(পুরো লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, অনেক কিছু জানতে পারবেন। দয়া করে পুরো লেখা না পড়ে কমেন্ট করবেন না। )
কোয়ান্টাম মেথডের গুরুজী মহাজাতক মেডিটেশন মেথড কোর্সের নামে আসলে মানুষকে ব্রেইনওয়াশ করছে। কোয়ান্টাম মেথডের গুরু কিভাবে মানুষকে ব্রেইনওয়াশ করছে তা বুঝতে হলে আমাদের ব্রেইনের কার্যক্রম এবং সাইকোলজী সম্পর্কে একটু জানতে হবে।
আমাদের ব্রেইন হচ্ছে এমন এক ধরনের কম্পিউটার সদৃশ জিনিস যা ছবি, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ ইত্যাদি উপাত্ত যেসব জিনিস পঞ্চ ইন্দ্রিয় গ্রহন করতে পারে তা দ্বারা প্রোগ্রামড হওয়ার ক্ষমতা রাখে যদি সেগুলো বিশেষ ভাবে উপস্থাপন করা হয়।
যারা ব্রেইনওয়াশ করে তারা কথা গুলো এমন ভাবে বলে যেন এটা ব্যাখ্যাকৃত বস্তুটির নিখুঁত ছবি, অনুভূতি, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ ইত্যাদি সৃষ্টি করে। এবং এটা করা হয় বর্ণনামূলক বিশেষণ পদ (Descriptive Adjective), সংখ্যা এবং সুনির্দিষ্ট পরিমাপ (Number & Exact Measurement), এবং বর্ণনামূলক বিশেষ্য পদ (Descriptive Noun) ইত্যাদি ব্যাবহার করে। এই সব বিশেষণ এবং বিশেষ্য এর সাথে সাথে কখনো কখনো ক্রিয়া পদ (Verb) ব্যাবহার করা হয় সরাসরি নির্দেশমূলক বাক্য ব্যাবহারের জন্য। মানুষের ব্রেইনে সরাসরি নির্দেশের বিশাল প্রতিক্রিয়া হয়।
এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া হলঃ
১. বলের সম্পর্কে চিন্তা করুন।
২. টেনিস বলের সম্পর্কে চিন্তা করুন।
৩. সবুজ টেনিস বলের সম্পর্কে চিন্তা করুন।
৪. হালকা সবুজ টেনিস বলের সম্পর্কে চিন্তা করুন।
লক্ষ করুন, এই বাক্য গুলোতে নির্দেশমূলক ক্রিয়া পদ (Commanding Verb) “চিন্তা করুন” ব্যাবহার করা হয়েছে।
পুনরায় লক্ষ করুন, পূর্ববর্তী ক্রমের বাক্যগুলোর তুলনায় পরবর্তী ক্রমের বাক্যগুলো বেশী বর্ণনামূলক।
এবং এখানে ৪ নং বাক্য সবচেয়ে বেশী বর্ণনামূলক। ৪ নং বাক্য পূর্ববর্তী বাক্যগুলোর তুলনায় অনেক বেশী নিখুঁত ভাবে “বল” এর কাল্পনিক ছবি তৈরি করতে পারে আমাদের ব্রেইন এর মধ্যে। কারন এতে সবচেয়ে বেশী বর্ণনামূলক বিশেষণ ব্যাবহার করা হয়েছে।
এই বাক্য গুলোতে “বল” এর সম্পর্কে চিন্তা করতে বলা হয়েছে এবং এগুলো পড়া মাত্র, আমরা না চাইলেও আমাদের ব্রেইন বলের কাল্পনিক ছবি তৈরি করে আমাদের ব্রেইনের মধ্যে।
এখন আরেকটি উদাহরণ দেখুন।
এখানে আপনারা দেখতে পাবেন কিভাবে বাক্যটি হবে এক ধরনের এবং তার ফলাফল হবে আরেক ধরনের। বলা হবে একটা কিন্তু ঘটবে আরেকটা।
“হালকা সবুজ টেনিস বলের সম্পর্কে চিন্তা করেন না। ”
যদিও এই বাক্যে বলের সম্পর্কে চিন্তা করতে নিষেধ করা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যেই মুহুর্তে আপনি এই বাক্যটি পড়বেন বা শুনবেন তখনই বলের সম্পর্কে চিন্তা চলে আসবে। বলের সম্পর্কে চিন্তা করা ছাড়া এই বাক্যটি কোনো ভাবেই পড়া বা শোনা সম্ভব নয়।
যে মুহুর্তে আপনি ‘বল’ শব্দটি পড়বেন বা শুনবেন, সেই মুহুর্তেই আপনি না চাইলেও আপনার ব্রেইন ‘বল’ এর সম্পর্কে ধারনা সৃষ্টি করবে আপনার ব্রেইনের ভিতর, যদিও বাক্যটিতে চিন্তা করতে নিষেধ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে বা দেখানো হচ্ছে একটা, কিন্তু ঘটছে আরেকটা। যদিও চিন্তা করতে নিষেধ করা হচ্ছে, কিন্তু এটি আপনাকে চিন্তা করতে বাধ্য করছে। যখন গুরুজীর মত শয়তান লোকেরা আপনার ব্রেইনে খারাপ কিছু ঢুকাতে চায় তখন তারা এই কৌশল অবলম্বন করে। তারা নিজেদেরকে এমন ভাবে ভাল মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করে যেন তারা আপনার ভাল চাচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবে তারা আপনার ব্রেইনের মধ্যে খারাপ জিনিসের বীজ রোপন করে দেয়। এবং পরে তা আপনার জীবনকে ধ্বংস করে দেয় বা তাদের স্বার্থে আপনি ব্যাবহৃত হন।
এই ধরনের ব্রেইনওয়াশ সবচেয়ে ভাল ভাবে করা হয় নিখুঁত বর্ণিত গল্প বলার মধ্য দিয়ে। এই তথাকথিত গুরু তার মেডিটেশন কোর্সে অনেক গল্প বলে থাকে। সেইসব গল্পের অধিকাংশই আসলে ব্রেইনওয়াশিং উপাদান।
এমনই একটি গল্প হচ্ছে “ধনাঢ্য মহিলা বেগম সাহেবা” সম্পর্কিত বানানো গল্প যা গুরুজী তার মেডিটেশন কোর্সে বলে থাকে।
গল্পটি সে এমন ভাবে বর্ণনামূলক শব্দ ব্যাবহার করে বর্ণনা করে যে তা অতি স্বচ্ছ নিখুঁত ছবি তৈরি করে আপনার ব্রেইনের মধ্যে। গল্পটিতে যা বলা হয় তা নীচে উল্লেখ করা হলো। পরে বিশ্লেষন করে বলছি কিভাবে এই গল্পের মধ্য দিয়ে গুরুজী ব্রেইনওয়াশ করে।
মহাজাতকের কন্ঠে শুনুন এই লিংকে যেয়েঃ
http://youtu.be/fgkdmZ74s10
(এয়ার কন্ডিশনের পাশে ডিভাইসটা থাকার কারনে একটু শো শো আওয়াজও আছে, তবে শুনতে অসুবিধা হবে না)
“বিছানা কিনতে পারবেন, কিন্তু ঘুম কিনতে পারবেন না।
একটু ছোট্ট ঘটনা বলি...
এখন থেকে ২৫ বছর আগে,...
বেগম সাহেবা,...
ঢাকার...অত্যান্ত ধনাঢ্য মহিলা...
অভিজাত এলাকায় তার ৩ তলা ১ ইউনিট বাড়ী, সেন্ট্রালী এয়ার কন্ডিশন্ড।
৩ তলায় হচ্ছে তার বেডরুম। বেড রুম না বলে সেটা বেড হল বলা ভাল। বিশাল রুম। ...
এবং তার যে খাট, এটাকে খাট না বলে পালঙ্ক বলা উত্তম।
কারন ২৫ বছর আগে যখন তিনি খাট বানিয়েছিলেন, এই খাট বানাতে তার ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছিল। ...
খাট বানাতে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছিল...
তো...এতো... এবং তার যে বিছানা – আমরা তো ফোম দিয়ে বানাই, গদি বানাই, বা নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে জাযিম বানাই; উনি দেখলেন যে না, পাখির পালক...
পাখির নরম পালক সংগ্রহ করতে দিলেন।
সংগ্রহ করে কি করেন?...
এটা দিয়ে জাযিম বানান। ...
