...............................................................................................................................................................। তখনো শীত পুরোপুরি ঝেকে বসেনি। শীতের প্রকোপ শুরু হয়েছে মাত্র। তবে তখনো শিশিরে ভিজে যায় মাঠ। আমি তখন কেবল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির বেশ কয়েকটি পরীক্ষা শেষে, বলা চলে শেষ পর্যায়ে ক্লান্ত দেহে বাড়ি ফিরেছি।
এখনো দু,একটি বাকি তবে মাঝে বেশ কিছুদিন ফাঁক। তাই বাড়িতে চলে এলাম। কিছুটা উচ্ছ্বসিত লাগছে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাচ্ছি এই ভেবে। তবে ভালো অবস্থানের জন্য একটু চিন্তা কাজ করছে,ভয় করছে। কী যেন হয়!বাড়িতে অনেকটা অবসরের মত করেই প্রথম কয়েকটা দিন কাটাতে লাগলাম।
সকাল হলে বাড়ির পাশে দোকানে গিয়ে বিশমিনিটের জন্য হলেও বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দেয়া আমার দৈনিক রুটিনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই রুটিনের অংশ হিসেবে একদিন সকালবেলা আমি আর আমার একবন্ধু দোকানের উদ্দেশ্যে রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম। দুটি মেয়ে আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমি আমার পাশের বন্ধুটিকে জিজ্ঞেস করলাম,
-পাশের মেয়েটি কে রে?মেয়েটিতো অনেক সুন্দর!
বন্ধুর ,মাধ্যমে মেয়েটি সম্পর্কে কিছু জানতে পারলাম,মেয়েটি আমাদের (এলাকার) পাশের একটি কলেজে পড়ে।
মেয়েটিকে আমার ভালো লেগে যায়।
মেয়েটি সম্পর্কে আমার অনুভুতি আগ্রহ নিয়ে আমি আর তার সাথে বিশদ কিছু আলোচনা করিনি।
সবে মাত্র কৈশোরের ছায়া পিছনে ফেলে তারুন্যে প্রবেশের দরজায় দাঁড়িয়ে। সুন্দরের মহিমা অল্পতেই মনে আলোড়ন তোলে। অনুভুতিগুলো বেশ দ্রুত ছড়িয়ে যেতে চায়। আবেগী হাওয়া ভেসে যেতে চায় মন।
মেয়েটিকে দেখার পর থেকে আমার মন তার জন্য সবসময় ব্যকুল হয়ে থাকে। আমার প্রতিটি পথচলায় ছায়া হয়ে সামনে দাঁড়ায় সে। আমি তার থেকে কোন ভাবেই নিজেকে দূরে সরাতে পারিনা। তাকে দেখার জন্য আমি এর পর থেকে প্রতিদিন সকাল হলে একই সময়ে ঐ রাস্তায় অপেক্ষা করতাম। নির্ধারিত সময় পার হবার পরও কেন জানি মনে হত সে আসবে,তাই আমি আরো একটু দাঁড়িয়ে থাকতাম।
মাঝে দু,দিন দেখতে পাইনি বলে আমার মন প্রচন্ড খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি যেন আমার স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে ফেলতে লাগলাম। কলেজ ছুটির সময় মনে করে দুপুর বেলাও রাস্তার পানে তাকিয়ে থাকতাম। আমার বাড়ির ঠিক সামনের রাস্তা দিয়েই সে হেটে যেত,তাই আমি বাড়ির শেষ মাথায় অর্থাৎ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম,চেয়ে থাকতাম সুদুরে ঐ বুঝি সে আসতেছে,না দূর থেকে তার মত মনে হলেও সে নয়। কিছুক্ষন পর পর আমি বাড়ির সামনে গিয়ে আমাদের পুকুরঘাটে বসে থাকতাম,যেখান থেকে রাস্তাটি স্পষ্ট দেখা যায়।
কিন্তু দেখা হলে আমি কি বলব?কি করব?আমি কি শুধু চেয়ে চেয়ে থাকবো?কিন্তু রোজ এভাবে কতদিন?এতে কি ফল মিলবে?আমাকে তো কিছুদিনের মধ্যেই আবার ঢাকা আসতে হবে। আবার, যদি তাকে আমার পছন্দের কথাটা জানাই,এর ফল কি উল্টো দিকে মোড় নিবে?এটা কি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়েই থাকবে?নাকি তার বান্ধবীর মাধ্যমে কিংবা তার মাধ্যমে তা পুরোএলাকা হয়ে যাবে?তাহলেতো আমি শেষ,এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে সবাই আমাকে জানে,আব্বুকে সম্মান করে একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ হিসেবে,তিনি একজন শিক্ষক মানুষ। সব ভাবনার গ্যাড়াকলে আমি এলোমেলো হয়ে যাই।
পরিশেষে এক বুদ্ধির উদয় ঘটালাম। দেখা যাক কি হয়!
পরদিন সকালে আমি আর বাড়ির বন্ধুটি দোকানে যাচ্ছি,পথে মেয়ে দুটির সাথে দেখা।
তখনো বাংলালিংকের প্রিপেইড লোড সর্বত্র যায়নি,আমাদের বাজারে আসলেও,বাড়ির কাছের দোকানগুলোতে এখনো আসেনি। মেয়েগুলোকে কলেজে যেতে হলে সে বাজারের সামনে দিয়েই যেতে হয়। আমি দুদিন আগ থেকেই প্ল্যান করে আমার বাংলালিংক নাম্বারটি মানি ব্যাগে একটি কাগজে লিখে রেখেছি।
-এক্সকিউজ মি!
