আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওদের সবার মুখে ছিল বংগবন্ধু ও দেশপ্রেমের কথা আর চোখে ছিল একরাশ লোভ আর সততার অভাব!!

ব-দ্বীপ মানে বদ্‌ দের দ্বীপ না কিন্তু। দয়া করে কেউ ভুল বুঝবেন না। যদিও বাংলাদেশের অবস্থা দেখে ভুল বোঝা স্বাভাবিক। ছোটকালে মুক্তিযুদ্ধের উপরে লেখা একটি বই পড়েছিলাম। নাম মনে নাই।

তবে সেখানে দুজন মুক্তিযোদ্ধার কাহিনি ছিল অনেকটা এরকম, তারা একই মেয়েকে পছন্দ করত, আর তাই তারা ছিল পরস্পরের চরম শত্রু। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তারা দুজনই যুদ্ধে যোগ দেয় আর হয়ে যায় দুজন দুজনের পরম বন্ধু। অপরদিকে রাজাকারদের পক্ষে যোগ দেওয়ায় এদের একজনেরই পরম বন্ধু পরিনত হয় শত্রুতে। ঘটনাটা আমাকে অনেক নাড়া দিয়েছিল, কেননা ছোট্ট মনে এটাকে বাস্তব মনে হয়েছিল। ধরে নিলাম ঘটনাটি বাস্তব।

দেশ, দেশের মানুষের জন্য তারা দুইজন নিজেদের শত্রুতা ভুলে, পছন্দের মানুষটিকে উপেক্ষা করে নিজেরা বন্ধুতে পরিনত হয়েছিল শুধু দেশের স্বার্থে। কিন্তু আজ ৪০ বৎসর পরে তাদের সন্তান বা নাতিরা, তাদের বাবা বা দাদার সেই আদর্শে বলিয়ান হয়ে নিজেদের গড়ে তুলবে, সেই গ্যারান্টি কি দেওয়া যায়? গ্যারান্টি কি দেওয়া যায় নিজের স্বার্থ, সমস্ত লোভ, ভবিষ্যত চিন্তা বাদ দিয়ে তারা শুধু দেশের চিন্তা করবে, দেশের জন্য নিজের সমস্ত কিছু এমনকি প্রিয়তমাকেও ত্যাগ করবে যেমনটা তার পুর্বপুরুষ করেছিল? বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থা দেখে আমি বলব, গ্যারান্টি কোন ভাবেই দেওয়া যায় না। আমরা জানি আলেমের ঘরে জালিম জন্মায়, জালিমের ঘরে আলেম। আজ ৭ই মার্চ। আমাদের জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপুর্ন দিন।

এই দিনের মাহাত্য নিশ্চই আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করার দরকার নাই। আমরা সকলেই তা জানি। দুপুর ১ টার দিকে আমার এক ভাইয়ের অফিসে যেয়ে দেখলাম ও নেই। ফোন দিয়ে শুনলাম তাদের অফিস থেকে মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাবে, মিছিলের সাথে তারাও সেখানে যাবে। অবাক হলাম।

ওকেতো এসবে কখনো যেতে দেখিনি। যাইহোক আমিও তাদের সাথে মিট করলাম, মিছিল ততক্ষনে চলতে শুরু করেছে। মিছিলে আমার পরিচিত ওর প্রায় সব কলিগকেই যোগ দিতে দেখলাম। কিছুক্ষন পর আসল গোমর বুঝলাম। সবাই মিছিলের সাথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত আসলেও সবার আসল উদ্দেশ্য অফিস কামাই দেওয়া।

হলো তাই। নেতাদের হাই হেলো বলে এক ফাকে দেখলাম সবাই হাটা দিল শাহবাগের দিকে। আমিও হাটা দিলাম। মাইকে শুনলাম বিভিন্ন যায়গা থেকে মিছিল এসেছে। গাজিপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লার বিভিন্ন যায়গা থেকে আওয়ামিলিগের বিভিন্ন সংগঠনের মিছিল এসে পৌছেছে।

দেখতে পেলাম ঢাকা মহানগরি থেকে বিভিন্ন নেতার মিছিল। “০” নাম্বার আসনের এমপির মিছিল, অমুক ওয়ার্ডের অমুক নেতার নেতৃত্বে মিছিল। এমনকি আমার পরিচিত এক লোকাল পাতি নেতার নামেও ব্যানার দেখলাম। তাকিয়ে দেখলাম তাদের সবাইকে। মিছিলের মধ্যে তারা সবাই।

সামনে নেতা খুব ভাবগম্ভির নিয়ে হাটছে। তারো সামনে পাতি নেতা মিছিলের লাইন ঠিক করছে। তারো সামনে মোটরবাইকের লাইন তাদের আরো ভাব। মিছিলের পিছনে সাধারন কর্মিদের সারি। তারাও ব্যাস্ত।

