিকবার হামলা এবং হত্যালীলা ঘটানো, রমনার বটমূলে ও পীর-আউলিয়াদের মাজারে বোমা হামলা, বাংলাভাইদের অস্তিত্ব অস্বীকার এবং পরোক্ষভাবে তাদের জঙ্গি তৎপরতায় ইন্ধন দান, মৌলবাদী জঙ্গি ও উলফা সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, জজ মিয়া নাটক সাজানোÑএ সব ঘটনার কথা দেখছি মির্জা ফখরুল, মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার ও তাদের নেত্রী বেমালুম ভুলে গেছেন। এতসব হত্যাকা-কে সরকারী ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ভিন্ন খাতে পরিচালনা করা, এ সকল হত্যাকা-ের জন্য আওয়ামী লীগের কাঁধে দোষ চাপাবার এক অদ্ভুত সংস্কৃতিও তখন বেগম জিয়া যে চালু করেছিলেন সে কথা তাদের এখন আর মনে নেই। হুমায়ুন আজাদের ওপর আক্রমণকে এমনকি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলাকে আওয়ামী লীগের কাজ বলে অভিহিত করতে সেদিন এতটুকু সঙ্কোচ বোধ করেননি মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী ও তার তল্পিবাহকরা।
আজ যখন বেগম জিয়া বা তার মাউথপিস মির্জা ফখরুল গলা ছেড়ে বর্তমান সরকারের আমলে খুন-খারাবির উদাহরণ তুলে ধরেন তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় যে, জবাব দিন দেশনেত্রী ও তার স্তাবকের দল ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আপনাদের শাসনাধীনে এ দেশের কত সহস্র মানুষের রক্তে আপনাদের হাত রঞ্জিত হয়েছিল! জবাব দিন ‘আপোসহীন’ নেত্রী তারেক-কোকোর সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে আর আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে এ দেশের হত-দরিদ্র মানুষের কি সীমাহীন দুর্দশা ঘটেছিল? বাংলাভাইদের উত্থান, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সীমাহীন দৌরাত্ম্য, এক সঙ্গে পাঁচ শতাধিক উপজেলায় বোমা হামলা কাদের আমলে কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সেদিন ঘটেছিল? আপনাদের পাঁচ বছরের শাসনামলে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মোট কতজন বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছিল? ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি কিংবা অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন প্রশ্নে কেন কোন প্রকার সমাধান বা সমঝোতা করতে পারেননি বা করেননি? আজ তিস্তা নিয়ে, টিপাইমুখ ও পানি বণ্টন নিয়ে যে ভাষায় এবং যত জোরে কথা বলছেন ক্ষমতায় থাকাকালে সে গলার জোর এবং ভাষা আপনাদের কোথায় ছিল? সীমান্তে হত্যাকা-কে ঘিরে আপনারা আজ যেভাবে তড়পাচ্ছেন আপনাদের আমলে যখন এর চাইতে দ্বিগুণ হারে বিএসএফের গুলিতে বাঙলাদেশীরা নিহত হয়েছিল তখন কোথায় ছিল আপনাদের ‘মাদারী জবানের’ প্রতিবাদ? এ সব প্রশ্নেরই জবাব চায় জনগণ। ম্যাডাম, শেয়ারবাজারের এতবড় কেলেঙ্কারির ঘটনায় আপনি বা আপনারা এ কেলেঙ্কারির নায়কদের মুখোশ উন্মোচন ও শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করলেন না কেন?
জনগণ বোঝে ও জানে যে, তা করতে গেলে আপনাদের থলের বেড়ালটিও তড়াক করে লাফিয়ে বেরিয়ে পড়বে এবং তখন এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে আপনাদের দলের যারা যুক্ত রয়েছেন তাদেন মুখোশও উন্মোচিত হয়ে যাবে। আর তাই এতবড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আপনারা আন্দোলনের ইস্যু করতে পারলেন না। আপনাদের ব্যাপারে আরও অনেক প্রশ্ন আছে, অনেক কথা বলার ও জানার আছে। পরবর্তী সময়ের জন্য তা থাক।
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে বলি। দুবাই থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত দৈনিক খালিজ টাইমসে সম্প্রতি একটি চমকপ্রদ ও রহস্যজনক খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয় যে, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাভূত করবার জন্য পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ কোটি রুপী দিয়েছিল। খালিজ টাইমসের এই খবরটি পত্রিকার কোন রিপোর্টারের মনগড়া প্রতিবেদন নয়। বিএনপির তরফ থেকে অবশ্য ইতোমধ্যেই এ খবরের সত্যতা অস্বীকার করে বলা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ নাকি উক্ত পত্রিকাকে ‘ম্যানেজ’ করে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের খবর ছাপিয়েছে।
