আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওদের জ্ঞান দাও প্রভু,ওদের ক্ষমা করো!



[যারা এখনো রাজাকারদের সংজ্ঞা ও শাস্তি নিয়ে সন্দিহান,লেখাটা তাদের জন্য] ওরা আমাদের সব ভুলে যেতে বলে। বলে নতুন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে,পা মিলিয়ে যেতে হবে আমাদেরো। সস্তা আবেগ আর অতীতকে জলাঞ্জলী দিয়ে পূর্বপুরুষদের স্মৃতিকে কবরে রেখে আমাদের আধুনিক হতে হবে। যোদ্ধাদের কবরে পা রেখে পিশাচের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এদেশকে ঠেলে তুলতে হবে অনেক ওপরে,আমাদের সন্তানরা সেই কবরকেও মাটিচাপা দিয়ে হাইটেক বিশ্বে দেশের ভার বয়ে নিয়ে যাবে। তা নিক,ভাবতে ভালোই লাগে।

আমরা তো সবাই এই দেশের ভালো চাই,চাওয়াটা শুধুই আলাদা রকমের। ভালো চাইলে আপোষ তো করতেই হবে,দানবের সাথে দেবতাকেও একাসনে বসে একপাতে খেতে হবে। দেবতারা খেয়েছেও,পিশাচের নরকের বাহনে উড়েছে আমাদের দেবলোকের রক্তলাল পতাকা। দেশ আজ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে,পিশাচরাই তো কর্মী,ওরা না থাকলে কি হতো? আমরা খুশি,আমরা বেজায় খুশি,আমরা ভুলে যেতে চাই সব,আমাদের সন্তানদেরো ভুলিয়ে দিতে চাই,ওদের আমরা নতুন বিশ্বের দুধে-ভাতে রাখতে চাই,আবেগ দিয়ে তো পেট ভরে না,দুধ-ভাতও জোটে না। আমাদের দেবতারা বোঝেন সেটা,তাই তাদের সন্তান থাকে অনেক দূরের স্বর্গে,আকাশ থেকে নেমে আসে তারা পুষ্পকরথে করে,আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি,মনে মনে ভাবি,হুঁ হুঁ বাবা,একদিন আমরাও,শুধু ভুলে যেতে হবে সব,কঠিন কিছু না।

কিন্তু আমরা বোকা,আমি বোকা। ভুলতে পারিনা আমরা,ভুলতে পারিনা আমাদের পূর্বপুরুষদের,ভুলতে পারিনা আমাদের অতীতকে,শুধুই পেছনে টানে। পেছনে টানে কবরে শুয়ে থাকা ৩০ লক্ষ মানুষের অতৃপ্ত আত্মা,পেছনে টানে ২ লক্ষ মা-বোনের চিতকার। আমরা ভুলতে পারিনা 'একাত্তরের দিনগুলি',আমরা ভুলতে পারিনা 'জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা'দের কথা। আমরা গর্বিত হই পিশাচপুরী থেকে পুষ্পকরথ ছিনিয়ে উড়ে আসা মতিউরের কথা ভেবে,আমরা মাথা উঁচু করে বলি সিপাহী মোস্তফার গল্প।

আমরা তো বোকা,ভবিষ্যত দেখার চোখ নেই,অতীত নিয়েই সময় কাটাই। আমরা আবেগী,আমরা বর্বর,তাই আমরা ক্ষমা করতে পারিনা আমাদের ভাইয়ের খুনীকে,আমার দেশকে ছারখার করে দিয়ে যারা অট্টহাসি দিয়েছে,তাদের প্রতি অনন্ত ঘৃণা আমাদের বুকে,প্রতিশোধের আগুন জন্ম-জন্মান্তরে বয়ে বেড়াই আমরা। কিন্তু,প্রশ্ন তবু জাগে,আমরা তো সাচ্চা মুসলমান,আমাদের তো বলা হয়েছে ক্ষমাশীল হতে,আমরা কেন ক্ষমা করবো না? হ্যাঁ,ভাবনার বিষয়। ক্ষমা তো আমি করতেই পারি,কিন্তু আমার ধর্মই তো আমাকে বাধা দেয়। কোথায় যেন শুনেছিলাম,আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে ক্ষমা করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা ক্ষমা না করে।

তাহলে? কি হবে? কবরে শুয়ে থাকা ৩০ লক্ষ মানুষ কি ওদের ক্ষমা করেছে? ওরা কি মাটির নিচ থেকে উঠে এসে বলে গেছে আমাদের আর কোন দাবী নেই,আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম? আমি কিভাবে ওদের ক্ষমা করবো? যতক্ষণ পর্যন্ত সেই শিশুটি ওদের ক্ষমা না করবে যাকে ওরা বুটের নিচে পিষে মেরেছিল,আমি ওদের ক্ষমা করবোনা। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন যাকে ওরা বেয়নেট দিয়ে খুচিঁয়ে মেরেছিল,অথবা নূর মোহাম্মদ যাকে ওরা অবলীলায় তুলে দিয়েছিল নরপশুদের হাতে,তারা ওদের ক্ষমা না করলে আমি কিভাবে ক্ষমা করি? আমার মা-বোনরা যাদের ওরা হাসতে হাসতে হায়েনার মুখে ছেড়ে দিয়েছিল ছিঁড়ে খাবার জন্য,তারা কি ওদের ক্ষমা করেছে? অথবা আমাদের শিক্ষাগুরুরা,যাদের ১৪ ডিসেম্বরের এক রাতে তাঁদেরই শিষ্যরূপী পিশাচরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল,যাদের লাশ এখনো পড়ে আছে কোন এক বধ্যভুমিতে? তাঁরা কি বলেন? কি বলেন শহীদ মুনীর চৌধুরী,কি বলছেন ডাঃ ফজলে রাব্বি,কি বলবেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা বা সেলিনা পারভীন? শহীদ আজাদের মা,শহীদ রুমীর মা কি ভাববেন,অথবা বাংলার লক্ষ মা যারা এখনো তাদের সন্তানের আশায় পথ চেয়ে আছেন তারা কি আমাদের অভিশাপ দেবেন? আমি ওদের ক্ষমা করার কে? ওদের তো ক্ষমা করবে কবরের মানুষরা,স্বজনহারা দুঃখীরা,আমি তো না। অত্যাচারিতের কান্নার অভিশাপে জাহান্নামের নিকষ কালো আগুনে আমি পুড়তে চাইনা,আমি ওদের ক্ষমা করবো না। তারপরেও যারা ভুলে যেতে বলে,আমি তাদের অভিশাপ দেবনা,শুধু বলবো--"ওদের জ্ঞান দাও প্রভু,ওদের ক্ষমা করো। " পুনশ্চ : হেদায়েতে কাজ না হলে ধর্মে তরবারির রাস্তার কথা বলা হয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.