আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোন্দলে অচল হয়ে পড়েছে ছাত্রশিবিরের র্কাযক্রম

রাজাকার ও তাদের বংশধরেরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ঠাই পাবে

তীব্র গ্রুপিং এ জামাতের ছাত্র ফ্রন্ট বিপর্যস্ত ছাত্রশিবিরে। পদ-পদবি, দখল আর সংগঠনকে পকেটবন্দি করার প্রতিযোগিতায় সৃষ্ট দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত ক্যাডারভিত্তিক এ সংগঠনটি। ‘দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে’Ñ বলে নেতাকর্মীদের নির্মোহ দীক্ষা দিয়ে থাকেন যেই নেতারা, তারাই পদ দখলে একদিকে লবিং-তদবির আর তেলবাজিতে ব্যস্ত, বিপরীত দিকে দল ভারি করতে জামায়াতের প্রভাবশালী ও শিবিরের সাবেক নেতারা পছন্দের ব্যক্তিদেরই পদাসীন করে থাকেন। এ অভিযোগ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর। , মূলত এ একটিমাত্র ইস্যুকে সামনে রেখেই ৩৩ বছরের ইতিহাসে শিবির দ্বিতীয় দফায় ভাঙনের মুখে পড়ল।

এর আগে ১৯৮২ সালে আরেক দফা ভাঙন হয় শিবিরে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতা বিদ্রোহ করে দল ত্যাগ করেছেন। আর এ সমস্যার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে মুখ থুবড়ে পড়েছে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। ইমেজসম্পন্ন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের এক্ষেত্রে ব্যবহার করেও শেষরক্ষা হচ্ছে না। বলতে গেলে পরিস্থিতি চলে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরেই।

আর এ কারণে শিবিরের দুর্গ বলে পরিচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কার্যক্রমে বিরাজ করছে চরম স্থবিরতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও সাধারণ নেতাকর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। অনেকেই দল ত্যাগের চিন্তা পর্যন্ত করছেন। শুধু তাই নয়, গত এক মাসে সারাদেশে গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীণ ৪ শতাধিক নেতাকর্মী ভেঙে পড়েছেন। তাদেরও অনেকেই আর শিবির না করার চিন্তাভাবনা করছেন।

, শিবিরে প্রচলিত মুজাহিদপন্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য গ্র“পগুলোর বিনাশ না ঘটলে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। এদিকে সভাপতিসহ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়ানোর ঘটনায়ও সাধারণ নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। শিবিরে বর্তমানে যোগ্যতা, দক্ষতা, মেধা আর আনুগত্যের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয় না। এক্ষেত্রে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ ও মহানগর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের অনুসারী হলেই সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম কার্যকরি পরিষদ বা কেন্দ্রীয় নেতা হওয়া যায়। মানের এ অবনতির কারণেই সংগঠন আজ ধ্বংসের মুখোমুখি।

সংগঠন চলে সভাপতিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী স্টাইলে। যে কারণে কেন্দ্রীয় সভাপতির মতো ব্যক্তি অজ্ঞাত স্থান থেকেই যেমন তর্জন-গর্জন করে যাচ্ছেন, তেমনি সংগঠনের অর্থ আÍসাৎ আর ফুলটাইম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার মতো অভিযোগও উঠছে তার বিরুদ্ধে। শিবিরের বর্তমান কমিটিতে যারা আছেন তাদের বেশিরভাগই মেধাহীন, অছাত্র। শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে সংগঠনের অর্থ আÍসাতের বাইরে ফোকাস-বগুড়া শাখার অর্থ আÍসাৎকারী ব্যক্তির কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একজন ফুলটাইম ব্যবসায়ী হয়েছেন সেক্রেটারি জেনারেল।

‘এলাকা ইজম’ ও ‘অয়েলিং’ করার কারণে আরও বেশ কয়েকজন হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা। এ অবস্থায় বর্তমান নেতৃত্বের কাছে সংগঠন নিরাপদ নয় বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। আর এ কারণেই সৃজনশীল, যুক্তিমনস্ক এবং প্রকৃত ত্যাগী ও আদর্শের প্রতি আনুগত্যশীল কর্মীদের কেউ কেউ বিদ্রোহ করেছেন ও সংগঠন ছেড়েছেন। আর শৃংখলার স্বার্থে যারা সংগঠনে আছেন, তারা হয়ে পড়েছেন নিষ্ক্রিয়। , সারাদেশের ১১৭টি সাংগঠনিক শাখার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত আছে।