বিএনপি নেতৃবৃন্দের এ ধরনের সরল সহজ ব্যাখ্যা যে আদৌ ধোপে টেকে না সে খেয়াল কি তাদের আছে? কারণ, বিএনপি নেতৃত্বের জানা দরকার যে, পাকিস্তানের সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আসগর খানের একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত আদালতের শুনানির সময় এ তথ্য বেরিয়ে আসে। উল্লেখ্য আসগর খান তার আবেদনে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আইএসআইর অসাংবিধানিক বা অনিয়মতান্ত্রিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উত্থাপন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত শুনানির সময় আইএসআইর সাবেক প্রধান লে. জেনারেল (অব.) আসাদ দুররানী তার হলফনামায় এই কথা বলেছেন। অর্থাৎ, খালেদা জিয়াকে আইএসআইর ৫ কোটি রুপী প্রদানের বিষয়টি আওয়ামী লীগ কিংবা এ দেশের কেউই করেনি। দুররানী তার হলফনামায় আরও বলেন যে, আইএসআই তাদের চোখে ঘৃণিত রাজনীতিক বেনজীর ভুট্টোকে নির্বাচনে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগকে বিপুল পরিমাণ অর্থের যোগান দিয়েছিল।
আদালতের শুনানিকালে হলফনামায় প্রদত্ত কারও কোন বক্তব্যকে হাল্কাভাবে নেয়া যায় না নিশ্চয়ই! সুতরাং, বিএনপি নেতারা খালিজ টাইমসের খবরটিকে যে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিতে চাইছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। কিছুদিন আগে লন্ডনের ইকোনমিস্ট সাময়িকী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিদেশী টাকা ও বিদেশীদের পরামর্শে ক্ষমতায় আরোহণের যে অভিযোগ তুলেছিল তা একেবারেই ঐ সাময়িকীর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের মনগড়া কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য। এই অভিযোগের কোন প্রমাণপঞ্জি বা সাক্ষী-সাবুদ ছাড়াই প্রতিবেদক সম্ভবত কোন মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ ধরনের রিপোর্ট ফেঁদেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার ব্যাপারে বিষয়টি সে রকম নয়। সাবেক আইএসআই প্রধানের হলফনামার বক্তব্যকে তাই নাকচ করে দেয়াটা এত সহজ নয়।
আদালতে শপথ নিয়ে তিনি যে হলফনামা দাখিল করেছেন তাতে বেগম জিয়ার অর্থপ্রাপ্তি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। এই অভিযোগ যে অতীব গুরুতর এতে কোন সন্দেহই নেই। বিষয়টির সত্যাসত্য নির্ধারণের জন্য তাই অবিলম্বে সংসদের একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা যেতে পারে (বেগম জিয়া নিজেও এই সংসদের সদস্য)।
দুররানীর এই অভিযোগ সত্য হলে এটি বেগম জিয়ার দিক থেকে সংসদের ‘ব্চি অব প্রিভিলেজ’ বলে গণ্য হবে। এদিকে, জেনারেল দুররানীর হলফনামার বক্তব্য থেকে জনমনে এই সন্দেহের উদ্রেক ঘটাও অস্বাভাবিক নয় যে, বিএনপি তাদের আসন্ন ১২ মার্চের ‘ঢাকা চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য বিপুল অর্থের যোগান ঐ আইএসআইর কাছে থেকেই পাচ্ছে।
সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের উচিত এ বিষয়টিও নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা। এই তদন্তে বা অনুসন্ধানে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বেগম জিয়া তার রাজনীতি পরিচালনা করতে পাকিস্তানের কাছ থেকে অর্থের যোগান পাচ্ছেন তাহলে এহেন আচরণের জন্য আগামী নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোন নৈতিক অধিকার থাববে না নিশ্চয়ইÑঅন্তত তা কোনক্রমেই থাকা উচিত নয় বলেই মনে করা সঙ্গত। মহান মুক্তিযুদ্ধের শাণিত চেতনাস্নাত, শান্তিপ্রিয় ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এ দেশের মানুষ বেগম জিয়ার বা যে কারোই এ ধরনের নৈতিক স্খলনকে সহজভাবে মেনে নেবে না বা নিতে পারে না। যদি কেউ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে বাইরের কোন দেশের প্ররোচনা, ইন্ধন ও আর্র্থিক আনুকূল্যে প্রভাবিত করার প্রয়াসে লিপ্ত থাকেন তাহলে তা সে যে-ই হোন না কেন, সেটি গর্হিত অন্যায় বলে বিবেচিত হবে। আর এ ধরনের ঘটনা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উচিত জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে জনগণের কাছে অধোবদন হওয়া তথা ক্ষমা প্রার্থনা করাটা তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বৈকি! বিশেষ করে বেগম জিয়া ও তার দল যখন একাত্তরের চিহ্নিত ঘাতক দালালদের রাখার জন্য প্রকাশ্যে নানান চাল চালছেন তখন তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষদের কাছে তার রাজনৈতিক সততা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। বেগম জিয়া এবং তার দলীয় নেতৃবৃন্দের দুর্নীতির স্থলে সুমতি ফিরুক স্বাধীনতার মাসে এটিই দেশবাসীর কামনা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।