আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টেলিভিশনে আযান প্রচারে ইসলাম বিদ্বেষী ব্রিটেনে তুমুল বিতর্ক

ব্রিটেনে রমজান মাসে আযানসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচারের ঘোষণায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। চ্যানেল ফোর টেলিভিশন আসছে রোজায় আজান প্রচারের উদ্যোগ নেয়ায় অনেকে বিষয়টি অন্যান্য ধর্মের মানুষের কাছে প্রতিক্রিয়াশীল একটি ধারণা বা উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে চ্যানেল ফোর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্রিটেনে ইসলাম দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং এর অধিকাংশ অনুসারীরা সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেন না। ‘রামাদান এ ডিং-ডং’ এমন শিরোণাম দিয়ে দি ডেইলি সান এক প্রতিবেদনে বলছে, টেলিভিশনে আযান প্রচার এক প্রকার ‘স্টান্ট’ এবং তা ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। সান প্রশ্ন তুলেছে পবিত্র মাস কী জুবিলি জয়šত্মীর চেয়েও বড়? অবশ্য চ্যানেল ফোর মনে করছে ডায়মন্ড জুবিলির চেয়ে পবিত্র রমজান মাস বেশি প্রাসঙ্গিক।

চ্যানেল ফোরের কর্মকর্তা রালফ লি দাবি করেছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ২৮ লাখ মুসলমান ব্রিটেনে রোজা পালন শুরু করতে যাচ্ছে। ব্রিটেনের অšত্মত ৫ ভাগ মানুষ রোজা রাখেন। রালফ বলেছে, আমি মানুষকে ইসলামের সেই দিকটি দেখাতে চাই যার সাথে সন্ত্রাসের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সমালোচকরা বলছে, সম্প্রতি এক জঙ্গীর হাতে লি রিজবি নামের এক সৈন্য মারা যাওয়ার পর যে উত্তেজনা দেখা যায়, টেলিভিশনে আযান প্রচারে তা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। সমালোচকরা এও বলছে, টেলিভিশনে আযান প্রচার নজর কাড়ার এক মূল্যহীন প্রচেষ্টা।

টরি দলের সংসদ সদস্য কনর বারনস বলেছে, চ্যানেল ফোরের মত অসাধারণ একটি টেলিভিশন রাজনৈতিক বিবেচনায় আযান প্রচারের সিদ্ধাšত্ম নিয়েছে যা সঠিক বলেই মনে হয়। তারা যদি খ্রিস্টানদের উৎসব যেমন লেন্ট’এর সময় এধরনের উদ্যোগ নেয় তাও সঠিক হবে বলে মনে করি। আগামী বৃহস্পতিবার চ্যানেল ফোর মুয়াজ্জিন হাসান রাসুলের আযান প্রচার করতে যাচ্ছে। এজন্যে টেলিভিশনটির নিয়মিত সম্প্রচারে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তবে আরেক ধর্মীয় নেতা আনজেম চৌধুরী যার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রবল, তিনি বলেছে, ইসলামকে উপস্থাপনের যে কোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

তিনি বলেছে, ব্রিটেনে ইসলাম খুবই দ্রুত সম্প্রসারণশীল মতবাদ এবং কোনো কোনো বিবেচনায় ২০১৫ সালের মধ্যে এ দেশটি মুসলিম দেশ হয়ে যেতে পারে। আবু জাকারিয়া নামে আরেক ধর্মীয় নেতা বলেছে, ব্রিটেনে শরীয়া আইন চালু হোক তা চাই, টেলিভিশনে আজান প্রচার সে লক্ষ্যে একটি অগ্রধাপ বলা যায়। এর আগে এ বছরের শুরুতে চ্যানেল ফোর ধর্মীয় নেতা আনজেম চৌধুরীকে একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর পর এ নিয়ে বেশ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তার পরিচালনায় একটি সংগঠন আল-মুহাজিরন নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আনজেম চৌধুরী ও আবু নুসায়বাকে চ্যানেল ফোরের রাতের সংবাদের পর দুই মিনিটের একটি অভিমত অনুষ্ঠানে সুযোগ দেয়া হয়েছিল।

চ্যানেল ফোরের কর্মকর্তা রালফ লি বলেছে, অধিকাংশ টেলিভিশনে ইসলাম নিয়ে সম্প্রচারের পেছনে সন্ত্রাসবাদিদের একটা সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। এমনকি মডারেট মুসলমানরা এধরনের উদ্যোগ নিলেও তাতে সন্দেহ পোষণ করা হয়। চ্যানেল ফোরে আজান প্রচারের সময় লন্ডনের বিখ্যাত এলাকাসহ সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল চার্চের ছবিও প্রচার করা হবে। আরবি ক্যালেন্ডারের নবম মাসে মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যা¯ত্ম পর্যšত্ম রোজা পালন করে। চ্যানেল ফোরের আবহাওয়া সংবাদেও সূর্যোদয় ও সূর্যা¯েত্মর সময় উল্লেখ করা থাকবে।

