আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন সিলেটের নার্গিস দিনভর উত্তেজনা

‘আগেই ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্ব্বা নার্গিসের শরীরে পুশ করা হয়েছিল ইনজেকশন। সেই অনুপাতে ব্যথাও বাড়ে। কিন্তু ব্যথা যখন বাড়লো তখন আর ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। ওয়ার্ডে যারা আছেন তার মধ্যে ডাক্তার, নার্স এমনকি আয়ার পায়ে ধরলে তারা একটিবার এসে আমার স্ত্রীকে দেখেনি। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে রাত একটার দিকে সবার চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় মারা গেল নার্গিস।

’ এ কথা বলে অঝোরে কাঁদছিলেন নার্গিসের স্বামী আউয়াল হোসেন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোববার রাত একটার দিকে দৃশ্য এটি। বিনা চিকিৎসায় নার্গিস মারা যাওয়ায় ক্ষেপে যান তার স্বজনরা। সকাল থেকে তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এ সময় উত্তেজনা বিরাজ করলে সেখানে পুলিশও মোতায়েন করা হয়।

এসময় রোগীর স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এ ঘটনার বিচার না পেলে তারা কঠোর আন্দোলনে নামবেন। নার্গিস আক্তারের বয়স ২৬। তিনি ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার স্বামী আবদুল আউয়াল। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছের এলাকা মধু শহীদে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তিনি।

আউয়ালের মূল বাড়ি নরসিংদীর মধুরপুরের উজ্জ্বলপুর গ্রামে। রোববার সকালে তার স্ত্রী নার্গিস আক্তারের প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে প্রথমে সিলেট নগরীর বাগবাড়ি এলাকার ডেলিভারি সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে বেলা ২টার দিকে নিয়ে আসা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। লেবার ওয়ার্ডের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তির পর তার শরীরে ইনজেকশন পুশ করা হয়। বিকালের দিকে একটু একটু ব্যথা বাড়তে থাকে।

আবার কমতেও থাকে। এই অবস্থায় রাত ১০টার পর থেকে নার্গিসের প্রসব ব্যথা শুরু হয়। নার্গিসের স্বামী আবদুল আউয়াল জানান, প্রসব ব্যথা শুরু হওয়ার পরপর ওয়ার্ডের ডাক্তারকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়। ডাক্তার স্বাভাবিকভাবে ডেলিভারির কথা বলে স্বজনদের বিদায় করে দেন। কিন্তু রাত যত বাড়তে থাকে ততই প্রসব ব্যথা বাড়তে থাকে।

এ সময় এক আয়া এসে বলে, ৫০০ টাকা দেন। আমি রোগীকে স্বাভাবিকভাবে ডেলিভারি করিয়ে দেবো। তার কথামতো ৫০০ টাকা দেয়া হয়। নিয়ে আসা হয় ওষুধপত্রও। কিন্তু ডাক্তার, নার্স কিংবা আয়াও তাদের ধারে কাছে আসেনি।

আর ওদিকে নার্গিস ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। তার ব্যথা দেখে শুধু রোগীর স্বজনরাই নন আশপাশের রোগীর স্বজনরাও ডাক্তারের কাছে ছুটে যান। তার হাতে পায়ে ধরেন। এরপরও ডাক্তার আসেননি। বলেন, স্বাভাবিক ডেলিভারি হবে।

চিন্তা করবেন না। এক পর্যায়ে সবার চোখের সামনে ছটফট করতে করতে রাত একটার দিকে মৃত্যুর ঢলে পড়েন নার্গিস। এ ঘটনার প্রতিবাদে সিলেট সিটি করপোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুর রকিব বাবলু, জাতীয় মহিলাপার্টির জেলার সভানেত্রী নাহিদা আক্তার চৌধুরীসহ শ’ শ’ মানুষ জড়ো হন। তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বিক্ষোভের পর সমাবেশ করেন। এই সমাবেশ থেকে তারা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।

পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিচার চান। পরিচালক তাদের বিচারের আশ্বাস দেন। পরে কাউন্সিলর আবদুর রকিব বাবলু জানিয়েছেন, ওসমানী হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রতি সপ্তাহে বিনা চিকিৎসায় রোগী মারা যাচ্ছে। আর এ নিয়ে হাসপাতালে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।

উপস্থিত এলাকাবাসী জানান, হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তারা রোগীর সেবা প্রদানে আন্তরিক থাকলেও এখানকার ডাক্তার ও নার্সরা টাকা ছাড়া কাজ করেন না। এ ব্যাপারে ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল জানিয়েছেন, এ ঘটনায় একজন সহযোগী অধ্যাপককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই যারা দোষী হবে তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। আর যাতে এরকম ঘটনা না ঘটে এরকম শাস্তিই দেয়া হবে। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.