মনের মহাজন খুঁজে ফিরি....
ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়া ১৪ নারীসহ জীবিত ৬৮ জনকে ভাষাসৈনিক হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে একটি তালিকা করেছে সরকার। ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পর এই তালিকা করা হলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম পর্যায়ে ৬৮ জনের তালিকাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ভাষাসৈনিকের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে।
হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত একটি কমিটি যাচাই-বাছাই করে এই তালিকা চূড়ান্ত করে।
গত রোববার তালিকাটি আদালতে জমা দেওয়া হয়। একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট ভাষাসৈনিকদের তালিকা তৈরি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে একটি গ্রন্থাগার ও ভাষা জাদুঘর নির্মাণসহ কয়েক দফা নির্দেশনা দেন। এর আলোকে গত বছরের ২০ জানুয়ারি আন্তমন্ত্রণালয় সভায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির আহ্বায়ক এবং একুশের চেতনা পরিষদের সভাপতি আহমদ রফিক প্রথম আলোকে বলেন, এই তালিকা আংশিক। আগামী বছর ২১ ফেব্রুয়ারির আগে জীবিত ও প্রয়াত ভাষাসৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আহমদ রফিক বলেন, এ পর্যন্ত জীবিত ১১২ ও প্রয়াত প্রায় ১০০ জন ভাষাসৈনিকের নাম পাওয়া গেছে। তাঁর ধারণা, ভাষাসৈনিকদের তালিকায় ৫০০-এর কাছাকাছি নাম হবে।
ওই কমিটির তিন সদস্য হলেন নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলাম, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, এই তালিকা প্রণয়নে মন্ত্রণালয়ের সেই অর্থে কোনো ভূমিকা নেই। আদালতের নির্দেশে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় গঠিত চার সদস্যের কমিটি যাচাই-বাছাই করে যে তালিকা মন্ত্রণালয়ের কাছে দেবে, তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
যেভাবে তালিকা তৈরি
কমিটির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ভাষা আন্দোলনে যাঁরা মিছিল করেছেন তাঁদের তালিকা ধরলে ভাষাসৈনিকের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই মূলত দুটি বিষয় মাথায় রেখে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। একটি হচ্ছে, যাঁরা ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন, অর্থাৎ যাঁরা ভাষা সংগঠক। অপরটি হচ্ছে, ভাষা আন্দোলনের কারণে যাঁরা কারাবরণ করেছেন।
কমিটির আহ্বায়ক আহমদ রফিক বলেন, এ ধরনের তালিকা তৈরির জন্য যতটা সময় ও শ্রম দেওয়া দরকার, তা হয়ে ওঠেনি।
তা ছাড়া ষাট বছর পর এ ধরনের তথ্য পাওয়াও কঠিন। শুধু লেখার ওপর কমিটি নির্ভর করতে চায় না। আবার তথ্য দেওয়ার মতো লোক অনেক এলাকায় নেই। এ জন্য প্রথম দফায় আংশিক তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা ও পুরোনো বড় জেলাগুলো থেকে আরও দুই শতাধিক নাম সংগ্রহ হয়েছে, এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।
২৩ ও ২৪ মার্চ ভাষাসংগ্রামী সম্মেলনে জীবিত ও প্রয়াত ২০০ ভাষাসৈনিকের নাম প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
জেলা কমিটি গঠন হয়নি: আদালত ভাষাসৈনিকদের নামের তালিকা প্রকাশের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সূত্র জানায়, জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করতে আদালতের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৬০ বছর পর জেলা কমিটি গঠন করে ভাষাসৈনিকদের খুঁজতে গেলে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে একটি গ্রন্থাগারসহ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা এবং ওই জাদুঘরে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসমৃদ্ধ তথ্যপঞ্জিকা রাখার নির্দেশনা ছিল।
এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, শহীদ মিনারের কাছে বাংলা একাডেমীতে ভাষা জাদুঘর রয়েছে। শহীদ মিনারের কাছে জায়গার সংকট আছে। এমতাবস্থায় শহীদ মিনার এলাকায় নতুন জাদুঘর না করে বাংলা একাডেমীর জাদুঘরটি যথাযথ তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করার বিষয়ে হাইকোর্টের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
ভাষাসৈনিকদের তালিকা
প্রথম দফায় প্রকাশিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন: রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আবদুল মতিন, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অলি আহাদ, রওশন আরা বাচ্চু, ডা. শরফুদ্দিন আহমদ, শিল্পী ইমদাদ হোসেন, শিল্পী মুর্তজা বশীর, ড. সুফিয়া আহমেদ, ড. হালিমা খাতুন, গোলাম আরিফ টিপু, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, আবুল মাল আবদুল মুহিত, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক অজয় রায়, আহমদ রফিক, বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, সন্জীদা খাতুন, কামাল লোহানী, সাঈদ হায়দার, দেবপ্রিয় বড়ুয়া (ডিপি বড়ুয়া), ড. ফারুক আজিজ খান, এম মুজিবুল হক, সাঈদউদ্দিন আহম্মদ, জিয়াদ আলী, সমীরউদ্দীন আহমদ, তোফাজ্জল হোসেন, খালেদা ফেন্সী খানম, জহরত আরা খানম, বাহাউদ্দিন চৌধুরী, শিল্পী আমিনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন আকুঞ্জী, আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, আবুল হোসেন, সাইফুল ইসলাম (পাবনা), রণেশ মৈত্র (পাবনা), মমতাজউদ্দীন আহমেদ (রাজশাহী), নাদেরা বেগম, প্রতিভা মুৎসুদ্দি, বেগম চেমন আরা, আবদুল গফুর, খোদাদাদ খান, নুরুল হক ভূঁইয়া, সৈয়দ ফজলে আলী, আবদুল লতিফ, মোতাহার হোসেন সুফি (রংপুর), কার্জন আলী (গাইবান্ধা), প্রাণেশ সমাদ্দার (ঢাকা) ডা. আলী আছগর (ঢাকা), শাহ তফাজ্জল হোসেন প্রধান (ঢাকা), শাহ তবিবুর রহমান প্রধান (রংপুর), এ কে এম আজহারউদ্দিন (বরিশাল), আনিসুল হক পেয়ারা (রংপুর), নিলুফার আহমদ ডলি (রংপুর, বর্তমানে ঢাকায়), রওশন জাহান হোসেন (ঢাকা), রওশন আরা চৌধুরী (ঢাকা), ড. জাহানারা বেগম (রাজশাহী, বর্তমানে ঢাকায়), হাসান ইমাম টুলু (গাইবান্ধা), শাহ আবদুর রাজ্জাক (রংপুর), ডা. এম ইসলাম (ঢাকা), চৌধুরী হারুনুর রশীদ (চট্টগ্রাম), এ কে এম রফিকুল্লাহ চৌধুরী (চট্টগ্রাম), একরামুল হক (রাজশাহী), অধ্যাপক আবুল কাসেম, শাহেদ আলী, মমতাজ বেগম (নারায়ণগঞ্জ)।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।