রহস্যময় গ্যালাক্সি ঘুরে, অসীম আকাশে উড়ে আর সাগরের অতল গভীরে ডুবে আমৃত্যু পান করতে চাই ভালোবাসার অমৃত সুধা... মীরের উপস্থাপনা আর মীরাক্কেলের মারপ্যাঁচ দেখলে একদম মন্দ লাগে না অনুষ্ঠানটা। কিন্তু অনেক কথা যে বলতে মন চাচ্ছে। সকাল ১০টায় রেল লাইন ক্রস করে একটু সামনে এফডিসি'র নতুন গেইটের কাছে লাইনে দাঁড়ালাম। গেইটের দুইপাশ থেকে অনেক দূর পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ অডিশন দেবার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক বা জি বাংলার বা বাংলাদেশের যারা স্পন্সর করেছে তাদের কাউকে দেখতে পেলাম না।
হইহুল্লুড় অবস্থা। যেখানে লাইনগুলো একসাথে মিশে গেইট পেরিয়ে এফডিসি'র ভেতরে নিয়ে যাবে, সেই মোহনায় রীতিমত শারীরিক কসরত করে ঢুকতে হচ্ছে ভেতরে।
প্রায় ৩ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও যখন দেখলাম যে গেইটের কাছে এগিয়ে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই তখন বাধ্য হলাম মোহনায় যেতে। ভাবলাম রনি, ইশতিয়াক, জামিল, শশী, নয়ন, কায়েস এভাবেই ধাক্কা-ধাক্কি করে নিশ্চয়ই মকছুদে মনজিলে পৌঁছেছে? মনটাকে বোঝালাম অধৈর্য্য হইয়ো না একদিন মীর আমাকে নিয়েই রঙ্গ করবে মীরাক্কেলে?! এফডিসি'র গেইটে নামে মাত্র যে সিকিউরিটি আছে তা খুবই অপ্রতুল এবং দূর্বল। ভেতরে ঢুকে বোঝা গেলো এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক তো দূরের কথা পিয়ন বা ঝাড়ুদার পর্যন্ত নেই।
অথচ এখানে বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচন হয়, নেতা পাতিনেতারা দাপটের সাথে রাজ্য শাসন করেন। একজন এফডিসি প্রধানও এখানে নেতৃত্ব দেন। বিভিন্ন বিল্ডিং-এর দেয়াল খসে পলেস্তারা পড়ে যাচ্ছে। সিঁড়িগুলো নোংরা, বৈচিত্রহীন। ফুলের গাছ বা বৃক্ষরাজি শ্রীহীন, অবহেলা অযত্নে লালিত।
এখানেও লাইনে দাঁড়ালাম। কিন্তু ভদ্রলোকের সমস্যা অনেক প্রতিযোগীদের একজন বললেন ভাই এটাতো 'ভয়েস অব দ্য নেশন'-এর লাইন। আরে বলে কি? ঐ ছেলেটি আরও বলল- ভয়েস অব দ্য নেশন হচ্ছে গানের প্রতিযোগিতা। জিটিভি এটা আয়োজন করেছে। জিটিভি'র বাংলাদেশে অফিস আছে এটা জানি।
এরা স্বল্প পরিসরে গরীবীহালে কিছু প্রচারণা করেছে বিভিন্ন ল্যাম্পোস্টের স্ট্যান্ডে সুতলি বেঁধে সেটাও বাসে, গাড়িতে চলার সময় দেখেছি। এরা নাকি প্রতি প্রতিযোগীদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৫০০ টাকা করে নিচ্ছে। এরপর একটা স্লীপ দিচ্ছে।
লাইন পরিবর্তন করে অন্য লাইনের একদম শেষে যেয়ে দাঁড়ালাম। বাঁয়ে বিশাল এক বিলবোর্ডে কাজী মারুফের অনায়োকচিত আনস্মার্ট ছবিটি ঝুলছিল।
এখানেও প্রায় ২ ঘন্টা দাঁড়ানোর পর শুনলাম মীরাক্কেলের জন্যও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তবে কোনো টাকা লাগবে না। এফডিসি'র চার নম্বর ফ্লোরের যা অবস্থা ভাবলাম এখানে অত সুন্দর সুন্দর নায়ক নায়িকারা কিভাবে তাদের প্রেসটিজকে পাংচার করে ঢং করে সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন উঁচুমার্গের সাক্ষাতকার দেন?
