মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত। আপনার সন্তানের নাম বাংলায় রাখুন—আব্দুস শহীদ
একুশে ফেব্রুয়ারী এলেই একজন পাতলা ছিপছিপে মাঝারী গড়নের লালচে-ফর্সা বৃদ্ধলোক, কাধে ঝোলানো চটের ব্যাগ, চোখ-মুখে অব্যক্ত প্রতিচ্ছবি_তিনি ধীরে ধীরে হাটছেন আর সবাইকে এক টুকরা কাগজ ধরিয়ে দিচ্ছেন। সেই কাগজ টুকরা প্রায় সকলেই নিতেন। এভাবে সমস্ত দিন পার করে দিতেন। অসংখ্য মানুষকে দিতেন।
কাগজ টুকরায় ছিল মারা অক্ষরে লেখা থাকতো “আপনার সন্তানের নাম বাংলায় রাখুন”।
“শহীদ ভাইয়ের সহধর্মিনী শংকর সাওজালকে বলেছিলেন, প্রতি বছর বইমেলায় তিনি একাগজগুলো দিতেন। ২০ ফেব্রুয়ারী রাতে বাসায় বসে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সারারাত ধরে কাগজে সিল মেরে ব্যাগে নিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারী খুব ভোরে বেড়িয়ে পড়তেন। ওই কাগজগুলো বিলি করে রাতে বাসায় ফিরতেন”।
(তথ্যসূত্রঃ সরদার ফজলুল করিম ও শংকর সাওজালের সাথে কথোপকথন)
বিপ্লবী আবদুশ শহীদ
বিপ্লবী লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ ও শোষিত মানুষের আধিকার আদায়ের লড়াকু যোদ্ধা আবদুশ শহীদের জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে কারাগারে ও আত্মগোপনে।
আজীবন সংগ্রামী এই মানুষটি সারাজীবন মানুষের মুক্তির সংগামে নিবেদিত ছিলেন।
আবদুশ শহীদ বরিশালের চাখারের পার্শ্ববর্তী গ্রাম বলহারে ১৯১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুনশী মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন, মা কাজী হামিদা। তিনি কিশোর বয়সে শর্ষীনা মাদ্রাসার ধর্মীয় শিক্ষা শুরু করলেও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হন এবং ১৯৪৪ সালে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রবস্থাতেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
সে সময় পূর্ববঙ্গে হাতেগোনা স্বল্পসংখ্যক মুসলমানের মধ্যে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। তাই তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক তাকে কলকাতা পোর্টের প্রথম শ্রেণীর অফিসারের চাকুরি দেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচুতির আশঙ্কায় দলের নির্দেশে তিনি সহজেই নিশ্চিত সচ্ছল প্রতিষ্ঠিত ধারা না গ্রহণ করে কঠোর নির্মম পথে জীবনযাপন শুরু করেন। ফলে তার নিজের ও পরিবারকে সহায়-সম্বলহীন জীবন কাটাতে হয়। অন্যদিকে শুরু হয় জেল-জুলুম-হুলিয়া।
বিভিন্ন আন্দোলনে সংগঠকের ভূমিকা পালন ও কমিউনিস্ট পার্টিকে সংগঠিত করার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল খাপড়া ওয়ার্ডে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
তিনি কর্মজীবনে দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা ও শিক্ষা প্রসারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬১-৬৩ পর্যন্ত তিনি বিক্রমপুরের ষোলঘর এ.কে.এস.কে উচ্চ বিদ্যালয়, রুসদী উচ্চ বিদ্যালয় ও কনকসার জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সাংবাদিকতার পেশাতেও তিনি দীর্ঘ সময় নিয়োজিত ছিলেন।
‘কীর্তনখোলা’ নামে একটি পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করতেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে আছে ‘কারা স্মৃতি’, ‘আত্মকথা’, ‘খাপড়া ওয়ার্ডের সেই রক্তলাল দিনগুলি’, ‘মেকং থেকে মেঘনা’।
১৯৯৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।