পৃথিবী নামক রঙ্গমঞ্চে আমরা সবাই প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যাচ্ছি। যার অভিনয় যত ভালো হচ্ছে, সে তত সেরা হচ্ছে। বতমানে দেশে রয়েছে ৫২ টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে অল্প কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোর মান প্রশ্নবিদ্ধ। এই যখন অবস্থা, তখন দেশে আরো অর্ধশত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের অপেক্ষায়।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রেটিংয়ে টপ টেনে থাকা (কর্তৃপক্ষের মতে ৬ নাম্বার স্থান) ইস্টান ইউনিভাসিটির প্রকৃত অবস্থা জানলে বতমানে দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাল হকিকত কিছুটা হলেও জানা যাবে। তাই আসুন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃত অবস্থা সম্পকে জানি।
০১.
এটি একটি ইংলিশ মিডিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সব কাজ হয় বাংলাতে। যেমনঃ ক্লাশ লেকচার প্রিন্ট করে দেয়া হয় ইংরেজীতে কিন্তু সেগুলো ক্লাশে বুঝানো হয় বাংলাতে। অথচ কর্তর্পক্ষ শিক্ষদেরকে বলেছে ইংরেজিতেই ক্লাশ নিতে হবে।
এরই নাম বাংলাদেশি ইংলিশ মিডিয়াম !!!
০২.
প্রায় সাত হাজার ছাএ-ছাএীর জন্য কম্পিউটার আছে মাএ আশিটি। তাও সবসময় নেট থাকে না। আর থাকলেও কম স্পিড পাওয়া যায়। পাঁচ মেগাবাইটের একটা এম.এস ওয়াড কিংবা পাওয়ার পয়েন্টের ফাইল নামাতে কুড়ি মিনিটেরও বেশি সময় লাগে।
০৩.
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ডিন প্রফেসর ডঃ সাইদুর রহমান স্যার ৪ বছরের ছুটি নিয়ে এসেছেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ক্লাশ নিতে।
কিন্তু উনি বউয়ের, ছেলের অসুখ এবং মিটিংয়ের দোহাই দিয়ে ঠিকমত ক্লাশ নিতেন না। স্যারের ছুটি কয়েকদিনন আগে শেষ হলেও এখনও উনি রয়ে গেছেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতেই। এর মানে স্যার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাএ-ছাএীদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন।
০৪.
শ্রদ্ধেয় স্যার ডঃ মনিরুল ইসলাম, বুয়েটের সি.এস.সি. ডিপার্টমেন্টের ডিন। স্যার কম্পিউটার ভাল পড়ান তাতে কোন সন্ধেহ নেই।
স্যার সপ্তাহে দুইদিন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ক্লাশ নেন। বৃহঃবার এবং সোমবার। বৃহঃবার স্যারের সাপ্তাহিক ছুটি। আর সোমবার বুয়েটের ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে চলে আসেন। শ্রদ্ধেয় ডঃ মনিরুল ইসলাম স্যার নিজ মুখে একথা স্বীকার করেছেন একথা।
যেদিন আসতে পারেন না, সেদিন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ক্লাশ হয় না।
এর মানে বুয়েট এবং ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাএ-ছাএীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছ্বে।
০৫.
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র লেকচারার শিলা ফারহানা ম্যাডাম এখন সিনিয়র লেকচারার পরিসংখ্যান বিভাগ। অবশ্য শিক্ষক সংকট থাকলে সবই সম্বভ হয়। শ্রদ্ধেয় ম্যাডাম সিনিয়র লেকচারার পরিসংখ্যান হতে চাননি।
কেননা উনি পরিসংখ্যান পারেন না। কতপক্ষ জোর করে তাকে পদ দিয়ে দিয়েছে। প্রথম ক্লাশেই শ্রদ্ধেয় ম্যাডাম একথা স্বীকার করেছেন। আর পরিসংখ্যান পারেন না বলে, উনার ক্লাশের বেশিরভাগ ছাএ-ছাএী ফেল করেছেন। অবশ্য এতে মালিপক্ষ লাভবান হয়ছে।
তারা কোর্স রিটেইক ফি পাবে।
০৬.