ইউরোপের কোনো মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেলে আযান প্রচারের এটিই প্রথম নজির। ‘চ্যানেল ফোর’-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ঘোষণায় জানানো হয়েছে , প্রথম রমজান থেকে ৩০ দিন ভোররাতে তিন মিনিট করে আজান সম্প্রচার করা হবে এবং অপর চার ওয়াক্তে টেলিভিশনে নামাজের সময় স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ওয়েবসাইটে তা সম্প্রচার করা হবে। ফজরের আযান প্রচারের আগে মাসজুড়ে ‘রামাদান রিফ্লেকশনস‘ (রমজানের ভাবনা) শীর্ষক দুই থেকে তিন মিনিটের একটি করে তথ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হবে। ‘চ্যানেল ফোর’ বলছে, যাঁরা ইসলামকে সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন, সেসব দর্শকদের লক্ষ্য করে ‘উদ্দেশ্যমূলক উসকানি’ হিসেবে তারা এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। চ্যানেল ফোর বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হলেও কিছুটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা (লাইসেন্স ফি-র একাংশ) পেয়ে থাকে।

রালফ লি আরো বলেছে, উলইচে আফগানি¯ত্মান ফেরত সৈনিকটিকে এক ইসলামী জঙ্গীর কুপিয়ে হত্যার পর তার প্রতিশোধ হিসেবে ব্রিটিশ মুসলিমদের ওপর সংঘটিত হামলাগুলোর পটভূমিতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যপন্থীদের পক্ষে দাঁড়ানো এখন সবচেয়ে জরুরি। এটি ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, যুক্তরাজ্যে যে কটি ধর্মের এখন প্রসার ঘটছে তার মধ্যে ইসলাম অন্যতম। চ্যানেল ফোরের দর্শকেরা তরুণ এবং সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ব্রিটিশ মুসলমানদের অর্ধেকই পঁচিশ বছরের কম বয়সী। ব্রিটেনের মসজিদগুলোর ইমাম ও পরিচালনা পর্ষদের প্রতিনিধিদের সংগঠন ‘মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন’ চ্যানেল ফোরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। রালফ লি আরো বলেছে, আযান প্রচারে শুধু মুসলিম নয় অন্য ধর্মের মানুষও এ সম্পর্কে অবগত হতে পারবে।

এটা ঠিক যে এজন্যে আমাদের চ্যানেলকে সমালোচনা সহ্য করতে হবে তবে সংখ্যালঘুদের একটা কথা বলার জন্যে ক্ষেত্র করে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বক্তব্য সামাজিকভাবে উপস্থাপন করারও একটা সুযোগ মিলবে। তবে ব্রিটেন ফার্স্ট নামে একটি গ্রুপ আযান প্রচারের বিরোধীতা করে চ্যানেল ফোরকে বয়কটের আহবান জানিয়েছে। তবে ব্রিটেনের টেলিভিশনগুলোতে ধর্মপ্রচারের ব্যাপারে বেশ বিধিনিষেধ রয়েছে। ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে টেলিভিশন পরিচালনার সুযোগ দেয়া না হলেও বেশকিছু ধর্মীয় রেডিও ও স্যাটেলাইট অথবা ডিজিটাল চ্যানেল কাজ করছে। তবে বিবিসি বা আইটিভির মত প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান কর থাকে।

এর আগে ক্যান্টেবারির আর্চবিশপ টেলিভিশনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছিলেন, কিছুক্ষেত্রে এধরনের অনুষ্ঠান ‘বিপদজনক’ ঘটনা ও অজ্ঞতার সৃষ্টি করছে। তবে রেভারেন্ড জাস্টিন ওয়েলবি ভাল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রশংসা করেছেন। ন্যাশনাল সেক্যুলার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট টেরি স্যান্ডারসন বলেছে, ব্রিটেনে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে এবং টেলিভিশনে আজান প্রচার প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছে, বছরে যদি বিবিসি শত শত ঘন্টা খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারে তাহলে সংখ্যালঘুদের জন্যে কয়েক মিনিটের আযান প্রচার অযৌক্তিক নয় মোটেও। সুত্র ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.