-জি!
-আপনারা কি এই(কলেজের নাম…)কলেজে পড়েন?
-জি।
-একটা কাজ করতে পারবেন?
-কি?
-এখানে তো বাংলালিংকের প্রিপেইড লোড নেই,কাইন্ডলি,যাওয়ার সময় দোকানে একটু এটা দিয়ে দিবেন,…।
(নাম্বার লেখা কাগজটি আর টাকা হাতে করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে)
প্রথমে একটু ইতস্তত বোধ করলেও,পরবর্তিতে তা নিতে বিলম্ব ঘটেনি
-থ্যাংকস!
এর মধ্য দিয়ে কি হতে যাচ্ছে,আমি তখনো জানিনা,তবে আমার মধ্যে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করতে লাগল। পাশাপাশি চিন্তার ভাঁজও পড়ে গেল কপালে,-এটা যদি কোন ভাবে এলাকা ছড়িয়ে যায়,তাহলে যে আমি শেষ। দু,দিন পার হয়ে গেল,তার আর দেখা পেলামনা,পাশাপাশি কারো কাছ থেকে কোন রুপ প্রতিক্রিয়া না পেয়ে একটু ভালোও লাগল এই ভেবে যে, তাহলে সে নিশ্চয়ই এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলেনি। সেদিনের পর থেকে আমি আমার নিয়মিত সিম বাদ দিয়ে বাংলালিংক নাম্বারটি ব্যবহার করতে শুরু করলাম এই আশায় যে,কোন ফোন কিংবা মিসকল আসে কিনা আর তা যদি কোন শুভ পক্ষ থেকে হয়। কিন্তু না কিছুই হল না এমনকি আমার নাম্বারে ব্যালেন্স পর্যন্ত আসেনি।
সেদিকে আমার কোন খেয়াল নেই,আমার খেয়াল হছে কখন তার পক্ষ থেকে একটা মিসকল বা কল আসবে।
সেদিন সন্ধ্যায় পাশের বাড়ির একটি ছেলে আমাকে এ বিষয় নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে। এবং কথোপকথোনের এক পর্যায়ে সে আমাকে মেয়েটিকে দেয়া আমার নাম্বার লিখা কাগজটি আর টাকা ফিরিয়ে দেয়। মেয়েটি সেদিন কোন কারনে দোকানে দিতে পারেনি এবং পরবর্তিতে তার এক বান্ধবী তথা ছেলেটির বাড়ির এক মেয়ের কাছে দিয়ে দেয় আমাকে দেয়ার জন্য। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তিতে আর কাউকে নাড়াছাড়া করতে দেখিনি।
যাই হোক পরিস্থিতি শান্তই দেখাল। আমি না পাওয়ার ভান করে তার অপেক্ষায় রাস্তার পানে তাকিয়ে থাকতাম আবার কথা বলবো বলে।
সেদিন আড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা কয়েক বন্ধু রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ একটি মেয়ে রিকশা থামিয়ে আমার নাম ধরে ডাক দিল। আমার খুব ভালো লাগল-আমার নাম ধরে কোন মেয়ে ডেকেছে।
আমি তখনো জানতাম না যে এই মেয়েটি সেই মেয়ে। আমি তার কাছে গেলাম
-টাকা পাইছেন?আমি সেদিন দিতে পারেনি……।
-না পাইনি তো!
-কেন ও(পাশের বাড়ির মেয়েটির নাম ধরে) দেয়নি আপনাকে?সেদিন তার সাথে দেখা হওয়াতে তার কাছে দিয়ে দিলাম।
-কই?না তো!
-আচ্ছা,ওকে জিজ্ঞেস করবো,কালকে দেখা হলেই পেয়ে যাবেন।
আমি আর কিছু বলিনি সে চলে গেল।
আমিতো আরো মহা খুশি। কালকে সে আমার সাথে দেখা করবে। প্রতীক্ষার অবসান যে কিছুতেই হচ্ছেনা,আমার তো আর দেরি সইছেনা,কখন আজকের দিন যাবে, রাত শেষ হয়ে সুন্দর একটি সকাল আসবে,তার সাথে দেখা হবে?
পরদিন আবার আমাদের দেখা হয়। তাকে দিব বলে আমি বেশ কয়েকদিন আগ থেকে মানিব্যাগে দুটো চকোলেট রাখতে রাখতে ওগুলো প্রায় তাদের স্বাভাবিক আকৃতি হারাতে চলল।
-কি ব্যাপার কেমন আছ?
-এইতো ভালো,শীট!!আমার সাথে ওর দেখা হয়নি,আপনি কাল এখানে থাকবেন?
আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিই।
এরপর সে চলে যেতে চায়। একটু হেটে যখন সে আমাকে অতিক্রম করে চলে যেতে লাগল,আমি পেছন থেকে ডাক দিলাম,
-শোন!
-জি!
