আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোয়ান্টাম মেথড: আমাদেরকে কোন পথে ডাকছে

ফারিয়াজ ১. ইসলামের দৃষ্টিতে কোয়ান্টাম মেথডের নানা দিক: ১.১.মনের শক্তির ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী: অন্তরের ইবাদতসমূহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল “তাওয়াক্কুল” – যা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ওপর করা যাবে না। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সত্তার ওপর এমন কোন ব্যাপারে তাওয়াক্কুল করে যা সংঘটনের ক্ষমতা তার নেই, তবে তা বড় শিরক হবে যা একজন ব্যক্তিকে ইসলামের গণ্ডীর বাইরে নিয়ে যায়। মেডিটেশন পদ্ধতিতে নিজের ওপর “তাওয়াক্কুল” ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার শিক্ষা দেয়া হয়, বলা হয়: তুমি চাইলেই সব করতে পার। [25] তাহলে আমরা দেখলাম যে, মনের স্বাধীন শক্তির এই ধারণাটি ইসলামের শিক্ষার সাথে রীতিমত সাংঘর্ষিক। মনের এমন কোন ক্ষমতা নেই, যা প্রকৃতির নেপথ্য শক্তিকে (আল্লাহ ব্যতীত আর কোন শক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করাই শিরক) নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

জৈবিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা বা স্থান-কালের ঊর্দ্ধে যেতে পারাও সম্ভব নয় মানব আত্মার পক্ষে। ১.২.মাটির ব্যাংকের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী: আমরা যদি মাটির ব্যাংক সংক্রান্ত আমাদের উপরের আলোচনা একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখব যে, এখানে ধরে নেয়া হচ্ছে মাটির ব্যাংকে দান মানুষের কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারে, অথচ ইসলামী শিক্ষা হল কল্যাণ একমাত্র আল্লাহ পাকের কাছ থেকেই আসে, আর কারও জন্য কোন ক্ষতি নির্ধারিত হলে সেটাও একমাত্র আল্লাহ তা’আলার নিয়ন্ত্রণে, আল্লাহর সাথে এতে কোন অংশীদার নেই। যদি দাবী করা হয় যে মাটির ব্যাংকে দানের উছিলায় কল্যাণ ত্বরান্বিত হয়, তবে কোন ঘটনার উপকরণ বা “সাবাব” হিসেবে এমন কিছুকে নির্ধারণ করা হল, যাকে আল্লাহ পাক উপকরণ বা সাবাব হিসেবে নির্ধারণ করেননি। এই কারণেই তাবিজ এর ব্যবহার ইসলামে নিষিদ্ধ – অবস্থাভেদে তা বড় বা ছোট শিরক হতে পারে। ১.৩.কমান্ড সেন্টারের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী: আমরা আগেই গায়েবের জ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছি এবং উল্লেখ করেছি যে এতে কারো অংশীদার নেই।

কিন্তু কমাণ্ড সেন্টারের প্রয়োগ দেখলেই আমরা বুঝব তা মানুষকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দাবী করছে যখন সে গায়েবের জ্ঞানের অধিকারী হয়। আমরা এও দেখেছি যে, কিভাবে কুরআনের আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে এই জঘন্য বিষয়টিকে ইসলামে অনুমোদিত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ১.৪.কোয়ান্টা ভঙ্গির ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী: কোয়ান্টা ভঙ্গীকে আল্লাহকে স্মরণ করার যে উপায় হিসেবে দেখানো হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে অভিনব একটি বিদ’আতের উদাহরণ। আল্লাহর স্মরণ বা যিকির ইসলামের একটি প্রতিষ্ঠিত ইবাদাত। তাই এর উৎস অবশ্যই ওহী হতে হবে।

