আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্টোরী বিহাইন্ড দি ফটোগ্রাফ

স্বপ্ন জেগে থাকে নান্দনিকতার মাপকাঠিতে অত্যন্ত নান্দনিক এবং একইসাথে অত্যন্ত রোমহর্ষক এই ছবিটি ফটোগ্রাফির একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। একটি মাত্র ছবি দিয়ে অনেক কথা ব্যক্ত করা যায়। কিন্তু এই ফটোগ্রাফটি সম্পর্কে ফটোগ্রাফারের উক্তি, "When you say a picture tells a thousand words, this one certainly told 10,000" পেছনের গল্প: দিনটি ছিল ২২শে জুলাই, ১৯৭৫। বোস্টন ভিত্তিক পত্রিকা "বোস্টন হেরল্ড" এর ফটোগ্রাফার "স্টেনলী ফরম্যান" অফিস শেষে বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এইসময় একটি ফোন কল আসে।

জানতে পারলেন শহরতলীর পুরাতন অংশের কোন একটি এপার্টমেন্টে ভয়ংকর আগুনের সুত্রপাত হয়েছে। আপাতত বাসায় ফেরার চিন্তা বাদ দিয়ে তিনি তৎখনাত অফিস থেকে বের হয়ে পড়েন। এবং ফায়ার ব্রিগেডের একটি গাড়ির পিছু নিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌছে যান। জলন্ত এপার্টমেন্টটির পিছন দিকটাতে ফায়ার ফাইটাররা ততক্ষনে উদ্ধার অভিযান শুরু করে দিয়েছেন। কারন ঐ পাশটাতেই আটকে পড়া মানুষজন উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করছিলো।

স্টেনলী বিল্ডিংটির পঞ্চম তলায় একজন আতংকিত তরুণী ও শিশুকে দেখতে পান। তারা আগুনের প্রচন্ড তাপ থেকে বাঁচার জন্য বিল্ডিংটির একেবারে প্রান্তে ফায়ার এস্কেপ লেডারের উপর দাড়িয়ে ছিলেন। "বব ওনীল" নামে একজন ফায়ার ফাইটার যিনি বিল্ডিংটির সামনের অংশ দিয়ে ছাদে উঠে পড়েছেন তিনিও এইসময় তাদেরকে দেখতে পান। তিনি তরুণী ও শিশুটিকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যান। আর স্টেনলী ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত হন মুহুর্তটি ক্যামেরা বন্দী করার জন্য।

তিনি ভাবছিলেন ব্যপারটা আর আট দশটা উদ্ধার অভিযানের মতই হবে। বব শিশুটিকে নিজের কাছে আনার জন্য নিচু হয়ে একটি পা লেডারের উপর তুলে দেন। আর তখনই কোন রকম পূর্বাভাষ না দিয়ে চোখের নিমিষে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে যায়। বব এর পায়ের নিচে লেডারটি হঠাৎই ভেঙ্গে পড়ে। ফায়ার রেসকিউতে অভিজ্ঞ বব কোনমতে ঝুলেপড়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও তরুণী ও শিশুটি অসহায় ভাবে নিচের দিকে পড়তে শুরু করেন।

স্টেনলি জাত ফটোগ্রাফার ছিলেন। তিনি ঘটনার আকষ্মিকতায় হতভাগ হয়ে পড়লেও নিচে পড়ার মুহুর্তটি তুলতে সক্ষম হন। ঐদিন রাতেই ডায়না ব্রায়ান্ট নামে মাত্র ১৯ বছরের ঐ তরুণী হাসপাতালে মারা জান। শিশুটি তার দুই বছরের কন্যা টিয়ারি জোন্স। সে সৌভাগ্যবসত সরাসরি মায়ের শরীরের উপরে পড়ে যেটা তার জন্য অনেকটা কুসনের মত কাজ করে।

ফলে কাকতালীয় সে ভাবে বেঁচে যায় ! বোস্টন হেরল্ড সর্বপ্রথম ছবিটি প্রকাশ করে। তারপর সারা পৃখিবী জুড়ে আরো অসংখ্য পত্রিকায় ছবিটি প্রকাশ হলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে। একজন মহিলা ও শিশুর চরম অসহায় মুহুর্তের ছবি তোলার জন্য অনেকেই স্টেনলীর প্রতি নিন্দা প্রকাশ করেন। কিন্তু স্টেনলী কখনই এই ছবি তোলার জন্য অনুতপ্ত ছিলেন না। তাঁর যুক্তি খুব স্বাধারন, "আমি যখন ছবিটি তুলেছি তখন মহিলাটি জীবিত ছিলেন।

তিনি পরে হাসপাতালে মারা যান। পত্রিকার প্রথম পাতায় নিশ্চই একজন মৃত মহিলার ছবি ভাল দেখাত না। তাই ফটোগ্রাফার হিসেবে আমি পক্ষপাতমুলক আচরন করেছি। " স্টেনলী ফরম্যান সমালোচনা সত্বেও তাঁর এই কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ছবিটি ১৯৭৫ সালের "World Press - Photo of the Year" নির্বাচিত হয়। পরে অবশ্য ছবিটি অন্য ক্ষেত্রেও বিশাল অবদান রাখে।

এটি সারা পৃথিবী জুড়ে সমস্ত ফায়ার ফাইটারদের তাদের সেফটির ব্যপারে আরও সচেতন করে তুলতে এবং আমেরিকা জুড়ে বাড়ি মালিকদের তাদের ফায়ার এস্কেপ এর ব্যপারে আরো বেশি সজাগ করে তুলতে অনন্য ভূমিকা রাখে। যাইহোক, ছবিটি তোলা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, স্টেনলী সম্ভবত সঠিক কাজটিই করেছিলেন। একজন ফটোগ্রাফারের কাছে তার ছবি তোলার দায়িত্বটাই সবচেয়ে বড় হওয়া উচিত। তিনি নিজের সমস্ত আবেগকে নিয়ন্ত্রন করে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করে চরম পেশাদারিত্বের পরিচয়ই দিয়েছিলেন। আগুনে আটকে পড়া মানুষদের নিয়ে বেশ কিছু বিখ্যাত ফটোগ্রাফ আছে।

কিন্তু আমার কাছে এটাকেই সেরা মনে হয়েছে। তাই শেয়ার করলাম। ভাল লাগলে জানাবেন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।