-তোমার জন্য একটা চকোলেট (হাতের মুষ্টি বন্ধ করে ভেতরে চকোলেটটি রেখে সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে)
সে বুঝতে পারছেনা কি করবে?স্থির হয়ে দাড়াচ্ছেনা আবার হেটেও যাচ্ছেনা।
চকোলেটটি নেয়ার জন্য আমি তাকে আবার ডাক দিলাম। এবং এক পর্যায়ে আমি হাত উচিয়ে সামনের দিকে ছুড়ে দেয়ার ভঙ্গিমা করতেই সে বলে উঠল
-না,আমি এভাবে নিব না ,আমি হাতে নিব।
এই বলে সে আমার দিকে এগিয়ে আসে,তার কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ হলেও হাতেও একটি বই ধরা।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা বইটিকে দুহাতে ধরে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। এবং সে আমার চকোলেটটা গ্রহন করল।
-থ্যাংকস!
-ওয়েলকাম!
তারপর সে চলে গেল,আমি অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম।
পরদিন আমি আবার তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম,নির্ধারিত সময়ের অনেক আগ থেকেই। সে এবং তার সাথে আরো কয়েক বান্ধবী মিলে তারা কলেজে যাচ্ছে।
আমাকে দেখা মাত্রই দাঁড়িয়ে গেল। তার দিকে চোখ পড়তেই অমনিতেই আমার ঠোটের কোনে দুষ্ট হাসির রেখা ফোটে উঠল। বোরকায় তার চেহারা আবদ্ধ থাকলেও সেও যে আমায় দেখে হেসেছে আমি প্রকৃতি দেখে ঠিকই বুঝতে পেরেছি।
-কি অবস্থা?
-আপনি মিথ্যে বললেন কেন?
-কি মিথ্যে বললাম?
-আপনি টাকা পাননি?
-পেয়েছি।
-তাহলে মিথ্যে বললেন কেন?
-এমনিতেই,একটু দুষ্টমি করেছিলাম।
-এটা দুষ্টমি হল!আমি যে- টেনশনে ছিলাম,
-টেনশনের কি আছে,এতো বেশি টাকা না?
-আচ্ছা আসি
-হুমম
শেষ। তার সাথে আমার কথোপকোথন শেষ।
আর তো কোন উছিলা নেই। তাহলে কি তার সাথে আর আমার কথা হবে না?সেতো আমাকে এখনো কল দেয়নি,মিসকলও দেয়নি,তাহলে সে কি আমার নাম্বারটা রাখেনি?আমার প্ল্যান বুঝি বৃথাই গেল।
এখন আর কি বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলা যায়?
না আর কোন প্ল্যান আমি অবলম্বন করিনি,তবে তাকে দেখার জন্য তখনো আমি সময়মতো রাস্তার পানে তাকিয়ে থাকতাম,অপেক্ষা করতাম।
যখনি দেখা হত আমি কথা বলতাম। জিজ্ঞেস করতাম-কি অবস্থা?কেমন আছ?কলেজে যাচ্ছ?ইত্যাদি। এ প্রশ্নগুলো কমন হয়ে গিয়েছিল,যতদিন তার সাথে দেখা হত।
এভাবে আমাদের মাঝে একধরনের পরিচিতি গড়ে উঠে। মাঝখানে আমি আমার বাকি দুটো আডমিশনের জন্য কিছুদিন বাড়ির বাহিরে ছিলাম।
পরবর্তিতে আবার বাড়ি ফিরে আসি।
আবার একই ধারায় চলতে লাগল। দেখা হলে আগের মতই কমন প্রশ্ন গুলো চালাচালি হত।
জানতে পারলাম মেয়েটির মামা বাড়ি আমাদের কয়েকটি বাড়ি পরে। আমরা যে দোকানে আড্ডা দিই তার আগের বাড়িটিই তার মামার বাড়ি।
সে নাকি মূলত তার মামার বাড়িই বেশি থাকে।
সেদিন হঠাৎ এক অনাকাংখিত সময়ে দুজনের দেখা,জিজ্ঞেস করলাম
-কি ব্যাপার কলেজে যাচ্ছ নাকি?
-কেন?আবার ফোনে টাকা রিচার্জ করতে দিবেন নাকি?
-না। তোমাকে অযথা কষ্ট দিয়ে কি লাভ?
-না,কলেজে যাবনা,নানু বাড়ি যাচ্ছি
-এটা নানু বাড়ি?(ইচ্ছে করে পাশের আরেকটি বাড়ি দেখিয়ে)
-না,ঐ টা। (তার নানু বাড়ির দিকে অঙ্গুলি দিয়ে নির্দেশ করে)
-ও আচ্ছা।
-আসি
-আচ্ছা
…সেদিন আরো কিছুক্ষন অন্য বিষয়েও আলাপ হয়েছিল,বলা চলে বহুদিন পর আজ নিজেকে তৃপ্ত মনে হল।
মনে হল কিছু একটা হতে যাচ্ছে।
ঠিক তার দুই দিন পরেই তার মামা বাড়ির একটি ছেলে (পরিচিত)আমাকে জিজ্ঞেস করে,(মেয়েটির নাম ধরে)ওকে চিনিস?
