ধুসর এই পৃথিবীতে আমি প্রতিনিয়ত স্বপ্ন খুজে বেড়াই এবার এমএলএম ফাঁদ চরমোনাই পীরের ভাইয়ের আবুল কাশেম
ইসলামের নাম ব্যবহার করে ছয় মাসে দ্বিগুণ লাভ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা করছেন প্রয়াত চরমোনাইয়ের পীর ফজলুল করিমের ভাই সাইয়্যেদ রিদওয়ান বিন ইসহাক। দৈনিক দু-তিন ঘণ্টা সময় দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে চার লাখ টাকা আয় করার লোভ দেখাচ্ছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। এইম ওয়ে করপোরেশন নামে এমএলএম ব্যবসা খুলে কম্পানির শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসার মূলধন সংগ্রহ করছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাইয়্যেদ রিদওয়ান বিন ইসহাক দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রচার অনুষ্ঠান করে ইসলামের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি যে চরমোনাইয়ের পীরের ভাই, এ পরিচয়ও প্রচার অনুষ্ঠানে বলছেন তিনি।
এসব তথ্য জানিয়ে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) থেকে সম্প্রতি
একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এইম ওয়ে করপোরেশন যাতে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'এইম ওয়ে করপোরেশন লিমিটেড কর্তৃক সম্ভাব্য অর্থ আত্মসাতের প্রক্রিয়া সমবায় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে স্থগিত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ কৌশলে গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত প্রদান নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
'
এমই ওয়ে হারবাল কসমেটিকস ও হারবাল হেলথ কেয়ার পণ্য উৎপাদন এবং বিক্রি করছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, 'এমএলএম ব্যবসার নামে বিভিন্ন প্রতারক কম্পানি অল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে জনগণকে প্রতারিত করেছে। এর আগে ইউনিপেটু, রিচ বিজনেস, ইজেন ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন এমএলএম কম্পানি সম্পর্কে আমরা সরকারকে অবহিত করেছি। ' প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, 'এইম ওয়ে করপোরেশনের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান অতীতে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ জনগণের টাকা আত্মাসাৎ করে পালিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতির জন্য বিনিয়োগকারীদের নির্বুদ্ধিতা ও দুর্বল আইন অনেকটাই দায়ী। '
তবে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাইয়্যেদ রিদওয়ান বিন ইসহাক চরমোনাইয়ের পীরের নাম ভাঙানোর কথা অস্বীকার করে বলেন, 'কেউ যদি আমাদের পারিবারিক পরিচয় কাজে লাগায়, সেটা আমার জানা নেই।
' কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'আমাদের ব্যবসার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। ধর্মীয় নেতার ছেলে হয়েছি বলে আমি সারা জীবন ধর্ম ব্যবসা করব, তা তো হতে পারে না। ' একজন গ্রাহক কিভাবে দৈনিক চার লাখ টাকা আয় করতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কেউ যদি কৌশল অবলম্বন করতে পারে, তাহলে অসম্ভব নয়। বিল গেটস (মাইক্রোসফটের কর্ণধার) দৈনিক বহু কোটি টাকা আয় করছেন। সেখানে দৈনিক চার লাখ তো বেশি কিছু না।
'
এইম ওয়ে করপোরেশনের ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক হলে দৈনিক চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব বলে প্রলোভন দেখানো হয়েছে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'এইম ওয়ে করপোরেশন তার ক্রেতাদের জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে, যদি কোনো ক্রেতা এ কম্পানির সঙ্গে সপ্তাহে ১৪ ঘণ্টা থেকে ২১ ঘণ্টা অর্থাৎ দৈনিক দু-তিন ঘণ্টা সময় বিনিয়োগ করে কম্পানির সাত-আটটি বিপণন প্রশিক্ষণে অংশ নেয় এবং প্রশিক্ষণের আলোকে পরবর্তী এক বছর থেকে তিন বছর কাজটি নিয়মিত অনুশীলন করে, তবে কম্পানি তাকে প্রস্তাব দিচ্ছে একটি চমৎকার স্থায়ী আয় থেকে গড়ে দৈনিক ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা পর্যন্ত স্থায়ী ভিত্তিতে আয় করা সম্ভব, যা অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তব। '
জানা গেছে, গত ৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি রেজিস্ট্রার, জয়েন্ট স্টক কম্পানি ও ফার্ম থেকে প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানি হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছে। আর ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে ১১ জুলাই। তবে এতে প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।
আর প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তারা কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সাইয়্যেদ রিদওয়ান বিন ইসহাকের দেওয়া তথ্য মতে, এখন তাঁদের গ্রাহকসংখ্যা সাড়ে সাত লাখ। তবে এইম ওয়ে করপোরেশনের পরিচালক (ক্রয়) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম শিবলী জানিয়েছেন, তাঁদের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতারও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য নানা ধরনের উদ্দেশ্যর কথা প্রচার করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর মধ্যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা, সব জেলা শহরে নিজস্ব অফিস ও ভবন তৈরি, বীমা কম্পানি স্থাপন, নিজস্ব হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করা, কুয়াকাটা ও কঙ্বাজারে পর্যটন নগরী গড়ে তোলা, বাস ও লঞ্চ পরিবহন চালু করা ইত্যাদি।
প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন কত জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, 'এটি এমএলএম কম্পানি। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ীই আমরা ব্যবসা করছি। ' এমএলএম ব্যবসা নিয়ে সরকারের কোনো নীতিমালা বা আইন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'মন্ত্রণালয় যে খসড়া নীতিমালা ও আইন করেছে, সে অনুযায়ীই আমরা ব্যবসা করছি।
জানা গেছে, এইম ওয়ে করপোরেশন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চার ধরনের হিসাব খোলার নাম করে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।
এর মধ্যে সিলভার অ্যাকাউন্ট করলে দুই হাজার, গোল্ডেন অ্যাকাউন্টের জন্য তিন হাজার, প্লাটিনামের জন্য চার হাজার ও ডায়মন্ড অ্যাকাউন্টের জন্য পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের অ্যাকাউন্টের গ্রাহকদের এক হাজার টাকার পণ্য কিনতে হয়। আর বাকি টাকা নেওয়া হয় কম্পানির শেয়ার দেওয়ার নাম করে। এ ছাড়া প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে পরিচয়পত্র দেওয়ার খরচ বাবদ নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা করে। এ টাকার বিপরীতে গ্রাহকদের বছরের ১২ মাসের মধ্যে প্রথম তিন মাস ১০ শতাংশ হারে, পরের চার মাস ১৫ শতাংশ হারে, পরের তিন মাস ২০ শতাংশ হারে এবং শেষের দুই মাস ২৫ শতাংশ হারে মুনাফা মিলিয়ে বছরে মোট ২০০ শতাংশ মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এত বিপুল হারে মুনাফা দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কিভাবে সম্ভব হতে পারে জানতে চাইলে এইম ওয়ে করপোরেশনের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম শিবলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা এক ধরনের চা তৈরি করি। প্রতি প্যাকেট চা তৈরিতে খরচ হয় ৩০ টাকা। ওই চা আমরা নতুন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করি ২০০ টাকা। এখানে ৩০ টাকায় ১৭০ টাকা মুনাফা হয়। এর একটি অংশ আমরা কমিশনের মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে বণ্টন করে দিই।
'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।