আর কোয়ান্টা ভঙ্গীর যে অ্যাস্ট্রোলজিকাল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তাতে ইসলামে যে এটা পরিত্যাজ্য তা দিবালোকের মত পরিষ্কার। ১.৫.অন্তর্গুরুর ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী: ইসলামের কোন পুরোহিততন্ত্র (Priesthood) নেই – যা এর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। পীরের মুরিদ হওয়ার কোন সুযোগ ইসলামে নেই বরং তা যে কিভাবে মানুষকে শিরকের দিকে ডাকে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে তা বোঝা মোটেও কঠিন নয়। কোয়ান্টাম মেথডের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আরও ভয়ংকর এই কারণে যে এখানে অন্তর্গুরু কল্যাণ বা অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখেন যা শিরক হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ রাখেনি। [26] ১.৬. মেডিটেশন পদ্ধতিটির উৎস: আমরা যদি কোয়ান্টাম মেডিটেশন সম্পর্কে জানার জন্য internet এ একটু search দেই, তাহলে পাই: Meditation is the oldest self-help technique available to human beings, offering detailed mental and physical plans carefully designed to bring the mind under critical observation and control to achieve harmony and dynamic health. The discipline of meditation is over 5000 years old, and can be traced back to ancient India. Following the introduction of modern Quantum Mechanics into scientific discourse, our concept of reality has changed most radically. The science of Quantum Mechanics now concurs with the ancient wisdom of Hindu Vedanta philosophy, in the observation that the sense-bound intellect alone is simply inadequate for experiencing the ultimate condition of reality. We also need to use our deep inner perception of unity through a holistic mind-body connection in order to experience the ultimate reality. We can experience such reality only when we are able to commune within at a deeper level of consciousness, where the subject, the observer — and the object, the observed — become one perception. [27] ১.৭.মেডিটেশনের ধাপসমূহ: কোয়ান্টাম মেথডের বিস্তারিত আলোচনা থেকে আমরা দেখেছি- মেডিটেশনের প্রথম ধাপ হচ্ছে ‘শিথিলায়ন’।

বাকি ধাপগুলোর ব্যাপারে শুধু আভাস দেয়া হয়েছে যাকে বলা হয়েছে অতিচেতনার পথে যাত্রা যাকে থিটা, বিটা লেভেল ইত্যাদি নানা নামকরণ করা হলেও আসলে তাদের নাম নির্বাণ বা ফানাফিল্লাহ। (এ ব্যাপারে কোয়ান্টামের বক্তব্য-) এসময় মহাচৈতন্যের (super consciousness) সাথে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়, মানব অস্তিত্বের যে অংশ স্থান কালে আবদ্ধ নয়, তা প্রকৃতির নেপথ্য নিয়ম ও স্পন্দনের সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করে এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এখন আসুন আমরা এই ধাপগুলোর উৎস খোঁজার চেষ্টা করি- “Nirvana” is a Sanskrit term meaning “blown out” referring to the extinction of all worldly desires, or salvation. Though the term originated in Vedantic (Bhagavad-Gita and the Vedas) it is most often associated with Buddhism. In Hinayana Buddhism the term is equated with extinction while in Mahayana Buddhism it is a state of bliss. [28] In this state, according to a branch of Buddhist thought, the ego disappears and the human soul and consciousness are extinguished. This concept also forms the core of a philosophy known as “mysticism”. Mysticism is defined as an experience of union with God and the belief that man’s main goal lies in seeking that union. The origins of mysticism can be found in the writings of ancient Greek philosophers….. [29] মুশরিকদের ধর্মের একটি অংশ ইসলামে কিভাবে আসল তা জানতে ইতিহাস ঘাটলে আমরা পাই: The mystic tradition began to find expression among Muslims from about 8th century CE, a century after the borders of the Islamic state had expanded to include Egypt and Syria and its major centers of monasticism. A group of Muslims who were not satisfied with what the Sharee’ah (Islamic Law) had to offer, developed a parallel system which they named the Tareeqah (the way). Just as the ultimate goal of the Hindu was unity with the world soul and of the Christian mystic union with God; the ultimate goal of this movement became Fanaa, the dissolution of the ego, and Wusool the meeting and unification of the human soul with Allaah in this life. A series of preliminary stages and states which had to be attained were defined. They were called Maqaamaat (stations) and Haalaat (states). A system of spiritual exercises was also designed for the initiate in order to bring about this “meeting.” These exercises of “Dhikr” often involved head and body movements and sometimes even dance, as in the case of whirling dervishes. [30] ২. উপরের আলোচনার আলোকে কোয়ান্টাম মেথড: এতক্ষণে আশা করি এই তথাকথিত সাইন্টিফিক মেথড বা Science of Living যে আসলে হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের একটি Ritual ছাড়া আর কিছুই নয় এ বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। কেন এটি পরিত্যাজ্য তার ব্যাপারে আর কোন প্রমাণ দাখিলের ও বোধহয় প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রকৃত সত্য এই যে এটি মাত্র শুরু।