আমি বললাম,-না!কেননা আমি তখনো তার নাম জানতাম না,যদিও আমাদের মাঝে অনেকদিন কথা হয়েছিল।
তারপর সে আমাকে খুলে বলে। সে নাকি আমার সম্পর্কে ছেলেটির কাছে জানতে চেয়েছে। ছেলেটি আমাদের দুজনকে মিলিয়ে অনেক কথা বলল।
আমি কোনরুপ প্রতিক্রিয়া দেখালাম না । আমি কিছুটা এড়িয়ে,প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে তার সাথে আলাপ চারিতা শেষ করলাম। ।
তবে আমি মনে মনে বেশ খুশি হয়েছি। কেননা আমি বুঝতে পেরেছি,কিছু একটা হতে যাচ্ছে।
এরপর আবার একদিন তার সাথে দেখা হলে আমি তাকে বলি
-তোমার মোবাইল নাম্বারটা দাও।
-আমি তো মোবাইল ব্যবহার করিনা
-মিথ্যে বলছ,আমি শুনেছি তুমি মোবাইল ব্যবহার কর।
-সত্যি বলছি,নেই
-আচ্ছা,তাহলে আমার মোবাইল নাম্বারটা রাখ।
সে আমার মোবাইল নাম্বারটা নিল।
তার কিছুদিন পর একদিন শেষ বিকেলবেলা একটি নাম্বার থেকে আমার মোবাইলে মিসকল আসে।
আমি অনেক কৌতুহল নিয়ে কলব্যাক করি। ওপাশের কন্ঠস্বরটা একজন মেয়ের হয় ঠিকই তবে সে আমার কাংখিত মানুষটি নয়। কথা শেষের একপর্যায়ে উনি বলে উঠলেন,-আপনাকে যে মিসকল দিয়েছে,সে এখন এখানে নেই,একটু দূরে আছে। জানতে পারলাম সে আমার কাংখিত মানুষটি-ই। তার সাথে কথা বলতে না পেরে আমার মন খারাপ হয়ে উঠে।
চারিদিকে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এল। আযান দেওয়ার জন্য মুয়াযযিন তৈরী হয়ে আছেন,মনের ব্যাকুলতা সইতে না পেরে আমি ঐ নাম্বারে একটা মিসকল দিয়ে বসি।
সারাদিন যত কিছুই হোক,রাতের বেলা বাহিরে থাকা কখনো বাবা পছন্দ করতেন না। সন্ধ্যা হলেই ঘরের ভিতর বন্দি। পড়ার টেবিলে সবাই,আমি,ছোট ভাই আর ছোটবোন,পাশে একটি চেয়ারে বসে মা পেপার পড়ছেন।
হঠাৎ করে আমার মোবাইল বেজে উঠে। তাকিয়ে দেখি ঐ নাম্বার থেকেই ফোন এসেছে,আমি যে তখনি নাম্বারটি অনেক যত্ন করে তার নাম দিয়ে সেভ করে রেখেছিলাম। আমার ভেতরটা খুশি হয়ে উঠলেও আমি একটু ইতস্তত বোধ করলাম,কেননা আমি এখন আমার স্বাধীনতা অনুযায়ী কথা বলতে পারবোনা,আমি এক গন্ডির মধ্যে আটকে আছি। যাই হোক আমি কলটি রিসিভ করলাম।
-হ্যালো,স্লামালাইকুম
-কেমন আছেন?
-হ্যাঁ,ভালো।
আপনি কে(চিনেও না চেনার ভান করে)?
-এখুনি ভুলে গেছেন?
-ও,আচ্ছা তুমি,হ্যাঁ বল
-কি করছেন?
-এইতো পড়ছি
-আচ্ছাএই নাম্বারে আর ফোন দিবেন না,এটা আমার মোবাইল নাম্বার নয়। ভালো থাকবেন।
এই কথাটি শোনার সাথে সাথে আমার ভিতরটা চমকে উঠে,আমি যেন কিছুটা চুপসে যাই। কিন্তু আমি এক ঘরোয়া পরিবেশে,সবার সাথে। আমি আর পাল্টা কিছু না বলে,কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললাম
-আচ্ছা,ঠিক আছে।
সবাই পাশে থাকায় ওপাশ টা যে মেয়ের কন্ঠ ভাসছিল,তা সবাই স্পষ্ট টের পেয়েছে,কেউ কেউ জিজ্ঞেস ও করেছিল,যে কে ফোন দিয়েছিল?আমি তা অন্যভাবে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি।
এরপর থেকে আমার পড়ায় মন বসছেনা,কোন কাজেই মন বসাতে পারছিলাম না।
সেদিন রাতেই প্রায় সাড়ে দশটার দিকে। সবাই ঘুমিয়েছে। ছোট ভাই পাশের রুমে পড়ছে,আমি আমার রুমে পড়ছি।
গ্রামে সাড়ে দশটা অনেক রাত। হঠাৎ করে আবার আমার ফোনে কল আসে এবং তা ঐ নাম্বার থেকেই। আমি আবার উৎফুল্ল হয়ে উঠি। আমি ফোন নিয়ে ঘরের বাহিরে চলে আসি,নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকি।
-কেমন আছেন?
-ভালো,তুমি?
-ভালো,কি
……
-আচ্ছা,আপনি আমার সাথে কি হিসেবে কথা বলছেন?
-কি হিসেবে মানে?কেন,তুমি কি হিসেবে কথা বলতে চাও?
-না,আপনি বলেন?
-না,তুমি বল?
-আমি কিন্তু খুব নাছোড়বান্দা,তাহলে কিন্তু আর কথাই বলবোনা।
আমি চাইছিলামনা আমি তার কাছে অন্য কিছু বলে লজ্জিত বা উপেক্ষিত হই,আমাকে এমন কিছু বলতে হবে যাতে সে আমার থেকে দূরে না যায় এবং উপেক্ষিত বা ছোট হওয়ার কোন সুযোগ থাকে। আর এর জন্য বন্ধুত্বের উপর কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা। আমার ধারনা ছিল বন্ধুত্বের মাধ্যমে আমরা অনেক কাছাকাছি আসতে পারবো আর যদি তার ইচ্ছে ঠিকই থাকে তাহলে অবশ্যই সম্পর্ক অন্য দিকে গড়াতে পারে,সে আশায় আমি বললাম
-কেন,ফ্রেন্ড হিসেবে?তুমি কি হিসেবে চাও?
