পৃথিবীটাকে যেমন পেয়েছ তার থেকে সুন্দর করে রেখে যেতে চেষ্টা কর লিখেছেন ফজলে মাহবুব জয়
লিখার প্রথমেই বলি, আমি জাফর ইকবাল স্যার এর অন্ধ অনুসারি নই। কিন্তু বেশ পছন্দ করি বটে। আমার লিখা হয়তোবা আপনার কাছ পর্যন্ত পৌঁছাবে না, কিন্তু আপনার লিখা পড়ে কিছু না চিন্তা করেই এই লিখাটি লিখতে বসলাম।
লেখার শুরুতেই আপনি আপনার দৃঢ় বিশ্বাস হিসেবে বললেন স্যার এর চিন্তা ধারার চাইতে একজন রিক্সাওয়ালার চিন্তা ধারা অনেক উন্নত। কার চিন্তা ধারা কতটুকু উন্নত এই বিচার আমি করতে যাব না, শুধু একটা ঘটনা বলব...... এই কিছুদিন আগের কথা, রিক্সায় চরে যাওয়ার সময় এক ভদ্রলোক বলছেন, “ কি দরকার ৪০ বছর পুরনো জিনিস ঘাটার? মুক্তিযুদ্ধে কে কি করছে এটা নিয়া এখন বিচার কইরা লাভ আছে? হুদাই গেঞ্জাম লাগায় সরকার!!” রিকশাওালা তৎক্ষণাৎ রিকশা থামিয়ে পিছন ফিরে বললেন, “ ও তুই জামাতি, না? নাম এক্ষণ রিকশা থেকে।
জামাত রাজাকার থেকে খালি রিকশা টানা সোয়াবের কাম। ” ...... হয়তোবা জাফর ইকবাল স্যার জামাতিদের সরাসরি কুত্তা বলতে পারেননি কিংবা বলেননি। তাই হয়ত এই রিকশাওালার চিন্তাধারা তাঁর চাইতে অনেক উন্নত।
আপনি কপট ভালবাসার কথা বললেন, তাঁর লোক দেখান ছলনার কথা বললেন। আমি জানি না তরুন প্রজন্মের জন্য ভালবাসা তাঁর কতটুকু সত্য, আমি জানি না শিবির কর্মী দের জন্য তাঁর হতাশা কতটুকু কপট, জানার কথাও না।
উনার মনের মাঝে তো আমি ঢুকে বসে নেই, তাই না? আপনি হয়ত মানুষের মনের খবর রাখেন। তাই বলে দিতে পারেন কার ভিতরে কি আছে। ভাল গুন। পারলে দেশবাসীকে একটু শিখিয়ে যাবেন, আমরা আবার ভাল মানুষ চিনি না তো! আমরা জামাতি দের চিনি না তো, আমরা মুজাহিদ, নিজামি, আজম দের চিনি না তো! হয়ত এই গুন পেলে আর জাফর স্যার এর মত দেশপ্রেমিক কে না চিনে ওদের মত নরকের কীট দের চিনব, তাইনা?
আপনি নাকি খুব ভালো করেই জানেন যে, উনার কাছে ইসলামপন্থী ছেলেমেয়ে এবং শিবির, হিজবুত ইত্যাদির মাঝে কোন তফাৎ নেই। কখনও তাকে কাছা কাছি গিয়ে দেখেছেন? দেখেছেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কিভাবে আছেন? জানেন তাঁর প্রতিটা ছাত্রছাত্রি (শিবির কর্মী ব্যাতিত) তাঁকে কি পরিমান পছন্দ করে? এখন বলে বসবেন না যে শাহজালালে যারা বিনা শিবির সবাই অমুসলিম।
জানেন না। জানবেনও না। থাকেন ঢাকায়, পড়াশোনা ঢাকায়, লাফালাফিও ঢাকায় থেকে করেন। ফেবুতে মনগড়া কথা খুব সুন্দর করে লিখা যায়। কিন্তু বিসমিল্লা দিয়ে শুরু করে যে মনগড়া কথা এইভাবে কোন মানুষ লিখতে পারেন তা জানা ছিল না!
