আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনের দাম কত?

বাংলাদেশে একজন মানুষের জীবনের দাম কত? এই প্রশ্নের উত্তরটা অবশ্য একটু কঠিন। কারন এটা নির্ভর করে কি ধরণের মানুষের কথা বলা হচ্ছে। যদি হয় বুর্জুয়া শেণীর তবে তার দাম অনেক বেশী। কত বেশী সেটা বলে শেষ করা যাবেনা। আর একজন সাধারণ মানুষের জীবনের কথা বলতে গেলে বলাই বাহুল্য।

কারন এর আসলে কোন দামই নাই। আর যদি হয়েও থাকে তবে না হয় বেশী হলে দুইটা ছাগলের দাম হবে। এর বেশীতো আশাই করা যায় না। আর যদি কপাল খুব ভাল হয় চাঞ্চল্যকর কোন ঘটনার সাথে জড়িত থেকে জীবন যায় তার দাম না হয় আরেকটু বেশী হতে পারে। এই ধরেন বিশ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা।

আসলে কত জনের দাম দিবে, মরেোতো শত শত। ওদেরকে সংখ্যায় গোণা হয়। কারণ ওরা গরীব মানুষ। পঙ্গ পালের মত জন্ম হয় আবার মরেও সেই ভাবে। কে এদের খোঁজ খবর রাখবে।

কার এ বা তাতে এত মাথা ব্যাথা। কিন্তু আমার আপনার কাছে হয়তবা ওদের কোন মূল্য নেই। কিন্তু কারো কাছেই কি ওদের কোন মূল্য নেই? না তা ঠিক না। কারো কাছে ওরাই সব। কেনই বা হবে না।

আপনার কাছে আপনার মা বাবা ভাই বোন স্ত্রী সন্তান সন্ততি যেমন। সবার কাছেই তো তেমন হওয়াটাই স্বাভাবিক, তাই না। হবে না কেন, সবাই রক্তমাংসে গড়া মানুষ, সবাই ক্ষুধা লাগলে খেতে চাই, আনন্দ লাগলে হাসে, কষ্ট পেলে কান্না করে। শারীরিক প্রক্রিয়া সবারই একই রকম। তবে প্রশ্ন হল আজকে ঢাকার অদূরে আশুলীয়ায় নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশানে যে হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল, তারপরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ঘোষণা করতে শোনা গেল খুবই নিয়মমাফিক কিছু কথা।

উনি বললেন মৃতদের সবার জন্য এক লাখ টাকা (ওরে বাপরে বাপ, এত টাকা) ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে, শোঁকসন্তপ্ত পরিবারের সবার জন্য সমবেদনা ঘোষণা করা হল। শুধু তাই না আরো আছে, যারা এখনও বেঁচে আছে তাদের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করারও ঘোষণা দিলেন। আর কিই বা আশা করা যেতে পারে। সাথে আছে এক দিন ছুটির ব্যাবস্থাও। যারা মরে গেছেন তাদের এই ছুটি দিয়ে কি হবে।

কিংবা তাদের পরিবারেরই বা কি হবে। কবি নজরুলের সম্ভবত একটা গান আছে এই রকম, জীবনে যারে তুমি দাওনি মালা মরণে কেন তারে দিতে চাও ফুল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেঁচে থাকতে একবারও ওদের খবর রেখেছিলেন, তবে মরার পরে এখন এত মায়া কান্না দেখিয়ে লাভ কি?? একবার ভাবুনতো আপনার পরিবারের কোন সদস্য যদি এখানে থাকতো তবে আপনার কেমন লাগত? হায় হায় আমি এসব কি বলছি আপনার পরিবারের সদস্যদের ওখানে যাওয়া লাগবে কেন? তারা ব্যস্ত থাকবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে। ধরুন না এমন ও তো হতে পারতো কোন দৈব দুর্বিপাক কারণে ওই গার্মেন্টস এ চলেই গেল আর তখনই এইধরনের একটা ঘটনা ঘটে গেল। তখন আপনার কেমন লাগতো? আপনার পরিবারের মানুষজনের জন্য আপনার কেমন লাগে এখনো? এত বছর পরে জাতির জনকের বিচারের রায় কার্যকর হবার পর জাতি কলঙ্কমূক্ত হল।

