জোর হোক শুধু গলার আওয়াজ, গায়ের জোরটা তোলাই থাকুক কাকডাকা ভোরে সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন সুখজান নেসা বসেছেন ঘরের মেঝেতে কাঠের পাটাতনে শাড়ি কাপড় নিয়ে। শাড়ির চার কোনায় বেঁধে বাহারি রং-বেরঙের পাথর বসিয়ে তৈরি করছেন নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নকশা। এখনও অনেক কাজ বাকি। তাকে সূর্য ওঠার আগেই পুরো শাড়ির কাজ শেষ করতে হবে। ঝটপট হাত চালান সুখজান নেসা।
এক এক করে আরও কয়েকজন এসে সুখজানের কাজে সহযোগিতা করতে থাকে। নিজের উদ্ভাবিত কৌশলে বিভিন্ন রঙের বুটিক তৈরির অর্থই সুখজানের পরিবারের জীবন ধারণের প্রধান অবলম্বন। কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় ব্যক্তি প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে শতাধিক হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব সম্ভাবনাময় হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানে ৫ সহস্রাধিক নারী প্রশিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি এখন রীতিমত আত্মনির্ভরশীল। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে বেশ বদলে গেছে এখানকার নারীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার চালচিত্র।
আর এ পরিবর্তন একটি অভাবী দরিদ্র জনপদ থেকে নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের জনপদে পরিণত করেছে। হস্তশিল্পের বর্ণিল আভায় আলোকিত এখন এখানকার বিভিন্ন জনপদ।
এক সময়ের অসচ্ছল গৃহিণী রুমা জানান, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে দিনমজুর স্বামী পরান মণ্ডলের সামান্য উপার্জনে তাদের পরিবারে দুঃখ-কষ্টের সীমা ছিল না। এই দুর্বিষহ জীবনযাপনে চায়না ও ভারতের তৈরি জর্জেট, সিল্কের থান কাপড়ের ওপর পাথর, চুমকি ও পুঁতি বসানো কাজ শুরু করি। এরপর রুমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
জেলার কুমারখালী উপজেলার সাদিয়া বুটিক হাউসের কারিগর রীনা জানান, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও সহস্রাধিক কাজের অর্ডার পেয়েছি। তবে আধুনিক মেশিনের তৈরি ভারতীয় লেইস বাজারে আসার কারণে পাথরের তৈরি বুটিকের চাহিদা তুলনামূলক কমে গেছে। তারপরও শৌখিন রমণীরা তাদের পছন্দসই শাড়ি বা বোরকা পছন্দ করেন। তিনি জানান, এখানে মেশিনে কোনো কাজ করা হয় না। গ্রাহকরা তাদের পছন্দমত শাড়ি বা বোরকার কাপড় এনে দেন।
আমরা শুধু ক্যাটালগ দেখে বিভিন্ন ডিজাইনের নকশা ও পাথর বসিয়ে কাজ করি। নকশার কাজে ওয়েট লেইস, মাখন, লেদার জর্জেট, পাথর, জরি, চুমকি, মাল্টি পুঁতি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। কাপড় ও কাজের মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়। যেমন ছফুরা সিল্ক এক নম্বর কাপড়ের শাড়ি সর্বনিম্ন ৩৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ টাকা, আবার ডিজাইন ভেদে ১২ হাজার টাকাও একেকটি শাড়ির দাম পড়ে। ১৫ বছর ধরে পাথরের ওপর বুটিকের কাজ করা শিল্পী রুমা জানান, ঈদকে সামনে রেখে ৬ মাস আগে থেকে কাজ শুরু করা হয়।
গ্রাহকরা এসে কাপড় দিয়ে অর্ডার দিয়ে যান।
পুরো আর্টিকেল : বাংলাদেশের খবর এ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।