লেকচারার ফাতিমা সাত্তার, ঢাবি থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করেছেন। অথনীতি চমৎকার পড়ান। কিন্তু কতপক্ষ তাকে নিয়মিত অথনীতি কোস না দিয়ে তাকে দিয়ে নিয়মিত নেয়াচ্ছেন বাংলাদেশ স্টাডিজ কোস। যেই কোসের বেশিরভাগ জুড়েই রয়েছে ইতিহাস এবং সংবিধান।
অর্থনীতির টিচার ইতিহাস এবং সংবিধান পড়ান মানা যায় ? যদি শুদ্ধ পড়াতেন তাও একটা কথা ছিল। বাংলায় সম্রাটদের শাষনামল এবং সংবিধানের সংশোধনীগুলো ভুল পড়িয়েছেন। যেটা ইতিহাস বিকৃত করা এবং সংবিধান অবমাননার শামিল। এক ছাএ তার ভূল ধরাতে তিনি তাকে বলেছেন- এত ডিটেইল পড়ার দরকার নেই। পরীক্ষায় এত ডিটেইল আসবে না।
০৭.
এ্যাডভাঞ্চ ইংলিশ নামে বি.বি.এ. ডিপার্টমেন্টে একটি কোস করানো থার্ড সেমিস্টারের দিকে। এই কোসে পড়ানো হয় বিজনেস মেমোরেন্ডাম। কোম্পানি প্রোফাইল সহ বিজনেস রিলেটেড বিষয়। কোসের নামের সাথে ইংলিশ কথাটা থাকায় এই কোসের ক্লাস নেন ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের টিচাররা। আজকাল ইংরেজী সাহিত্যের পন্ডিতেরা বিজনেস ভালই পড়ান দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য তাদের এই প্রতিভার মূলে রয়েছে মাননীয় মহামান্য কর্তৃপক্ষ।
০৮.
হিসাব বিজ্ঞানের উপর কোস আছে বেশ কিছু। সেই সাথে আছে বি.বি.এ তে মেজর করার ব্যবস্থাও। কিন্তু ফুল টাইম শিক্ষক আছে মাএ একজন। এই একজন দিয়ে ক্লাশ চালানো যায় না।
তাই পার্ট টাইম শিক্ষক (যাদের বেশিরভাগ নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে আসেন) দিয়ে ক্লাস চালানো হয়।
০৯.
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীতে ঢুকলেই মন জুড়িয়ে যাবে। মনে হবে, কত প্রাচুযে ভরপুর উন্নত লাইব্রেরী। কিন্ত না ! এটা ভাববেন না। কারন
(ক) প্রতি সেমিস্টারে বিজনেস ম্যাথ নেয় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন ছাএ-ছাএী।
আর তাদের জন্য বই রয়েছে মাএ ২ টি।
(খ) ওর্য়াল্ড সিভিলাইজেইশন নামের কোসের জন্য কোন বই নেই। অথচ টিচাররা বই রেফার করেছেন।
(গ) লাইব্রেরীর সামনে ফিলিফ কটলার, হেনরি ফেওল এবং লাইব্রেরীর ভীতরে দেশের বিখ্যাত কবি ও লেখকদের ফটো থাকলেও তাদের কোন বই লাইব্রেরীতে নেই।
(ঘ) জার্নাল ( দানসূএে পাওয়া) যেগুলো আছে সেগুলো বেশ পুরাতন।
নতুন কোন জার্নল নেই।
১০.
এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে বেশকিছু পানির ফিল্টার কিন্তু পানি খাবার কোন গ্লাস নাই। এমনকি পাঁচটি ভবনের পাঁচটি ক্যান্টিনেও নেই কোন গ্লাস। পানি খেতে হলে ফিল্টার ছেড়ে কলের নিচে হা করে থাকতে হয়।
১১.
মাঝে মাঝে দেখি তরুন তরুনীরা বিভিন্ন অসামাজিক কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিএতা নস্ট করছে।
অবশ্য এটা সম্ভব হয়েছে ক্যন্টিনের পাশে অফিস স্টাফদের থাকার জন্য রুম বরাদ্ধ এবং চিপাচাপা জায়গা বেশি করার জন্যে।
১২.
এছাড়াও স্টুডেন্ট ক্যান্টিনে চলে সিনিয়র ভাই এবং টিচার ক্যান্টিনে চলে টিচারদের অনবরত ধুমপান। যার পাশেই রয়েছে লাইব্রেরী এবং ক্লাশরুম।
এসব নিয়ত্রনে নেই কোন ব্যবস্থা। এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোন সি.সি.টিভি. ক্যামেরা।
১৩.
