আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিশি, আমি এবং নিশির রাগ ভাঙ্গানোর গল্প !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -এই ! এই ! -কি ? -ওরে বাব্বাহ ! রাগ করে আছো ? কোন কথা নাই ! আমি নিশিকে আবার বললাম -রাগ করে আছো ? -বুঝো না ? তুমি নিশ্চই কচি খোকা নও ? -তা তো বুঝলাম ! কিন্তু নারী মন কখন কি যে চায় স্বয়ং ওবামাও কনফিউজ হয়ে যায় ! -ওবামা কনফিউজ হয়ে যায় মানে কি ? ফাজলামী করতেছো তুমি আমার সাথে ? -আরে আরে রাগ কর কেন ? আমি বোঝাতে চেয়েছি যে দুনিয়ার সব চেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটাও নারীর মন বুঝতে পারে না ! সেখানে আমি তো নাদান বাচ্চা ! এখনও গ্রাজুয়েটও হই নাই ! -এই তুমি কি বললা ? -কি বললাম ? -তোমাকে না বলেছি গ্রাজুয়েশন নিয়ে আমার সাথে কথা বলবা না ! তোমাকে না বলেছি গ্রাজুয়েট নিয়ে আমাকে খোটা দিবা না ? -খোটা ? আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম এমন একটা ভাব করলাম ! মানে সরাসরি হলে হলে নিশি হয়তো আমার মুখের এক্সপ্রেশন বুঝতে পারতো কিন্তু ফোনে রয়েছে বলে মুখ দিয়ে একটু অবাক হওয়ার আওয়াজ করলাম ! -এই এমন আওয়াজ কেন করতেছ ? মনে হচ্ছে কুকুর কানতেছে ! নাহ ! এই মাইয়ার সাথে কথা বলেও শান্তি নাই ! আমি বললাম -আমি অবাক হয়েছি বুঝাতে চেয়েছি ! জীবনের প্রথম কাউকে শুনলাম যে তাকে গ্রজুয়েট বললে খোটা দেওয়া হয় ! আরে তুমি তো গ্রাজুয়েট ....। -একদম চুপ ! -আচ্ছা চুপ ! এই তো চেইন আটকে দিলাম ! -চেইন আটকে দিলাম মানে ? আবার ফাজলামো শুরু করেছ ? -আরে বাবা ফাজলামো করলাম কোথায় ? আমি বললাম -আমি আমার মুখের চেইন আটকে দিলাম ! তুমি যা বলবে তাই ! -আচ্ছা তাহলে ফোন রাখো ! -আরে আরে ....... -কি ? -যে জন্য ফোন করেছি সেটাই তো বলা হল না ! -কি জন্য ফোন করেছ ? -একটু বারান্দায় আসবে ? দেখো আকাশে কি চমৎকার চাঁদ উঠেছে ? -চাঁদ ? এখন বাজে বেলা তিনটা এখন চাঁদ পেলে কোথায় তুমি ? -মানে !! এখন না উঠবে আর কি ? এখন এমনি তাকাও ! চাঁদ যখন উঠার উঠবে ! -দেখ অপু ! আমার মাথা ধরেছে ! তোমার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না ! -আসো না একটু বারান্দায় ! রাগ করেছ বুঝলাম ! একটু আসো প্লিজ ! কিছুক্ষন কোন কথা হল না ! একবার ভাবলাম নিশি হয় তো ফোন রেখে দিয়েছে ! চোখের সামনে মোবাইল এনে দেখলাম রাখে নি ! খুব রাগ না করলে এটা স্বাধারনত নিশি করে না ! আজকেও ও খুব বেশি রাগ করে নাই আমার যতদুর মনে হচ্ছে । কিন্তু প্রত্যেক বয়ফ্রেন্ডের এটা দায়িত্বের ভিতরে পরে তার গার্লফ্রেন্ডের রাগ ভাঙ্গানো ! না হলে সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে পারে ! কিছুক্ষ পরেই নিশিকে বারান্দায় দেখতে পেলাম ! কানে হেড ফোন লাগিয়ে বারান্দায় এসে হাজির । ওর কোলে টিংকু ! টিংকু হচ্ছে ওর বিড়ালে নাম ! বড় আদরের বিলাই ! -হ্যালো ! -হুম ! -তোমার টিংকু কেমন আছে ? -ভাল ! নিশি মনে হয় আমাকে এখনও দেখে নাই ! দেখলাম টিংকু কে নিয়েই ব্যস্ত ! -নিশি ! -হুম ! -একটু এদিকে তাকাবা ? এই বাম দিকে ? ল্যাম্পপোষ্টের দিকে ! দেখো একটা অসহায় ছেলে কতক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছে । -অসহায় ? -অসহায় না বল ? বেচারার গার্লফ্রেন্ড তার উপর রাগ করে আছে ।

