র্যান্ডি পশ (১৯৬০-২০০৮) যুক্তরাষ্ট্রের পেনিসিলভানিয়ায় অবস্থিত কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির ‘কম্পিউটার সায়েন্স’ বিষয়ের অধ্যাপক ছিলেন। অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত অবস্থায় ২০০৭ সালে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দ্য লাস্ট লেকচার’ শীর্ষক বড় একটি বক্তৃতা দেন, যা পরবর্তী সময়ে বই আকারে প্রকাশিত হয় এবং নিউইয়র্ক টাইমস-এ বইটি বেস্ট সেলার হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
এই মঞ্চে এভাবে আসতে পারাটা আসলেই অসাধারণ। উপস্থাপক অবশ্য যা বলে যায়নি তা হলো এই বক্তৃতা সিরিজে আজকের বক্তৃতাই আমার শেষ বক্তৃতা। মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো কিছু বলতে পারার সুযোগকে তুমি কী বলবে আর? তোমাদের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকো, যে পুরোনো ইতিহাস জানো না কিংবা ভাবছ, কী হচ্ছে এখানে, তাদের জন্য বলে দিই, আমার সিটি স্ক্যান দেখলে আমার যকৃতে ১০টা টিউমার ধরা পড়েছে এবং চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন আমার সুস্থতার আয়ু আর মাত্র তিন থেকে ছয় মাস।
সুতরাং এই হচ্ছে কথা।
আমি আসলে খুবই দুঃখিত তোমাদের হতাশ করার জন্য। কারণ, বিষণ্ন কিংবা মনমরা একটা চেহারা নিয়ে আমি এখানে আসিনি, যা হয়তো স্বাভাবিক ছিল। এমনটা কিন্তু নয় যে আমি বুঝতে পারছি না আমার সঙ্গে কী ঘটতে যাচ্ছে। তো আমরা আজকে কী নিয়ে কথা বলব? আমি অবশ্য আর ক্যানসার-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বাড়াব না, অনেক হয়েছে।
আমি নিজেও আগ্রহী নই। আমরা এমন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলব না, যা আমার শৈশবে দেখা স্বপ্নগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
কী ছিল আমাদের সেই ছোটবেলার স্বপ্নগুলো? আমার তালিকার সঙ্গে তোমরা একমত নাও হতে পারো। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির শূন্যের কোঠায় আটকে থাকা অসম্ভব কিছু মনে হতে পারে তোমাদের। আমার স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলা, এনসাইক্লোপিডিয়ায় প্রবন্ধ লেখা, ক্যাপ্টেন ক্রিকের মতো হয়ে যাওয়া।
আমি খুব চেয়েছিলাম, বিনোদন পার্কের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটা হাতে পেতে। চেয়েছিলাম ডিজনির সঙ্গে কল্পনার কারিগর হতে। কোনোটিরই তেমন সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্নকে লালন করা। আমি কখনোই তেমন কোনো মহাকাশচারী হতে চাই না।
আমার অবশ্য চশমা ছিল অনেক পাওয়ারের! মহাকাশচারীরা কিন্তু চশমা পরে না। আমি তাই কোনো মহাকাশযানকেও পেতে চাই না। চেয়েছিলাম বিশাল এ মহাশূন্যে ভাসতে।
সবগুলো স্বপ্ন কীভাবে যেন ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল নাসার একজন মহাকাশচারী থেকে কল্পনার কারিগর হতে চাওয়ার স্বপ্ন পর্যন্ত। আমি আমার সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করতে করতেই শিখেছি যে স্বপ্ন পূরণের এই ইটের দেয়ালগুলো থাকারও একটি কারণ আছে।
বাধা দেওয়ার জন্যই কেবল দেয়ালগুলো গড়ে ওঠে না। আমরা কতটা দৃঢ় ও আন্তরিকভাবে স্বপ্নপূরণের জন্য এগিয়ে যাই, সেটা পরখ করতেই দেয়ালগুলো বাধা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর তাদের জন্য, যারা স্বপ্নপূরণের জন্য সেভাবে আগ্রহী নয়।
জাতীয় দলে ফুটবল খেলতে চাওয়ার স্বপ্ন আমার পূরণ হয়নি। কিন্তু সেই স্বপ্ন দেখে আমি আরও বড় কিছু শিখেছি।
এবং সেই স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে আরও কিছু অর্জনের স্বপ্ন আমার তৈরি হয়েছে। কখনো এমন হয় যে তুমি কোথাও খারাপ কিছু করছ এবং তোমাকে বলার মতো কেউ সেখানে গ্রাহ্য করছে না। বুঝতে হবে তুমি খুব খারাপ একটি জায়গায় কাজ করছ। কারণ, তোমার সমালোচকেরা তোমার ত্রুটি প্রকাশের পাশাপাশি জানিয়ে দেয়, তারা তোমাকে কতটা ভালোবাসে এবং খেয়াল রাখে। আমি একটা জিনিস খুব মনে করি, ‘হেড ফেক’ কিংবা ঘোরালো বা পরোক্ষভাবে শেখা বা আমাদের জীবনে খুব জরুরি।
ফুটবল খেলার মাঠে আমরা কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েদের শুধু খেলা শিখতে পাঠাই না। আমরা চাই, তারা দলের মধ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করা শিখুক, খেলায় দক্ষতা এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে অধ্যবসায় শিখুক।
‘এলিস’ নামে আমাদের একটা প্রজেক্ট ছিল, যা নিয়ে আমরা অনেক দিন হলো কাজ করেছি। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার একটি অসাধারণ কৌশল এটি। ‘হেড ফেক’-এর কথা এখানে আবারও বলতে চাই।
কারণ, কাউকে কিছু শেখানোর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পথ হলো তাকে এমনভাবে সেটি শেখানো, যাতে তার মনে হয়, আসলে সে অন্য কিছু শিখেছে। ‘এলিস’-এর মধ্য দিয়ে শিশুরা আসলে ছবি বা ‘গেমস’ বানানো শিখছিল না, শিখছিল প্রোগ্রামিং। ‘এলিসে’র নতুন ভার্সনটা আরও অভিনব, আমি সেখানে যা দেখছি তা হলো লাখ লাখ শিশু খেলার আনন্দের মধ্য দিয়ে খুব কঠিন কিছু শিখছে।
বিশ্বস্ততার সামনে থাকে দুটি পথ। বেছে নিতে হবে তোমাকে।
কখনোই হতাশ হোয়ো না। হাল ছেড়ো না। মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাও তোমার আন্তরিকতা ও সত্যবাদিতা দিয়ে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, অযথা নালিশ কোরো না জীবনের কাছে, সমাজের ব্যবস্থা নিয়ে। নিজেকে নিয়ে।
প্রাণপণ পরিশ্রম করে যাও স্বপ্নপূরণের পথে। অন্যের সবচেয়ে ভালো গুণটি খুঁজে বের করো। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যার সবটাই অমঙ্গলজনক। প্রত্যেকেরই ভালো ও খারাপ দিক আছে। তাই তার ভালো দিকটি বের হয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করো।
প্রস্তুত হও আজই। সেখানেই ভাগ্য ফিরে যায়, যেখানে তোমার প্রস্তুতি আর জীবনে পাওয়া সুযোগ এক হয়ে গেছে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
বিস্তারিত জানতে হলে
Click Here ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।