এবং এটাকে প্রত্যেক দিন রোদে দাও।
রোদে দিলে পাখির পালক কিন্তু ফোলে।
রোদে দিলে ফুলে যায়, Soft হয় বেশী।
উনার ইচ্ছা হচ্ছে যখন উনি এ বিছানায় শুয়ে পড়বেন, শুয়ার সাথে সাথে, আস্তে আস্তে আস্তে আস্তে... বিছানায় হারিয়ে যাবেন। উপর দিয়ে যদি একটা, চাদর দিয়ে দেওয়া যায় তাহলে যেন টের না পাওয়া যায়, বোঝা না যায় যে এখানে কেউ ঘুমুচ্ছে। এত নরম কোমল বিছানা।
হোলে কি হবে?
ঘুম আসে না।
রাত ১২টা – ১০ মিলিগ্রাম... অ্যাঁ ১৩টা – ২০ মিলিগ্রাম... ১৪টা – ৩০ মিলিগ্রাম... ঘুম আসে না, পায়চারী করছেন।
আরেকজন,
হয়ত পায়চারী যখন করছেন জালনা দিয়ে দেখলেন যে রাস্তার ঐ পারে বস্তি টস্তির আরেক মহিলা...
সারাদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করেছে, স্বামী রিকশা চালায়, সন্ধ্যায় বস্তিতে যেয়ে স্বামী সন্তানের জন্য রান্না করেছে। রান্না করে খেয়ে, বিছানা বলে কিছু নাই, ছিড়া চট, আর ইট মাথায় দিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সে নিজেও জানে না।
আর বেগম সাহেব এত সুন্দর বিছানা, কিন্তু ঘুম আসে না।
তো আপনি বিছানা কিনতে পারবেন, ঘুম কিনতে পারবেন না।
আরাম আয়েসের সমস্ত উপকরন কিনতে পারবেন,
শান্তি কিনতে পারবেন না।
শান্তি কিনতে পারবেন না। ”
লক্ষ্য করুনঃ
* রেকর্ডিংটা যদি শুনে থাকেন তাহলে দেখবেন, তথাকথিত এই গুরু কথা বলার সময় কয়েক শব্দ পরপর দীর্ঘ বিরতি(pause break) নিচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবে কেউ এভাবে কথা বলে না। তাহলে কেন সে এই ভাবে কথা বলছে? কারন কথা বলার সময় এই ধরনের বিরতি(pause break) মানুষের ব্রেইন ফ্রিকোয়েন্সিকে নামিয়ে এনে গভীর স্তরে নিয়ে যায় এবং মনের গভীর স্তরে যা কিছু শোনা বা দেখা হয় তা দৃঢ় ভাবে প্রোগ্রামমড হয়।
* “২৫ বছর আগে, ৩ তলা ১ ইউনিট বাড়ী, ৩ তলায় হচ্ছে তার বেডরুম, ১০ লক্ষ টাকা, রাত ১২টা – ১০ মিলিগ্রাম... অ্যাঁ ১৩টা – ২০ মিলিগ্রাম... ১৪টা – ৩০ মিলিগ্রাম...” - এগুলো হচ্ছে সংখ্যা বিশেষণের প্রয়োগ। আমরা আগেই বলছিলাম সংখ্যা ব্যাবহার করে নিখুঁত ছবি তৈরি করা হয় বা নিঁখুত ধারনা সৃষ্টি করা হয় প্রোগ্রাম করার জন্য। শুধু “বাড়ী” বললে যতটুকু ধারনা সৃষ্টি হয় “৩ তলা ১ ইউনিট বাড়ী” বললে তার চেয়ে বেশী নিঁখুত ধারনা সৃষ্টি হয়।
* “বিশাল রুম, বেড হল, পালঙ্ক” ইত্যাদি প্রচুর বিশেষণ ব্যাবহার করা হয়েছে। আমরা আগেই বলছিলাম বিশেষণ ব্যাবহার করে নিখুঁত ছবি তৈরি করা প্রোগ্রাম করার জন্য।
* “সংগ্রহ করে কি করেন?...
এটা দিয়ে জাযিম বানান। ...
এবং এটাকে প্রত্যেক দিন রোদে দাও। ”
লক্ষ্য করুন গল্পের এই অংশে সরাসরি আপনাকে কমান্ড বা নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। “জাযিম বানিয়েছিলেন, এবং প্রত্যেক দিন রোদে দিতেন” – এমনটি বলাই যুক্তিসঙ্গত ছিল। কিন্তু তা না করে এই গুরু গল্পের এই অংশে সরাসরি আপনাকে নির্দেশ দিচ্ছে।
কেন?