বৃহত্তর সিলেট ও বরিশাল, চট্টগ্রাম মহানগর, ভোলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল ও বুয়েটসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীরা বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। , এ মুহূর্তে শিবিরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল দলকে একীভূত করা। সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ অন্যদের ওপর সাধারণ নেতাকর্মীদের আস্থার চরম অভাব চলছে। সেই সঙ্গে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে গ্র“পিংয়ের খবর। সত্য ধামাচাপা, মিথ্যা ওয়াজ আর বিদ্রোহীদের দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার ‘চর’ আখ্যায়িত করেও নেতাকর্মীদের বোঝানো যাচ্ছে না।

এক্ষেত্রে বিদ্রোহী ও দলত্যাগীদের পাশাপাশি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ব্যক্তিরা পর্যন্ত ‘মীরজাফর’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন নেতাকর্মীদের কাছে। যে কারণে বিভিন্ন শাখায় কমিটি করতে গিয়ে অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে ফিরে পর্যন্ত আসতে হয়েছে। নতুন কার্যকরি পরিষদ নির্বাচন করতে হয়েছে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে। অনেক শাখায় সময় বাড়িয়েও ভোটানুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। কামারুজ্জামান বাদ! : ভাঙনের পর শিবিরের যে কার্যকরি পরিষদ গঠন করা হয়েছে, তা থেকে বাদ পড়েছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামান।

শিবিরের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে পরিষদ গঠন করা হয়, তাতে সাবেক সভাপতিদের মধ্য থেকে ২ জনকে রাখা হয়। সর্বশেষ কামারুজ্জামান এবং রফিকুল ইসলাম খান ছিলেন ওই কমিটিতে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পর কামারুজ্জামান বিদ্রোহীদের দাবিকে যৌক্তিক বলে চিহ্নিত করেছিলেন। এছাড়া জামায়াতের আলী আহসান মুজাহিদের সঙ্গে তার একটা দূরত্ব রয়েছে। এসব কারণে বিশেষ করে শিবিরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে কামারুজ্জামানকে বাদ দেয়া হয়।

তার স্থানে আনা হয়েছে সাবেক সভাপতি সেলিমউদ্দিনকে। নির্বাচিত সবাই বাদ : বিদ্রোহের ঘটনার পর ফের কেন্দ্রীয় নেতা যে নির্বাচন হয়, তাতে সদস্যদের ভোটে পদত্যাগী ২৬ জনের মধ্যে ৮ জন নির্বাচিত হয়ে আসেন। কিন্তু এদের সবাইকেই বিভিন্ন অজুহাতে বাদ দেয়া হয়। এর মধ্যে কয়েকজনের ছাত্রজীবন জোরপূর্বক শেষ করে দেয়া হয়। আর কয়েকজন কথা বলতে না পেরে পরিষদ থেকে ওয়াকআউট করলে বহিষ্কার করা হয়।

দৈব কিছুর অপেক্ষা : শিবিরের কিছু নেতাকর্মীরা মনে করে , মুজাহিদ-রফিকুল ইসলাম খানসহ শিবিরের সাবেক নেতাদের একটি অংশের পকেটে যেভাবে সংগঠনটি চলে গেছে, তাতে দৈব কিছু ছাড়া আর সংগঠন রক্ষা করা সম্ভব নয়। অপেক্ষা ষাণ্মাসিক সেটআপের : শিবিরে ‘ষাণ্মাসিক সেটআপ’ বলতে একটি পরিভাষা চালু রয়েছে। সাংগঠনিক বছরের ছয় মাসের মাথায় গিয়ে যেসব নেতা সংগঠন থেকে বিদায় নিতে আগ্রহী বা যাদের সংগঠন থেকে বিদায় দেয়া প্রয়োজন তাদের পরিবর্তে নতুন নেতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। , নেতাকর্মীরা সেই ষাš§াষিক সেটআপের অপেক্ষায় রয়েছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.