আলি-বরটনার আলফা-আলফা পটেনশিয়াল নীতির জনক/প্রবক্তা বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর সভাপতি ড. শমসের আলি বলছিলেন তার গবেষণা এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞান প্রেক্ষাপট নিয়ে। সাক্ষাৎকারটি জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমী থেকে নিয়েছিলাম ১০ অক্টোবর ২০১১ ।
র.ইঃ আপনাকে স্বাগতম।
ড. আলিঃ স্বাগতম ।
র.ইঃ স্যার, আপনার গবেষণার মূল বিষয় কি?
ড. আলিঃ আমার গবেষণা নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এবং হাইপার নিউক্লিয়ার ফিজিক্স নিয়ে।
প্রথমত বিভিন্ন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের গঠন পদ্ধতি জানা। দ্বিতীয়ত ল্যামডা নামক একটি আস্থায়ী কণিকা সম্পর্কে জানা। ল্যামডা কণিকা যখন নিউক্লিয়াসের সাথে যুক্ত হয় তখন একটি বন্ধনী তৈরি করে যা হাইপার নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এ আলোচিত হয়।
র.ইঃ আপনার গবেষণায় সবচেয়ে আবিষ্কার কি?
ড. আলিঃ সারা জীবনের গবেষণায় সবচেয়ে বড় আবিষ্কার আলি- বরটনার পটেনশিয়াল নীতি প্রদান। সারা বিশ্বে পরমাণুবিজ্ঞানীরা আলফা-আলফা ক্লাস্টার গবেষণায় এই নীতি অনুসরণ করে থাকেন।
র.ইঃ এই নীতি মুলত কি?
ড. আলিঃ আলফা-আলফা কণিকা বলতে হিলিয়ামকে বোঝানো হয়। দেখা যায় পর্যায় সারণিতে অক্সিজেনে চারটি, নিয়নে পাঁচটি, ম্যাগনেসিয়ামে ছয়টি আলফা-আলফা বিদ্যমান এবং তারা সুস্থিত। কিন্তু বেরিলিয়াম সুস্থিত নয় যার কারণ অনুসন্ধানে আমি বেরিলিয়ামের আলফা-আলফা বন্ধনের আকর্ষণ বল নির্ণয় করেছি।
র.ইঃ পরমানু নিয়ে গবেষণায় বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের অবদান কি?
ড. আলিঃ সুনিশ্চিতভাবেই পরমানু গবেষণায় রাদারফোর্ডের অবদান অনস্বীকার্য। তার পরমানু মডেলের পরেই নিউক্লিয়াসের গঠন সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি।
ফলে পরবর্তীতে পরমাণু তথা নিউক্লিয়াস নিয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গবেষণা সহজ হয়েছে।
র.ইঃ পরমাণু নিয়ে নতুন কি গবেষণা চলছে?
ড. আলিঃ আমরা এক সময় জানতাম আগুন, পানি মৌলিক পদার্থ। পরবর্তীতে জানলাম এগুলো নয় ৯২ টি মৌলিক পদার্থ রয়েছে। একইভাবে পরমাণু তার মধ্যকার ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন সম্পর্কে জানলাম। পরবর্তীতে কোয়ার্ক সম্পর্কে জানা গেল।
এটি এখনও বাস্তবে পাওয়া যায় নি এটি নিয়ে গবেষণা চলছে আরও তথ্য পাওয়ার জন্য। চেষ্টা করা হচ্ছে চৌম্বক বল, মহাকর্ষীয় বল এবং নিউক্লিয় বলের প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য। মূল কথা এখন অনেক বেশি গবেষণা চলছে পরমাণু নিয়ে।
র.ইঃ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কি কাজ করে থাকে?
ড. আলিঃ পরমাণু শক্তি চুল্লি নিয়ে কাজ করা উদ্দেশ্য হলেও এটি এখন গবেষণা ভিত্তিক কাজ করে থাকে। কৃষি ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছে এটি।
গামা রশ্মি
ট্রিট করে বীজের ডি.এন.এ পরিবর্তন করে ধান, পাট, আলু ,পিঁয়াজ প্রভৃতি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এদেরই গবেষণার ফসল। এছাড়া চিকিৎসাক্ষেত্রে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিশুদ্ধিকরণ পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে এখান থেকেই। অবশ্য বর্তমান সরকার পারমাণবিক শক্তি চুল্লি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তি করেছে।
র.ইঃ বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী বিজ্ঞান প্রসারে কি কাজ করছে?
ড. আলিঃবিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে বিজ্ঞান কর্মশালা, দেশজ গবেষণা যন্ত্রপাতি তৈরিতে বিজ্ঞানের উৎসাহ প্রদান মুলক কাজ করছে। আমাদের উদ্দেশ্য স্কুল কলেজগুলোতে দেশজ গবেষণা যন্ত্রপাতি ব্যাবহারে উৎসাহিত করা।
পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উৎসাহিত করার জন্য তাদের বিভিন্ন স্বীকৃতি দেওয়া হয়। নারী বিজ্ঞানের আরও বেশি গবেষণায় উৎসাহিত করা। মূল কথা বিজ্ঞান সচেতনতা বৃদ্ধিই আমাদের মূল লক্ষ্য।
র.ইঃ নতুন গবেষকদের উদ্দেশে আপনার উপদেশ কি?
ড. আলিঃ শুধু বলব ভালো গবেষণা করতে হবে যা হবে আন্তরজারতিক মানের। অপার সম্ভাবনার এই দেশে আমাদের সব সম্পদ আছে তার ব্যাবহারে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে গেলেই আমাদের দেশ আরও উন্নত হবে।
র.ইঃ ধন্যবাদ
ড. আলিঃ ধন্যবাদ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।