-সে বলল আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর আমাদের মাঝে আরো কিছুক্ষন কথা হয় এবং শুভ সমাপ্তির পরে আমরা ঘুমোতে যাই। সেদিন রাতটি আমার স্মৃতিতে আজো জ্বলজ্বল,হয়ত সারাজীবন-ই জ্বলজ্বল থাকবে।
এরপর থেকে আমাদের ফোনে কথা বলা শুরু। তবে কখনো দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলা হয়নি। পাঁচ কিংবা দশ বা কখনো বিশ মিনিট এর বেশি নয়। প্রতিদিন সম্ভব হত না আমাদের কথা বলা,মাঝে মাঝে হত। আবার মাঝে মাঝে হঠাৎ পথে দেখা হয়ে যেত।
তখন হয়ত আবার দুজনের মাঝে একটু কথা হত। কিন্তু এভাবে বিরতি দিয়ে কথা বলা আর হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে যেন আমরা এগুতে পারছিলাম না। তবে তার সীমাবদ্ধতা আর অদ্ভুত আচরন আমাকে ক্রমাগতই তার মাঝে হারাতে চলল। আমি কখনোই এ বিরতিকে বাধা মনে করতাম না। তবে এ বিরতি আমাকে প্রচন্ডভাবে কাঁদাত।
বাড়িয়ে দিত আমার বিছানায় ছটফটের সময়কাল। কেননা সে আমাকে তার সম্পর্কে যতটুকু অবগত করেছে তাতে তাকে ভিন্ন ভাবে কল্পনা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। আমি তাকে সদ্য ফুটন্ত ফুলের মত জানতাম। আমি ভাবতাম ফলাফল পজিটিভ ই হবে। কেননা ক্রমাগতই আমাদের সম্পর্ক গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে চলল।
সেদিন বিকেলবেলা আমি দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ তার ফোন। সকাল বেলা সে তার নানুর বাড়িতে এসেছে সাথে নিজেদের গাছের পেয়ারা নিয়ে। বাসার ছোট কাজের মেয়ে বয়স আট কি নয় বছর হবে তাকে দিয়ে বাড়ির সামনে পাঠিয়েছে আমাকে পেয়ারা দেয়ার জন্য। আর নিজে বাড়ির ভেতরে দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে।
আমিও সেদিন দোকান থেকে তার জন্য চকোলেট কিনে তার হাতে দিয়েছিলাম।
অনেকদিন কেটে গেল,মাঝে দেখা হয়নি,কথাও হয়নি। আর তখনি এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম সে আমার এলাকার আমার চেয়ে একটু বড় এক ভাইয়ের সাথেও ফোনে কথা বলে। ছেলেটি ঢাকায় চাকুরি করে। সে নাকি তাকে এক সময় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।
যে মাধ্যম থেকে শুনেছি অবিশ্বাস করার জো ছিলনা। তারপরও আমি তার মুখ থেকে শোনার অপেক্ষায় ছিলাম। আমার ভেতরটা তখন জ্বলেপুড়ে একাকার,প্রচন্ডভাবে ক্ষেপে আছে মেয়েটির উপর। কেননা আমি তাকে ফোনে অনেকবার বলেছি তুমি যদি কাউকে পছন্দ কর বা যদি কারো সাথে সম্পর্ক থাকে আমাকে বলতে পারো তাহলে আমি তোমাকে নিয়ে ভিন্ন প্রসঙ্গে আলাপ করবো না বা আমি সে ভাবে তোমার সাথে কথা বলবো,কিংবা ……। সে আমাকে জোর গলায় বলেছে তার সাথে কারো সম্পর্ক নেই।
আমার আসা যাওয়ার মধ্যেই সময় কাটছে। অনেকদিন পর যখন তার সাথে কথা বলার সুযোগ পেলাম,আমি তার উপর প্রচন্ড ক্ষেপে গেলাম এবং প্রসংগটি তুলতেই সব স্বীকার করে। তবে এখনো সে অনড় ছেলেটির সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই,ছেলেটি মাঝে মাঝে ফোন দেয় এবং সে কথা বলে এটুকুই।
সেদিনের পর থেকে বেশ কয়েকদিন তার সাথে কথা হয় নি ,দেখা হয়নি। মন চাইলেও জেদের বসে নিজেক সায় দেইনি,যেকারনে কথাও বলা হয়নি,দেখা হয়নি।
