জাতীয় সংসদে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট আজ রোববার পাস হয়েছে। তবে বাজেট পাসের আগেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ওয়াকআউট করে।
বর্তমান সরকারের পাঁচটি বাজেটের মধ্যে এবারই প্রথম সংসদের বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শুরুতেই জানিয়েছিলেন, সাতটি মঞ্জুরি দাবিতে বিরোধী দল আলোচনা করবে। কিন্তু সময় বেশি নেওয়ায় বিরোধী দলের পাঁচটি দাবি আলোচনা শেষে যখন ৫২ নম্বর মঞ্জুরি দাবি ওঠে, তখন আর আলোচনার সুযোগ দিতে চাননি স্পিকার।
তিনি রুলিং দেন। এতে বিরোধী দল ওয়াকআউট করে। ফলে নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের সময় বিরোধী দল সংসদে ছিল না।
চলতি অর্থবছরে দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাসের সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অধিবেশনে অনুপস্থিত ছিলেন।
এই বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। তবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে এডিপিতে আট হাজার ১১৪ কোটি টাকার কর্মসূচি রয়েছে। সব মিলিয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের এডিপিতে মোট খরচ দেখানো হচ্ছে ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা।
নতুন বছরে অনুন্নয়ন ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৬২১ কোটি টাকা।
নির্দিষ্টকরণ বিল পাস: আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় মিলিয়ে মোট তিন লাখ ৪৪ হাজার ৫৫৯ কোটি ৮৬ লাখ ১১ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে।
এর মধ্যে সাংসদদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমাণ দুই লাখ চার হাজার ৩১০ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় এক লাখ ৪০ হাজার ২৩৯ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাইকোর্টের বিচারপতি এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে বেতন ইত্যাদি দায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, মোট বাজেট ব্যয়ের মধ্যে বৈদেশিক অনুদান রয়েছে। সেই অনুদান বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে নির্দিষ্টকরণ অর্থ মঞ্জুরের জন্য সংসদে বিল পাস করা হয়েছে।
মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব: আগামী বছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল বিএনপির ১৮ জন সাংসদের এক হাজার ২৩টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আসে।
কিন্তু কণ্ঠভোটে সেগুলো বাতিল হয়।
শুরুতেই সাতটি ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করার জন্য স্পিকার বিএনপির সাংসদদের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এগুলো ছিল জনপ্রশাসন, অর্থ বিভাগ, আইন, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত্ বিভাগ ও সেতু বিভাগের নামে মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে। কিন্তু জনপ্রশাসন, অর্থ বিভাগ, আইন, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি প্রস্তাবের ওপর ছাঁটাই দাবি নিয়ে আলোচনার সুযোগ পান তাঁরা।
তবে বিএনপির সাংসদদের আলোচনা সত্ত্বেও ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়।
স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিমেরও ছাঁটাই প্রস্তাব ছিল। তিনি অনুপস্থিত থাকায় তা আর আলোচনা হয়নি।
এক হাজার ২৩টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতে ব্যয় হ্রাস করে সিংহ ভাগ ক্ষেত্রে মাত্র এক টাকা বরাদ্দ দেওয়া, প্রতীকী ছাঁটাই প্রস্তাবে ১০০ টাকা হ্রাস করা, মিতব্যয়ী ছাঁটাই প্রস্তাবে এক হাজার টাকা হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়।
বাজেটের অঙ্ক: ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য পাস হওয়া বাজেট ব্যয় দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হলো এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা।
অর্থাত্, মোট দেশজ উত্পাদনের তুলনায় ঘাটতি ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে অনুদান বাদ দিলে ঘাটতি গিয়ে দাঁড়াবে ৪৮ হাজার ৩৬২ কোটি টাকায়। শতকরা হিসাবে যা ৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে ছয় হাজার ৬৭০ কোটি টাকার অনুদান পাওয়া যাবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।