আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সাতকাহন : ঢাবি জীবনের ইতিকথা

জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ মৃত্যুই সেখানে শেষ কথা নয়। শোনা কথা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০% নাকি ঝরে পড়ে। আজ আমার ব্লগ তাদের নিয়েই শুধু নয় বরং ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত সকলকে নিয়ে যারা নিজের অজান্তেই নষ্ট করে অমূল্য শিক্ষাবর্ষ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে , কেড়ে নেয় অনেক মেধাবীর সুযোগ। আমি এই বয়সটাকে নামকরণ করি নষ্ট হবার বয়স। আমার চোখের সামনে অনেকে ঝরে পড়েছে।

তাদের নাম নিব না কিন্তু কারন গুলো অবশ্যই জানাতে চাই সকলকে। তুমুল প্রতিযোগীতার মধ্যদিয়ে ছেলে মেয়েরা ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। খুব ভাল জিপিএ যে সবার আছে এটা যেমন সত্যি নয় তেমনি গোল্ডেন জিপিএ (কথিত গোল্ডেন!) এর ছড়াছড়িও সত্যি নয়। প্রথমবর্ষে এসেই শিক্ষার্থীর চোখ চড়কগাছ। বিশাল ক্যাম্পাস , মাথা খারাপ করা ইংরেজি ভার্সনের পড়ার চাপ , ল্যাব - ইনকোর্স আর সবচেয়ে বড় দুই সমস্যা ঢাকায় থাকা এবং অর্থের যোগান সাথে পরিবহন সমস্যা।

সবার পরিবার তো আর যথার্থ সাপোর্ট দিতে পারে না। আমি এমন ছাত্র ও দেখেছি যারা ইট ভাঙ্গার মত খাটুনি খেটে অর্থ উপার্জন করে টিউশনি করে , নিজের খরচ চালায় সাথে পরিবারকেও সাপোর্ট দেয়। রেজাল্টও সেই রকম। সত্যিই রূপকথার মত লাগছে শুনতে না ? সারাদিন ক্লাস আর লাইব্রেরীতে সময় দিয়ে সন্ধ্যায় টিউশনি। রাত করে ফেরা তারপর বইখুলে পড়া সবার ক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে উঠে না।

কিন্তু অনেকে পড়ে । যারা হলে থাকে তাদের থাকে বিভিন্ন সংগঠন জনিত কাজ। এছাড়া নতুন প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের সিট সমস্যাতো ডালভাত সমস্যা। বহু কষ্টে সে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই আর কয়েকটা টিউশনি যোগার করে নেয়। কিন্তু মনে তখনো স্বপ্ন থাকে মেডিকেলে/আরও ভাল সাবজেক্টে পড়ার।

শুরু করে পড়া। আবার ভর্তি পরীক্ষায় বসে। সফল হলে ইয়ার ড্রপ না হলে শিক্ষাবর্ষ লস। তবে যারা হানিফ / শ্যামলী বাসের মত গিয়ার বক্স আর হার্ড ব্রেক নিয়ে চলে তারা উতরে যায় ফাইনাল পরীক্ষা আর বাকীরা আবার শুরু করে প্রথম থেকে। অনেকের জীবনে প্রেম আসে অনেকের আসে বদ সঙ্গী সাথে ধুম্র জগতের ছোঁয়া।

এটাই নষ্ট হবার মূল বয়স। ২য় বর্ষে এসে পাংখা জীবন যাপন। বন্ধুর সংখ্যা সংখ্যাতীত হারে বেড়ে যায়। প্রথম বর্ষের দূর্বলতা গুলো কাটিয়ে জীবনটাকে অনেকটা গুছিয়ে আনে সে। মোটামুটি ভাবে জীবন কীভাবে চালাতে হবে ধারনা পেয়ে যায়।

বড়ভাইদের সহযোগীতা আর শিক্ষকদের পরামর্শে সাজিয়ে নেয় পড়ালেখার ধরন। সাফল্যের সাথে চুড়ান্ত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয় । হয়ত থাকে কিছু ক্র্যাশ/ফলোন্নয়ন। এসময়ই লাগামহীন বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা , ফেসবুক চ্যাট আর পড়ালেখার প্রতি অবহেলা তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে শিক্ষাজীবন থেকে। হতভাগারা বুঝতেও পারে না তারই ভাল ছাত্র ( হানিফ / শ্যামলী বাসের মত গিয়ার বক্স আর হার্ড ব্রেক নিয়ে চলা ) বন্ধুরা ধুমসে পড়ছে সাথে তাদের অবসরে তাকে ব্যবহার করছে আড্ডা দেবার জন্য।

যারা নিজেরটা বুঝে না তারাই কেবল ঝড়ে পড়ে এই শ্রেণীতে। তৃতীয়বর্ষে যারা আসে তারা বিশাল বাঁশবাগানে পড়ে। বিভাগের সবোর্চ্চ কঠিন বিষয়গুলো তখন পড়ানো হয়। সাথে অনেকের থাকে পূর্বের শ্রেনীর ফলোন্নয়ন। অনেকের তখন শুরু হয় নতুন জীবন।

অনেকে সঙ্গী হিসেবে পায় মনের মানুষ! শিক্ষা সফর , পিকনিক , বসন্ত উৎসব , ভালবাসা দিবস , জন্মদিন , নববর্ষ কোন অনুষ্ঠানই বাদ যায় না পালন করতে। এতকিছুর ভীরে শুধু পড়ালেখাটা হয় না। যথারীতি হতভাগাদের শিক্ষা প্রদীপ ধপকরে নিভে যায়। সত্যি বলতে এই বছরই হল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ক্রান্তিকাল। বহু বাঁশ কেটে ক্লান্ত হয়ে চতুর্থবর্ষে এসে সবাই বুঝে যায় কে কেমন আর কে সাথে থাকবে সারাজীবন।

চমৎকার ভাবে সবাই শেষ করে চুড়ান্ত পরীক্ষা। ভাল সিজিপিএ নিয়ে হয় স্নাতক। আফসোস করে এই ভেবে যে প্রথমবর্ষ থেকে যদি এমন ভাবে চলত তাহলে জীবনটা অন্যরকম হয়ে যেত। কিন্তু সে ভাল ভাবেই জানে তা সম্ভব ছিল না। প্রথমবর্ষের পড়ুয়া সকল ব্লগাদের অনুরোধ নিজেকে জানো , বন্ধুদের জানো।

আগে পড়ালেখা তার পড়ে বাকী সব। যদি নিজের সম্পর্কে সচেতন প্রথমবর্ষ থেকে না হয় কেউ তবে আফসোস সারজীবনেও শেষ হবে না । থাকবে ইয়ার গ্যাপ , মনে অশান্তি। বি এস এ আমার সাথে ১৫৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। তাদের মধ্যে ১০০ জন বর্তমানে কোথায় আছে আমি জানি না।

তোমাদের জন্য বলছি এমন পড়ালেখা করো না যাতে হারিয়ে যেতে হয়। আমার এম এস জীবন এখনো শেষ হয়নি । তাই এম এস ইতিহাস লিখতে পারলাম না। যেদিন হবে সেদিন অবশ্যই লিখব। আমার দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীবন্ধুর জীবনকে নিয়ে আমার এই লেখা ।

সবার জীবন এমন না। এমন ভাবাটা ও ভুল। যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কারোর সাথে মিলে যায় তবে অবশ্যই কাকতালীয় ঘটনা বলে এড়িয়ে যাবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.