soroishwarja@yahoo.com মা, মায়ের কাছে এবং সন্তানের কাছে এই ডাক না কি খুব মধুর। বিশ্বের সব মানুষের কাছেই সবচেয়ে প্রিয় শব্দ এটি। শুধু এক এক ভাষায় উচ্চারণটা একেক রকম।
সন্তান তার মাকে বলছে, প্রতিদিন মায়ের নির্জন মুহূর্তগুলো খানখান করে দিয়ে বলছে, জন্মের আগেই খুন হয়ে গেলাম মা। তোমরা আমাকে পৃথিবীতে আসতেই দিলে না।
আমার তো কোনো দোষ ছিল না। দোষ থাকলে তোমার ছিল, বাবার ছিল। অপরাধ করলে তোমরা, আর প্রণ দিলাম আমি। তোমাদের পৃথিবীতে শেয়াল-কুকুরেরাও তো বাঁচে। আমি না হয় সেরকমই বাঁচতাম! সুন্দর পৃথিবীতে ভালোভাবে বাঁচার স্বার্থে আমাকে মেরে ফেললে।
আমারও পৃথিবীতে বাঁচার সাধ ছিল।
নির্জন মুহূর্তগুলোতে অনাগত সন্তান এসে যখন কানে কানে এসব বলতে থাকে তখন মাথা গুঁজে চুপচাপ কান্না ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। মনে মনে তিনি যেন তাই বলেন সন্তানকে, প্রিয় সন্তান, আমার কিছুই করার ছিল না। আমি নিরুপায়, তোমার মা বড় অসহায়। তোমাকে খুন করে আমিও তো সুখে নেই।
সন্তানকে খুন করে কি কেউ সুখী হতে পারে? আমিও সুখী হতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করো। তোমাকে খুন করে আমি কী বেঁচে আছি, আমিও তো খুন হয়ে আছি মানসিকভাবে।
এই কথোপকথন আমাদের দেশের লাখো মায়ের এবং তাদের লাখো অনাগত সন্তানের। এভাবেই তাদের কথা হয়, মনে মনে, নির্জনে।
কখনো কখনো এই মায়েদের তাড়িয়ে ফেরা অপরাধবোধ তাদের মানসিক ভারসাম্যহীন করে দেয়। তথন অধিকাংশ সময় বলা হয়, ভূতে ধরেছে, প্রেতাত্মা ভর করেছে। চলে ঝাড়ফুক তুকতাক।
এই রকম মানসিক সমস্যায় ভোগা এক মাকে জানি। যিনি শুধু বলতেন, আমি তোকে খুন করব, আমরা মায়ে-পুতে মিলে তোকে খুন করব।
এসব কথা বলতেন আর হাত নিশপিশ করতেন, দাঁত কিড়মিড় করতেন। ওই মায়ের গ্রামের মানুষ যে বলত, তাকে ভূতে ধরেছে, কথা কিন্তু মিথ্যা বলত না। ভূত মান তো অতীত। অতীত ওই নারীকে তাড়া করত। অতীতের অনাগত সন্তান, যাকে গর্ভপাতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল, সেই সন্তানের আত্মা যেন বারবার জবাব চেয়ে তার কাছে এসে আর্তনাদ করত।
পরিবারের বাইরের কেউ তা জানত না। পরিবারের লোকজনের কাছে স্বাভাবিক ঘটনা হলেও ওই নারীর কাছে, ওই মায়ের কাছে তা স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না।
আমাদের দেশে গর্ভপাত করা মায়ের সংখ্যা কত? আমদের দেশে খুন হওয়া ভ্রূণের সংখ্যা কত? আমাদের দেশে খুন হওয়া অনাগত সন্তানের সংখ্যা কত? আমাদের দেশে অবৈধ সন্তানের অপবাদ নিয়ে বাঁচার চেয়ে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন কত মা?
অনাগত সন্তানের খুন হওয়ার কথা ভেবে প্রতিদিন মানসিক অস্থিরতায় ভুগেন, দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায় কত নারীর?
এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর মিলবে না। শুধু মিলবে কিছু কাগুজে হিসাব। ২০১০ সালে করার ইউনিসেফের এক হিসাবে আছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গর্ভবর্তী হন ২ কোটি ৫০ লাখ নারী।
গর্ভজনিত মারাত্মক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তাদের মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার। ১৯৯৭ সালে করা অ্যালান গাটমাসের ইনস্টিটিউটের এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের নারীদের হাজারে ২৮ জন প্রতিবছর প্ররোচিত হয়ে গর্ভপাত ঘটান। প্রতিবছর গর্ভপাত-পরবর্তী জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তি হন ৫০ হাজার নারী। প্রতিবছর গর্ভের সন্তান নষ্ট করেন ৭ লাখ ৩০ হাজার নারী। এমআরের মাধ্যমে গর্ভপাত করেন ৪ লাখ ৬৮ হাজার নারী।
এই নারীদের জন্য, এই মায়েদের জন্য, এই অনাগত সন্তানদের জন্য, আমরা কী কিছুই করতে পারি না। এদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল আছে। কিন্তু মানসিক ও সামাজিক শুশ্রূষার জন্য এদের কী কেউ আছে? যেসব পরিবারে এ ধরনের ঘটনা ঘটে সেসব পরিবারের কয়টা তাদের সহমর্মী হয়ে পাশে দাঁড়ায়? যেসব অনাগত মুখ এসব মায়েদের কানে ও মনে আর্তনাদ করে ফেরে তাদের বাঁচানোর জন্য কী আমরা কিছু করতে পারি না?
আসুন ভেবে দেখি, আসুন এরই সঙ্গে এ সংকান্ত আরো একটি লেখা পড়ে দেখি। লেখাটি আমার এক বন্ধুর। তিনি ভ্রূণহত্যা বন্ধে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকিতে থাকা মায়েদের সামাজিক ও মানসিক শুশ্রষার জন্য কিছু করতে চান।
আসুন আমরা তাকে অন্তত সহযোগিতা করি।
ভ্রণহত্যা বন্ধ হোক
আব্রাহাম চৌধুরী
ভ্রণহত্যা ও মাতৃত্ব বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পষ্টকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ। সীমিত ও অপরিপক্ক জ্ঞান নিয়ে এসব তাত্ত্বিক আলোচনা করা খুবই মুশকিল। তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর তাই লিখছি একটা অতৃপ্তি নিয়ে।
কারণ অনেক দিন যাবত একটা পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চেতনা শক্তি আমার মধ্যে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে। যে বিষয়ে আমি অজ্ঞ, কিছুই জানি না, সে বিষয়ে সবসময় বিশেষজ্ঞ ও শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শ নেবো। সুতরাং আমার এমূর্খতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
বাংলাদেশের মেয়েদের প্রথমবার ঋতুমতী হওয়ার গড় বয়স স্বাধারণত ১২ বা ১৩। খাদ্যাভ্যাস, শরীরের গঠন এবং পারিবারিক ইতিহাসের ভিন্নতার কারণে মেয়েদের ঋতুমতী হওয়ার বয়স বিভিন্ন হতে পারে।
প্রথমবার ঋতুমতী হওয়ার পর থেকেই তারা গর্ব ধারণের উৎকর্ষতা অর্জন করে। নিন্ম বর্নিত বিভিন্ন সামাজিক অথবা অসামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনাচরণে যৌন সম্ভোগের কারণে মেয়েরা গর্ব ধারণ করতে পারে। যেমন -
১। ধর্ষন
২। রোমাঞ্চকর সম্পর্ক
৩।
কর্মস্থল
৪। সামাজিক কর্মকাণ্ড
৫। অশিক্ষা-কুশিক্ষা বা অজ্ঞানতা
৬। চরম দারিদ্রতা
৭। বৈবাহিক সম্পর্ক
বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতি এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যতীত নারী-পুরুষের দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা অবৈধ; এবং তা ব্যভিচার বলে ধর্তব্য।
