আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রশিবিরের প্রাণঢালা ধন্যবাদ ছাত্রলীগকে ... ! !

দিশেহারা মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রাণঢালা ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ছাত্রলীগকে। কেননা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অগ্রপথিক বলে পরিচিত ছাত্রলীগ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর চট্টগ্রামে হরতাল পালনের সুযোগ করে দিয়েছে তাদের। এই ছাত্রসংগঠনটি এত দিন বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আড়ালে-আবডালে কাজ করলেও এখন প্রকাশ্যে হরতাল পালন করছে, গাড়ি ভাঙচুর করছে; শিক্ষক ও প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সমাবেশ ডেকে শিবিরের নেতারা এই বলে হুমকি দিয়েছেন, ছাত্রলীগের বেপরোয়া সন্ত্রাস বন্ধ না হলে তাঁরা প্রয়োজনে দেশের সব ক্যাম্পাসে ধর্মঘট ও ক্লাস বর্জন করবেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ভরাডুবির পর শিবির অনেকটা আড়ালে চলে গিয়েছিল।

তাদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রকাশ্যে তৎপরতা চালাতে সাহস পায়নি। এবার ছাত্রলীগ দুজন শিবিরকর্মীকে হত্যা করে শিবিরকে সেই ‘সাহস জুগিয়েছে’। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের সংঘর্ষের পেছনে কোনো আদর্শগত দ্বন্দ্বের কথা শোনা যায়নি। ঘটনার সূত্রপাত খেলার মাঠের হাঙ্গামা নিয়ে। খেলার মাঠের বিরোধ শ্রেণীকক্ষে গড়ায় এবং সেখান থেকে দুই পক্ষ লাঠিসোঁটা, চাপাতি ও রামদা নিয়ে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

শিবির কয়েকজন ছাত্রলীগের কর্মীর মাথা ফাটিয়েছে, কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তারা কত দিন ধরে ক্যাম্পাসে মাস্তানি করে বেড়াচ্ছে, তার সবকিছুই চাপা পড়ে গেছে দুজন শিবিরকর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনায়। যেকোনো মৃত্যুই শোকের। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আরও কয়েক দফা বন্ধ ছিল—কখনো ছাত্রলীগের সঙ্গে উপাচার্যের বিরোধের কারণে, কখনো ছাত্রলীগ-শিবির দ্বন্দ্বের কারণে।

কয়েক মাস ধরে যখন ক্যাম্পাসে মোটামুটি সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছিল, তখনই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। পরিণতিতে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় এক মাস শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা-ক্লাস হবে না। গতকাল কয়েকটি পত্রিকায় চিরাচরিত সেই ছবি ছাপা হয়েছে: শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এই যে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি মাস হারিয়ে গেল, তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে—বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, সরকার, ছাত্রলীগ না শিবির? ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এতটাই আদর্শবান যে শিবিরের কর্মীকেও তাঁদের কর্মী বলে দাবি করেছেন।

রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব আর কাকে বলে? এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কখনো নিজেদের মধ্যে মারামারি করে, কখনো প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়ে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস মানেই ছাত্রলীগ। গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগঠনটির পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগকে চরিত্র বদলানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, ছাত্রলীগের চরিত্র ঠিক নেই। একবার তিনি রাগ করে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধানের পদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

ছাত্রলীগের চরিত্র এতটাই অনড় যে এ ধরনের রাগ-অভিমানে তা বদলাবে না। এ জন্য চাই কঠিন শাস্তি। প্রধানমন্ত্রী বা আওয়ামী লীগের নেতারা যতই ছাত্রলীগের গায়ে হাত বোলান না কেন, তাঁরা একটার পর একটা ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরিয়ে চলেছেন। এখন ছাত্রলীগ মানেই আতঙ্ক। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে যে বই তুলে দিয়েছিলেন, তাতে ধুলো জমলেও চাপাতি-কিরিচগুলো চকচক করছে।

ছাত্রলীগের কর্মীরা পড়াশোনার ব্যাপারে ‘না’ বললেও সন্ত্রাসকে ‘হ্যাঁ’ বলছেন, হল দখলকে ‘হ্যাঁ’ বলছেন; ‘হ্যাঁ’ বলছেন টেন্ডারবাজি-দখলবাজিকেও। যে ছাত্রলীগ এখন ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে মহাপ্রতাপ দেখাচ্ছে, মারামারি করছে, সেই ছাত্রলীগ কিন্তু ২০০৭-০৮ সালে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিপদের দিনে গর্তে লুকিয়ে ছিল। শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে তখন মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে নারীকর্মীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরনা দিলেও ছাত্রলীগের ‘দুঃসাহসী নেতা-কর্মীদের’ দেখা যায়নি। দেখা যায়নি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের প্রচণ্ড প্রতাপের সময়ও। ছাত্রলীগের এই ‘বসন্তের কোকিলেরা’ সরকার ও প্রশাসনের ওপর ভর করে দৌরাত্ম্য চালাচ্ছে।

শিবির ও ছাত্রদল এই বলে আশ্বস্ত হতে পারে যে ছাত্রলীগের হাতে তাদের যতজন নেতা-কর্মী মারা গেছে, তার চেয়ে বেশি ছাত্রলীগের কর্মী মরেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার মেয়াদ যত শেষ হয়ে আসছে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ততই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ছাত্রলীগ কতটা জনপ্রিয় সংগঠন, তা সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচন দিয়ে একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারে। সামরিক শাসনামলে সর্বশেষ ডাকসুর নির্বাচন হয়েছে। এরপর কোনো সরকারই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেয়নি।

সুত্র ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.