আপনি বলছেন, তিনি নাকি তাঁর লিখায় ধর্ম ছেড়ে রবীন্দ্রনাথ শোনার কথা বলেছেন।
আমি লিখাটি এই নিয়ে সপ্তম বারের মত পরলাম। কোথাও পেলাম না! ! ! তবে হ্যা, ধর্মান্ধ আর সাম্প্রদায়িক বলে দুটো শব্দ পেয়েছি। এখন আমি এটা বুঝলাম না যে, ধর্মান্ধ না হতে বলার সাথে ধর্মকর্ম ছেড়ে দেয়ার কি সম্পর্ক? আপনি কি ধর্মান্ধ শব্ধের সঠিক ভাবার্থ জানেন? জানলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই আজব লিখাটি লিখতেন না। আর মহানবী (সঃ) নিজেই বলেছেন, তোমরা ধর্ম অনুসারি হউ, ধর্মান্ধ না।
এর পর আরেকটা জিনিস আমি বুঝলাম না যে, প্রেম ভালবাসার সাথে লিটনের ফ্লাট এর কি সম্পর্ক? জাফর স্যার এর লিখাটি পড়ে মনে হল তিনি নির্মল এবং সুস্থ প্রেমের কথা বলেছেন, যা সমাজে গ্রহণীয় (যদিও আপনাদের মত মানুষের কাছে প্রেম মাত্রই অসুস্থ) ।
ছেলে এবং মেয়ের মাঝে যে একটা সুস্থ সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে তা তো আপনাদের মত পরগাছা কখনই জানতে পারবে না। আমি নিজে শিবির অধ্যুষিত কলেজে পড়াশোনা করেছি। দেখেছি কি চেইন রি অ্যাকশান হয় যখন দুটি ছেলে মেয়ে একসাথে কথা বলে। যে বয়ান ছাড়েন একেক জন! বাব্বা! এইটা আমি এখনও বুঝে উঠতে পারি নি যে, দুটো ছেলে মেয়ে যদি ক্যাম্পাসে বসে বাদাম খেতে খেতে আড্ডা দেয়, তাহলে কোন দিক দিয়ে এটা দেখতে খারাপ দেখায়? আল্লাহ ভাল জানেন!
আপনি যুদ্ধ পরবর্তী সকল ধর্ষণ, প্রেম বিষয়ক আত্মহত্যা, সেক্স ভিডিও এর জন্য তাঁকে দায়ি করলেন। এই বিষয়টাও কেমন যেন মাথার উপর দিয়ে গেল।
স্যার এর অনেক বই পরেছি, অনেক আর্টিকেল পরেছি। কখনও মাথায় আসেনি এই ধরনের কিছু কর্ম সাধন করার চিন্তা। যতবারই তাঁর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই গুলো পরেছি, মাথায় এসেছে জামাতি রাজাকার দের টুটি চেপে ধরার কথা, মাথায় এসেছে একটিবার, শুধু একটিবার গোলাম আজমের গালে চড় দেয়ার কথা। কই? ধর্ষণ কিংবা সেক্স ভিডিও এর কথা আসেনি তো! যারা এই ধরনের কাজ করে তার যদি বই পরেই করে থাকে তাহলে আমি বলব তারা এই সব অশ্লীল চিন্তা পায় রাস্তার ওই সকল বাজে বই থেকে। যে সকল বইয়ে উন্মুক্ত ভাবে যৌনতার কথা লিখা থাকে, লিখা থাকে কাম বাসনার কথা।
আর মজার বিষয় জানেন কি? বেশির ভাগ বিক্রেতাদের মাথায় থাকে টুপি আর পরনে থাকে পাঞ্জাবি। ধর্মের প্রতি অসম্মান আমার নেই। তবুও বলছি একটু ভেবে দেখবেন বিষয়টা। পারলে দুই একটা বই পরবেন জাফর স্যার এর।
আপনি বার বার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, নোংরামির কথা বলেছেন।
একবারও বোমাবাজি, রগ কাটা কাটি কিংবা বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ এর কথা বলেননি। আপনি বলছেন যে, জাফর ইকবালের মত মানুষ না থাকলে পৃথিবী সুস্থ মানুষের বসবাসের যোগ্য হয়ে উঠত। মানে কি দাড়ায়? বোমাবাজি, রগ কাটা ইত্তাদি থাকলে খুব ভাল ছিল, তাই না? বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা নৈতিকতা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বেঁচে থাকাটা অনৈতিকতা? মুক্তবুদ্ধি মানে কি আপনি জানেন? এর সংজ্ঞা সম্পর্কে আসলেই আপনার কোনও আইডিয়া আছে? মনে হয় না। ছেলেমেয়ে একসাথে মিশলেই দোষ, কিন্তু একটা মেয়েকে দেখে তার পাছার মাপ নিয়ে গবেষণা করা দোষের না, আর এই কাজটাই কিন্তু করে আপনার মত নিচু মনা মানুষেরা।
আপনি এর পর বিশাল আকারে হাদিস, কুরআন দিয়ে অনেক কথা বলে গেলেন।
আমি আগেই বলেছি ধর্মের প্রতি পূর্ণ সম্মান আমার আছে। তাই হাদিস কুরআন নিয়ে কোন বিতর্কে আমি যাব না। শুধু আপনার প্রতি আমার একটাই অনুরোধ, ধর্ম অনুসারি হন, ধর্মান্ধ না।
জাফর স্যার তরুন প্রজন্ম নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, ছেলে মেয়ের মাঝে বিভেদ ভুলিয়ে দিতে চান, নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তবুদ্ধির প্রচলন করতে চান আর তাই হয়ে যায় নৈতিকতার বিরোধী। যদি এই হয় আপনার মত মানুষদের চিন্তাধারা তবে ধিক্কার আপনাকে, আপনার মত মানুষদের চিন্তাধারাকে।
হয়ত এই লিখা আপনার কাছ পর্যন্ত পৌঁছাবে না, হয়তো অনেক মতবাদ সৃষ্টি হবে, অনেকেই আমার উপর রুষ্ট হবে। বাট ওয়াট টু ডু? জাফর স্যার কে অনেক পছন্দ করি তো, তাই না লিখে পারলাম না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।