এধরণের দৈহিক মিলন পৃথিবীর কোন ধর্মই অনুমোদন করে না। নারী-পুরুষের অবাধ যৌনাচার মরন ব্যধি এইডস্ সহ বিভিন্ন যৌন বাহিত রোগ সমূহের সংক্রমণ দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। অবাধ, অবৈধ যৌন মিলন ও ব্যভিচারের ফলে নারীর গর্বে জন্ম নেয় নিষ্পাপ হাসিমাখা স্নিগ্ধ শিশু। আর তখনই বিবর্ণ হয়ে যায় আমাদের হৃদয়ের রঙিন অনুভূতিগুলো।
আমাদের দেশে তথাকথিত রক্ষণশীল-অভিজাত পরিবারের কঠোর নিয়মনিষ্ঠার রক্ষাকবচ, আমাদের গর্ব।
অবৈধ দৈহিক মিলনে গর্ব ধারণ ঘটলে গোঁড়ামি, কুসংস্কার বা হীনমন্যতার আবর্তে ঘটে পুরুষত্ব বোধের বিকৃতি। জেগে ওঠে আপন বিষাক্ত বীর্য্যের প্রতি যুক্তিহীন ও কারণহীন ঘৃণা ও ক্রোধ বোধের বারুদ। অবৈধ ভ্রণ ধারণকারী কলংকিত অবলা নারী তার হৃদয়ের ব্যাথা ভয়ে ভয়ে নিজের পরিবারকেও জানাতে পারে না। লুকিয়ে লুকিয়ে পালিয়ে বেড়ায় নিজের অজান্তে, সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত; নবজাতককে ডাষ্টবিনে নিক্ষেপ করা প্রর্যন্ত। পরিবারের মর্যাদা রক্ষার্থে হতাশাগ্রস্থ হয়ে নিষ্পাপ শিশুর ভ্রণ সহ আত্মহত্যাও করে; যেটা কোন সমাধান নয়।
আবার পরিবারের কর্তাব্যক্তিকে জানালে অনেক সময় - ঝুঁটি ধরে সজোরে পিটিয়ে মেরে স্রেফ ধাপ্পা দিতে সাজানো-গোছানো কাহিনী মেলে ধরে, তথ্য-সাক্ষ্যের মধ্যে থাকে বিস্তর অসঙ্গতি। গোপনে মাকে জানালে মা দিবে ভ্রণ হত্যার পরামর্শ - (হয়তো নিজেরই অভিজ্ঞতার আলোকে)। অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দক্ষ-অদক্ষ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে এ কারণে অনাকাংক্ষিত হারে দেশে গর্ভপাতে মৃত্যুহার বাড়ছে। এসমস্ত ঘটনাগুলো নানা কৌশল চালিয়ে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়ে থাকে।
বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যতীত দৈহিক সম্পর্কের কারণে গর্ব ধারণ করার পরে সন্তান প্রসবের পৃর্বে জড়িত নর-নারী উভয়ে স্বেচ্ছায়-স্বইচ্ছায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার পাততে চাইলেও তা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না পাষাণ্ড অধিপত্যকামী অভিভাবকদের বিভিন্ন অযৌক্তিক কারণে।
তাই এধরণের অভাগা নবজাতকের একমাত্র যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নিষ্ঠুর মৃত্যুদণ্ড; তা কার্য্যকর করা হয় ধারালো ও নগ্ন তরাবারী দিয়ে; জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে। মাতৃজঠরে অথবা জন্মের পর ক্রোধোন্মত্ত তামাশার শিকার হতে হয়, দেহে পেট্রোল ঢেলে ভষ্ম করে, দগ্ধ দেহাবশেষ গুপ্তভূমিতে খুঁড়ে রাখে। ভাবখানা হচ্ছে - "পৃথিবীতে কেন এসেছিস, এবার মরে বাঁচ"। ডাস্টবিনে পাওয়া যায় একদিন কি দুদিনের শিশু। পহারা দেয় কুকুর।
'মা গো, কোন শকুন পাড়ায় তোমার ঘর? মানুষ না হয়ে যদি একটা কুকুর হতে - তোমার মধ্যে কিছুটা মাতৃত্ববোধ থাকত! তোমার গর্ভের সন্তানটা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে না, মা তুমি'।