এর থেকে আর কি হতে পারে ? -তা রাগ করার কাজ না করলেই হয় ! আসলেই রাগ করার কাজ না করলেই হয় ! কিন্তু একটা স্টাটাসে লাইক না দেওয়া কি রাগ করার পর্যায়ে পরে ? কাল রাতেই এর জের ছিল! তার উপর আজকে সকালে নিশি একটা স্টাটাস দিয়েছিল ! আমার চোখ এড়িয়ে গেছে । আর যাবো কোথায় ! কালকে আমি কথা শুনিয়েছি আর আজকে ও সেইটার শোধ নিচ্ছে ! অবশ্য আগেই বলেছি স্বয়ং ওবামা যেখানে নারীর মন বুঝতে অক্ষম আমি সে খানে কোন ঘাটে মাঝি ! যাই হোক আজকে নিশিকে কোথাও নিয়ে গেলে হয়তো ওর মন ভাল হবে ! -একটু নিচে আসবে ? -কেন ? -ও যে তুমি আমার কাছে টাকা পেতে না ? টাকা গুলো ফেরৎ দিতাম । -আবার ফাজলামী শুরুর করেছো ? -আরে বাবা ! এতো দুর থেকে তোমার সাথে দেখা করতে এলাম । একটু মিষ্টি করে কথা বলবে, নিজে থেকেই নেমে আসবে তা না ! কেন ? কি ? এতো প্রশ্ন করতে পারো তুমি ? তোমার তো ......। থাক কথাটা আর শেষ করলাম না ! আবার বললাম -আসো প্লিজ ! আর শুনো একটু হাতে সময় নিয়ে এসো ! -মানে কি ? -মানে হল বাসায় বলে এসে একটু সময় লাগবে তোমার ফিরতে ! নিশি কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না ! দেখলাম বারান্দা থেকে ভিতরে চলে গেল ! আমি ওর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম ! কাল রাতে নিশির সাথে একটু খারাপ ব্যাবহার করে ফেলেছিল ! কালকে যদিও ও আমাকে কিছু বলে নাই ।

কারন দোষ খানিকটা ওর ছিল ! কিছু না বললেও ওর মনটা খারাপ হয়েছিল বুঝতে পেরেছিলাম ! তখনই ইচ্ছা ছিল আজকে ওকে নিয়ে ওর পছন্দের জায়গায় যাবো ! ওকে কষ্ট দিলে সে মুছে দিতে হয় ! না হয় কষ্ট টা জমতে জমতে অনেক লম্বা হয়ে যায় ! নিশিকে যতবার এখানে নিয়ে আসি নিশির আনন্দ কে দেখে ! বিশেষ করে এই কাশ বনের এই পুকুর পাড়টা ওর অনেক বেশি পছন্দ ! এখানে একটা বড় শান বাঁধানো পুকুর আছে ! চারিদিকে কাশের বন আর মাঝ খানে এই বড় পুকুর টা ! নিশি এখানে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে অনেক পছন্দ করে ! নিশি নিজের চুরিদারটা একটু গুটিয়ে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে ! আর ক্ষনে ক্ষনে পানির ছিটিয়ে দিচ্ছে ! একবার আমার দিকে একটু পানি ছিটিয়ে দিল ! -এই ! -কি ? আমি হাসলাম । -কিছু না ! মন ভাল হয়েছে ? -না ! যদিও নিশির মুখ দেখে মনে হচ্ছে না যে ওর মন খারাপ আছে এখনও মন খারাপ ভাল না হওয়ার কোন কারন নাই ! আমি বললাম -এখনও ভাল হয় নাই ? -না ! কাল রাতে আমি একটুও ঘুমাই নাই ! তুমি...। -তাই ? ঘুমাও নাই ? আমি ঘুমাই নাই ! -তুমি আমাকে কষ্ট দিলে কেন ? -আমি কষ্ট পাই নি বুঝি ! দোষ কিন্তু তোমার ছিল ! এবার দেখলাম নিশির মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে গেল ! পানি থেকে পা তুলে উঠে গেল ! হাটতে লাগলো কাশ বনের ভিতর দিয়ে ! আমি নিশির পিছন পিছন গেলাম ! -কোথাও যাও ? -যে খানে ইচ্ছা ! সব দোষ তো আমারই ! আমি তো দুষী মাইয়া ! নিশির কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম ! -আরে শুনো না ? -না ! শুনবো না ! -নিশি ! বাবু ! একটু শুনো ! দেখলাম আমাদের পাশ দিয়ে একটা পিচ্চি মত ছেলে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে । ছোটা বেলায় আমরা যেমন করে সাইকেল চালানো শিখতাম তেমন করে ! সাইকলেটা পিচ্চিটার তুলনায় একটু বড়ই ! নিশ্চই বিকেলে বেলা ঘুরে বেড়েচ্ছে । এখানে অবশ্য অনেকেই আসে বেড়াতে ! জায়গা টা সুন্দর ! নিশিকে দেখলাম কাশের ফুলে হাত দিয়ে হাটছে আপন মনে ! আমি পিচ্চি ছেলেটার কাছে গিয়ে বললাম -তোমার সাইকেল টা একটু ধার দিবে ? আমার কথা শুনে পিচ্ছিটা একটু সন্দেহর চোখে দেখছে ।

-কেন ? আমি নিশি কে দেখিয়ে বলল -ঐ মেয়েটাকে দেখছো না ? -হুম ! -মেয়েটা আমার উপর রাগ করেছে ! ওকে যদি সাইকেলে নিয়ে একটু ঘুরি তাহলে হয়তো একটু কাজ হতে পারে ! পিচ্চিটার বয়স খুব বেশি হলে ১০/১২ বছর হবে । নিশ্চই স্কুলে পড়ে ! এটুকুতো বোজারই কথা যে নিশির সাথে আমার কি সম্পর্ক ! পিচ্চিটা একটু কি যন ভালবো ! তারপর আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল -আইচ্ছা ! তয় ? বেশি দুরে যাইেবন না কিন্তু ! আমি সাইকেল নিয়ে নিশির পাশে হাজির হলাম ! প্রথমে আমাকে লক্ষ্য না করলেও একটু পরে যখন আমার দিকে তাকালো তখন নিশির চোখটা আনন্দে চকচক করে উঠলো ! -এটা কোথায় পেলে ? -কোথায় পেলাম সে তো জরুরী না ! তুমি চড়তে চাও ? -না ! আমি তো ........ -নিশি ! এমন কেন কর ? এই যে আমরা এতো দুর এলাম ! কেন এলাম ? বিকজ আই লাভ ইউ ! এটা তুমি নিজেও খুব ভাল করে জানো ! তাহলে তুমি কেন বার বার ঐ ঐ এক কথাটা বল ! যেটা আমি শুনতে পছন্দ করি না সেটা যদি বারবার আমার সামনে বল তাহলে আমার মেজাজটা গরম হবে না ? এটা বুঝতে হবে ! নিশি আমার কথায় চুপ করে শুনলো ! তারপর কি যেন ভাবলো ! আমি বললাম -এখনও রাগ করে থাকবে ? -আচ্ছা ! আর বলব না ! -এই ভাল মেয়ে ! এখন এসো ! তোমাকে নিয়ে সাইকেলে চড়ি ! এর পর নিশিকে নিয়ে সাইকেলে চড়লাম ! -এই শুনো না ? -কি ! -বিয়ের পরে আমরা একটা সাইকেল কিনবো ! ঠিক আছে ? -ঠিক আছে ! -প্রতিদিন রাতে আমরা এই ভাবে ঘুরতে বের হব ! ঠিক আছে ? -হুম । ঠিক আছে ! -শুনো..... নিশি কথা বলতেই থাকে ! নিজের কথা । নিজের স্বপ্নের কথা ! আমার কথা ! আমাদের সামনের দিনের কথা ! হঠাৎ করেই আমার মন খারাপ হয় ! নিশি নিজের স্বপ্ন গুলো কি চমৎকার করেই না বলে যাচ্ছে কিন্তু যা কোন টাই হয়তো পুরন হবে না ! নাহ ! আমি এসব ভাবতে চাই না । সামনে কি হবে এটা এখান ভাববো না ।

এটাই আমাদের মাঝে কথা হয়েছিল । আমরা এখন কেমন আছি, এখান কেমন থাকবো এটাই কেবল ভাববো ! আর কিছু না ! আর কিছু না ! -এই ! নিশির কথায় আমি বাস্তবে ফিরে এলাম ! আমি বললাম -বল ! -তুমি আমার কথা শুনছো না ? -শুনছি তো ! -বল আমি সব শেষ কি বলেছি ! -আই লাভ ইউ ! -বলেছি ? -আই লাভ ইউ ! আমি একটু হাসলাম ! নিশিও হাসলো ! -পারো তো কেবল এটাই !! এই শুনো অনেক দুরে চলে এসেছি ! চল এখন ফিরে যাই ! বুঝেছ !! আমি সাইকেলটা ঘুরালাম ! নিশি আবারও নিজের স্বপ্ন গুলোর কথা বলতে শুরু করলো ! আমাদের স্বপ্নের কথা ! (একজন আমার উপর রাগ করে আছে ! জানি এই লেখাটা তার চোখে পরবে ! যদি তার রাগ করে তাহলে যে সে এখানে একটা কমা্ট করে যায়) Click This Link ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।