এতকিছু ... ওই সিনেমার জন্যই... উৎসর্গের গল্প
যুবতীরা যখন স্নানে মগ্ন, শানবাঁধানো ঘাটের চাতালে কয়েকজন বালক, আর শিশু- যাহারা ইদানীং মাতৃস্তন্য হইতে বঞ্চিত- খেলিতেছিল। এক যুবতী স্নান সম্পন্ন করিয়া চাতালে উঠিলেন। তিনি বসন ত্যাগ করিয়াছেন, অধুনা পরিচ্ছদ একখানা সায়ামাত্র, যাহা জলসিক্ত সুস্নিগ্ধ স্তনদ্বয়ের বোঁটার উপরে বাঁধা। ঘাটের এক কোনায় তাহার শাড়ি। তিনি শাড়ির নিম্নে হস্ত প্রসারিত করিয়া ব্রা বাহির করিলেন এবং প্রথমে মালার মত গলায় পরিলেন।
সেই ববন্ধনী বরে উপর নামাইতে গিয়া- আহা কী বিভ্রম- তাহার সায়ার গিঁট খুলিয়া গেল। মুহূতে কী যে ঘটিয়া গেল, স্ত্রীলোকের কোনো সতর্কতাই কাজে আসিল না, একটা অনিন্দ্য স্তন বাহির হইয়া পড়িল এবং আকস্মিক ত্রস্ততায় তাহাতে যে কম্পন জাগিল, রিখটার স্কেলে তাহার মাত্রা সাতের কম নয়।
ঘটনার আরো বাকি ছিল। পূর্বোক্ত শিশুদিগের একজন- মাতৃস্তন্য হইতে বিতাড়িত হইয়াছে বেশিদিন হয় নাই- এক উৎফুল বাক্য পরিবেশন করিল- ‘দুধ দুধ’।
‘যাঃ’- যুবতী শিশুটিকে ভর্ৎসনা করিয়া ঘুরিয়া দাঁড়াইলেন।
কিন্তু পশ্চাৎ তাহাকে আকর্ষণ করিল। সেই চোখ এক বালকের। যুবতী বালকের চোখে চোখ রাখিলেন। তাহাতে রঙের পোশাক, লজ্জা।
বালক বলিতে চাহিল- ‘আমি দেখি নাই।
’ বালকের মুখে কোনো বাক্য আসিল না। আসিলে তাহা মিথ্যা হইত। বালক তখনো মিথ্যা বলিতে শিখে নাই।
শীতের স্তন
বিদেশী আপেলের সহজতা নিয়ে অনেক দূরের পথ মাড়িয়ে মৃত্যু এসেছিল। আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে একটি আলোকবর্ষের মতো দীর্ঘ মায়ামাঠ হেঁটে গেছি; অবিশ্রাম উদ্যমে আশ্বিনের আদিগন্ত ধানক্ষেত পেরিয়েছি মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়েই।
পথে পথে ধানের সহোদরা জোনাকিদের বলেছি---‘তোমাদের সব আলো নিভে যাবার আগেই আমি এই পথে ফিরে আসব। অপেক্ষা করো, তোমাদের সঙ্গে যাব। ’
সত্যি ফিরেছি আমি, একাকী ফিরেছি। তখন মাঠে মাঠে নাড়ার আগুন। একটিও জুনিপোকা নেই।
সুদর্শন নেই।
অথবা আছে, হেমন্তশেষে শীতের স্তনের মতো যে আগুন জ্বলে উঠেছে, তার আভায় একটি জোনাকিও দেখা যাচ্ছে না।
দোনামোনা
দাইমা আমাকে বিশ্বাস করিয়েছিলেন যে আমার জন্ম জলভাগে। সেখানে বড় বড় সরীসৃপ মাছ-খেকো দেবাংশী সোনালি বুক অক্টোপাস আর অসংখ্য পাহাড় ও প্রবালের মধ্যে আমরা খেলেছিলাম বেঁচেছিলাম।
আশ্চর্য কেচ্ছাকার দাইমা আমার---আমি সব দেখেছি, মনে করতে পেরেছি।
যে ফুলকো বিপুল জলে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল সে আর নেই, ফুসফুসের ওপরে তার চিহ্ন রয়ে গেছে।
দাইমা আমার মা অথবা মা-ই দাইমা আমাদের। মাছেদের এরকম হয়। অশেষ ভাই-বোন আমাদের মাছেদের।
শুধু মনে নেই কে আমাদের এমন রুক্ষ ডাঙায় ঠেলে দিয়েছে।
এই তীব্র আতপে কখন এলাম! কোনো ভূমিকার কথা মনে পড়ে না যেখানে জলচরেরা একবার অন্তত বলবে---দেখা হবে!
সমুদ্রের টান এলে গুছিয়ে নিতে কেন এত দোনামোনা লাগে?
ভয়ঘণ্টা
বিশাল ব্রিজের নিচে দিনের প্রথম অন্ধকার নেমে এল। সারি সারি রেললাইনের দীর্ঘ পিঠের ঝিলিক আসছে শুধু। কতগুলো রুপালি ভূতের লম্বা শিরদাঁড়া জেগে উঠতে উঠতে অজগরের পেট, তারপরে আর কিছু নেই।
ভয়ে আমরা সেখানে পালিয়ে গেছি। রেলের সিঁড়ি বেয়ে দৌড়েছি রাতভর।
খুব ভয় পেয়েছি তবু সহসা ফিরিনি। বিরামহীন ভীতির ঘণ্টা বাজছিল যেখানে সেখানে আমার হাত রেখেছিলে তুমি। সেখানে তোমার দিনরাত্রির সব গন্ধ জমা হয়েছিল। আমার হাতের নিচে ভয় যেন বোবা ও ভোতা হয়ে এসেছিল।
কম্পন ও স্পর্শ আমাদের একাগ্র করে রেখেছে।
আমরা দৌড়ে চলেছি একবার স্টেশনের দিকে মুখ করে আরবার দূরের লাল সিগন্যাল পেরিয়ে, নিরুদ্দেশে...
জাফর আহমদ রাশেদ
জন্ম : ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭০, খাস্তগীর পাড়া, সূচক্রদণ্ডী, পটিয়া, চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর, ১৯৯২ সালে। মূলত কবি, পাশাপাশি গদ্যচর্চাও অব্যাহত রেখেছেন। তার বই তিনটি। কাচের চুড়ি বালির পাহাড়, পদ্য, ১৯৯৭ যজ্ঞযাত্রাকালে, পদ্য, ২০০১ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প: জীবনোপলব্ধির স্বরূপ ও শিল্প, গদ্য ২০০১ সম্পাদনা আড্ডারু, ১৯৯২-১৯৯৪
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।