দেশ আমাদের কাছে মাতৃভূমি - মাদারল্যান্ড। আমাদের মাতৃভূমিতে মেয়ে হয়ে জন্মনো পাপ! বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যতীত জন্মানো পাপ! বৈধ দম্পত্তির প্রথমে কন্যা হলে দ্বিতীয় সন্তান প্রসবের পৃর্বে ভ্রণ পরীক্ষা করা হয়। আর সেই ভ্রণও যদি কণ্যাভ্রণ হয়, তখন ডাক্তারকে টাকা দিয়ে সেই ভ্রণটিকে মেরে ফেলে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের বর্বররা। আর্থিক সংকটে এহেন গর্হিত কাজটি করতে না পারলে দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে মহা-অসন্তোষ, মহা-দ্বন্দ্ব-কলহ।
মাতৃভূমির সঙ্কট ও প্রতিকূলতার সময়ে গলা বাজিয়ে আমরা গান গাই - বাংলা আমার 'মা'। মাতৃভূমির গানের পুজা করি, মাতৃ-জঠরের 'মা'-কে বিসর্জন দেই, কণ্যাভ্রণের গলা টিপে টিপে পৌরুষের গৌরবোজ্জ্বল আমিত্বকে জাহির করি! জন্মদাতার যৌন সন্ত্রাস বা যৌন সম্ভোগ সংক্রান্ত অপরাধের কারণে অথবা জাতপাতের বিভিন্নতার অতলে কোন শিশুই বাঁচার অধিকার হারায় না। মাতৃ-জঠরে স্থিত শিশুটি তার মায়ের মতই অসহায়। তাকে ধর্ষন অথবা রোমাঞ্চকর সম্পর্কের পাপের ফসল হিসেবে বিবেচনা করাটা পাপ। এই অস্বাভাবিক জন্মে ভ্রণের কোন প্রভাব নেই।
সেও তার মায়ের মতই একজন পূর্ণ মানুষ। সব ক্ষেত্রেই এ্যাবর্শন হলো একটি নির্দোষ ও নিষ্পাপ মানুষকে হত্যা করা। একজন মানুষ এ্যাবর্শনের মাধ্যমে অন্য একজন মানুষের জীবন শেষ করে দিতে পারে না। একজন পূর্ণবয়স্ক জীবন্ত মানুষ - যে ইচ্ছেমতো পৃথিবীতে বিচরণ করতে পারে বা কথা বলতে পারে; আর একটি জীবন্ত ভ্রণ - যে শ্রিঙ্খলার সাথে মাতৃ-জঠরের প্রাণরসে শুয়ে শুয়ে অথবা নড়াচড়া করে বেড়ে ওঠে; পার্থক্য শুধু এতটুকুই। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের আছে শারীরিক শক্তি, যেটা একজন শিশুর নেই।
এ্যাবর্শন করে সেই ছোট্ট দুর্বল মানুষটিকে হত্যা করা হয়। মানুষ বড় হোক আর ছোটই হোক, মানুষ হত্যা করার অধিকার কারো নেই; বৈধ অথবা অবৈধ মা-বাবারও নেই। জন্মদাতাদের বা পিতার অথবা মাতা-র কোন ভুল বা অপরাধের দায়-দায়িত্ব সন্তানের জীবন দিয়ে পরিশোধ করতে পারে না; করবে কেন!! যেমন একজনের অপরাধের শাস্তি অন্যজনকে চাপিয়ে দেয়া যায় না। একজনের গুনাহের বোঝা অন্যজন বহন করবে না। বিশ্লেষণ দীর্ঘায়িত না করে উপসংহারে এসে বলতে চাই যে, বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যতিত নর-নারীর যৌন সম্পর্ক একটি পাপ; আর এই গর্হিত পাপ নর ও নারী উভয়ের।
বিবাহ বহির্ভূত গর্ভধারণ করা ও সন্তান প্রসব করা পাপ নয়। মানুষ উদ্ভ্রান্ত হয়ে পাপ করতে করতে ক্লান্ত গেল। অনেক রক্ত ঝরল! আরও কত ঝরবে! সন্তান কখনো অবৈধ হতে পারে না। "সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই"। এইসব ঘটনা গোপন করার মধ্যে কিছু আছে কিনা জানি না, তবে হলপ করে বলতে পারি এগুলো আজীবন ঘটতেই থাকবে।
এই নিষ্পাপ সন্তানদের জীবন রক্ষা করার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই। সম্মানহানিও হয় না। পাপও নেই। আমাদের মানসিক অবস্থাটা ভ্রান্ত কুহেলিকায় ভরা। এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার কোনো অবকাশ নেই।
এখনই সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। রাশ টেনে ধরতে হবে এখনই। এখনই না পারলে ভবিষ্যতে আরও সংশয় জন্ম দেবে। এসব ঘটনা অনেকেই জানেন।
বাংলাদেশ একটি অনুন্নত ও গরীব দেশ।
শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক, আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক ভাবারায়ও আমরা বিব্রত ও দ্বিধাগ্রস্থ। পরিস্থিতি যা-ই হোক এই সংকট থেকে মুক্তির পথ খোঁজার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিম্ন বর্নিত কার্যক্রমের সম্প্রদানের মাধ্যমে এসমস্ত জটিল সমস্যাগুলোর সুফল আসবে বলে আমি আশা এবং বিশ্বস করি। আমার অবস্থান থেকে নিজস্ব সীমিত সম্পদ দিয়েই শুরু করতে চাই ব্যক্তিগত ভাবে। অনেক বেশি মানুষকে সেবা দেয়া আমার একার পক্ষে অসম্ভব। এ কাজের অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে পৌঁছতে অনেক সমস্যা আছে, অনেক ঝুঁকিও হয়ত আছে, কিন্তু এ কাজ অসম্ভব নয় - সেই ঈমানও আছে আমার।
কুসংস্কারাচ্ছান্ন অন্ধকারের বুক চিরে আমার সম্ভাব্য শক্তি নিয়ে ধীরে ধীরে এগুতে প্রাথমিক পর্যায়ে আমি প্রতিষ্ঠা করতে চাই একটি পারিবারিক হোম সেন্টার, যার নাম হতে পারে "মা হীন মাতৃভূমি"।
1. পারিবারিক হোম সেন্টারঃ মা হীন মাতৃভূমি
THE MOTHER LAND OF MOTHERLESS
1.1 অবিবাহিত অসহায় সিঙ্গেল পেরেন্টগণ গর্ভ ধারণ থেকে শুরু করে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত (সংগঠনের নিয়ম শ্রিঙ্খলা অনুসারে, একটা নির্ধারিত সময়) এই সেন্টারে অবস্থান করবে।
1.2 সেন্টারে যোগ দেয়ার দিন থেকে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরে ৩মাস সময়ের মধ্যে, জড়িত নর-নারী উভয়ে স্বেচ্ছায়-স্বইচ্ছায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার পাততে চাইলে, উভয় পবিবারের পিতা-মাতা/অভিভাবকদের এবং তদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের লিখিত শপথ নামা/আবেদন মা হীন মাতৃভূমি'র নীতিমালার ভিত্তিতে ভূমিষ্ট সন্তান ফেরত দেয়া যেতে পারে।
1.3 গর্ভসংক্রান্ত স্বাস্থ বিষয়ক শিক্ষা ও পরামর্শ
1.4 গর্ভাবস্থায় এবং এবং সন্তান প্রসবের সময় (একটা নির্ধারিত সময়) পর্যন্ত স্বাস্থ-পরিসেবার ব্যবস্থা থাকবে।
1.5 হালকা-পাতলা কর্মসংস্থান (শিশুসেবা, শিক্ষা, বিশ্রাম ও বিনোদনের ব্যবস্থা)
2. সেন্টারে ভূমিষ্ট অসহায় দুস্থ সন্তানদের সেবা প্রদান
2.1 খাদ্র দ্রব্য, পোশাকপরিচ্ছদ ও ঔষদসামগ্রী প্রদান
2.2 শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা
2.3 বইপুস্তক ইত্যাদি সরবরাহ করা, স্কুলের বেতন দেয়া
2.4 শিশু নির্যাতন বন্ধ করা
2.5 সাধারণ শিক্ষার পাশে পেশাজীবী ও দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা
3. বিবিধ
সমাজের নানাবিধ বাঁধা বিপত্তির কারণে যখন এসমস্ত অসহায় শিশুদের দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করে, তখন আমি সেই নিষ্পাপ সন্তানগুলোকে হাসিমুখে বুকে টেনে নিতে চাই।
আমার মৃত্যুর ঘন্টা বেজে গেছে। আমি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। ত্রিশ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে একটা স্বাধীন মাতৃভূমি পেয়েছি। বাবা-মাহীন শিশুদের একটা স্বাধীন মাতৃভূমির জন্য এটা আমার আরোও একটা জীবনযুদ্ধ।
সুপ্রিয় বিজ্ঞ পাঠক, এটি আমার ভবিষ্যৎ খসরা কর্মপরিকল্পনা।
আমি বিশ্বস করি ব্লগে অনেক বিশেষজ্ঞ ও শুভানুধ্যায়ী রয়েছেন, যারা আমাকে এবিষয়ে বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন। খুব শিগ্রই আমার এই কর্মপরিকল্পনা নিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিব বলে আশা করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।