প্রায় সবার হাতে যুদ্ধপরাধিদের বিচারের দাবি সংবলিত ব্যানার ফেস্টুন। তাকিয়ে ভাবলাম এরাকি সবাই আজ ৭ই মার্চ আমদের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপুর্ন দিন পালনের জন্য এখানে এসছে? সবাইকি যুদ্ধপরাধিদের বিচারের দাবিতে নিজের মনের তাগিদে এসেছে? স্বতর্স্ফুর্ত ভাবে নিজ দায়িত্বে আনন্দের সাথে এসেছে? দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে এসেছে? তাহলে বাস্তবতাটা একটু দেখি! সরকারি অফিস কামাই দিয়ে, মন্ত্রনালয়ের কাজ বাদ দিয়ে (দেশের জনগনের টাকায় যাদের বেতন) অনেকে এসেছে (Click This Link) নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কাজ বাদ, নিজের রুজি রোজগার বাদ দিয়ে অনেকে এসেছেন। তারা সবাই র্যাজলিতে যোগ দিবেন তাদের নেত্রির সাথে। কেন এই এই র্যাালি? ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে গনর্যােলি যার মূল মোটো হচ্ছে যুদ্ধপরাধিদের বিচারের দাবি। আজ র‍্যালির জন্য সাধারন নাগরিকদের পরতে হয়েছে অসহনীয় অবস্থায়।

একদিকে রাস্তা বন্ধ। অন্যদিকে র‍্যালির জন্য রাস্তা আটক রাখা। ফলাফল অসহনীয় যানজট প্লাস জনজট। রাস্তায় গাড়ি চলাচলতো দুরের কথা হেটে যাওয়ার উপায় নেই। জায়গায় জায়গায় হয় রিক্সা বন্ধ, নাহলে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

উপায় নাই। হয় র্যা লিতে যোগ দাও নাইলে দাঁড়িয়ে থাক অথবা ঘরে বসে থাক। তো কারা এই র‍্যালির আয়োজক? সেই দলটি ও তাদের সমর্থকেরা যাদের সীমান্ত হত্যা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই, শেয়ার বাজারে অসংখ্য মানুষকে ঠকিয়ে দেওয়ার হোতা, টিপাইমুখি বাধ সহ দেশের নদনদী ইস্যু সহ সমস্ত কিছুতে ভারতের কাছে নতজানু পররাস্ট্রনীতিতে অভ্যস্ত। তারাই সেই দল যাদের ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসে মানুষ অতিস্ট, তাদের নিয়ন্ত্রিত হাইকোর্টের রুলে বাকরুদ্ধ মানুষের বাকস্বাধীনতা। তারাই সেই দল যারা ফাসির আসামিকে ক্ষমা করে দেয়, তারাই সেই দল যারা নিজেদের বিরুদ্ধে থাকা সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।

তাহলে যারা এতসব অভিযোগে অভিযুক্ত তারা সাধারন মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে, তাদের অসুবিধার কথা চিন্তা না করে হই হুল্লোর করে এই মিছিলে কি উদ্দেশ্যে এসেছিল? দেশপ্রেমের তাগিদে? অবশ্যই না। আসলে সবাই এসেছিল যার যার স্বার্থ ও ধান্ধা অনুযায়ি। মিছিলে যারা এসেছিল এদের মধ্যে যারা কর্মি তাদের এনেছে নেতারা। অবশ্যই মিছিলে যাওয়ার সম্মানি দিয়ে। যারা পাতি নেতা তারা নেতা ও সংগঠনের কাছ নিজের যোগ্যতা প্রমান, তার আনুগত্য লাভ আর বিভিন্ন খরচের উৎস দেখিয়ে তার কাছ থেকে ভালো একটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুবর্ন সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য মিছিলে যোগ দিয়েছে।

আর নেতা সমস্ত খরচ করেছে দলে তার উপস্তিতি ও তার জনবল দেখানোর জন্য। এর পেছনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরবর্তি নির্বাচনে নিজের নমিনেশন বাগানো। সেটা জাতীয় সংসদের নির্বাচন হতে পারে আবার হতে পারে ওয়ার্ড লেভেলের নির্বাচন। আর এই সমস্ত একটিভিটির পিছনে খরচ হয়েছে মোটা টাকা আর পরিশ্রম। আর এই সমস্ত টাকার শ্রাদ্ধ ও পরিশ্রম হচ্ছে এক একটি বিনিয়োগ।

এর ভাগ পাবে এই কর্মকান্ডের টপ টু বটমের সাথে জড়িত সবাই। যে দেশে দুর্নিতীর জ্বালায় বাস করা যায় না, যে দেশের মানুষের নৈতিকতার লেভেল দিন দিন শুন্যের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে সে দেশের মানুষ নিশ্চই এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সৎ থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই সবার মধ্যেই দেখলাম একটি বিশেষ তাগিদ! কে কিভাবে কোন দিক দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পারবে এই তাগিদ। আর এই বিনিয়োগের বর্তমান জ্বালানি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও দেশপ্রেম। আজ সোহরাওয়ার্দি উদ্দ্যানের চারিদিকে বাজছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন, সবার মুখে ছিল জয় বাংলা, জয় বংগবন্ধু।

কিন্তু তাদের সবার দিকে তাকিয়ে একটা কথাই বুঝতে পারছিলাম ,ওদের সবার মুখেই শুধু বঙ্গবন্ধু ও দেশপ্রেমের কথা আর চোখে ছিল একরাশ লোভ আর সততার অভাব!! (আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র ও স্বভাব প্রায় এক। বর্তমানে আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় থাকায় তাদের নিয়েই লিখতে হল। কেউ চাইলে বি এন পির ক্ষেত্রে বংগবন্ধুর যায়গায় “জিয়ার আদর্শ” আর জামায়াতের ক্ষেত্রে “ইসলাম” শব্দটি লাগিয়ে বাকিটুকু পরে নিলেই হবে। ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.