কিন্তু আমার মন সবসময়ই তার জন্য ব্যকুল থাকতো,আমি তখনো অপেক্ষায় থাকতাম কখন সে কল/মিসকল দিবে। পথের পানে সময়ে অসময়ে চেয়ে থাকতাম,দুর থেকে দূরে যতদুর চোখ যায় চেয়ে থাকতাম কখন তার ছবি ভেসে উঠে,কখন আমি দেখবো সে দু’পায়ে রঙ্গিন নাচন তুলে এদিকে হেটে আসছে।
পরবর্তীতে একদিন অপেক্ষার প্রহর শেষে তার সাথে আমার দেখা হয়ে যায়। আমি তাকে বলি,তুমি কি আমার উপর ক্ষেপে আছ?আমার সাথে যোগাযোগ রাখবেনা এমন স্বিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ নাকি?সে আমার ধারনাকে উড়িয়ে দেয়। বলে,আমিতো যখনই এ পাশ দিয়ে যাই আপনার অপেক্ষায় থাকি,চেয়ে থাকি আপনাকে দেখা যায় কিনা?তারপর থেকে শুরু হল আমাদের প্রতিদিন দেখা।
সকাল আটটায় তার প্রাইভেট পড়ার সময়,সে হিসেবে সে সাতটার পরেই বের হয়ে যায়। আমি আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তায় অপেক্ষায় থাকতাম।
শীতের সকাল বলে কুয়াশায় ঢেকে থাকতো চারপাশ। সুর্যটা কুয়াশার সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকতো,তার রোদের ঝলকানি দিয়ে কুয়াশা ভেদ করার কাজে মগ্ন থাকতো। আমিও ঐ দূরে রাস্তার পানে চেয়ে থাকতাম,কখন কুয়াশা কাটিয়ে সে স্পষ্ট হয়ে আমার চোখে ধরা দিবে?আমার ভিতরটা আনন্দে লাফিয়ে উঠবে?কুয়াশা ভেদ করে আমরা এক হই,আমিও তার সাথে সাথে হাটতে থাকি।
আমরা কথা বলি প্রতিদিনের চিরচেনা কথাগুলোই আর হাটতে থাকি একই তালে। স্নিগ্ধ সকালের ছায়ায় প্রকৃতির মত তাকেও অদ্ভুত সুন্দর লাগতো,চিরসবুজ মনে হত,কুয়াশায় ভিজে সে আরো চিরসতেজ হয়ে গেছে। সকাল হলে বৃক্ষ যেমন নতুন ফুলের সুভাষ নিয়ে হাজির হয়,ঠিক তেমনি সেও আমার কাছে হাজির হত নতুন সুভাষ নিয়ে,আমি তার কাছ থেকে গন্ধ নিতাম। আমি মাতাল হয়ে যেতাম তার গন্ধে। আমার দেহ ঢলে পড়তে চাইতো তার কোলে।
আমার ইচ্ছে করতো আমি যেন তার সাথে সারাটা পথ একসাথে হাটি। কিন্তু তা সম্ভবপর ছিলনা। তাকে একটু এগিয়ে দিয়েই আমার থামতে হত। সে আমাকে অতিক্রম করে চলে যেত আমি চেয়ে থাকতাম। আমাকে চলে যেতে বলতো আমি যেতাম না যতক্ষন না তাকে আমার চোখে অস্পষ্ট দেখা যায় আমি চেয়ে থাকতাম।
বেশ কয়েকদিন এভাবে আমরা একসাথে সকালের শিশির আর স্নিগ্ধ রোদের পরশে নিজেদের ভিজিয়েছি। হাটতে গিয়ে বহুবার আমাদের দেহ এক হয়েছে,স্পর্শের ছোয়ায় হৃদয়ে ফুল ফুটেছে। কিন্তু কখনো একমনে পরম আবেগে আমরা এক হয়নি,দু,হাতের স্পর্শেও একটিবার নিজেদের ছোয়াই নি। যদিও আমাদের দৃষ্টি বহুবার স্পর্শ করেছে পরস্পরকে। বিদায়বেলায় শেষবারের মত যখন আমাদের দৃষ্টি একহত মনে হত এই বুঝি পৃথিবীতে নতুন গোলাপ ফুটতে শুরু করেছে।
অথচ আমরা তখনো কেউ কাউকে একটি বারের জন্যও বলিনি আমাদের পছন্দের কথা,ভালোবাসার কথা। আমাদের সম্পর্ক যে শুরু থেকেই বন্ধুত্বকে অতিক্রম করে নতুন মাত্রায় চলে যাচ্ছে তা আমরা দুজনেই টের পেয়েছি। আমি বহুবার তাকে বুঝাতেও চেয়েছি। সেদিন যখন তার সাথে দেখা হল সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল
-কি ব্যাপার নাস্তা হইছে?
-না
-কেন?