খুব ভাল কথা। গতকাল গার্মেন্টস যা ঘটে গেল তাকে আপনি কি বলবেন? এটা কি কোন দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড। একবার ভাবুনতো আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষ গুলোর কথা। ওরা যখন দেখতেছিল আগুন ধেয়ে আসতেছে, চারদিকে পোড়া গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসতেছে। যে যার মত পারতেছে সেদিকে ছুটে যাচ্ছে জীবন বাঁচাতে।

চারদিকে হাহাকার, বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাদ করে মানুষ এদিক ওদিক করে ছুটে চলছে। এর মধ্যে দু এক জন ঘটনা টের পেয়ে দৌড়ে প্রাণ বাঁচাতে দিয়ে দেখে দরজা বন্ধ। দরজা ধরে জোরে কড়া নাড়তেছে জীবনের সব শক্তি এক করে। কিন্তু কি হবে এইসব করে। কে আছে শোনার মত।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা আছেন তারা কি আর এই মৃত্যু কূপের মধ্যে থাকেন নাকি। আর যারা মালিক পক্ষ তাদের কথা তো চিন্তাও করা যায় না। উনারা ব্যস্ত থাকেন কীভাবে আরও নতুন কোন অর্ডার পাওয়া যায়। কীভাবে আরো বেশী মুনাফা আদায় করা যায়। কীভাবে শ্রমিকের রক্ত ঝোঁকের মত আরও বেশী করে শোষণ করা যায়।

কার কথা বলব ঈশ্বর নিজেয়েই তো থাকেন ভদ্র পল্লীতে। শ্রমিকের ডাক শোনার এত সময় কোথায়? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি চিনেন না এইসব গার্মেন্টস এর মালিক কারা। কারা দিন দিন রুই কাতলা বনে যাচ্ছেন। কই আমি তো না চিনার কারণ দেখিনা। আপনার চারপাশেই তো দেখি সেই সব রাঘব বোয়ালরা সারাদিন ঘুরে বেরান।

একবার ও ভুলে কখনো বলেছিলেন, আপনারা যারা গার্মেন্টস এর ব্যবসা করে দেশের উদ্ধার করছেন, আপনাদের কারখানাটা কি ঠিক ভাবে বানানো হয়েছে। সেখানে কি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। শ্রমিকের বেতনটা কি ঠিক মত দেয়া হচ্ছে। মাসে ওদের কে কত টাকাই বা দেয়া হয়। যেই টাকা দেয়া হয় সেই টাকা দিয়ে কি ওরা আজকের বাজারে ঠিক মত চলতে পারে।

তিন বেলা কি ওদের পেতে ভাত ঝোটে। আমার মনে হয় না কোন দিন কোন কর্তা ব্যক্তি এই অবান্তর প্রশ্ন করেছিল কোন গার্মেন্টস মালিক কে। তাহলে গার্মেন্টস মালিকদের ই বা কি এত ঠেকা পড়ছে। ওদের কি আর শমিকের অভাব পরছে নাকি। ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না।

এক জন না আসলে আরেক জন আসবে কাজ করতে। এইযে গত কালকে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে তার জন্য কি কোন কারখানাতে কাজ বন্ধ থাকবে। না কক্ষণও না। কিছুদিন হয়তবা মিডিয়াতে লেখালেখি হবে। টেলিভিশন এ ফলাও করে খবর আসবে।

কিছুদিন পরে আবার সবাই ভুলে যাবে। তবে কি আমরা আরেকটা ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকব। আরেকবার দুঃখ প্রকাশ করব। আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে আবার মৃতের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করবেন। আবারো বাতেশে লাশের গন্ধ বের হবে অন্য কোন কারখানা থেকে।

না তা হতে পারেনা। তা হতে দেয়া যায় না। এভাবে চলতে পারেনা। আমি এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। আর এমন ব্যবস্থা নেয়া হোক যাতে সামনে আর কোন দিন এমন ঘটনা না হয় কিংবা যাতে এই ধরণের ঘটনা সর্বনিম্ন পরযায়ে কমানো যায়।

আমি এই ঘটনায় নিহতদের সবার আত্মার জন্য মাগফেরাত কামনা করছি। আহতদের চিকিৎসার জন্য সুব্যবস্থার দাবি জানায়। আর শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য সমবেদনা জানানোর ভাষা আমার জানা নাই। আমাকে ক্ষমা করবেন। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.