তক
ওদের স্বপ্ন বিশ্বকাপ খেলা। ভারত কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা ইংল্যান্ডের উইকেটগুলো দুমড়ে-মুচড়ে দেবার জেদ রয়েছে ওদের চোখে। আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর, রয়েছে সাফল্য আনার অঙ্গীকার। তারুণ্যের অভিজ্ঞতাই যাদের পুঁজি, সেই তিন পেসার
শফিউল ইসলাম, নাজমুল হোসেন ও রুবেল হোসেনদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন।
বয়সে তরুণ হলেও অভিজ্ঞতার দিক থেকে এগিয়ে নাজমুল হোসেন।
ভাগ্যের সিঁড়ি বেয়ে সাত বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেললেও তার নামের পাশে মাত্র ৩৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার পরিসংখ্যান রয়েছে। কখনো জাতীয় দলে স্থায়ী হতে পারেননি। কারো বিকল্প হিসেবে জাতীয় দলে ঠাঁই হয়েছে কিন্তু পারফর্ম করেও সেই জায়গা স্থায়ী হয়নি। কখনো মাশরাফি কিংবা রাসেল অথবা শাহাদাতদের ভিড়ে বেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছে আবার কখনো হাল্কা ইনজুরি তাকে সাইডলাইন বাইরে ঠেলে দিয়েছে। নিয়তি যেন তার পিছু ছাড়ছে না আর সেই নিয়তি এবার নাজমুলকে বসাচ্ছে সিংহাসনে।
আর সে সিংহাসন হচ্ছে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট।
নাজমুলের তুলনায় অভিজ্ঞতায় বেশ পিছিয়ে রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলাম। দুইজনেরই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা বেশি নয়। তবে অভিষেক বছরে এদের পারফর্ম গোটা জাতীয় দলকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। শফিউলের কথা একটু আলাদা করে বলতে হয়।
গত বছর জানুয়ারিতে যিনি প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, সেই শফিউল অভিষেক বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করে যেন নির্বাচকদের মন কেড়ে নিয়েছিলেন। মাশরাফির ইনজুরি বিশ্বকাপের প্রথম বল হাতে নেয়ার সুযোগ হয়তো আসবে তার, তবে তারচেয়ে বেশি তাকে রোমাঞ্চ করছে মাত্র এক বছরের মাথায় বিশ্বকাপ খেলছেন বলে।
আর রুবেল যেন স্বপ্নের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। বছর দু'য়েক আগেও কখনো ভাবেননি জাতীয় দলে খেলবেন। আর এখন খেলছেন বিশ্বকাপ, অসম্ভব বলেই নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখেন স্বপ্নে আছেন নাকি বাস্তবে।
খুলনার হয়ে ২০০৭ সালে যখন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে নামেন, তখন অনেকে তার বোলিংয়ে লাসিত মালিঙ্গার ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু ওটাকে কখনো ওতটা গুরুত্ব দেননি বরং বাংলাদেশের সেরা পেসার মাশরাফির বোলিংকে অনুকরণ করতেন তিনি। আর নিয়তি এমন যে, সেই মাশরাফিকে ছাড়াই রুবেল খেলবেন তার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ।
হবিগঞ্জের ছেলে নাজমুল, ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট ছিল নেশা, পড়াশুনার পাশাপাশি মাঠেই পড়ে থাকতেন ক্রিকেট নিয়ে। তার বোলিংয়েও নাকি দক্ষিণ আফ্রিকার মাখায়া এনটিনির ছায়া আসে।
