কুয়াশার মত জীবন আমার... এই আছি তো এই নাই !! বাসার বাইরে থাকি পড়াশুনার জন্য, পরিবার-পরিজন সেই কোথায় ফেলে রেখে এসে পরে আছি । সাথে করে ফেলে এসেছি ২ বেলা নিয়ম করে ভাত খাবার ব্যাপারটাকেও । এমনিতে ব্যাচেলর জীবন, খাওয়া দাওয়ার ঠিক-ঠিকানা নাই কিছু । সকালে বুয়া এসে দরজা ধাক্কায় ধাক্কায় চলে যায়, তবু আমরা ঘুম থেকে উঠে দরজাটা খুলতে পারিনা । আর রাতে বুয়া এসে দেখে বাজার নাই ।
তাই খাওয়া দাওয়া হয়না বলতে গেলেই চলে, যেটুকুও হয় সেটার স্বাদ এমন যে কোনমতে নিশ্বাস বন্ধ করে খাবারটুকু গিলতে হয় । তাই খাবার দাবার এর কথা মনে আনিই না, ওইসব ব্যাপার যত ভুলে থাকা যায় আর কি ।
সেই আমারই কি কপাল দেখেন, বিকাল এবং রাত ২ বেলা আমাকে আমার খাওয়া-দাওয়ার ফিরিস্তি দিতে হয় ! ২ বেলা নিয়ম করে আম্মু ফোন দিবে, এবং সর্বপ্রথম কথা, "ভাত খাইছ বাবা ?"
-"খাইছি আম্মু । "
-"কি দিয়ে খাইছ ?"
-"এইত, ডিমের তরকারি/আলুভাজি/আলুভর্তা(যে কোন একটা ভাজির নাম), ভাত আর ডাল । " (হঠাৎ-মটাৎ মুরগী) ।
অধিকাংশ দিনই মিথ্যা বলি । না খেয়েও বলি খাওয়া হইছে, বানায় বানায় বলি তরকারির নাম । এই মিথ্যাটুকু না বললে, আম্মু খুব কষ্ট পায় । আমি না খেয়ে আছি শুনলে, পারলে তিনিও না খেয়ে থাকেন আরকি ।
এইবার আসি আমার সেই 'ডার্ক ফ্যান্টাসি'তে ।
মজার ব্যাপারটা হল, যেই মুহূর্তে আম্মুকে বানায় বানায় তরকারির নাম বলতে থাকি সেই মুহূর্তে আমার ইচ্ছা করে আরও কিছু তরকারির নাম আম্মুকে বলি ।
-"হ্যালো, বাবা খাইছ ?"
-"খেতে বসছি আম্মু । "
-"কি দিয়ে খাচ্ছ ?"
-"টাকি মাছের ভর্তা, লাল শাক, নাপা শাকের শোলকা আর ডালের বড়া । ডালের বড়া ভাজা হচ্ছে, গরম গরম খাব তো । "
-"তাই নাকি, কে রান্না করছে এগুলা ?"
-"ক্যান আম্মু, তুমিই তো করছ ।
তোমার হাতের ছাড়া আমি আর কারও হাতে খাই এগুলা নাকি অন্য কেউ করে দেয় ?" বলতেই থাকি, "ওইতো তুমি প্লেটে করে ভেজে নিয়ে আসলা বড়াগুলো,দাও দাও জলদি দাও । "
-"উফ কি গরম রে বাবা !"
-"ফ্যান ছেড়ে দেই ?"
-"লাগবেনা আম্মু । "
-"টাকি মাছের ভর্তায় এত ঝাল দিছ ক্যান আম্মু ? বাপরে, মুখ গেল আমার !"
-"একটু ঝাল-ঝাল না হলে মজা লাগেনা । "
-"তাই বলে এত ঝাল দিতে হবে ? বাপরে, পানি পানি !! তুমি ইচ্ছা করে এত ঝাল দিছ তাইনা ? যাতে আমি খেতে না পারি ! তুমি তো চাওনা আমি খাই, সহ্য করতে পারনা । ”
-“একটু ডাল নাও, শুকনা শুকনা খাচ্ছ ।
”
-“পরে নিব, দেখি আর একটু মাছ ভর্তা দাও তো । ”
-“আজ রাতে কি দিয়ে ভাত আম্মু ?”
-“কি খাবা বল । ”
-“কাঁচা মরিচ-ধনিয়া পাতা দিয়ে আলু ভর্তা, মাংসের শুঁটকি ভর্তা কর । ”
-“শুধু এগুলা দিয়ে ভাত খাওয়া হবে ?”
-“আচ্ছা তাহলে মুগের ডাল কর । ”
হাঃ হাঃ হাঃ ! ভাবতেছেন এটা আবার কি ধরনের ‘ডার্ক ফ্যান্টাসি’, জীবনেও শুনি নাই ! ভাইরে, এইগুলাই আমার ‘ডার্ক ফ্যান্টাসি’ ।
আমি এই ফ্যান্টাসি গুলো থেকে দূরে থাকতে চাই, এইগুলা আমাকে কোন আনন্দ দেয়না বরং একটা কষ্ট দেয় । জিহ্বার কষ্ট ! আমি মোটামুটি রকম নিশ্চিত আম্মু যদি কোন রকমে আমার এই চিন্তা-ভাবনা গুলা জানতে পারে তাহলে আমার সুস্থ-সবল মা একটা ছোট-খাটো মাইল্ড স্ট্রোক করে ফেলতেই পারেন । আল্লাহ্র দোহাই লাগে, আপনারা পুরাই চুপ করে যাইয়েন । ভুলেও জানি আমার মায়ের কানে এইসব না যায় । তবে কারও যদি আম্মুর সাথে কোন কথা হয়, তাহলে আমার হয়ে একটু বলে দিয়েন যেন আমার কাছে ২ বেলা খাওয়া ফিরিস্তি না চায় ।
উফ !
উৎসর্গ পত্রঃ আমার সেই পরম মমতাময়ী মাকে, আমার আর আমার ছোট বোনের কাছে যিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মা ।
আমার কথাঃ আমি বুঝতেছি না, আমার চিন্তা-ভাবনা, লেখা, কথাবার্তা সব কিছুই দিনকে দিন খাওয়া দাওয়া কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে ক্যান ! অদ্ভুত, বড়ই অদ্ভুত !
যাই হোক, বরাবরের মত প্রুফ রিডিং দেওয়ার পরেও হয়ত বানান ভুল থেকেই গেল, কারও চোখে পরলে ধরিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।