উন্নয়ন ফি নামে প্রতি সেমিস্টারে (৪ মাসে সেমিস্টার) নেয়া হয় প্রতিজন ছাএ-ছাএী কাছ থেকে ২০০০ টাকা করে। উন্নয়ন বলতে যা হয়, সেটা হল- মনিষীদের ছবি লাগানো এবং দেয়ালে রং করা ও ট্যাটু লাগানো। মোদ্দা কথায় লেফাফা দুরুস্তি !!
১৪.
সেমিস্টারের রেজাল্টের উপর টিউশান ফি ছাড়ের লোভ দেখিয়ে ছাএ-ছাএী ভতি করা হলেও টিচারদেরকে বলে দেয়া হয় ভালো গ্রেড না দিতে। যাতে ছাএ-ছাএীরা টিউশান ফি ছাড় না পায়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক শিক্ষক একথা জানিয়েছেন।
১৫.
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে কোন ফুল টাইম ভি.সি., প্রো-ভি.সি. এবং বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে ডিন নেই। প্রফেসর ডঃ নুরুল ইসলাম, ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, উনাকে ভি.সি. করা হয়েছে। উনি ভি.সি হলেও নিয়মিত ক্লাশ নিচ্ছেন এবং এ্যাকাডেমিক (ফ্যাকাল্টির) সব কাজ করছেন। তো উনাকে কী ইংলিশ ডিপাটমেন্টের টিচার বলব ? নাকি ভি.সি বলব ? নাকি ডিপার্টমেন্টের এ্যাডভাইজার বলব ?
ডঃ সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া, প্রোফেসর, বিজনেস ফ্যাকাল্টি। স্যার বিজনেস ফ্যাকাল্টির চমৎকার একজন অধ্যাপক হলেও নিয়মিত ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি’র দায়িত্ব পালন করছেন।
এখানেই শেষ নয়। শ্রদ্ধেয় স্যার এ্যাকাডেমিক (ফ্যাকাল্টির) সব কাজ করছেন। শ্রদ্ধেয় স্যারকে কী বিজনেস ফ্যাকাল্টি শিক্ষক বলব ? নাকি প্রো-ভি.সি. বলব ? নাকি ডিপার্টমেন্টের এ্যাডভাইজার বলব ?
একজন ব্যক্তি এতগুলো দায়িত্ব পালন করেন কীভাবে ? উনারা কী সুপার হিউম্যান ? না। উনারা সুপার হিউমেন না। ক্লাশ ঠিকমত না নিয়ে এবং অনান্য দায়িত্ব ঠিকমত পালন না করে এতগুলো পদে একসাথে থাকা খুব সহজেই যায়।
অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কতপক্ষের পুঁজিবাদি কস্ট রেডিউচিং নীতির আশীবাদে এটা খুব সহজেই সম্বভ। প্রতি সেমিস্টারে টিউশন ফি বাড়ানো সত্ত্বেও শিক্ষকদের বেতন যখন বাড়ে না এবং অনেক মাসের বেতন যখন আটকে থাকে তখন জীবন ও জীবিকার তাগিদে শিক্ষকরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। ফলে নিয়মিত টিউশন ফি দেয়া সত্তেও (কোন ছাএ-ছাএী কোন বকেয়া রেখে পরীক্ষায় বসতে পারে না) মানসম্মত শিক্ষকের জন্য ছাএ-ছাএীদের আতনাদ মালিকপক্ষের কাছে পৌছায় না। কেননা রাজনীতির দোহাই দিয়ে স্টুডেন্ট কাউঞ্চিল নিষিদ্ধ এখানে। আর যদি দুই একজন সাহসী ছাএ-ছাএী আবেদন জানায় কোন সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের কথা আমলে নেয়া হয় না।
কেননা কতৃপক্ষ খুব ভালো করেই জানে এরা অসংঘবদ্ধ। এদের কিছু করার সামথ নেই। যে কারনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রেটিংয়ে টপ টেনে থাকা ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষাথীরা মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছে না। ইস্টান ইউনিভাসিটির মত রয়েছে আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। এই অবস্থায় সরকার এবং ইউ.জি.সি’র উচিৎ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দিয়ে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নিশ্চিত করা।
এই পোস্ট স্টিকি করে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করা হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।