আপনাকে প্রোগ্রাম করার জন্য।
* “ঘুম কিনতে পারবেন না, শান্তি কিনতে পারবেন না” এই জাতীয় নেতিবাচক কথা গুলো বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা হয়েছে গল্পটিতে। এবং সবশেষে ২ বার বলা হয়েছে। কেন? কারন এই জিনিসটাই সে আপনাকে প্রোগ্রাম করতে চায়।
এখন দেখুন এই গল্প আপনার অবচেতন মনে এবং ব্রেইনে কি কি প্রোগ্রামিং ঢুকায়ঃ
• ধনী লোকরা ঘুমাতে পারে না।
• অনেক টাকা, ধন-সম্পদ আপনার ঘুম এবং শান্তি কেড়ে নেবে।
• অনেক টাকা এবং ধন-সম্পদ থাকা খারাপ।
• গরীব লোক ভাল ঘুমায়।
• ভাল ভাবে ঘুমানোর জন্য আপনাকে ধন- সম্পদ, টাকা-পয়সা ছেড়ে দিয়ে গরীব হতে হবে।
• ভাল ভাবে ঘুমানোর জন্য আপনাকে ছিড়া চট গায়ে দিতে হবে এবং ইট মাথায় দিতে হবে।
আপনার বিছানায় ঘুমানো ঠিক হবে না। কারন বিছানায় শুলে আপনার ঘুম আসবে না!(?)
• এবং আরো অনেক নেতিবাচক ধারনা।
এছাড়া আরও অনেক টাকা পয়সা, ধন-সম্পদ সম্পর্কিত নেতিবাচক গল্প বলা হয়। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল একজন ধনী লোকের পেস্ট খাওয়ার গল্প যে ধনী কিন্তু গাড়িতে বসে চালের গুড়ার পেস্ট খেতে বাধ্য হয় পেটের আলসার হওয়ার কারনে। ভাবখানা এমন যে সব ধনী ব্যাক্তিরাই পেস্ট খেতে বাধ্য হয়।
এই লোক আরো একটি ঘটনা বলে, এরিস্টটল ওনাসিস নামক এক ধনকুবের এর একমাত্র উত্তারাধিকারী মেয়ে ক্রিস্টিয়ানা ওনাসিস মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ এবং ৩ বছরের কন্যা সন্তান রেখে আত্মহত্যা করে। গল্পের শেষে বলে, “৫ বিলিয়ন ডলার প্রশান্তি দিতে পারে নাই”। ভাবখানা এমন যে সব ধনীর মেয়েরাই প্রশান্তি পায় না, তারা শুধু আত্মহত্যা করে। বাস্তবতা হচ্ছে হয়ত ২/১ জন বড় ধনীর মেয়ে আত্মহত্যা করেছে পৃথিবীতে, কিন্তু লাখ লাখ ধনীর মেয়েরা যে আত্মহত্যা করে নাই, তারা যে সুখে আছে এ কথা কিন্তু বলে না। কত ধনীর মেয়েরা তো সুখে থাকে, তাদের উদাহরণ কেন দেয় না এই তথাকথিত গুরু? কেন শুধু বেছে বেছে নেতিবাচক ঘটনা গুলো বলে, যেখানে লাখ লাখ, কোটি কোটি ইতিবাচক ঘটনা রয়েছে?
এই লোকটা তার কোর্সে জীবনে ইতিবাচক কথার গুরুত্ব এবং নেতিবাচক কথার ক্ষতি সম্পর্কে অনেক লেকচার দেয়।
তারপরও সে নিজেই কেন নেতিবাচক কথা, নেতিবাচক গল্প বলে?