-নাস্তা করার ফাকে যদি তুমি চলে যাও,তাই নাস্তা করিনি,এখান থেকে যেয়ে করবো।
সে শুধুই হেসেছে,আমাকে বুঝেও বুঝলনা।
আমি সেদিন নিজেকে আর সইতে পারছিলাম না,তার গায়ের গন্ধ আমাকে এতটাই ব্যকুল করল,তার দৃষ্টি আমাকে এতটাই পোড়াল,যখন আমরা আমাদের যাত্রা সীমা অতিক্রম করবো,সে চলে যাবে আমিও পিছু ফিরবো,আমি যেন আর পারছিলাম না,তাকে বিদায় দিতে সেদিন আমার মন চাচ্ছিল না,ইচ্ছে করছিল তার হাত ধরে রাখি,তার কোমল হাতের মুঠোর ভেতরে আমার হাত লুকিয়ে রাখি,তারপর তার সাথী করে সে আমাকে আরো কিছুদুর নিয়ে যাবে,পথভোলা শিশুর মত সে আমাকে সব কিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে,আমি শুধু তাকে জিজ্ঞেস করবো এটা কি?ওটা কি?আমি রাস্তার পাশে লতানো জবা ফুলের গাছটিতে জবা ফুল দেখে তাকে জিজ্ঞেস করবো ওটা কি ফুল?আমাকে একটা দাওনা?সে আমাকে জবা ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে, তারপর তার হাতে গাছ থেকে ফুল ছিড়ে আমায় দিবে,…………
-তোমার হাতটা একটু দাও,
এই বলে আমি আমার হাতটা বাড়িয়ে দিই। আমি ইচ্ছে করলে এতক্ষনে তার হাতটা ধরতে পারতাম,কিন্তু ধরব ধরব বলে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে সে এখন আমার থেকে ক্ষানিকটা দূরে। মুখে না বললেও হাত বাড়ানোর মত করে সে হাত নাড়তে থাকে। নিজের জায়গায় স্থির থেকে মাথা নেড়ে যায়। আমি তখনো বোকার মত দাড়ায়ে,ভিক্ষুকের মত দৃষ্টি তার দৃষ্টিতে মেশায়ে,আমি তখনো বুঝতে পারছি,কেননা তার দৃষ্টি আমার সাথে কথা বলছে,তার মন আমার সাথে কথা বলছে,হয়ত মুখ বলছে ভিন্ন কথা।
মেয়েদের মুখ যে সারাজীবনই ভিন্ন কথা বলে আমি জেনেও জানতাম না। আমি সাহস দেখিয়ে বখাটের মত খপ করে তার হাত ধরিনি,আমি তখনো গাধার মত দাড়ায়ে,ঐ মুহুর্তে আমি বখাটে হয়ে যাই এটা যে সেও চেয়েছিল আমি বুঝেও বুঝে উঠিনি,অতপর আমাকে স্পর্শের অপেক্ষায় রেখেই সে চলে গেল,আমিও আক্ষেপের নিঃশ্বাস ফেলে পিছু ফিরলাম,আরেকবার নিজেকে বোকা বলে ডাকলাম। এত কাছ থেকে তাকে দেখা সেদিনই যে আমার শেষ দিন হবে আমার তখনো অজানা।
আমার ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য আমাকে ঢাকা চলে আসতে হয়,বহুদিন ফোন আর দেখা না পেয়ে অনেক বিষন্নতায় মন খারাপ করে আমাকে ঢাকা চলে আসতে হয়। মা বাবার স্বিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে বখাটে ছেলের মত তার বাড়িতে হামলা বা বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না,আমি ইচ্ছে করলেই …[আরতাম না।
। তাই শুন্য মনে ব্যাথা ভরা হৃদয় নিয়ে ই আমাকে ঢাকা আসতে হয়। তবুও আড়ালে স্বপ্নের বীজ বুনে চলেছি ঠিকই। তার পরিবার আর ইচ্ছের মিল খুজতে গিয়ে আমি জেনেছি সে এত তাড়াতাড়ি অন্য সকল মেয়েদের মত সংসারী হতে ইচ্ছুক নয় কিংবা পরিবারও ইচ্ছুক নয়। যত কিছুই ঘটে থাকুক,অনেক দিন ধরে তার সাথে কথা না হোক তবু আমার ভেতরটা এখনো তাকে নিয়েই ভাবছে।
ভেঙ্গেছে তবু মচকায়নি। তার ব্যথা থেকে আবার শক্তি সঞ্চয় করে আবার তাকেই স্বপ্ন দেখায় ব্যস্ত।
হঠাৎ একদিন আমার ফোনে তার কল দেখে,আমার শুকনো ঠোটে হাসি ফোটে। সব ব্যাথা দূর হয়ে যায় মন থেকে। টেকেনি সে হাসি,মুহুর্তেই মলিন হয়ে গেছে,দুর হয়নি মনের ব্যাথা,উল্টো আরো বাড়িয়ে দিয়ে গেছে।
ঐ সবই ছিল ক্ষনস্থায়ী কেবল মাত্র। কেননা এ কল যে আমার জন্য সুখবার্তা বয়ে আনেনি,বয়ে এনেছে এর বিপরীত। অনেক চেষ্টা করেও তার কথার উপর নিজের কথাটি প্রতিস্থাপন করতে পারেনি,তার কথারই জয় হয়। তার সেদিনের বার্তাটি ছিল নিষেধ বার্তা,তার সাথে যোগাযোগ করতে মানা।
তার সাথে দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি অজ্ঞ ছিলাম প্রেম কি?তাকে দেখার পর থেকেই আমার অনুভুতি জাগ্রত হয়,বুঝতে শিখে জীবন চলার পথে কারো কাউকে পাশে রাখা খুব প্রয়োজন।
,………………। ।
শুন্যতার বেদনা এত বিশাল এ আমার জানা ছিলনা।
শুন্যতার কথা ভেবে আমি ভেঙ্গে পড়ি,এটা রাগ কিংবা অভিমান হতে পারে,আমাকে ছেড়ে যাবার কোন কারন আমি খুজে পাচ্ছিলাম না,…,এইসব ভেবে আমি আবার জেগে উঠি।
সব ভাবনার সমাধান কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই আমাকে দিয়ে দেয়।
এই বিষন্ন মনে ভাবনার দোলাছলে আমাকে বেশিদিন থাকতে হয়নি,অপেক্ষা করতে হয়নি এর শেষ দেখতে। এবার যে আমি সত্যি-ই শেষ। আমি যে আর আমার মাঝে নেই। আমার স্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে দিল সে। এমন ভয়াবহ সংবাদ নিয়ে সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে জানা ছিলনা।
কোন দিন ভাবিওনি এমন সংবাদ তার কাছ থেকে আমার শুনতে হবে।
আমি না তাকে নিয়ে অনেক কিছু ভেবেছিলাম?আমি না বলেছিলাম তার পরিবার আর তার ইচ্ছের সাথে এত তাড়াতাড়ি সংসারী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই?তার উপর না আমার অনেক আস্থা ছিল?আমি না মনে করেছিলাম সেও আমাকে আমার মত ভাবে,যেমনটা আমি ভাবি তাকে নিয়ে?আমি না বুক ফুলিয়ে অনেকের কাছে তার সুনাম গেয়েছিলাম?সবাইকে বলেছি সেও অন্য সকল মেয়েদের থেকে আলাদা?আমার প্রথম প্রেমের প্রথম অনুভুতির মৃত্য এভাবে ঘটবে?