শুনে নিজেও একটু লজ্জা পেয়েছেন, তবে সবচেয়ে বেশি লজ্জিত তিনি জাতীয় দলে তার যাওয়া আসা নিয়ে। ২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেকের পর কেটে গেছে প্রায় সাত বছর, কিন্তু ক্যারিয়ারে সুযোগ পেয়েছে মাত্র একটি টেস্ট খেলার। আর ওয়ানডে ম্যাচের সংখ্যাও নিতান্ত নগণ্য। বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে দলে যেমন ভাসমান ছিলেন, তেমনি মাশরাফির মতই ইনজুরি তার ক্যারিয়ারের বেশ কিছু সময় কেড়ে নিয়েছে। চোখের সামনে বিশ্বকাপ ঠকঠক করছে, আর সেটি ভাবতে নিজেই শিহরিত হচ্ছেন।
নির্বাচকরা অবশ্য দুই পেসার খেলাবেন বলে এক প্রকার সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছেন, তবে বিশ্বকাপ বলেই নাজমুলের ইচ্ছা যেন এবারো ভাসমান হয়ে দলে থাকতে না হয়।
মাশরাফির ইনজুরি শফিউলের ঘাড়ে চেপে বসেছে পেস আক্রমণের দায়িত্ব। শেবাগের বিরুদ্ধে প্রথম বলটি হয়তো তিনি করবেন, তবে বিশ্বকাপ বলে তিনিও স্নায়ুচাপে ভুগছেন। চোখে মুখে একগাদা স্বপ্ন ভর করছে শফিউলের, অভিষেক বছরের মত বিশ্বকাপেও বাংলাদেশকে এনে দিতে চান সাফল্য। মাত্র বছর দুয়েক আগে টেলিভিশনে খেলা দেখার পর অজান্তেই স্বপ্ন দেখতেন তিনিও জাতীয় দলে খেলবেন।
২০০৭ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা শুরু করে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য শফিউল কষ্ট করেছেন অনেক। বোলিংয়ের বৈচিত্র্য, বোলিংয়ে পেস বাড়ানো, এমনকি লাইন লেংথ বজায় রেখে বল করার কৌশলগুলো শেখার চেষ্টা করতেন বগুড়ার ছেলে শফিউল। আর তার সাফল্য এখন শফিউলকে বসাতে যাচ্ছে রাজ্যের সিংহাসনে।
কিন্তু রুবেল হোসেন তার স্বপ্নকে কিভাবে তুলে ধরবেন। শাহাদাতের মত তার বোলিংয়েও রয়েছে বাড়তি পেস, বৈচিত্র্যও রয়েছে প্রতিটি বোলিংয়ে, কিন্তু দলে এক প্রকার অনিয়মিত।
মাশরাফি ইনজুরিতে না পড়লে হয়তো বিশ্বকাপ খেলাটাও যেন হাজার মাইলের দূরুত্ব মনে হত। কিন্তু মনের ভিতরে লালন করা ইচ্ছাটা যেন ধুমকেতুর মতই আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত স্কোয়াডে সুযোগ পেলেও রুবেলের শংকা অবশ্য উড়ে যায়নি। মাস দেড়েক থেকে পিঠের ব্যথাটি এখনো তাকে বেশ ভোগাচ্ছে। ফিজিওয়ের সাহায্য নিয়ে প্রতিদিনই ফিট হবার সিঁড়ি বেয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু ভয় আছে, যেন বিশ্বকাপের মাঝপথ থেকে ছিটকে পড়তে না হয়।
২১টি ওয়ানডে খেলা রুবেল, ২৩টি ওয়ানডে খেলা শফিউল কিংবা ৩৪টি ওয়ানডে খেলা নাজমুল-এই তিন পেসারের উপর বাংলাদেশের ভাগ্য ঠায় দাঁড়িয়ে। বর্তমান দলটি তরুণ হলেও তিন পেসারের দাবি- বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এই দলটি ভালো খেলবে। তার আগে ভালো খেলতে হবে বোলারদের। ত্রয়ী পেসারদের সম্বল-নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে থেকে পাওয়া প্রাপ্তিগুলো।
দেশের মাটিতে খেলা বলে দর্শকদের মন ভরাতে তারা প্রস্তুত। বগুড়া, খুলনা এবং হবিগঞ্জের মানুষরাও এই তিন পেসারকে নিয়ে গর্ব করবে প্রত্যাশা এদের। বিশ্বকাপের ট্রেনিংয়ে ঘাম ঝড়ানো অনুশীলন আর নিবিড় মনোযোগই প্রমাণ করে শফিউল, নাজমুল, রুবেলদের চোখে বিশ্বকাপের ভাবনাটা যেন আলাদা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।