কারনটা নীচে আলোচনা করা হলো।
অনেক দরিদ্র লোক কখোনই ধনী হয় না কারন তাদের একটি ভুল ধারনা আছে যে ধনী লোক কখনো সুখী হয় না, ধনী হলে সুখ হারিয়ে যাবে এবং তাদের জীবন দুর্বিশহ হয়ে পড়বে। কিন্তু এই ধারনাটি সঠিক নয়। এবং যে ভাবে এই গল্পটি ধনীদের সম্পর্কে বিবরন দিচ্ছে, উপস্থাপন করছে তাও আসলে সঠিক নয়। যদি আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী এলাকা গুলশান, বারিধারার বাসা গুলো দেখি তাহলেও আপনি একটি বিছানাও খুঁজে পাবেন না যার তোশক বা জাযিম পাখির পালক দিয়ে তৈরি।
এটা আমাদের ধনীদের সম্পর্কে মিথ্যা ধারনা দেয়। কেউ পাখির পালকের তৈরি বিছানা ব্যাবহার করে না। এমনকি এ রকম কোন মহিলা যদি অতীতে সত্যিই থেকে থাকত তাহলে সেটা হত ব্যাতিক্রম, স্বাভাবিক নয়। আর একটি ব্যাতিক্রম জিনিস কখনোই সব ধনী মানুষের পরিমাপের মানদন্ড হতে পারে না। একটি ব্যাতিক্রম কখনোই সব মানুষকে উপস্থাপন করে না।
মানব মন কষ্ট, ব্যাথা, দুঃখ ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকতে চায় এবং আনন্দের দিকে ছুটতে চায়। উপরের গুরুজীর বলা গল্পটি মানুষের মনে টাকা-পয়সা এবং ধনী হওয়া সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা সৃষ্টি করছে। বলাবাহুল্য, এইভাবে প্রোগ্রামড হলে আপনি কখনই বড় ধনী হতে পারবেন না এবং সব সময় ধনী হতে গেলে কষ্ট এবং বাধা আসবে। কারন আপনার অবচেতন মন কষ্টের ভয়ে ধনী হতে চাইবে না। আপনার অবচেতন মন তো প্রোগ্রামমড হয়ে আছে যে, “ধনী হওয়া খারাপ, ধনী হলে কষ্ট হবে, শান্তি থাকবে না ইত্যাদি”।
অপরদিকে এই গুরু তার কোর্সে আপনার মনে এমন ধারনার জন্ম দেয় যেন মনে হয় কোয়ান্টাম মেথডের সাথে থাকলে, কোয়ান্টামে মেথডের সব কোর্স এবং অনুষ্ঠানে অংশ নিলে মানুষ ধনী হয়ে যাবে। এই লিঙ্কে যেয়ে তার কন্ঠে এই গল্পটি শুনুনঃ
http://youtu.be/4Qez0FSpi6Q
এখানে সে বলছে যে এক লোক তার কাছে এসেছিল বিশ লাখ টাকা ঋনগ্রস্থ অবস্থায়। সে তাকে বলে, “আসেন মেডিটেশন করেন, ২০ কোটি টাকার মনছবি করেন” (মনছবি = কোয়ান্টাম মেথডের একটি মেডিটেশনের নাম)। এই ঘটনা হচ্ছে কোয়ান্টাম মেথডের প্রথম দিকের। কিন্তু ঐ একই ঘটনা কোয়ান্টামের সব ব্যাচে শোনানো হয়।
প্রায় লাখ খানেক মানুষকে এই ভন্ড একই ঘটনা বারবার শোনায় শিয়াল কুমিরের একই বাচ্চা বারবার দেখানোর গল্পের মত। বাস্তবতা হচ্ছে এর পরে এমন ঘটনা এই লাখ খানেক মানুষের মধ্যে আর কারও ক্ষেত্রে ঘটে নাই, যদিও সবাই তেমনটা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। আসল বিষয় হচ্ছে প্রথম দিকে এই গুরুর একটা উদাহরণ সৃষ্টি করার দরকার ছিল মানুষকে দেখানোর জন্য, মানুষকে বলার জন্য। তাই সে এমন কাউকে বেছে নিতে চাচ্ছিল যার ক্রেডিবিলিটি আছে, যার ধনী হওয়ার পারিপার্শ্বিক সুযোগ আছে। আর তা পেয়েও গেছিল ঐ লোকের ভেতর।
আর উদাহরণ সৃষ্টি করার পর এই একই উদাহরণ লাখো মানুষের সামনে বিক্রি করল কিন্তু তাদের কেউই আর ছোট থেকে বড় ধনী হতে পারল না।
এর ফলে কি হয়?