২.১. কোয়ান্টাম মেথড সকল ধর্মই সত্য এই মতবাদ প্রচার করে: আমাদের দ্বীনের মূলমন্ত্র বা সারকথা একটি বাক্যে সংকুচিত -“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌”। এই একটা ব্যাপারে কোন সংলাপ বা সমঝোতা হবার নয় – এ কথাটা বলতেই বিখ্যাত আয়াত “লাকুম দ্বীনুকুম ওয়াল ইয়া দ্বীন” নাজিল হয়েছে ৷ অথচ, অজ্ঞতাবশত আমাদের দেশের মূর্খ রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে তথাকথিত সুশীল সমাজের অনেককেই এই আয়াতটিকে ঠিক উল্টোভাবে ব্যবহার করে আন্তঃধর্ম প্রেমের বাণী ছড়ানোর চেষ্টা করতে দেখা যায় ৷ কোয়ান্টাম ফাউণ্ডেশন ও এর ব্যতিক্রম নয়। ২.২. এটি একটি জঘন্য বিদ’আত: আমরা আগেই দেখিয়েছি যে, তারা নিজেরাই প্রচার করছে যে মেডিটেশন এক ধরণের ইবাদাত। আর এটা একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাপার যে, এমন কিছু রাসূল (সা.) এর সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সাহাবীদের মাঝে এর প্রচলন ছিলনা। অনেকে দাবী করেন যে, রাসূল (সা.) হেরা গুহায় ধ্যান করতেন।

তাদের খুব স্পষ্টভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন যে – রাসূল (সা.) হেরা গুহায় ঠিক কি করতেন, যা করতেন সেটাকে ধ্যান বলে আখ্যায়িত করা যায় কিনা এ ব্যাপারে আমাদের কোন বিস্তারিত তথ্য জানা নেই। যদি বা তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে, রাসূল (সা.) হেরা গুহায় ধ্যান করতেন, তবে তা করতেন নব্যুয়তের আগে। নব্যুয়তের আগে তাঁর করা কোন কাজ আমাদের জন্য শরীয়াতের উৎস নয়। ২.৩. বিদ’আতপন্থী দলগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য কোয়ান্টাম মেথডের মাঝে বিদ্যমান: কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা:জ্যোতিষশাস্ত্র যে ইসলামে অনুমোদিত তা প্রমাণ করার জন্য কুরআন অপব্যাখ্যা করার এক হীণ প্রচেষ্টা তারা চালিয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে-পবিত্র কোরআনের সূরা জ্বীনের ২৬-২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘গায়েব বা ভবিষ্যত শুধুমাত্র তিনিই জানেন, যদি না তিনি কাউকে জানান, যেমন তিনি রসূলদের জানিয়েছেন। ’ অর্থাৎ জানার পথ খোলা আছে।

তিনি যে কাউকে ইচ্ছা ভবিষ্যত জানাতে পারেন, যে কাউকে ইচ্ছা গায়েব জানাতে পারেন, এটা ওনার এখতিয়ারে। আর এটা আল্লাহর একটি আশ্বাসই যে, যে যা জানতে চায়, আল্লাহ সেই জ্ঞান তাকে দিয়ে দেন। [31]অথচ আয়াতটির সঠিক অনুবাদ হল- তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া। আর তিনি তখন তার সামনে ও তার পিছনে প্রহরী নিযুক্ত করেন।

ইবনে তাইমিয়্যা (র) একটি চমৎকার অভিমত দান করেছেন যে বিভ্রান্ত দল গুলি যে আয়াতকে তাদের দলিল হিসেবে পেশ করে, সেই একই আয়াত থেকে তাদের ভুল তুলে ধরা যায়। কুরআনের এই অনুপম বৈশিষ্ট্যটি এক্ষেত্রে আবারো প্রমাণিত হল কারণ আল্লাহ বলে দিচ্ছেন যে মনোনীত রাসূল ছাড়া আর কেউ গায়েবের জ্ঞান জানেনা। অনুরূপভাবে তাদের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে- ইসলামের স্বর্ণযুগে যত বড় বড় আরব পণ্ডিত ছিলেন – আল বেরুনী থেকে শুরু করে আল বাত্তানী, আল কিন্দি, আল জারকানি, ইবনে বাজ্জা, ইবনে তোফায়েল, ইবনে আরাবী, ইব্রাহীম আল ফাযারি, আল ফারগানি, আল খারেজমি, আল তারাবি, ওমর খৈয়াম, ইবনে ইউনুস, নাসিরুদ্দিন আল তুসী প্রমুখ ইসলামি মনীষীগণ এস্ট্রলজি চর্চা করেছেন। কারণ তাদের অনুপ্রেরণা ছিলো পবিত্র কোরআনের বাণী, “নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাত্রির আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। তারা দাঁড়িয়ে, বসে বা শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে।

তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ধ্যানে নিমগ্ন হয় এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি কর নি। ” [32] এখন আমরা যদি আয়াতটির পুরো অংশ দেখি, তাহলে পাই- Who remember Allah while standing or sitting or [lying] on their sides and give thought to the creation of the heavens and the earth, [saying], “Our Lord, You did not create this aimlessly; exalted are You [above such a thing]; then protect us from the punishment of the Fire.” অর্থ্যাৎ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি নিবিড় পর্বেক্ষণ তাকে উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহর কাছে জাহান্নামের শাস্তি থেকে পানাহ চাইতে যা আবারো ইসলামের Salvific Exclusivity-র বিষয়টিকে প্রতিফলিত করে। ওয়েবসাইটে আরও যে মিথ্যাচারটা করা হচ্ছে তা হল- ৮৫ নং সূরাটির নাম ‘বুরুজ’ যার মানে রাশিচক্র। যারা তাফসীরের মূলনীতিগুলো জানেন, তাদের একথা জানা যে এটি একটি ভুল অনুবাদ। আসলে বুরুজ শব্দের অর্থ বড় তারকা।

জাল হাদীসের ব্যবহার: ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে-হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত আছে যে নবীজী (স) বলেছেন; সৃষ্টি সম্পর্কে এক ঘণ্টার ধ্যান ৭০ বছরের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। ( মেশকাত) । [33]এই হাদীসটিকে মুহাদ্দিসগণ জাল হাদীস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ২.৪. কোয়ান্টাম মেথড শিরকের দিকে ডাকে: আমরা আগেই বলেছি যে, সাধারণ বিদ’আতও কয়েক প্রজন্মের মাঝে কিভাবে শিরকে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু এখানে লক্ষণীয় যে, কোয়ান্টাম মেথড কিভাবে শিরকের দিকে ডাকে তা বোঝার জন্য আপনাকে কয়েক প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হবেনা।

উপরে কোয়ান্টাম মেথডের নানা দিক সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি যাতে এর মাঝে শিরকের যে সব ধরনের উপাদান ই রয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। কমাণ্ড সেন্টার, মনের শক্তি, মাটির ব্যাংক, অন্তর্গুরু, কোয়ান্টা ভঙ্গি ইত্যাদির প্রত্যেকটি বিষয়ই ছোট এবং ক্ষেত্রবিশেষে বড় শিরকে লিপ্ত করছে আমাদেরকে। ৩. কোয়ান্টাম মেথডের নানা দিক: আসলে তা কিভাবে ঘটে? কমাণ্ড সেন্টার, অন্তর্গুরু – এই যে বিষয়গুলো কোয়ান্টাম মেথডের সাথে জড়িত, তার বাস্তব সংঘটনের কথা তো অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু আসলে কিভাবে এগুলো ঘটে তার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমরা পর্যালোচনা করি, তাহলে আমাদের জানতে হবে জ্বীনদের সম্পর্কে। ‘ Many shaykhs appear to levitate, travel huge distances in split instants of time, produce food or money from nowhere etc. Their ignorant followers believe these feats of magic to be divine miracles. But behind all of these phenomena lie the hidden and sinister world of the jinn. They are able to travel over vast distances instantaneously and enter human bodies prepared for entry. In many Christian and pagan sects people work themselves into a physical and spiritual frenzy, fall into a state of unconsciousness. In that weakened state the jinn may easily enter their bodies and cackle on their lips. This phenomenon has also been recorded by some sufi orders during their dhikr. Information about the past of an unknown person can easily be put into the subconscious mind by the jinn.’ [34] তাহলে আমরা বুঝলাম যে মেডিটেশনের ধাপগুলো আসলে জ্বীনদের সাহায্য অর্জনের প্রক্রিয়া মাত্র।