আমি আবার হাসি,নিজের জন্য অনেক স্বান্তনার বানী নিজেই তৈরী করি,নিজেকে শুনাই-আমি তাকে ভালোবাসি এ কথা তো আমি তাকে কোনদিন বলিনি,একটি বারের জন্যও আমি ঠাট্টা করেও বলেনি আমি তোমার সাথে প্রেম করতে চাই,এমনকি সেও তো আমাকে কোন দিন এ ধরনের কথা বলেনি,বন্ধুত্বের সম্পর্কের রেষ ধরেইতো আমাদের এতদুর আসা, এবং আজকে তার বিয়ের এই নিমন্ত্রন পাওয়া। তাহলে আমি অযথাই কেন পুড়ছি?আমি যদি তাকে এসব কথা বলতাম,সেও বলতো কিংবা এরকম কথার উপর ভিত্তি করে একটি সম্পর্ক তৈরী করে আমরা এতদুর আসতাম,কিংবা সে আমাকে উপেক্ষা করতো,আমার সাথে প্রতারনা করে অন্য পুরুষকে আলিঙ্গনে জড়াতো,আজকে নির্লজ্জ ভাবে তার বিয়ের নিমন্ত্রন দিত তাহলে আমি প্রচন্ড কষ্টে ভেঙ্গে পড়তাম,তার উপর অজস্র ঘৃনা নিক্ষেপ করতাম,…ইত্যাদি,কিন্তু বিষয়টি যে সেরকম নয়।
এখনো কোন অবসরে নিজের সাথে সে ঘটনার পর্যালোচনা করতে গেলে,তার জন্য নিজেকেই দায়ী মনে হয়। আমি জানতাম সেও আমাকে পছন্দ করে,কিন্তু আমিও তার মত মুখে না বলে বুকেই রেখেই দিয়েছি।
বললে হয়ত এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি আমাকে নাও হতে হত,অন্য কোন ফল হতে পারতো? অবশ্যই তখন সে কোন না কোন ভাবে এ বিয়ের বিরুদ্ধে যেত।
রিমেলের বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শুনে যখন আমি স্তব্ধ হয়ে যাই,নিরবতা আচ্ছন্ন করে রাখে আমাদের,ঠিক তখনি আবার নতুন উদ্যামে জেগে উঠে রিমেল। নিজেই স্তব্ধতার অবসান ঘটিয়ে হাসে আর গায়-
“প্রেম একবার এসেছিল নিরবে
আমারও দুয়ার প্রান্তে
সে তো হায় উচ্ছ্বল-
পা-য়
আমি পারিনিকো ধরে রাখতে………………। । ”
রিমেলের গানটা শুনে আমরা দুজনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি।
মুহুর্তেই রিমেল বলে উঠে-কি বলেন ভাইয়া,অযথা এটার মধ্যে আটকে থাকার কি আছে?এই ঘটনার জন্য কি জীবন থেমে থাকবে নাকি?কেন ঐ যে একটা কথা আছে না-
“তারাই সত্যিকারের প্রেমিক,যারা বারবার প্রেমে পড়ে”/(“যার হৃদয়ে অফুরন্ত ভালোবাসা আছে,তারাই বারবার প্রেমে পড়ে)”
আমি এর পরেও তিনটে মহাসাগর পাড়ি দিতে চেষ্টা করেছি কিন্তু অপ্রত্যাশিত নানা কারনে আমাকে আবারো থামতে হয়েছে। তাই বলে এখনো ভেঙ্গে পড়েনি। পৃথিবী থেকে আমি এখনো বিচ্ছিন্ন হয়নি,আমাকে আকৃষ্ট করার মত এখনো অনেক কিছুই আমার চোখে পড়ে। এখনো আমি উচ্ছ্বল কোন মেয়েকে চোখের সামনে দেখলে মুহুর্তেই প্রেমে পড়ে যাই। তবে এখনো উচ্ছ্বল কোন মেয়েকে পাবার স্বপ্ন আমি দেখছি,আশা করছি পেয়ে যাব,জীবন কি থেমে থাকবে নাকি?আমার জীবন আমাকেই টানতে হবে,কারো জন্য নিজেকে জলাঞ্জলি দেয়ার কোন মানে হয়না।
বিকেল গড়িয়ে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেল,জোনাকি পোকার মত সিগারেট টিও মিটমিট করছে,সিগারেট হাত বদল করে চলেছে সুরের সাথে-
‘হারায়ে সেই মানুষে
তার উদ্দেশ্যে বেড়াই ঘুরে
আমি বেড়াই ঘুরে দেশে দেশে
আমি কোথায় পাবো তারে
আমার মনের মানুষ যে রে………………………। । ’
(সংক্ষেপিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।