এর ফলে একটা চক্রের সৃষ্টি হয় যাতে শুধুমাত্র গুরুজী লাভবান হয়।
মানুষ মনে করে কোয়ান্টাম কোর্স করলে সে ধনী হতে পারবে, জীবনে এটা হবে, সেটা হবে। তাই মানুষ ৮,০০০ টাকা কোর্স ফি দিয়ে কোর্স করে > কোর্স করার পর চর্চা করার পরও সে ধনী হতে পারে না কারন কোর্সের মধ্যেই তার ব্রেইনে ধনী হওয়া সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা এবং ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে > তাই সে কোয়ান্টামের আরো কোর্সে অংশ নেয় আরো টাকা ব্যয় করে এবং আরো বেশি সম্পৃক্ত হয় কোয়ান্টামের সাথে, কারন গুরুজী তাকে বিশ্বাস করিয়েছে যে কোয়ান্টামের সাথে থাকলে সাফল্য আসবেই > আবার সে ব্যার্থ হয় অবচেতনে নেতিবাচক ধারনা এবং ভয় ঢুকানো থাকার ফলে > তখন সে মনে করতে থাকে, হয়ত তার নিজের মধ্যেই কোন সমস্যা আছে > তখন সে জিজ্ঞাসা করে কোয়ান্টামের কাউন্সিলরের কাছে অথবা গুরুজীর কাছে তার সমস্যা কি? > তারা উত্তর দেয়, তার মেডিটেশন ঠিক মত হচ্ছে না, লেভেল ঠিক হচ্ছে না। ফাউন্ডেশনের সাথে আরো সম্পৃক্ত হতে হবে > সে আরো টাকা ব্যয় করে কোয়ান্টামের আরো প্রোগ্রামে অংশ নেয় > গুরুজী আরো টাকা পায় > কিন্তু সে আবারো ব্যার্থ হয় এবং আরো প্রোগ্রামে অংশ নিতে থাকে এবং টাকা খরচ করতে থাকে > এভাবে সে জিনিসটার প্রতি নেশাগ্রস্থ হয়ে যায় এবং এই চক্র চলতেই থাকে।
আর গুরুজী হাতিয়ে নেয় মানুষের কোটি কোটি টাকা, শ্রম এবং সময়।
এটা এক ধরনের আত্ম-বিধ্বংসী আচরন সৃষ্টি করে যা ধীরে ধীরে কাজ করে কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না। যত বেশী আপনি চেষ্টা করবেন তত বেশী ব্যার্থ হতে থাকবেন ওই প্রোগ্রামের কারনে, যা ব্যার্থতার বীজ আপনার মনে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এবং যত বেশী আপনি ব্যার্থ হবেন তত বেশী আপনি চেষ্টা করতে থাকবেন, কারন কোর্সে আপনাকে শেখানো হয় স্বপ্ন দেখতে, আশা করতে এবং চেষ্টা করতে। এইভাবে এই চক্রে আপনি নেশাগ্রস্থ হয়ে যাবেন।
এটা এমন এক প্রোগ্রাম যা আপনার পা বেধে রেখে আপনাকে দৌড়াতে বলবে।
এবং যত বেশী আপনি চেষ্টা করবেন এবং কোর্স করা অব্যাহত রাখবেন তত আপনি কোর্স এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামের ফি দিতে থাকবেন, তত বেশী সেখানে সেচ্ছা সেবা দিতে থাকবেন, দান করতে থাকবেন। এবং এই ভন্ড গুরু আরো বেশী লাভবান হতে থাকবে।
এমনকি আপনি যদি সব কিছু বুঝে ফেলেন এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে ত্যাগ করে চলে আসতে চান, এই গুরু তার আন্ডারওয়ার্ল্ড বাহিনী পিছনে লাগিয়ে দেবে আপনার জীবনকে দুর্বিশহ করে তোলার জন্য যেন আপনি সফল হতে না পারেন। কারন আপনি সফল হলে যদি প্রতিশোধ নেন? তাছাড়া সে তার বর্তমান অনুসারীদেরকে দেখাতে চায় যে, কেউ তার প্রোগ্রাম ছেড়ে চলে গেলে সফল হতে পারে না, যাতে অন্য কেউ কখনো তার কার্যক্রম ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা না করে।
প্রতারক চক্র যেমন অনেক মেয়েদেরকে মডেল হওয়ার লোভ দেখিয়ে পরে তাদেরকে ব্যাবহার করে, এই লোকটিও সেই রকম প্রতারক। সত্যি বলতে কি চোর ডাকাতরা যতটা না ক্ষতি করে তার চেয়ে বেশী ক্ষতি করে এই সব ছদ্মবেশী ভন্ডরা। কারন এরা হিরোইনের মত অদৃশ্য এক নেশার ফাঁদে ফেলে মানুষের সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে। সময় হয়েছে এদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার।
লেখাটি শেয়ার করে আপনার বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত জনকে এই প্রতারনার শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।