পলাতক বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির পর কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন আর রায়ের শেষে হাস্যোজ্জ্বল মোল্লার 'ভি' চিহ্ন প্রদর্শন নিশ্চই মানুষের রক্ত গরম করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে ছোট আকারে ব্লগারদের প্রতিবাদে সুর মেলালেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।
ধারণা করা হয়, কাদের মোল্লার রায় নিয়ে সমঝোতা হয়েছিল। সেটা সরকার, বিচারক, কাদের মোল্লা, জামাত-শিবির যে কেউ হতে পারে। অত:পর সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টায় সফল হয় আওয়ামীলীগ।
চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি চলে যায় ব্যাকফুটে। আর জামাত শিবির আশ্রয় নেয় কূটকৌশলের।
তাতে সফল হয় শিবির 'যোদ্ধা'রা। খুজে খুজে রাজীব নামের এমন একজনকে হত্যা করে যার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমি তার ব্লগ দেখিনি, আমার মতো অনেকেই চিনত না 'থাবা বাবা'কে। আগুনে ঘি ঢেলে দেয় হযরত মাওলানা মাহমুদুর রহমান।
'আমার দেশ' ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মনে ছড়িয়ে দেওয়া হয় 'শাহবাগী' ব্লগাররা সব নাস্তিক। আওয়ামীলীগ নাস্তিকদের খাবার দাবার দিয়ে, নিরাপত্তা দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করছে। ব্লগাররা রাতে শাহবাগে নেশা করে, অসামাজিক কার্যকলাপ করে। জাতীয় পতাকা বিছিয়ে ঘুমায়। ব্লগারদের সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দেওয়া হলো।
ব্লগাররা তাদের চেতনা ধরে রাখতে পারলো না। কোথা থেকে ডা. ইমরান এইচ সরকার এসে ব্লগারদের মুখপাত্র হলো কেউ জানলো না। ব্লগিং জগতে ইমরান সরকারকেও কোনদিন দেখিনি, এটা অবশ্য আমারই অপরাধ। আওয়ামীলীগ সরকার নয়, ইমরান সরকারের নির্দেশে জাতীয় পতাকা উঠা নামা শুরু হলো, দেশব্যাপী ছাত্র ছাত্রী পেশজীবিদের কর্মসূচী শুরু হলো। সংসদ সদস্যরা এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজে সংসদ অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে মোমবাতি জ্বালানো কর্মসূচিতে যোগ দিলো।
তথাকথিত ব্লগার ইমরান সরকারের ফেসবুকে দেখা গেলো, ছাত্রজীবনে সে ছাত্রলীগের সদস্য ছিল। শাহবাগ চলে গেলো, চলে গেলো ব্লগারদের নিয়ন্ত্রণ থেকে অন্যদের নিয়ন্ত্রণে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতবিরোধের সৃষ্টি হলো। জনতাও মুখ ফিরালো।
শাহবাগের চেতনাকে চেতনানাশক করতে পেরে শিবির সমাজ উল্লসিত।
বিএনপি অপেক্ষায় রইলো সুযোগের। চান্দের মধ্যে সাইদীকে দেখা গেছে..... তাহলে আর কি! এইরকম আল্লাহওয়ালা বুজুর্গ লোককে হাসিনা ফাসি দিয়ে দিচ্ছে? ইসলাম ধর্ম তো গেলো তাহলে!