এই বিষয়ে কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক পড়াশোনা থাকলেই আমরা কমাণ্ড সেন্টারে অপরিচিত মানুষদের ব্যাপারে কিভাবে পুংখানুপুঙ্খ বিবরণ দেয়া হয় তা বুঝতে পারব। যাকে অন্তর্গুরু হিসেবে চাওয়া হচ্ছে তাকে কিভাবে দেখা যাবে তাও বোঝা যাবে। সব ক্ষেত্রে আসলে গুরু শয়তান! ৪. নামায ও মেডিটেশন: তুলনাযোগ্য? আমরা দেখেছি যে বারবার নামাযের সাথে মেডিটেশনের একটা তুলনা চলে এসেছে। এমনকি ওয়েবসাইটটিতে এমন প্রশ্নও করা হয়েছে যে মেডিটেশনের আগে অযূ করতে হবে কিনা!! [35] যারা এর কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননা তারাও জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে একে নামাযের সাথে তুলনা করেন। কিন্তু এই তুলনা আমাদের জন্য অবমাননাকর।

আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে- • প্রাথমিকভাবে আমরা নামায পড়ি আল্লাহর আদেশ পালন করতে – পরকালে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে নামাযের ব্যাপারে। • নামায দ্বীন ইসলামের একটি রুকন। • নামায কোন শরীর চর্চার পদ্ধতি নয়, যদিও বা তা দৈহিক সুস্থতার জন্য সহায়ক। অর্থ্যাৎ নামাযের সাথে মেডি্টেশনের মৌলিক পার্থক্য এর উদ্দেশ্য এবং এর উৎসে।

৫. যারা একে ইসলামে অনুমোদিত বলেন তাদের যুক্তির খন্ডন: যুক্তি ১: রাসূল (সা.) হেরা গুহায় ধ্যান করতেন। সূরা আল ইমরানের ১৯১ নং আয়াতে ধ্যানের কথা বলা হয়েছে। মেডিটেশনে নামাযে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। এই প্রত্যেকটি যুক্তিই আমরা খণ্ডন করেছি আমাদের পুরো আলোচনাতে। ৬. কেন মেডিটেশন আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে? আমরা মুসলিমরা পরষ্পর পরষ্পরের সাথে দেখা হলেই সম্ভাষণ জানাই- আল্লাহ আপনার উপর শান্তি বর্ষণ করুন – এই বলে।

আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের মাঝে যে শান্তি, তার ছোঁয়া আমাদের জীবনে পড়েনা বলেই আমরা শান্তির খোঁজে নানা পদ্ধতি অবলম্বন করছি। শান্তির খোঁজ পেতে মরিয়া হয়ে যাওয়া আর ইসলামী জ্ঞানের ব্যাপারে অসীম অজ্ঞতার সুযোগেই কোয়ান্টাম মেথড আমাদের দেশে এতটা প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে। ৭. আমাদের করণীয়: এক কথায় যদি আমাদের করণীয় বলতে হয়, তবে তা হল দ্বীন শিক্ষা করা। এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে যে দ্বীন শিক্ষার রাস্তা কোন কালেই মসৃণ ছিলনা। তাবে-তাবেঈদের মত আমাদের হয়তোবা হাদীসের বিশুদ্ধতা যাচাই করতে উটের পিঠে চড়ে মাসের পর মাস ভ্রমণ করতে হবেনা, তবে আজকের অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে Click করে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে উৎসটা সহীহ কিনা।

আলেমের অধীনে Systematic উপায়ে দ্বীন শিক্ষার কোন বিকল্প কখনও ছিলনা, এখনও নেই। আমরা যেন মনে রাখি- “বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। ” [36] “আল্লাহ পাক যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। ” [37] ৮. উপসংহার: আমরা ইচ্ছা অনিচ্ছায় যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করিনা কেন অথবা ভুলে থাকিনা কেন, সত্য হল আমাদের সবাইকে যে কোন দিন আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে এবং পুংখানুপুংখ হিসাব দিতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে যে assignment দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন(তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা) তার বৈশিষ্ট্য হল “প্রশ্ন-উত্তর” সবই জানা।

যা শুধু জানা নেই তা হল Submission Deadline । মালাকুল মউত আসার পর অসহায় আফসোস যেন না করতে হয়, সেজন্য আমাদের খুব দ্রুত দ্বীন শিক্ষায় মনোযোগী হওয়া উচিত। খুব শক্তিশালী ইসলামিক জ্ঞানের ভিত্তি থাকলে, কোয়ান্টাম মেথডের মত আর কোন শিরকি পদ্ধতি আমাদের ঈমান নষ্ট করতে পারবেনা ইনশা’আল্লাহ্। আল্লাহ আমাদেরকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার তৌফিক দান করুন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.