বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।
এটি আমার ৩০০ তম পোষ্ট। লেখাটি উৎসর্গ করলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদ এবং জীবিত সকল ভাষাসৈনিকদের প্রতি।
আমার ভাই এর রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু
গড়া এ ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।
আমার সোনার দেশের রক্তে
রাঙানো ফেব্রুয়ারী
আমার ভাই এর রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।
।
ডাউনলোড লিংক
গানটি যখনই শুনি, রক্তের মধ্যে একটা অদ্ভূত আলোড়ন অনুভব করি। একুশে ফেব্রুয়ারীতে ভাষা শহীদদের যে আত্মদান, সেটি আসলেই ভোলার নয়। শহীদদের সেই ত্যাগের মাহাত্বও ব্যাপক। উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার পশ্চিম পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রসহ দেশের আপামর জনসাধারণ যেভাবে নিজেদের জীবন বাজি রেখে ১৯৫২ সালে সংগ্রাম করেছিলেন, তার ফলশ্রুতিতেই আমরা আজ এই স্বাধীন দেশ পেয়েছি।
তাদের সেই সংগ্রামের ফলেই আজ আমরা বাংলায় কথা বলতে পারি, বাংলা নামের একটি বর্ণমালা পেয়েছি তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর সহ আরো বহু মানুষের বুকের তাজা রক্তে সেদিন রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাদের সেই সংগ্রামের কারণে বাংলাকে আমরা পেয়েছি, তা নাহলে হয়তো আজও আমাদের উর্দুতে কথা বলতে হতো।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে শহীদগণ যে কারণে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন, তার মূলে ছিল দেশাত্ববোধ, দেশকে সবার ওপরে স্থান দেয়া। “ যত ঝঞ্ছা-বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিই আসুক না কেন, দেশের স্বার্থই সর্বাগ্রে স্থান দিতে হবে ” – এই মূল মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের মত দেশের সূর্যসন্তানেরা প্রাণ দিয়েছিলেন, শুধুমাত্র দেশরক্ষার তাগিদে।
বাংলায় কথা বলার স্বীকৃতি পাবোনা, বাংলাকে পশ্চিমারা দমিয়ে রাখবে, এই পরিস্থিতি তাদের কাছে অকল্পনীয় ছিল, তাই তারা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। দেশের প্রতি, দেশের স্বার্থের প্রতি তাঁদের আত্নত্যাগ এর কথা চিন্তা করলে এখন নিজের প্রতি ঘৃণা হয়, আমরা কি পেরেছি তাঁদের সেই ত্যাগর মর্যাদা ধরে রাখতে? যে ভাষার জন্য সেদিন জানা-অজানা কত মানুষ শহীদ হলেন, বুকের তাজা রক্ত ঝরালেন, সেই ভাষাকে আমরা কতটুকু মূল্যায়ন করি? সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরেরা যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে কি তাঁরা ভাষার এই অবমূল্যায়ন দেখে কষ্ট পেতেন না? আমাদের মাঝে অনেকেই আজও অকারণে বিজাতীয় ভাষাতে কথা বলতেই বেশী পছন্দ করি। বাংলায় কথা বলা, বাংলায় লেখালেখি করা, বাংলায় ব্লগিং করাটাকে এখনও অনেকেই নিচু চোখে দেখেন। দুয়েকটি বাক্য ইংরেজীতে বলতে পারলেই নিজেদের তারা অনেক উচ্চস্তরের মানুষ বলে মনে করেন। আর যে বাংলা ভাষার জন্য আমাদের দেশে ’৫২তে রক্ত ঝরেছিল, সেই ভাষাকে উপযুক্ত সন্মান দেয়া তো দূরের কথা, ন্যুনতম শ্রদ্ধাও অনেকে দেখাতে চাননা, বাংলা যারা চর্চা করেন, তাদেরকে এইসব তথাকথিত আধুনিক মানুষেরা খ্যাত মনে করেন।
আমি বলছিনা যে ইংরেজী জানার দরকার নেই, যেহেতু ইংরেজী পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ভাষা, তাই ইংরেজী শেখার এবং চর্চার অবশ্যই দরকার আছে, সেটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু তাই বলে কি বাংলা ভাষাকে অমর্যাদা করতে হবে? বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রেখেও তো ইংরেজী চর্চা করা যায়। তথাকথিত আধুনিকতার নিষ্পেষণে পড়ে বাংলা তার মর্যাদা হারাতে বসেছে, এই পরিস্থিতি যদি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরেরা আজ দেখতে পেতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তারা ভাবতেন, এইজন্যই কি আমরা শহীদ হয়েছিলাম, বুকের তাজা রক্ত বিসর্জন দিয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম?
আজ সময় এসেছে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার, নিজেদের প্রশ্ন করার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।