দেশব্যাপী হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনজীবন বিপর্যস্ত করা শুরু হলো। এ পর্যায়ে যোগ দিলো বিএনপি।
বিএনপি ক্লিন ইমেজ নিয়েই থাকলো। ককটেল, বোমা, আগুন তারা ব্যবহার করলেও জামাত শিবির যেহেতু মাঠে, দোষ তাদেরই।
শিবিরও থেমে নেই। মামলা হামলার মধ্যেও তারা বলীয়ান। সাধারণ মানুষের কাছে সরকার বা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে একটা মনোভাব তৈরী করা গেছে। জামাত শিবিরের কর্মফলে বিএনপি একটা অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে।
যেই বিএনপি শাহবাগের গণজোয়ারে ঘরে তালাবদ্ধ হয়ে বসেছিল, সেই বিএনপি এখন রাস্তায় রাস্তায়।
আর তথাকথিত শাহবাগীরা নিশ্চুপ। আওয়ামীলীগ পড়লো বিপাকে। গুটিকয়েক প্রগতিশীল মানুষের ভোটে কোন দল ক্ষমতায় যেতে পারে না, ব্যাপক জনসাধারণের সমর্থন প্রয়োজন।
যা কিছুই হোক, যুদ্ধাপরাধীদের বাচাতে বিএনপি জামাত এটা করেছে, ওটা করেছে.....। প্রধানমন্ত্রী সহ সব মন্ত্রীদের বাণী এই একটাই।
রাষ্ট্রের একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। এমনকি জনগণের জান-মাল, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা চিকিতসা, নিরাপদে চলাচল... এসবের কোন মূল্য সরকারের কাছে নেই। রাস্তায় বেরোলে নিরাপদে বাড়ি ফিরা যাবে কিনা সেই নিশ্চয়তা এখন আর নেই। বাড়িতেও নিরাপদে থাকা যাবে কি না তারই বা নিশ্চয়তা কি? জিনিসপত্রের দাম হুহু করে বাড়ছে, কারো খেয়াল নেই। গরম আসার আগেই লোড শেডিংয়ে অস্থির, কোন ব্যবস্থা নেই।
জনজীবনে আরো কত্ত সমস্যা। কিন্তু এদিকে তাকানোর কোন সময় সরকারের নেই। শেষ সময়ে কালো বিড়াল খুজতেই সবাই ব্যস্ত।
আইন চলবে আইনের গতিতে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে জাতি এখন আর দ্বিধান্বিত নয়।
এটা নিয়ে সরকার মাথা না ঘামালেও বিচার হচ্ছে, হবে। বিচারপতি নিজামুল হককে পদত্যাগ করতে হলো। সত্য মিথ্য জানি না, সরকার চাপ দিচ্ছিল। কি দরকার ছিল চাপ দেওয়ার? মন্ত্রীদের কি দরকার ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মিডিয়ায় কথা বলার? মন্ত্রিরাও যদি হিসেব করে কথা না বলে তাহলে কিভাবে চলবে? শেষ পর্যন্ত তো দুইজন মন্ত্রীকে ট্রাইব্যুনালে নি:শর্ত ক্ষমা চাইতে হলো!!
সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রেসিডেন্ট চলে যাওয়ায় দেশ আরো একটা সংকটে পড়ল। আওয়ামীলীগের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, পরবর্তী সরকারের (যদি বিএনপিও আসে) প্রায় পুরোটা সময় ক্ষমতায় থাকবে।
এই ধারাটা হয়তো টার্মের পর টার্ম চলতেই থাকবে.....। প্রশ্ন হলো, নির্বাচন কিভাবে হবে? কখন হবে? আদৌ হবে?
গুটিকয়েক মানুষের স্বার্থে ব্যাপক জনগণের জীবনে যে দুর্বিসহ অবস্থা তৈরী করা হয়েছে, হচ্ছে তার সমাধান কি? আমাদের করণীয় কি? আমরা কি করতে পারি?
বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশে গুটিকয়েক ব্লগারের নাস্তিকতার কুফল ভোগ করতে হচ্ছে হাজার হাজার ব্লগারের। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখালেখি করার স্বাধীনতা আমি চাই না, সেটা ইসলাম হোক, হিন্দু হোক, বৌদ্ধ খ্রিস্টান যা ই হোক। দেশে ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখতে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখালেখি করা নাস্তিক ব্লগারদের যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
আল্লাহ না করুন, জামাত শিবির যদি আবার ক্ষমতার অংশ হতে পারে, তাহলে হয়তো আমাদের আরো একজন বাংলা ভাই, শায়ে রহমান দেখা লাগতে পারে।
আমি সেই ভয়ে আছি।
জামাত শিবির দমনে শাহবাগকে ব্যবহার করতে গিয়ে সরকার দারুণভাবে বিফল হয়েছে। শাহবাগের চেতনাকে দেশবাসীর কাছে উল্টোভাবে উপস্থাপন করতে সফল হয়েছে জামাত শিবির। চুপসে যাওয়া বিএনপি পূর্নোদ্যমে রাজপথে নেমেছে। ব্যবহৃত হয়েছে ব্লগার সমাজ।
ব্লগারদের কাধে বন্দুক রেখেই তাহলে হচ্ছে সব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।