সামনে একটা ভাঙ্গা সিঁড়ি । এখানেই আমাদের লাইনটা প্রায় শেষ। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন পেপার পাওয়া যাচ্ছিল না।
কোথায় পাওয়া যায়? সবাই বেশ ক্লান্ত আর শক্তিহীন হয়ে পড়েছে ততক্ষণে কিন্তু তীরে এসে তরী তো আর ডোবানো যায় না। কেউ কেউ চলেও গেছেন বাসায়। আমার পেছনে দাঁড়ানো ছেলেটি যখন বলল শুধুমাত্র মীরাক্কেলে অংশগ্রহণের জন্যই নীলফামারী থেকে সরাসরি এফডিসিতে এসেছেন তখন আমি উত্তরার একজন বেশ অনুপ্রাণিত হলাম। হঠাৎ কেউ একজন বলল- রেজিস্ট্রেশন পেপার শেষ হয়ে গেছে। আর অডিশন নেয়া সম্ভব নয় তখন প্রতিযোগীরা প্রায় ক্ষেপে গেলেন।
হইচই শুরু হলো। হট্টগোল আর গন্ডগোলের মাঝে নিজেকে অসহায় আর নির্বোধ মনে হলো।
আমার বউয়ের অনুরোধেই এখানে এসেছি। বউকে আচ্ছামত গালি দিতে ইচ্ছে হলো। অবশেষে শোনা গেলো কেউ একজনের কাছে বেশকিছু রেজিস্ট্রেশন পেপার আছে।
একলোক কাছে ঘেঁষে বলল- ভাই লাগবে? কাগজ? বললাম- কত? বলল- ৫০ টাকা। বললাম- বাবারে তাও ভালো যে ৫০০ টাকা চাও নি! অবশেষে আবারও লাইন ধরতে হলো। মানুষে মানুষে পিষে চ্যাপ্টা হয়ে তবেই না একটা রেজিস্ট্রেশন পেপার পেলাম। আহ কি শান্তি! মনে হলো মীরাক্কেলের গুগলি পেলাম। কোনো রকমে দাঁড়িয়ে ফরম পূরণ করে আবারও লাইন ধরতে হলো।
ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা, এ অপেক্ষার যেন শেষ নেই। মীরাক্কেল ৫-এর নয়ন, শশী, মীরাক্কেল ৬-এর কায়েসকে দেখলাম। শশীতো ইচিং বিচিং মেয়ে এখান থেকে সেখানে সেখান থেকে এখানে করে ছোটাছুটি করছে। বাদাম খাচ্ছে। পিচ্চি মেয়েটাকে যেন আরও পিচ্চি মনে হলো যখন লাইনের ফাঁক দিয়ে দৌঁড়াচ্ছিল।
কেউ বলছিল শুভঙ্কর এসেছেন। কেউ বলছিল মেন্টরদের সবাই অডিশন কক্ষে আছেন। অবশেষে সন্ধ্যায় ঢুকলাম অডিশন কক্ষে। সামনে বসা দু'জন পেপারটা নিয়ে কিছুই বললেন না। বুঝলাম না কিছু করে দেখাবো নাকি চলে যাবো? নিচু হয়ে বসে আছেন।
বললাম- ভাই কিছু করবো? কে যেন একজন বলে উঠলেন- কি আর করবেন হিসু করেন! তখন চাপও পেয়েছিল বেশ। সুযোগ পেয়ে যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন একজন বললেন- ভালো গান করেন আপনি, তো সকাল থেকে এই মীরাক্কেলের লাইনে না দাঁড়িয়ে ভয়েস অব দ্য নেশনে দাঁড়ালে ভালো করতেন। বললাম- একি কথা? ততক্ষণে আরেকজন যিনি আমার পেছনে ছিলেন ঢুকে পড়েছেন। বললাম- ভাই আপনি ঢুকলেন যে? বলল- কি করব বাইরে মাইর শুরু হইয়া গেছে গা।
বাইরে বের হয়ে বউকে কল দিলাম বললাম- বউরে বাংলাদেশের বিভিন্ন চ্যানেলের গানের বা অন্য যেকোন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের তো এমন অভিভাবকহীন অবস্থা দেখিনি? কত চ্যানেল, সংবাদ ব্যাকআপ, আপডেট আর স্বেচ্ছাসেবক দেখেছি অথচ এখানে তার কনাটিও নেই!? বাংলাদেশের মানুষদেরকে নিয়ে একটা ফান করা আর কি! মীরাক্কেলের দাদাদের বলতে চাই আপনারা আসলেই ট্যালেন্ট খুঁজতে এসেছেন নাকি বাংলার মানুষের হাবভাব বুঝতে এসেছেন? না হলে এতো নিরাপদ দূরত্ব রক্ষা করে অডিশন নিচ্ছিলেন কেন? এদেশের কয়েকজন ছেলেকে স্টার বানিয়ে ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন না তো? ছবিতে রেজিস্ট্রেশন ফরমের জন্য চাতক হাতগুলো কেমন করে বাড়িয়ে দিয়েছে দাদাদের দিকে! এবং একটি ফরমের স্টিল ছবি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।